somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

Heart & Soul

০৭ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১০:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




২য় পর্ব,


একটা চাকরির ইন্টার্ভিউ আছে আজ। অবশ্যই সরকারি নয়। একটা সময় ছিল সরকারি চাকরীকে নাকি কেউ তেমন একটা পাত্তা দিত না। জানি না সেটা কতটুকু সত্য। সময় স্রোতে এখন চাকরিটা সকলের জন্য অক্সিজেনের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। আমার আজকের ইন্টার্ভিউ মিলে প্রায় ৪০টার বেশি হয়ে গেছে কিন্তু চাকরির কোনো দেখা পাই নি। হিসাব করলে দেখা যাবে এটা আমার ৪৬তম চাকরি ইন্টার্ভিউ! আমাকে অনেকেই বলেছিল ব্যবসা করার জন্য কিন্তু ব্যবসায়িক কোনো জ্ঞান আমার মাঝে নেই। যাই হোক কথা না বাড়াই।

আমার সামনে অনেকেই বসে আছেন, এরমধ্যে এমন একজন বসে আছেন যার জন্য আমার এই অফিসে বসে থাকার মত অবস্থা আর নেই। উনার দিকে তাকালাম অনেকবার কিন্তু ভদ্রলোক মনে হয় আমাকে চিনেন নি। উনার নাম "ফরহাদুল হাসান" এবং তার সাথেই সুমির বিয়ের কথা চলছে। কোনরকম ইন্টার্ভিউ শেষ করে সোজা অফিস থেকে বেরিয়ে পরলাম। জীবনে অনেক কঠিন মুহূর্তের সম্মুখীন হয়েছি কিন্তু আজকের মতন না। যেন মনে হচ্ছিল আমি নিজেই নিজের কাছে লজ্জিত! হাটতে হাটতে অনেকদূর চলে এলাম। হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠলো। স্ক্রিনে দেখি নিধি কল দিয়েছে। প্রথমবার ইচ্ছা করেই ধরলাম না। ২য় বারে শেষ সময়ে রিসিভ করলাম। নিধি সালাম দিয়ে বললো, "স্যার আজকে বিকালে বাইরে যাবো, ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে যাবে, আপনি কি দুপুরে আসতে পারবেন?"
আমি বললাম, "ঠিক আছে তবে আজ আর আসবো না, কাল যাবো।"

ভার্সিটির দিনগুলোতে ফেরত আসা যাক। পরীক্ষার কয়েকদিন আগে হঠাৎ আমির ফোন করলো সেটাও আবার বাংলাদেশের কোড! আমি ফোন রিসিভ করতেই সে বললো, "কি রে আরু(আরাফ) কি অবস্থা তোর?"
আমি বললাম, "আগে বল তুই কি দেশে?"
- আবার জিগায়! ঘন্টা তিনেক আগে পৌছালাম।
আমি বলে দিলাম কালই যেন সে আমার সাথে ভার্সিটি দেখা করে। ওর খালার বাসা থেকে আসতে বেশি দুর হবে না। আমিরের সাথে দেখা হবে ভেবে খুব ভাল লাগছিল।

