somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

...ক্ষুধা...

২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সকাল ১০:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


হাত আর প্লেট চেটেপুটে খেয়ে সবেমাত্র বেসিনের কাছে গেছি হাত ধুতে। চোখ পড়লো পাশে রাখা ময়লার ঝুড়ির দিকে। ঝুড়িটা প্রায় ভরে গেছে আজকের রাতের তরকারি দিয়ে।পাশেই চিৎকার চেঁচামেচি দেখে সেদিকে চোখ ফেরালাম। বরাবরের মতই আমাদের বাবুর্চি আজাদের গুষ্টি উদ্ধার হচ্ছে। আজাদ অসহায়ভাবে আমার দিকে তাকাল। আমি প্লেট লুকানোর চেষ্টা করলাম। কয়েকদিন থেকেই একটা জিনিস ভাবছি। সারাক্ষণ মুরগী নিয়ে গবেষণা করা আমারো মুরগীদের মত জিহ্বায় টেস্ট বাডের সংখ্যা কমে গেল কিনা?? মানুষের টেস্ট বাডের সংখ্যা ১০ হাজার আর মুরগীর মাত্র ৩৫০। এখন, রান্না ভাল হোক বা খারাপ আমি কোন টেস্টই বুঝিনা। তবে সুখের কথা হচ্ছে, যে কোন খাবারই এখন পেট ভরে খেতে পারি, ক্ষুধা মিটে যায়!!

এস.এস.সি পর্যন্ত যতদিন বাসায় ছিলাম তিনবেলাই ভরপেট ভাত খেতাম। আনিস স্যারের ভাষায়, হা করলে যেন গলা দিয়ে ভাত দেখা যায় সেই পর্যন্ত খাওয়া। কলেজে ভর্তির পর মেসে এসে আজব এক জিনিস দেখলাম। এখানে বাটিতে করে মেপে মেপে ভাত দেয়া হয়। সদ্য গ্রাম থেকে আসা আমি পড়লাম মহা বিপদে। না, ক্ষুধা আর মেটে না।

সকালে বাসা থেকে ভরপেট খেয়ে আসার পরও স্কুল/কলেজে দুই ক্লাস পরেই কেন টিফিনের বিরতি দেয়া হয় সেটা এতদিনে বুঝতে পারলাম। টিফিনের বিরতি ঠিক আছে, কিন্তু সমস্যা হল এখানে পকেটের বাজেট কোনভাবেই মেলাতে পারছিলাম না। কারণ, ক্যান্ট পাবলিক কলেজে টিফিনের সময় আমাদের গ্রামের স্কুলের মত দুই টাকার বাদাম খেয়ে পার করার কোন সুযোগ নেই।

ছুটিতে বাড়ি গেলে শুরুর দিকে হাপুস হুপুস করে ভাতের প্লেটে ঝাঁপিয়ে পড়তাম। একদিন আম্মা অবাক হয়ে জিজ্ঞাস করলেন, “আচ্ছা, মেসে কি খাওয়া দাওয়ার খুব কষ্ট রে বাবা?” আম্মা এমনিতেই সারাক্ষন হাজারটা টেনশন করেন। নতুন টেনশন দেয়া উচিত হবেনা ভেবে, এরপর থেকে বাসায়ও সংযত ভাবে খাওয়া শুরু করলাম। ফলাফল, ক্ষুধা আর মেটে না।

যাক, কলেজ জীবনের সাথে সাথে মেস জীবনও দ্রুতই শেষ হয়ে গেল। শুরু হল বিশ্ববিদ্যালয়ের হল জীবন। এখানে প্রত্যেকের জন্য আলাদা আলাদা ভাতের বাটি করা থাকেনা। টেবিলে গামলা ভর্তি ভাত দেয়া থাকে যতটুকু মন চায় খাও। না, খাওয়া হয়না। ভাতের সাথে খাওয়ার জন্য মাইক্রোস্কোপিক এক পিচ ব্রয়লার মুরগীর মাংস কিংবা মাছের টুকরা থাকে। আনিস স্যার এই টুকরা দেখলে নির্ঘাত বলে বসতেন, এর চেয়ে বড় মাংসের টুকরা আমার দাঁতের ফাঁকেই আটকে থাকে। না, ক্ষুধা মেটে না।

