somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছোটগল্পঃ 'ভুল বর্ষন'

২১ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৮:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১.
গতরাত থেকেই আকাশটা অন্ধকার। হয়তো শেষ রাতেও বৃষ্টি নেমেছে। টিপ টিপ এই বৃষ্টিটা দিপুর খুব অসহ্য মনে হয়। তবুও বৃষ্টি দেখছিল দিপু। একবার ঘুম ভেঙে গেলে সবার ঘুম আসে না, দিপু ঐ টাইপের।

দিপু জানেনা, কখন সকাল গড়িয়ে দুপুর হয়ে গেছে। বাইরে শুধু মেঘ জমেছে কিছুটা, বৃষ্টি বাড়েনি। বিছানা থেকে নেমে দরজাটা খুলে টলতে টলতে রাস্তায় নেমে আসে দিপু। ওর সামনের রাস্তাটা হঠাৎ সমুদ্র হয়ে যায়। সমুদ্রে ঢেউ বাড়ে, তুমুল ঢেউ দিপুকে ভাসিয়ে নিতে চায়। তবু ও সামনে হেঁটে যায়। মোড়ের দোকান পর্যন্ত ওকে যেতেই হবে।

বৃষ্টি বাড়ছে। ঘোলাটে চোখে আকাশটা অন্যরকম লাগে। আকাশ থেকে নেমে আসা বৃষ্টির বড় বড় ফোঁটার দিকে তাকিয়ে তুশির কথা বড্ড মনে পড়ে দিপুর। ঠাণ্ডা লাগলেও ওকে তুশির সাথে বৃষ্টিতে ভিজতেই হবে। সাথে দিপু না ভিজলে খুব মেজাজ খারাপ হতো তুশির। তুশির খুব অল্পতেই মেজাজ খারাপ হয়। রাগলেও ওকে সুন্দর লাগতো। দিপু মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে রাগিয়ে দিত তুশিকে। তুশি প্রাণপণ চেষ্টা করতো না রাগার, শেষ পর্যন্ত পারতো না।

কিন্তু, সেসব যেন আরেক জন্মের কথা। যেন এই জন্মে তুশি নামে কেউ ছিল না কখনো। দিপু আজকাল প্রায়ই তুশির মুখ মনে করতে পারে না। এক আকাশ মেঘের নিচে দাঁড়িয়ে আজ হঠাৎ তুশিকে দেখতে খুব ইচ্ছে হয় দিপুর।

২.
সারার খুব ক্লান্ত লাগছে হঠাৎ। তিন ঘণ্টা পরীক্ষা দেয়ার পর ভর দুপুরের এই টিপ টিপ বৃষ্টিটা আরো মেজাজ খারাপ করছে ওর। কলেজ থেকে রিকশা পেতেও আজ এত দেরী হল! মোড়ের দোকানটা পার হয়ে গলিতে ঢুকতেই সারা দেখলো দিপু মাতালের মতো টলতে টলতে আসছে। হঠাৎ বুকের ভিতরটা ধক করে উঠলো সারার। দিপু যেন দুই হাত তুলে ওকে ডাকছে। কোন কিছু বোঝার আগেই দিপু রাস্তায় আছড়ে পড়ে। সারা দৌড়ে দিপুর কাছে গিয়ে দেখে জ্বরে ওর গা পুড়ে যাচ্ছে। বিড়বিড় করে কিসব বলে যাচ্ছে দিপু। সারার খুব কান্না পাচ্ছে। ও অল্পতেই কেঁদে ফেলে। কেন যে কাঁদছে, ও নিজেও জানে না।

দিপুকে অনেক কষ্ট করে টেনে হিঁচড়ে দাঁড় করায় সারা। ওর হাত ধরে টেনে বাসার দিকে নিতে নিতে সারা বুঝতে পারে এইজন্যেই এই কয়দিন দিপুকে দেখেনি ও। নিশ্চয়ই জ্বর নিয়ে বাসায় বসে ছিল। আঙ্কেল আন্টিও খাগড়াছড়িতে। ওর যে জ্বর এসেছে, ও একবারও বলতে পারলো না? পাশের ফ্ল্যাটের একটা বেল টিপতেই এত কষ্ট ওর? দিপুর উপর খুব রাগ হয় সারার। রাগলে সারার খুব কান্না পায়।

দিপুকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে পুরো ঘরটা দেখে সারা। উফফ! ছেলেগুলো এত অগোছালো হয়! থাক। ঘর পরে গোছানো যাবে। রান্না ঘরে দেখে এসেছে, নুডুলস আছে এক প্যাকেট। নিশ্চয়ই খাবার কিনতে দোকানে যাচ্ছিল ! না খেয়ে আছে, তবু কাউকে ডাকবে না। এই ছেলেগুলোকে মাঝে মাঝে থাপ্পড় দিতে ইচ্ছে হয় সারার। নুডুলস চুলায় দিয়ে বালতিতে পানি নিয়ে আসে ও। মাথায় এখনি পানি না দিলে মনে হয় ওর মাথাতেই নুডুলস রান্না করে ফেলা যাবে। জানালা দিয়ে খানিকটা আলো এসে দিপুর মুখে পড়ছে। আধো অন্ধকারে ওর মুখটা দেখে বুকের ভিতরটা কেমন করে ওঠে সারার। এখনও বিড়বিড় করে কি যেন বলছে দিপু। সারা ওর মুখের কাছে কান নিয়ে যায়। কেমন মিষ্টি একটা গন্ধ দিপুর গায়ে। সারার খুব ভালো লাগে। দিপুর আরও কাছে আসে সারা। ও শুনতে পায়,
“তুশি... শোন... তুশি...”

সারার বুকের ভিতরটা হু হু করে ওঠে। ও কাঁদবে না। আজ কিছুতেই কাঁদবে না। জানালা দিয়ে বাইরে তাকায় ও। অঝর ধারায় বৃষ্টি হচ্ছে আকাশ জুড়ে। আজ বৃষ্টিতে ভিজবে ও। বৃষ্টির পানিতে চোখের পানি দেখা যায় না।

অন্ধকার ঘরে এক দুঃখী অপ্সরীর চোখ ঝাপসা হয়ে আসে। তবুও ও কাঁদবে না আজ !!


- আইভান

প্রথম প্রকাশঃ এখানে
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৮:০৮
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আইনের ফাঁকফোকর-০৩

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪২

যেকোনো চাকরির নিয়োগের পরীক্ষা চলছে। সেটা পাবলিক সার্ভিস কমিশন, বিভিন্ন সংস্থা, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক বা উপজেলা পর্যায়ের কোনো কার্যালয়ে হতে পারে। এই নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হতে পারে। একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সিকান্দার রাজার চেয়ে একজন পতিতাও ভালো।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৭

সিকান্দার রাজা কোকের বোতল সামনে থেকে সরিয়ে রাতারাতি হিরো বনে গেছেন! কিন্তু তাকে যারা হিরো বানিয়েছেন, তারা কেউ দেখছেন না তিনি কত বড় নেমকহারামি করেছেন। তারা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে দাবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×