somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কবি

২৮ শে মে, ২০২১ বিকাল ৫:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার লেখা রবীন্দ্র সংগীতটা কাকে শোনানো যায় ভাবছি...!!! আমাদের স্কুলের বার্ষিক প্রতিযোগিতায় গানের ক্ষেত্রে শুধু রবীন্দ্র আর নজরুল সংগীতই গাওয়ার সুযোগ দেয়া হয়। স্বদীপ ভাঙ্গাচুরা গলায় রবীন্দ্র সংগীত গেয়ে প্রতি বছরই পুরস্কার নিয়ে যায়। আমার জীবনে আমি কোনদিন কোন ইভেন্টেই পুরস্কার পাই নাই। টুকটাক ভাওয়াইয়া গান গাইলেও, প্রতিপক্ষ যেহেতু দুর্বল, তাই ভাবছি এ বছর রবীন্দ্র সংগীতে অংশ নেব। সমস্যা হচ্ছে, কোন গানই আমি সম্পুর্ন পারিনা। এখনকার দিনের মত ইন্টারনেট থেকে পুরা গান সংগ্রহ করে নিয়ে শিখব, সেই সুযোগও তখন ছিল না।

হঠাৎ মাথায় একটা শয়তানি বুদ্ধি আসলো।
আচ্ছা, রবীন্দ্রনাথ তো অসংখ্য গান লিখেছেন। বিচারক স্যারদের কি সব গান মুখস্থ আছে? না বোধয়। আমি যদি নিজেই একটা রবীন্দ্র সংগীত লিখে ফেলি, তাহলে!!! যা ভাবা তাই কাজ। লিখে ফেললাম একটা গান। এখন চিন্তায় পরে গেছি, গানটা প্রথম শোনাবো কাকে। শেষমেশ, আমার বন্ধু সুমনকে বললাম, "তোকে একটা গান শোনাবো, এটা কার গান বলতে পারলে চকলেট পাবি"। আমি গাইতে থাকলাম,

“তব প্রেম চাহিনে, চাহি বিরহের ক্ষণ,
তব অবহেলাতে পাই সুখ সমীরণ...!!”

গান শুনে সুমন বলল, এটা তো রবি চৌধুরীর গান। সেসময় রবি চৌধুরী ছিল তুমুল জনপ্রিয়। আমি মনে মনে বললাম, বেটার লাক নেক্সট টাইম। প্রথম চেষ্টায় রবি চৌধুরী পর্যন্ত গেছি, এভাবে চেষ্টা চালাতে থাকলে একদিন রবীন্দ্রনাথ পর্যন্ত পৌছানো অসম্ভব হবে না।

যা হোক, এটা কিন্তু আমার প্রথম লেখা ছিল না। আমার লেখালেখি শুরুর ঘটনাটা আরো বেশি মজার। সিক্সে পড়ি। খালাতো ভাই বাপ্পার কবিতা ছাপা হয়েছে পত্রিকায়। মাথা নষ্ট। বাপ্পা কবি হইলো ক্যামনে? ভাবলাম, আমারো একটা কবিতা লেখা উচিত। দুইদিন অক্লান্ত পরিশ্রম করার পরও কোন লেখা মাথায় আসলো না, মাথায় আসলো এক শয়তানি বুদ্ধি। অন্য একটা পত্রিকা থেকে একটা কবিতা চুরি করে আমার নামে পাঠিয়ে দিলাম দৈনিক করতোয়া পত্রিকায় সাপ্তাহিক ছোটদের পেজ সবুজ আসরে। এক সপ্তাহ পর, সেই কবিতা ছাপাও হল। আমার খুশি তখন দেখে কে।

আমি সবাইকে সেই পত্রিকা দেখাতে লাগলাম। স্কুলের স্যাররাও খুব প্রশংসা করলেন। আমার বন্ধুরা সব হিংসায় জ্বলে পুড়ে ছারখার। আম্মাকে দেখালে, আম্মাও খুব খুশি হলেন, মাথায় হাত বুলিয়ে দোয়া করে দিলেন।