পরেরদিন, বিকালে আমিরের সাথে দেখা। কেমন যেন অদ্ভুত দেখাচ্ছিল ওকে। প্রথমেই জিজ্ঞেস করলাম, "তুই দেখি হালকা মোটা হইছিস রে!" একথা সেকথায় অনেক অনেক কথাবার্তা বলতে শুরু করলাম। এক পর্যায়ে বললাম, "আচ্ছা সুমির কথা মনে আছে?" সে বললো, "মনে না থাকার কি আছে?" আমি তাকে জানালাম সে এখন আমার ক্লাসমেট। শুনেই আমির অবাক হলো! তারপর বললো, "আর ওই পিয়ালের কি অবস্থা?" "বিশ্বাস কর, আমি পিয়ালের কথা ওকে জিজ্ঞেসই করি নি!"
আমার এমন কথায় সে বললো, "আরে তাই বলে জিজ্ঞেস করবি না? যেটাই হোক আমরা স্কুল ফ্রেন্ড না?" এখন ভাবছি কিভাবে জিজ্ঞেস করা যায়, পরে আমিরকে বললাম, "তুই বলিস ভাই। আমি সুর মিলাবো নে! এতদিন হয়ে গেল এখন কিভাবে জিজ্ঞেস করি?"
পরে সুমিকে কল করে বললাম, "তুই যদি ফ্রি থাকিস তাহলে মাঠে আয়, কিছু কথা আছে।"
ঠিক সাত মিনিটের মাথায় সুমি হাজির! আমরা তিনজন ঘন্টাখানেক এদিক সেদিক হাটলাম। একসাথে আচার, ফুসকা চটপটি খেলাম। দেখতে দেখতে কখন যে সন্ধ্যা ঘনিয়ে এল টের পাই নি। হাটাহাটি শেষে আমরা যখন ক্লান্ত হয়ে যাচ্ছি, শেষবারের মত চায়ের দোকানে বসলাম। একথা সেকথায় আমির সুমিকে প্রশ্ন পিয়ালের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলো। সুমি বললো, "তোরা তো অনেকেই ভেবেছিলি আমরা কাপল কিন্তু আমরা আসলে.... আমরা নয় আমি, আমি এমন ছিলাম না। সে এটা একটু বেশি সিরিয়াস নিয়েছিল। তোর মনে আছে না আরাফ সেদিনের প্রশ্নের কি উত্তর দিয়েছিলি? শেষের লাইনটা? "বেশি ঘনিষ্ঠ হলে সম্মান/বিবেক/বিচার লোপ পায়?" ভেবে নে এমনই কিছু একটা হয়েছিল যার জন্য আমি পিয়ালের সাথে কোনরকম যোগাযোগ আর রাখি নি। থার্ড ইয়ারের রিফাত, সেও তেমনটাই ভেবেছিল। দুইদিন কথা হেসে বলছি বিধায় সেও ভেবে নিয়েছে আমি তাতে মগ্ন হয়ে গেছি!"
ওর কথা শুনে বললাম, "এটা কি ওই ডিপার্টমেন্ট সাজানোর দিন?" এরপর সে বললো, "হুম, সেদিন রঙের বাটি হাতে নিয়ে বিভিন্ন আলপনা আঁকছিলাম, হঠাৎ রিফাত কে দেখে ভিতরে এসে শুধু সাহায্য করতে বললাম। কিছুক্ষণ একসাথে আলপনায় কাজ করার পরই সে তার হাতে রং মেখে হাটু গেড়ে বসে প্রপোজ করে বসল! মানে কি আর বলবো, আমি রাজি হই নি, পরে হাত ধরে ফেলল! বললো প্লিজ রাজি হয়ে যাও! তোরা বল এসবের মানে কি? এজন্য সেদিন আরাফকে ওই প্রশ্নটা করেছিলাম এবং আরাফ, তুই যে উত্তরটা দিলি সেটা আমার খুবই পছন্দ হয়েছে রে।"
মনে মনে বললাম, "তাহলে তোর জন্যেই আমার এত কথা শোনা লাগছিল সেদিন...!" আমি বললাম, "তোর উপকার করতে পেরে ভালই লাগছে এখন।
"তো ঠিক আছে, দোস্ত, আমার আজ যেতে হবে, অলরেডি ৯টা বেজে গেছে, যেতে আরও ঘন্টা ২ লেগে যেতে পারে। খুবই ভাল লাগলো তোদের সাথে দেখা করে, খারাপ লাগছে আকিবের সাথে দেখা হল না!" আমির এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে কথাগুলো বললো। দেশের বাইরে থাকা যে কতটা কষ্টের ওই সময়ে আমিরের চেহারাটা না দেখলে টের পেতাম না। আমিরকে বাসে উঠিয়ে দিয়ে আমরা যে যার হলের দিকে হাটছি। সুমিকে বললাম, "তোকে হলের কাছাকাছি পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আসি?"
"চল।"

