somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমাদের সেলুলেজ এনজাইম নাই...!!!

২২ শে মে, ২০২১ রাত ১০:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বরাবরের মতই আল্লাহ্‌র নাম নিতে নিতেই বাসায় ঢুকলাম। সারা রাস্তায় পড়তে থাকা দোয়াগুলো কবুল হইছে কিনা একটু পরেই জানা যাবে।

আজকে শনিবার, আমার জন্য আতঙ্কের দিন। প্রতি শনিবার আমি আমাদের বাসার সাপ্তাহিক বাজার করি। বাজারে যাওয়ার আগে আয়নায় ভালভাবে দেখে নিই, আমার চেহারার কোথাও বলদ লেখা আছে কিনা। আয়নায় লেখাটা খুঁজে না পেলেও, বাজারের দোকানদাররা ঠিকই লেখাটা দেখতে পায়। তারা সবসময় ভেজাল, বাসি, পচা, অচল জিনিসগুলো আমাকে গছায় দেয়। খুবই সতর্ক থাকার পরও কিভাবে তারা এমন করে আমার মাথায় ঢোকে না। আর বাসায় আসার পর শুরু হয় বউয়ের ঝাড়ি। ঝাড়ি খাওয়ার পর প্রতিবারই মনে হয়, বিয়ে করাটা ছিল আমার জীবনের অন্যতম একটা ভুল।

বিয়ের আগে আমার খুব একটা বাজার করার সুযোগ হয় নাই। বিয়ের পর, এখন নিজে নিজেই বাজার করতে হচ্ছে। ঢাকার বাজারে বাজার করা মানে চোর পুলিশ খেলা। একটু চোখ সড়ালেই দোকানদার বাসি, পচা জিনিস গছায় দেবে। তার উপর আমি যেহেতু জানিই না কোন জিনিসের ক্ষেত্রে কোনটা ভাল, দোকানদাররা সুযোগটা ঠিকমত কাজে লাগায়।

এই যেমন ধরুন, চাল কুমড়ার ভিতরে বিচি হইছে কিনা, বাইরে থেকে আমি কিভাবে বুঝব। জীবনে আমি কখনো চাল কুমড়া কিনছি নাকি। সেদিন তরতাজা দেখে লম্বা লম্বা সাইজের ঢেঁড়স কিনে আনার পরও বউ যে কেন ঝাড়ি দিল, আমার মাথায়ই ঢুকতেছিল না। পরে বউ যখন বলল, আজকে ঢেঁড়সটা তুমিই কাটো। তখন বুঝলাম।

বউ সেদিন শিখিয়ে দিল, সবজি সবসময় ছোট এবং কচি দেখে নিবে। আর হা, মনে রাখবা "মাছের মাও পাখির ছাও"। মাছ বড় দেখে কিনবা আর কবুতর বাচ্চা দেখে। পরের সপ্তাহে, অন্যান্য বাজারের সাথে কচি দেখে ছোট ছোট লেবু আনলাম। কেনার সময় আমি ভাবছিলাম দেশি লেবু। আবার বউয়ের ঝাড়ি!! আবাড়তি লেবু আনছো।

ছোট মাছ আমার ভীষণ পছন্দের। বাজারে দেখে শুনে তরতাজা ছোট মাছ কিনলেও, বাসায় এসে বরাবরই আবাক হই ভিতরের পচা মাছ আসলো কোত্থেকে। আর মাংসের বাজারে ওজনে তো কম দেবেই, সাথে যোগ করবে খাওয়ার অযোগ্য সব হাড্ডি আর ফ্যাট। সেদিন দাম বেশি দিয়ে হাড্ডি ছাড়া মাংস কিনে আনার পর, আবার বউয়ের ঝাড়ি, আমি নাকি বুড়া গরুর মাংস আনছি। এই মাংস সিদ্ধ হবে না।

ইদানিং একটা নতুন বুদ্ধি বের করেছি। আগে বাজারে অন্যদের বাজার করা অবজার্ভ করি। দোকানে আসা অন্য কাস্টমার কোন জিনিস কিভাবে কিনতেছে দেখে তারপর কিনি। এরপরও যদি কখনো ভুল হয় মানে বউয়ের ঝাড়ি খাই। মনে মনে এই ভেবে নিজেকে সান্ত্বনা দেই, যেই ব্যাটাকে আজকে ফলো করছি, সেও নিশ্চই বউয়ের ঝাড়ি খাচ্ছে। আরেকটা বিষয়, ফেরার পথে আমার জানা সবগুলো দোয়া পড়তে থাকি। যাক, দোয়ার ফল হাতে হাতেই পাচ্ছি, ইদানিং ভুল কম হচ্ছে।

আজকে অবশ্য দোয়া কবুল হয় নাই। আজকের বাজার থেকে আনা লালশাক দেখেই বউ চেঁচাতে শুরু করল, "তুমি কি চোখ বন্ধ করে বাজার করো? কি সব বুড়া শাক আনছো। আজকে সকাল থেকে আমারো মেজাজ খারাপ ছিল। আমি বললাম, যদি রান্না করা যায় রান্না কর, না হয় ফেলে দাও।

দুপুরে খেতে বসে দেখি, বউ শাক গুলো রান্না করেছে। খুশিই হলাম। একটু পর খেয়াল করলাম সে অন্য তরকারি দিয়ে ভাত খাচ্ছে, শাক খাচ্ছেনা। আমি রাগ করে, শাকের বাটি নিয়ে ইচ্ছামত লাল শাক দিয়ে ভাত খেলাম।

ভার্সির ফার্স্ট ইয়ারে, বায়োক্যামেস্ট্রি পড়ানোর সময় বিসান স্যার পড়াইছিল, “মানুষের সেলোলেজ এনজাইম নাই, মানুষ এজন্য ঘাস হজম করতে পারে না। দুপুরে খাওয়ার পর থেকে, আমার পাকস্থলি জানান দিচ্ছে, বিসান স্যার যা পড়াইছিলেন সব সত্য।

গল্পের পেছনের গল্পঃ
আমাদের দেশে দোকানদার আর কাস্টমার কেন চোর পুলিশ খেলবে আমার মাথায় ঢোকেনা। ওজনে কম দেয়া, ভেজাল মেশানো, অগোচরে পচা জিনিস দেয়া, ডেট এক্সপায়ার মাল দেয়া, দামের তিন চারগুন দাম চাওয়া, জেনে শুনে মানুষকে ঠকানো কিভাবে ব্যবসা হয় আমি বুঝিনা। আজকে ফল কেনার সময় দেখি, ফলের কাগজের ঠোঙ্গাটার ওজন প্রায় ১৫০ গ্রাম, দোকানদারকে দেখানোর পর, দোকানদার লজ্জা পাওয়ার বদলে উল্টা ফিক করে একটা হাসি দিল। তার হাসির অর্থ আমি যা বুঝলাম, “আপনাকে বলদ ভাবছিলাম, আপনি তারপরেও ক্যামনে আমার ট্রিক্স ধরে ফেললেন”। আমি আজও বাসায় ফিরে আয়নার সামনে দাড়িয়ে বলদ লেখাটা খুঁজতে লাগলাম।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে মে, ২০২১ রাত ১২:০৮
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব রাজ্যে উত্তেজনা: হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪২

রোম যখন পুড়ছিল নিরো নাকি তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল; গতরাতের ঘটনায় ইউনুস কে কি বাংলার নিরো বলা যায়?



বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদটি সবসময় ছিল চ্যালেঞ্জিং।‌ "আল্লাহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×