somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

থিয়েটার

০৮ ই আগস্ট, ২০২১ রাত ১:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গিয়াস স্যারের কানমলা খাওয়ার পর থেকেই ভাবতেছি, অন্যায়টা কি করলাম? একুশে ফেব্রুয়ারীর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য স্যার প্রিপারেশন নিয়ে আসতে বলছিলেন। আমি নাচ-গান কিছুই পারিনা। কি মনে করে একটা নাটকের স্ক্রিপ্ট লিখে আনছিলাম। স্ক্রিপ্টটা পড়েই হলরুমের সবার সামনে স্যার কান ধরে একটা ঘুড়ানি দিলেন। পাশেই হেডস্যার বসা ছিলেন। জিজ্ঞাস করলেন, ‘কি হইছে’? গিয়াস স্যার বললেন, “এই বদমাইস ২১ ফেব্রুয়ারীর নতুন ইতিহাস লিখছে।
-ছাত্ররা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল বের করলে পুলিশের গুলিতে শহিদ হলো সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার। কিছুক্ষন পর ছাত্র জনতা পুলিশকে পাল্টা ধাওয়া করল! পুলিশের অস্ত্র কেড়ে নিয়ে তাদের উপর আক্রমণ করলো!! দুই পক্ষের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর অবশেষে পাকিস্তানীরা পরাজিত হলো!!! বাংলাদেশ স্বাধীন হলো”!!!

আমি আসলে চাইছিলাম যে করেই হোক শেষ দৃশ্যে বাংলাদেশকে জয়ী দেখাতে। তাকিয়ে দেখি হলরুমের সবাই হো হো করে হাসতেছে। হেড স্যার আমাকে প্রচণ্ড ভালোবাসেন। মুচকি হেসে বললেন, “ভালই লিখেছিস”। গিয়াস স্যারকে বললেন, “শেষ অংশটুকু বাদ দিয়ে, শহিদরা যখন মাটিতে পড়ে থাকবে তখন আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো গানটা এড করে দেন। আর এই নাটিকাটাই রাখেন অনুষ্ঠানের শুরুতে”।

যাক, নিজের লেখা নাটিকায় প্রথমবারের মত মঞ্চে উঠেছি। গুলি খেয়ে মৃত পরে থাকা অবস্থায় আলগোছে চোখ মেলে দেখি, দর্শকরা হা করে তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে। সে এক অসাধারণ অনুভুতি। ডিসিশন নিলাম, থিয়েটার এর সাথে যুক্ত হতে হবে।
আমাদের এলাকায় তখন ইমান আলী ভাইয়ের নাটকের দলের খুব নাম ডাক। একদিন তার এক নাটকের আগে গ্রীনরুমে গিয়ে ভাইকে বললাম, “ভাই, মঞ্চ নাটকের প্রতি আমার ভীষণ আগ্রহ। আপনাদের নেক্সট নাটকে যদি আমাকে সাথে নিতেন”।

ইমান আলী ভাই স্ক্রিপ্ট ছাড়াই নাটক করেন। আমাকে বললেন, “নেক্সট নাটক কেন, আজকেই মঞ্চে তুলে দিচ্ছি”। ওইদিন তিনটা দৃশ্যে আমি মঞ্চে উঠলাম, যদিও আমার কোন ডায়ালগ ছিল না।

প্রথম দৃশ্যে আমি, আমার গরীব বাপসহ এক নেতার বাড়িতে গেছি ত্রাণ আনতে। দ্বিতীয় দৃশ্যে, আমি প্যারালাইসড হয়ে মঞ্চের এক কোনায় পড়ে আছি। আমার বাপ কান্নাকাটি করে সেই নেতার বিরুদ্ধে আল্লাহ্‌র কাছে বিচার দিচ্ছে। তৃতীয় দৃশ্যে, চাদরে ঢাকা আমার লাশ পড়ে ছিল মঞ্চের কোনায়। আমার বাপ কেঁদে-কেটে লাশ দাফনের জন্য সবার সাহায্য চাচ্ছে।
দর্শক সারি থেকে সেদিন অনেকেই টাকা দিয়েছিল। ইউএনও স্যার একশত টাকার দুইটা চকচকে নোট দিয়েছিলেন। একটা নোট এখনো আমার কাছে সযত্নে রাখা আছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর, কম্পাস নাট্য সম্প্রদায়ে যোগ দিলাম। কয়েকদিন রিহার্সেল করার পর বুঝলাম, আমি আসলে অভিনয়ে অত ভাল না। ফলে, আমার কপালে জুটতো খুবই ছোট ছোট সব চরিত্র। কখনো বাড়ির কাজের ছেলে, পথচারী, রিক্সাওয়ালা, পাকিস্থানি হানাদার বাহিনীর সিপাহী। অভিনয়ে সুযোগ কম পাওয়ায় আমার বরং ভালো হয়েছে। বেশিরভাগ সময় আমি কাজ করতাম প্রোম্পটিং, পোস্টারিং, মাইকিং, লাইটিং আর মঞ্চসজ্জায়।