সেদিনের পর থেকে সুমির সাথে চলাফেরার মাত্রাটা বেরে গেল! সুমি বাইরে কোথাও যেতে চাইলে আমাকে ছাড়া একবিন্দু নড়তে চায় না! বিষয়টা আমার ক্লাসমেটরা রীতিমত অন্যভাবে দেখা শুরু করলো! যেখানে যার সাথে দেখা হয় ক্লাস কিংবা লাইব্রেরি, খেলার মাঠ বা উন্মুক্ত মঞ্চ, ক্যান্টিন বা চায়ের আড্ডা! বেশিরভাগ সময় আমাকে শুনতে হতো, "ভ্যানিটিব্যাগ!" আমি এর আগেও বলেছি "আমার এসব শুনার অভ্যাস আছে, এইমাত্র শুনে পরেই ঝেরে ফেলি!" আমার অবাক লাগে, ক্লাসের মেয়েরা বা সিনিয়রদের কোনো কথা কানে আসে নাই নাকি সুমির!

একদিন বিকালে, কাঠ ফাটা গরমে পায়ের কাছে ছোট টেবিল ফ্যানটা চালু করে বিন্দাস এক ঘুম দিচ্ছিলাম। মোবাইলের ভাইব্রেশনে ঘুম ভেঙে গেল স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখি সুমি কল দিয়েছে! রিসিভ করতেই বলল, "তোর হলের আশেপাশে আছি, দেরি না করে চলে আয়, দরকার আছে।" কাটায় কাটায় ১০সেকেন্ড কথা বলে কেটে দিল! মনে হয় লাউডস্পিকারে কথা বলেছে তাই ঠিক ১০ সেকেন্ডেই কল কাট!
আমি বের হতেই সুমিকে আসতে দেখলাম। সুমি হাত নাড়িয়ে কি যেন ইশারা করল ঠিক বুঝতে পারলাম না। আমিও তার দিকে হাটা শুরু করলাম।
- কি এমন দরকার যার কারণে আমার কাচা ঘুম নষ্ট করা লাগলো?
- আরে না তেমন কিছু না, এই ভাল লাগছিল না তাই ভাবলাম তোকে ডাকি!
এটা শুনে সেদিন খুবই রাগ উঠেছিল। তারপর বললাম, "তুই যদি ছেলে হতিস তাহলে তোর হাড্ডি একটাও ভাল থাকতো না, বেধে লিমিটলেস মাইর দিতাম..."
সে খিলখিল করে হেসে দিল! হাটতে হাটতে হঠাৎ খেয়াল করলাম সুমির হাতে একটা ছোট একটা ব্যাগ! আমি জিজ্ঞেস করলাম, "কি আনছিস ওটায়?"
- পরে দেখিস আগে একটু বসি, আয়।
সুমি বলতে শুরু করলো, "আনিকা আজ আমার মজা নিছে সবার সামনে!"
আমি বললাম, "তোরে নিয়ে মজা নিতে পারে ওরা? কবে থেকে?"
- এটা কিছুদিন হল! আচ্ছা, শুনলাম তোকে নাকি ক্লাসের কয়েকজন ভ্যানিটিব্যাগ বলে?
এটা বলেই আবারও খিলখিল করে হেসে দিল! এমন হাসি যে আর থামেই না। পরে বললাম,
"এমন সব শব্দের সাথে ছোটকাল থেকেই অভ্যস্ত আমি! ভুলে যেতে ভালবাসি।"
- নারে, নামটা অদ্ভুত সুন্দর!
আমার বসে থাকতে একদমই ভাল লাগছিল না বলে বললাম, "আমার মাথা ব্যথা করছে, চা নিই আমরা? নাকি তুই নিবি না?"
সে এক চান্সেই রাজি হয়ে গেল! চায়ে চুমুক দিতে দিতে খেয়াল করলাম সুমির চেহারায় কেমন যেন অস্থিরতার ভাবে ছেয়ে আছে! আমি জিজ্ঞেস করতেই বললো, "কিছু না!"
আবার আরেকবার হাটার কথা বললো। অনিচ্ছা সত্ত্বেও হাটা শুরু করলাম। এরপর সে মুখ খুললো,
- অনেকদিন হল তোকে একটা কথা বলবো কিন্তু বুঝতে পারছি না কিভাবে বলি!
আমি বললাম, "যা বলার ডিরেক্ট বল, ভাল/খারাপ আমি কিছু মনে করবো না।"
- তুই কি বুঝতেছিস না কি বলতে চাচ্ছি? তার অবাক করা প্রশ্ন!
আমিও বললাম, "আমি কিভাবে জানবো কি বলতে চাস?"
সুমি আর কিছু বলল না। কেমন যেন একদম চুপ হয়ে গেল! অনেক সময় হাটার পর সুমি থেমে গিয়ে বললো, "অনেকক্ষণ চুপ করে ছিলাম, আর সহ্য করতে পারতেছি না, এক কথায় বলে দিচ্ছি তোকে আমার খুব ভাল লাগে, ভালবাসি!!!!!"
চুপচাপ থেকে হঠাৎ এমন কথা শুনে আমিও চুপ হয়ে গেলাম! কিছুক্ষণপর বললাম, "ক্লাসের সবার সামনে আমাকে অপমান করতে চাস?"
সুমি অবাক হয়ে বললো, "অপমান করবো কেন? কি বলিস এসব?"
- কখনও নিজেকে আয়নার সামনে দেখেছিস? কিভাবে ভাবিস তুই আমাকে নিয়ে?
- কিভাবে কি ভাববো?
- দোস্ত তুই আমাকে এসব বলে অপমান করিস না প্লিজ। আচ্ছা, আমার কথা ছাড়, অন্তত নিজেকে অপমান করিস না সবার সামনে।
আমার কথা শুনে কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থাকলো। আমিও দেখলাম চোখজোড়া শুধু অপেক্ষা করছে কখন ঢেউ ভেঙে আছড়ে পরবে! এরপরই আমার গালে সে তার ডানহাত দিয়ে বেশ জোড়ে একটা চড় বসিয়ে দিল! কিছু বোঝার আগেই সে "সরি" বলে চুপচাপ তার হলের দিকে হাটা শুরু করলো। আমিও উল্টা হাটা দিলাম। কেউ কিছু দেখলো কিনা সেটার দিকে আর নজর দিলাম না। কিন্তু খুব কান্না পাচ্ছিল আমার! কেন যে এমন হয়েছিল সেটা আজও জানতে পারি নি!