ততক্ষণে শয়তানটা আমার মাথা থেকে নেমে গেছে, আমার খারাপ লাগতে শুরু করেছে। আর যাই হোক, এই কবিতাটা আমার লেখা না। কি করা যায়। আবার লিখতে বসলাম। অনেক কস্টে একটা কবিতা লিখলাম। বড় আবেগে লেখা আমার প্রথম কবিতাটা পাঠিয়ে দিলাম পত্রিকায়। না, কবিতায় ছাপানোর মত কিছুই ছিল না, সুতরাং ছাপলো না। আরেকটা লিখলাম, পাঠালাম। না, ছাপানো হচ্ছেনা।
সে সময়কার আমার মনের অবস্থা কোনদিনই কাউকে বোঝানো যাবে না।

আবার মাথায় একটা বুদ্ধি আসলো। সবুজ আসরের পরিচালক আপুকে নিয়ে একটা কবিতা লিখলাম, পুরা কবিতায় শুধু আপুর প্রশংসা। পাঠিয়ে দিলাম পত্রিকায়। এবার, না ছাপিয়ে যাবে কই। হুম, ছাপানো হয়েছে।

আমার সব বন্ধুকে পত্রিকাটা দেখালাম, “দেখ বেটা আবারো আমার লেখা কবিতা”। উত্তরে সবাই বলতেছে, "ভালো, কিন্তু আগের কবিতাটা বেশি ভাল ছিল"। আমি মনে মনে বললাম, "সব হিংসা। ব্যাপার না, নেক্সট টাইম ভাল কবিতাই লিখব"। আমি অবশ্য এখন শিখে ফেলেছি কি ধরনের কবিতা লিখলে পত্রিকায় ছাপাবে। বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস সহ সব দিবসে, ওইসব দিবস নিয়ে কবিতা লিখি, পাঠাই এবং সব ছাপা হয়। কিন্তু বন্ধুরা বারবার একই কথা বলে, "প্রথমটার মত হয় নাই"।

আল্লাহর কাছে তখন আমার একটাই চাওয়া, "আল্লাহ আমাকে মাত্র একটা ভাল কবিতা লেখার সুযোগ দাও"।

স্কুলে প্রথম বারের মত দেয়ালিকা করা হবে। আমি কবিতা লিখলাম “শোনরে কিশোর শোন”। যাক, অবশেষে সবাই প্রশংসা করলো এবং পুরস্কারটাও ভাগ্যে জুটলো।

কলেজে পড়ার সময় ক্যান্ট পাবলিক কলেজের দ্বিবার্ষিক ম্যাগাজিনের জন্য লেখা আহবান করা হয়েছে। আমি আমার ক্লাসের সব স্যারদের নিয়ে একটা কবিতা লিখলাম, “ইচ্ছা”। বিদ্যুতকে কবিতাটা শোনানোর পর বিদ্যুত বলল, “তোরতো আগের লেখা অনেক কবিতা আছে, তুই ওগুলোর মধ্য থেকে একটা পাঠা। এইটা আমাকে দে, আমি আমার নামে পাঠাই”।

বুদ্ধিটা খারাপ না। লেখা সিলেকশন কমিটিতে আছেন, বাংলার আতিকুল আলম স্যার। যদি দুইটা কবিতার মধ্যে কোন ভাবে একটা কবিতাও ছাপা হয় বুঝবো আল্লাহ আমার ভাল কবিতা লেখার দোয়া কবুল করেছেন।

যথা সময়ে চকচকে ম্যাগাজিনটা হাতে পেলাম। অবাক কান্ড, ম্যাগাজিনের সবচেয়ে বড় দুইটা কবিতা আমার লেখা। একটা "শোনরে কিশোর শোন" আমার নামে আর "ইচ্ছা" কবিতাটা বিদ্যুতের নামে।

