‘যদি কোন দিন হাতে একটা বন্দুক পাই, তাহলে তোকে গুলি করে মারব!!’ কথাগুলো প্রায়ই মজা করে বলে সুমাইয়া। মেয়েটাকে তো আর আমি কম বিরক্ত করিনা। ভাবছি, একদিন সত্যি সত্যি ওর হাতে একটা পিস্তল তুলে দেব। পিস্তল পাওয়া কি খুব কঠিন হবে? আমাদের কোন কোন ছাত্র নেতার কাছে তো অবশ্যই পাওয়া যাবে। প্রায় প্রতিদিনই তো পত্রিকায় আমাদের ছাত্রনেতাদের অস্ত্র হাতে মহড়ার প্রতিবেদন আসছে। আচ্ছা ঠিক আছে, যদি একান্তই পিস্তল না পাওয়া যায়, তাহলে রামদা, চাপাতি,রড, হকিস্টিক। বিশ্ববিদ্যালয়ের মারামারি তো এগুলো ছাড়া কল্পনাই করা যায়না। এগুলোর একটা হলেই চলবে। রামদা দেখলে সুমাইয়া কী করবে? নিশ্চই অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাবে। যে মেয়ে ব্লাড গ্রুপিং এর প্রাকটিক্যাল ক্লাসে ল্যানসেট আর তিন ফোঁটা রক্ত দেখে কান্না থামাতে পারে না, তার জন্য তো অজ্ঞান হওয়া অস্বাভাবিক কিছুনা। আর তা না হলে , হয়তো প্রচণ্ড ঘৃণায় মুখ ফিরিয়ে নিয়ে বলবে, ‘যাদের কাছে এসব অস্ত্র আছে তারা মানুষ না। তাদেরকে আমি ঘৃণা করি।’ আমাদের সুমাইয়া এমনই।
গতকাল সুমাইয়ার ফেসবুক স্ট্যাটাস পড়লাম। ও লিখেছে ,‘ যদি আমাকে ভালবাস, তবে ধুমপান করিও না। কেননা ধুমপান থেকেই একদিন মানুষ মাদকে জড়িয়ে পড়ে’। সুমাইয়াকে ভালবাসেনা এমন একটা ছেলেও আমাদের ক্লাসে নেই কিন্তু ধুমপান করে এমন অনেক ছেলেই আছে। আমাদের প্রত্যেকের জীবনেই তো কোন না কোন সুমাইয়া আছে-মা রূপে, বোন রূপে, ভাল বান্ধবী রূপে। তাদের আকুতিও নিশ্চই সুমাইয়ার মত।। তাদের কথা ভেবেও কি সব অস্ত্র, সব নেশার দ্রব্য ছুড়ে ফেলা যায় না। সুমাইয়া, আমরা বিশ্বাস করি, একদিন সবাই অন্ধকার ছেড়ে আলোর পথে আসবে। আর সেদিন খুব বেশী দুরেও নয়।
গল্পের পেছনের গল্পঃ সুমাইয়াকে দেখলে কেন জানি মনে হয়, আমার যদি একটা বোন থাকত তাহলে বোধ হয় সুমাইয়ার মতই হত। সুমাইয়ার জন্য অনেক শুভকামনা। এই গল্পটা “ছুটির দিনে”(প্রথম আলো)-তে ১৬/১০/১০ এ প্রকাশিত হয়েছিল।
Photo Credit: Google
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১০:০৬