মিথ্যা বলবো না, খুবই খারাপ লাগতো নাটক মঞ্চায়নের দিন। অডিটরিয়ামের উইংয়ে দাঁড়িয়ে দেখতাম সোমা, নীলা, মৌ আপু, লিটু ভাই, দোয়েল ভাই কি অসাধারণ অভিনয় করতেছে, কি নিপুণ তাদের এক্সপ্রেশন। ইশ! আমিও যদি এরকম কোন চরিত্রে সুযোগ পেতাম।

যাক, শেষমেশ অপেক্ষার পালা শেষ হলো। শৈলেশ গুহ নিয়োগীর “বিবাহ বিভ্রাট” নাটকে প্রথমবার বড় কোন চরিত্রে সুযোগ পেলাম। নায়কের শ্বশুরের চরিত্র!!
এই নাটকের পর ক্ষুধা আরো বেড়ে গেল। কম্পাসের নতুন নাটক “শেওলা মানুষ”। জাহিদ স্যার, শুরু থেকেই প্রধান চরিত্রের জন্য অপু ভাইকে ঠিক করে রেখেছেন। অপু ভাই আমাকে খুব ভালোবাসেন (কোন কারন ছাড়াই আমি এই জীবনে প্রচুর মানুষের ভালোবাসা পাইছি)।
অপু ভাই স্যারের কাছে আমার নাম রিকমেন্ড করলেন। ব্যাপারটা স্যারের পছন্দ না হলেও শেষ পর্যন্ত রাজি হলেন। টানা দুই মাস রিহার্সেলের পর নাটক মঞ্চে গেল। আজিমপুর গোরস্থানের নরখাদক খলিলের সত্য ঘটনার ছায়া অবলম্বনে নাটকটা দর্শক ব্যাপক পছন্দ করলো। সর্বনাশ!! বেস্ট পারফরমারের পুরস্কার পেলাম আমিই!!!

দর্শকের অনুরোধে টানা ২য় বার নাটকটা মঞ্চে আনা হলো। আমি ফোয়ারাকে ফোন দিলাম। জিজ্ঞাস করলাম, নাটক দেখতে আসবে কিনা। সাথে মজা করে যোগ করলাম, নাটকের শেষ দৃশ্যে নরখাদক খলিল যখন জেল থেকে ফিরে আসে, তখন আবেগে তার বউকে জড়ায় ধরে কান্নাকাটির একটা দৃশ্য আছে।
সে রেগে গিয়ে বলল, “যামু না তোমার নাটক দেখতে। বিয়ের আগে যত মন চায় টাল্টিবাল্টি করে নাও। বিয়ের পর তোমারে ঠিকমত টাইট দিমু”। আমি অবশ্য ভাবছিলাম, সেদিনের টাইট দেয়ার কথাটা সে মজা করে বলছে।

গল্পের পেছনের গল্পঃ
এবার ঈদের নামাজ থেকে এসে আমি আমার ছেলেকে কোলে নিয়ে বসে আছি। দেখি, আমার ছেলে ঘুমের মধ্যেই মুখ বাঁকা করে একশ রকম এক্সপ্রেশন দিচ্ছে।
ইচ্ছে হচ্ছিলো,সোমা , নীলা, মৌ আপু, দোয়েল ভাই, লিটু ভাইকে ফোন করে বলি, আমার ছেলের এক্সপ্রেশন দেখে যান। আমার ছেলের এক্সপ্রেশনের কাছে আপনাদের এক্সপ্রেশনের কোন খাওয়া নাই। যদি কোনদিন আমার ছেলে থিয়েটার করে, আপনাদের মতই হয়তো মানুষকে অভিনয় দিয়ে মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখবে।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই আগস্ট, ২০২১ বিকাল ৪:২৯
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস-পরীক্ষার হলে দেরিঃ পক্ষ বনাম বিপক্ষ

লিখেছেন BM Khalid Hasan, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



বর্তমানের হট টপিক হলো, “১ মিনিট দেরি করে বিসিএস পরীক্ষার হলে ঢুকতে না পেরে পরীক্ষার্থীর স্বপ্ন ভঙ্গ।” প্রচন্ড কান্নারত অবস্থায় তাদের ছবি ও ভিডিও দেখা যাচ্ছে। কারণ সারাজীবন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

×