সে সময় কোলাবেরি ডি গান দিয়ে তামিল নায়ক ধানুশ খুবই জনপ্রিয় হয়ে গেছে। একদিন, আমি ধানুশের “মারিয়ান” নামের একটা মুভি দেখছিলাম। সত্য ঘটনা থেকে করা মুভিটামূলত, সুদানে কাজ করতে যাওয়া কয়েকজন ইন্ডিয়ান শ্রমিকেরগল্প। তাঁরা ঘটনাচক্রে সুদানি টেররিস্টদের হাতে আটকে পড়ে এবং শেষে সেখান থেকে সারভাইভ করে ঘরে ফেরে। মুভিটাতে ধানুশ অসাধারণ অভিনয় করেছে। আটকে পড়া অবস্থায় কয়েকদিন না খেয়ে থাকার পর ধানুশের বন্ধু যখন মৃতপ্রায়। তখন ধানুশ এক ইমাজিনারি গেম খেলে। সে তার বন্ধুকে বলে, দেখ, চারপাশে কত খাবার। এরপর বেঁচে থাকার জন্য তাঁরা দুইজনই ইমাজিন করে করে বিভিন্ন কিছু খাওয়ার অভিনয় করে সারভাইভ করার চেষ্টা করে।

মুভিটা দেখার পর মাথার ভিতর কি পাগলামি ঢুকল কে জানে। প্রতিদিন খাওয়ার সময় আমিও আজব সেই ইমাজিনারি গেম খেলা শুরু করলাম। খাবার প্লেটে যাই থাক না কেন আমার মন যা চাইত তাই ইমাজিন করে খাওয়া শুরু করলাম। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, কিছুদিন পর খেয়াল করলাম এখন আমি ইচ্ছামত খেতে পারি। পেট ভরে যায়, ক্ষুধাও মিটে যায়।
এখন যা মন চায় তাই ইমাজিন করে খেতে পারছি ঠিক আছে, কিন্তু কেন জানি মনে হচ্ছে কোন কিছুরই অরিজিনাল টেস্ট বুঝতে পারছিনা।

বিয়ের পর বউ প্রথমবার রান্না করেছে। খেতে বসেছি। টেবিলে রাখা ধোয়া ওঠা গরম ভাত/রুটি। আর পাশেই আমার পছন্দের সব তরকারী। ইচ্ছা মত খাওয়ার ব্যাপারে কোন বাঁধা নেই। কিন্তু আমি আছি মহা টেনশনে, জিহ্বা খাবারের টেস্ট বুঝবে তো???

গল্পের পেছনের গল্পঃ
আমার এক নানা মৃত্যুশয্যায়। সবাই শেষবারের মত দেখা করতে আসছে। মেজ খালু আসার সময় সাথে করে কিছু ফলমুল আর মিস্টি নিয়ে এসেছেন। দুইদিন পর নানা মারা গেলেন। বাড়ির সবাই শোকাহত। মরা বাড়িতে রান্না বান্না হয়নি। দুই দিন ধরে নানি ঠিকমত খেতেও পারেননি। হঠাৎ নানির খুব ক্ষুধা লাগল। শোকে আছে ভেবে কেউ নানিকে খাওয়ার কথা জিজ্ঞাসও করছে না। ক্ষুধা শোক মানেনা!!! নানি ঘরে গিয়ে খুঁজতে লাগলেন খাওয়ার কিছু আছে কিনা। মেজ খালুর আনা ফলমূলগুলো মারা যাওয়ার আগে নানাই সব খেয়েছেন, টেবিলে পরে আছে মিস্টির প্যাকেট। নানি প্যাকেট খুলে একটার পর একটা মিস্টি মুখে পুরতে লাগলেন। এমন সময় ঘরে ঢুকল মেজ খালার পিচ্চি ছেলেটা। শোকে মুহ্যমান সবাই উঠানে বসে ছিল। পিচ্চিটা রুম থেকে বের হয়ে চিৎকার করে বলতে লাগল, “সবাই দেখে যাও নানি সব মিষ্টি খেয়ে ফেললো...!!!”
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৩:১৭
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস-পরীক্ষার হলে দেরিঃ পক্ষ বনাম বিপক্ষ

লিখেছেন BM Khalid Hasan, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



বর্তমানের হট টপিক হলো, “১ মিনিট দেরি করে বিসিএস পরীক্ষার হলে ঢুকতে না পেরে পরীক্ষার্থীর স্বপ্ন ভঙ্গ।” প্রচন্ড কান্নারত অবস্থায় তাদের ছবি ও ভিডিও দেখা যাচ্ছে। কারণ সারাজীবন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

×