এরপর বেশ কয়দিন সুমি আর কথা বলে নি আমার সাথে। আমি দেখতাম ক্লাসে আসতো হাসিখুশি মুখে, সবদিকে তাকায় কিন্তু আমি যেদিকে থাকি সেদিকে সে তাকায় না! হয়তো আমাকে দেখেই আমার দিকে তাকায় না! এরকম আরও কিছুদিন চলতে থাকলো। লাঞ্চটাইমে একদিন বসে বসে নিজের জন্য কিছু সাজেশন তৈরি করছিলাম। হুট করে কোত্থেকে যেন সুমি এসে ব্যাগটা বেশ জোরে রেখে দিয়ে বললো,
- মামুষ এতটা চামার, কসাই কিভাবে হতে পারে?
আমি সোজা উত্তর করলাম, "কেন? কি হয়েছে?"
- তোর সাথে কথা বলছি না আজ ১৫ দিন রানিং! এরমধ্যে একবারও কি তোর মাথায় আসে নি বা মনে পরে নি আমার কথা?
- আমি আগেও বলছি, এখনও বলছি, প্লিজ নিজের মান সম্মানের ফালুদা/তামাশা বানাস না। আমার এসব কিছু মনে হয় না কিন্তু তোর সাথে এমন কিছু হলে প্রেস্টিজ থাকবে না।
বেশ মনমরা হয়ে বসে পরল সুমি! আমি আবারও বললাম, "তুই আগেও যেমন ছিলি, এখনও আমার নজরে তেমন আর ভবিষ্যতেও থাকবি।"