পরের দিন ক্লাসে, সব স্যাররা কবিতার জন্য বিদ্যুতের প্রশংসা করল। জাহিদ স্যারতো বিদ্যুতকে সবার সামনে দাঁড় করিয়ে বললেন, “সাবাস, খুবই সুন্দর কবিতা লিখছো”। বিদ্যুত আড় চোখে আমার দিকে তাকালো। আমি মনে মনে বললাম, “জাহিদ স্যারের মুখে সাবাস শব্দটা শোনা সবার ভাগ্যে হয়না”।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর, এক বান্ধবীর জন্মদিনে সারপ্রাইজ উপহার হিসেবে তাকে নিয়ে একটা গল্প লিখলাম। গল্পটা প্রথম আলোর ছুটির দিনেতে পাঠালাম। সর্বনাশ, ছাপা হল পত্রিকায়।

সেই থেকে কবিতা লেখা বাদ, লুতুপুতু টাইপ গল্প লেখা শুরু। আর মাঝে মাঝে যখন মাথায় রবীন্দ্রনাথ নাড়া দেয় করে তখন লিখি গান।

আমার এক ছোট বোন তখন সংগীত নিয়ে পড়াশুনা করতেছে। আমার লেখা একটা গান খালি গলায় গেয়ে ফেসবুকের ম্যাসেঞ্জারে ওকে পাঠালাম। জবাবে ও সঙ্গীতের বেশ কিছু টার্ম ইউজ করে ফিরতি ম্যাসেজ পাঠালো। বেশির ভাগ টার্ম আমার চোদ্দ গুষ্টিতে কেউ শোনে নাই। তবে ম্যাসেজের ভাবার্থ যতটুকু বুঝলাম, আমার গানে অসংখ্য ভুল আছে। আমি বুঝলাম, গান লেখাটা অত সহজ জিনিস না!!!

গতকাল রাতে বউ বলতেছে, ইউটিউব থেকে একটা গান ডাউনলোড করে দিও তো।
-কোন গান?
-আরে, তুমি যে সবসময় গুনগুন করো। ওই যে, “চাই স্বপ্নের অপমৃত্যু হোক বন্ধ...”। আচ্ছা, ওইটা কার গান?
-আমি বললাম, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
বউ কেমন করে যেন আমার দিকে তাকালো। আমি কথা ঘুরিয়ে নিয়ে বললাম।
-স্যরি, ওইটা রবি চৌধুরির গান।

গল্পের পেছনের গল্পঃ
প্রথমবার ডেটিং থেকে ফিরে মজাহার ভাই আমাকে বললেন, “ধন্যবাদ ভাই”।
-ধন্যবাদ কিসের জন্য।
-অনেকদিন ফোনে ফোনে প্রেম করার পর গতকালই প্রথম ডেটিং এ গেছি। কি দিয়ে কথা শুরু করব বুঝতেছিলাম না। পরে আপনার কথা দিয়ে শুরু করলাম। বললাম, আপনি আজব সব গান লেখেন। আপনার ওই গানটাও শোনাইলাম, “একটুখানি ভালোবেসে ধরবি আমার হাত...”। আমার গার্লফ্রেন্ড বলল, "ও বুঝছি, ভাইয়ের গানের নাম করে আপনি আমার হাত ধরতে চাচ্ছেন। নেন ধরেন"।

আমার নামে ছাপা হওয়া প্রথম কবিতাটা আমার ছিলনা। এই কথাটা বহুবার বন্ধুদের বলার চেষ্টা করেও বলা হয় নাই । আজকে বলে ভাল লাগছে। তবে, যা কিছু হয় ভালোর জন্যই হয়। ওই কবিতাটা সেদিন ছাপা না হলে হয়তো, মজাহার ভাইয়ের কাছে আজকের ধন্যবাদটা পাওয়া হত না...!!
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে মে, ২০২১ রাত ৮:০৭
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×