বরাবরের মতই আল্লাহ্র নাম নিতে নিতেই বাসায় ঢুকলাম। সারা রাস্তায় পড়তে থাকা দোয়াগুলো কবুল হইছে কিনা একটু পরেই জানা যাবে।
আজকে শনিবার, আমার জন্য আতঙ্কের দিন। প্রতি শনিবার আমি আমাদের বাসার সাপ্তাহিক বাজার করি। বাজারে যাওয়ার আগে আয়নায় ভালভাবে দেখে নিই, আমার চেহারার কোথাও বলদ লেখা আছে কিনা। আয়নায় লেখাটা খুঁজে না পেলেও, বাজারের দোকানদাররা ঠিকই লেখাটা দেখতে পায়। তারা সবসময় ভেজাল, বাসি, পচা, অচল জিনিসগুলো আমাকে গছায় দেয়। খুবই সতর্ক থাকার পরও কিভাবে তারা এমন করে আমার মাথায় ঢোকে না। আর বাসায় আসার পর শুরু হয় বউয়ের ঝাড়ি। ঝাড়ি খাওয়ার পর প্রতিবারই মনে হয়, বিয়ে করাটা ছিল আমার জীবনের অন্যতম একটা ভুল।
বিয়ের আগে আমার খুব একটা বাজার করার সুযোগ হয় নাই। বিয়ের পর, এখন নিজে নিজেই বাজার করতে হচ্ছে। ঢাকার বাজারে বাজার করা মানে চোর পুলিশ খেলা। একটু চোখ সড়ালেই দোকানদার বাসি, পচা জিনিস গছায় দেবে। তার উপর আমি যেহেতু জানিই না কোন জিনিসের ক্ষেত্রে কোনটা ভাল, দোকানদাররা সুযোগটা ঠিকমত কাজে লাগায়।
এই যেমন ধরুন, চাল কুমড়ার ভিতরে বিচি হইছে কিনা, বাইরে থেকে আমি কিভাবে বুঝব। জীবনে আমি কখনো চাল কুমড়া কিনছি নাকি। সেদিন তরতাজা দেখে লম্বা লম্বা সাইজের ঢেঁড়স কিনে আনার পরও বউ যে কেন ঝাড়ি দিল, আমার মাথায়ই ঢুকতেছিল না। পরে বউ যখন বলল, আজকে ঢেঁড়সটা তুমিই কাটো। তখন বুঝলাম।
বউ সেদিন শিখিয়ে দিল, সবজি সবসময় ছোট এবং কচি দেখে নিবে। আর হা, মনে রাখবা "মাছের মাও পাখির ছাও"। মাছ বড় দেখে কিনবা আর কবুতর বাচ্চা দেখে। পরের সপ্তাহে, অন্যান্য বাজারের সাথে কচি দেখে ছোট ছোট লেবু আনলাম। কেনার সময় আমি ভাবছিলাম দেশি লেবু। আবার বউয়ের ঝাড়ি!! আবাড়তি লেবু আনছো।
ছোট মাছ আমার ভীষণ পছন্দের। বাজারে দেখে শুনে তরতাজা ছোট মাছ কিনলেও, বাসায় এসে বরাবরই আবাক হই ভিতরের পচা মাছ আসলো কোত্থেকে। আর মাংসের বাজারে ওজনে তো কম দেবেই, সাথে যোগ করবে খাওয়ার অযোগ্য সব হাড্ডি আর ফ্যাট। সেদিন দাম বেশি দিয়ে হাড্ডি ছাড়া মাংস কিনে আনার পর, আবার বউয়ের ঝাড়ি, আমি নাকি বুড়া গরুর মাংস আনছি। এই মাংস সিদ্ধ হবে না।
ইদানিং একটা নতুন বুদ্ধি বের করেছি। আগে বাজারে অন্যদের বাজার করা অবজার্ভ করি। দোকানে আসা অন্য কাস্টমার কোন জিনিস কিভাবে কিনতেছে দেখে তারপর কিনি। এরপরও যদি কখনো ভুল হয় মানে বউয়ের ঝাড়ি খাই। মনে মনে এই ভেবে নিজেকে সান্ত্বনা দেই, যেই ব্যাটাকে আজকে ফলো করছি, সেও নিশ্চই বউয়ের ঝাড়ি খাচ্ছে। আরেকটা বিষয়, ফেরার পথে আমার জানা সবগুলো দোয়া পড়তে থাকি। যাক, দোয়ার ফল হাতে হাতেই পাচ্ছি, ইদানিং ভুল কম হচ্ছে।
আজকে অবশ্য দোয়া কবুল হয় নাই। আজকের বাজার থেকে আনা লালশাক দেখেই বউ চেঁচাতে শুরু করল, "তুমি কি চোখ বন্ধ করে বাজার করো? কি সব বুড়া শাক আনছো। আজকে সকাল থেকে আমারো মেজাজ খারাপ ছিল। আমি বললাম, যদি রান্না করা যায় রান্না কর, না হয় ফেলে দাও।
দুপুরে খেতে বসে দেখি, বউ শাক গুলো রান্না করেছে। খুশিই হলাম। একটু পর খেয়াল করলাম সে অন্য তরকারি দিয়ে ভাত খাচ্ছে, শাক খাচ্ছেনা। আমি রাগ করে, শাকের বাটি নিয়ে ইচ্ছামত লাল শাক দিয়ে ভাত খেলাম।
ভার্সির ফার্স্ট ইয়ারে, বায়োক্যামেস্ট্রি পড়ানোর সময় বিসান স্যার পড়াইছিল, “মানুষের সেলোলেজ এনজাইম নাই, মানুষ এজন্য ঘাস হজম করতে পারে না। দুপুরে খাওয়ার পর থেকে, আমার পাকস্থলি জানান দিচ্ছে, বিসান স্যার যা পড়াইছিলেন সব সত্য।
গল্পের পেছনের গল্পঃ
আমাদের দেশে দোকানদার আর কাস্টমার কেন চোর পুলিশ খেলবে আমার মাথায় ঢোকেনা। ওজনে কম দেয়া, ভেজাল মেশানো, অগোচরে পচা জিনিস দেয়া, ডেট এক্সপায়ার মাল দেয়া, দামের তিন চারগুন দাম চাওয়া, জেনে শুনে মানুষকে ঠকানো কিভাবে ব্যবসা হয় আমি বুঝিনা। আজকে ফল কেনার সময় দেখি, ফলের কাগজের ঠোঙ্গাটার ওজন প্রায় ১৫০ গ্রাম, দোকানদারকে দেখানোর পর, দোকানদার লজ্জা পাওয়ার বদলে উল্টা ফিক করে একটা হাসি দিল। তার হাসির অর্থ আমি যা বুঝলাম, “আপনাকে বলদ ভাবছিলাম, আপনি তারপরেও ক্যামনে আমার ট্রিক্স ধরে ফেললেন”। আমি আজও বাসায় ফিরে আয়নার সামনে দাড়িয়ে বলদ লেখাটা খুঁজতে লাগলাম।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে মে, ২০২১ রাত ১২:০৮