কেন যেন মনে হচ্ছিল আমি বড্ড একাকী হয়ে আছি এই সুন্দর নির্দিষ্ট দেয়ালের মাঝে! সুমি ধীরে ধীরে আবারও আমাকে এড়িয়ে চলা করলো। যেখানে যাকেই দেখি সেই হাসি মুখ! একাকী হয়তো আমিই আছি।
চিন্তা করলাম সুমিকে একটা কল করার। মোবাইল বের করতেই অচেনা নাম্বারের কল এসে গেল! হ্যালো বলতেই,
- আল্লাহর লাখ লাখ শুকরিয়া যে তোরে পাওয়া গেছে!!
কণ্ঠটা খুবই পরিচিত আমার, চিনতে একদমই কষ্ট হল না। বুঝে গেলাম এটা আকিব!
- আমার নাম্বার কি তোর কাছে নাই?
- আরে সিম হারাইছি কিন্তু নাম্বারটা মনে ছিল শুধু লাস্ট ডিজিটটা ছাড়া!
- কি অবস্থা তোর?
- পরে, আগে আন্দাজ কর আমি কই আছি?
আমি ভেবে বললাম, "তুই কি বাসায়?"
"ধুর বলদ.....! আমি সাভার ক্যান্টে আছি এখন!" শুনেই মনটা খুশিতে ভরে গেল। আকিব আরও বললো, "ভাইরে দুই ঘন্টার একটা গ্যাপ পাইছি, তোর সাথে দেখা করুম, কই আছিস বল আমি দশ মিনিটের মধ্যে আসতেছি!"

ঠিক দশ মিনিতেই হাজির সে! আমি আকিবকে দেখে রীতিমত হা হয়ে গেছি! তিন বছরে কি চেঞ্জ আসছে চেহারায়! মনে হচ্ছে আরও লম্বা হয়েছে। প্রথমেই বললাম, "আর্মি দেখি তোরে একদম ফিট আর টাইট বানাইছে! কাটায় কাটায় আসছিস!"
সে বললো, "ভাই রে এই ট্রেইনিং যে কি জিনিস কেমনে বুঝাই তোরে কিন্তু যত যাই হোক জীবনটাই চেঞ্জ হয়ে গেছে রে! আমি এখন লেফটেন্যান্ট রে পাগলা। ইনশাআল্লাহ আরও সামনে আগাবো!"
আমি বললাম, "দাড়া, এই খুশিতে তোকে একটা স্যালুট না দিলে হয়ই না।" আমি স্যালুট দেয়ার পর বললো, "উহু, স্যালুট হয় নাই, ফেল!"
আমি বললাম, "তাতে কি হাত উচা করলেই হইলো!" এই বলে হেসে দিলাম। সে বললো, "হ এইজন্য ১ম বার ছুটি পাই নাই, স্যালুট টেস্ট ফেল করছিলাম, ২য় টেস্টে পাশ করে ৪দিন ছুটি পাইছি!" আকিব তার মিলিটারি লাইফের বিভিন্ন অভিজ্ঞতা শেয়ার করলো। উঠতে বসতে সিনিয়ারদের র‍্যাগ, ৩০সেকেন্ড লেট হলেই পানিশমেন্ট, লিমিটেড খাওয়া আরও কত কি! আকিব বললো, "সব কথার আগে বল তুই কেমন আছিস? আমিরের কাছ থেকে শুনলাম সুমি নাকি এখন তোর ক্লাসমেট?"
"হুম... শুধু তাই না, পুরা ক্লাসের মধ্যে সে একমাত্র আমাকেই বেশি বিশ্বাস করে!"
- কি বলিস এইসব? কেমনে সম্ভব?
- আমি নিজেও জানি না! এমনকি ক্লাসের কেউই জানে না আমরা কলেজ থেকে একসাথে আছি!
- কল দে ওরে, দেখা সাক্ষাৎ করি?
"আচ্ছা।" এই বলেই সুমিকে কল দিলাম এবং সাথে সাথে রিসিভ! মনে হল মোবাইল হাতে নিয়েই বসে ছিল।
"দোস্ত, আকিব আসছে, আয় অল্প কিছুক্ষণ আড্ডা দিই?" এর কিছুক্ষণ পরেই সুমি হাজির।
সুমিও আমার মত একই প্রশ্ন, "এটা কি আকিব? চেনাই যাচ্ছে না!"
ঘন্টা দেড়েক ঘুরাঘুরি আর আড্ডার পর আকিব বললো, "কিরে সুমি, তোরে এখানে কেউ প্রপোজ করে নাই?"
এটা শুনে সুমি আগে আমার দিকে তাকালো! আমি আস্তে গলায় ঢোক চিপলাম। আকিব আবারও বললো, "ক্যাম্পাসে এত এত পোলাপান তারপরও কাউকে ভাল লাগে নি তোর?"
সুমি আমার দিকে তাকিয়ে বললো, "একজনকে খুব পছন্দ হয়েছিল কিন্তু রিজেক্ট করে দিছে আমাকে!"
"মানে? কেডা সে? কার এত বড় সাহস তোরে না বইলা দেয়?" এরসাথে আরও কত কি যে যোগ করে আমারই নামে কত কি বলা শুরু করল!
শেষমেশ থামলো "আমার হাতের কাছে আন ওরে, পিটায়া সাইজ করে দিব নে...." এই বলে।
সুমি বললো, "কি করবি তুই যদি ওর নাম বলি?"
- আমি যেসব কমব্যাট শিখছি আর যত রাগ আছে সিনিয়রদের উপর সব ঢেলে দিব ওই শালার ওপর...!
- আচ্ছা?
- সিরিয়াসলি বলতেছি।
আমি ধীরে ধীরে সরে সরে হাটা শুরু করলাম। এরমধ্যে সুমি বললো,
"ঠিক আছে, তোর পাশে যে হাটতেছে তার উপর যাবতীয় স্কিল আর রাগ ঝেরে ফেল...!"
আকিব থেমে গেল! বিস্ময় নিয়ে বললো, "মানে? কিছু বুঝলাম না!" একটুপর আমার দিকে তাকিয়ে আকিব বললো, "সিরিয়াসলি আরাফ?"
সুমি বললো, "শুরু কর, যা যা এতদিন শিখেছিস সব এপ্লাই কর ওর উপর!"
আকিব বলল, "সময় নাই রে, না হলে সব ঝেরে ফেলতাম আজ! সমস্যা নাই, একমাসের জন্য এখানে আছি। কোনো একদিন আবার দেখা হবে, আর ঈদ তো আছেই।"

আকিবকে বিদায় জানিয়ে সুমিকে বললাম, "কেন তোর এসব কথা বলার দরকার ছিল?"
সে বললো, "কথা বলার মানুষ পাচ্ছিলাম না, অনেকদিন হল জমা রাখছি আর কত? সারাদিন কত জনের সাথেই তো কথাবার্তা হয় তারপরও তো একা একা লাগে! থাক তুই বুঝবি না।"
আমি চুপচাপ শুনলাম। পরে বললাম, "হল পর্যন্ত যাই?"
উত্তরে বললো, "দরকার পরবে না। আসি, ক্লাসে দেখা হবে।"

সপ্তাহ দুই পর, হুট করে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ব্যাপক খারাপের দিকে গেল! বিভিন্ন ক্যাম্পাসে ছাত্র, পুলিশসহ আরও নানা ধরনের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া চলতে লাগলো। বিকালের মধ্যে খবর আসলো ক্যাম্পাস বন্ধ এবং রাতের মধ্যে সকল ছাত্রছাত্রীকে হল ত্যাগের নির্দেশ দেয়া হল। সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হবে বলেও শুনেছিলাম। হল থেকে বের হয়ে রওনা দিলাম বাস স্ট্যান্ডের দিকে। কাউন্টারের কাছাকাছি আসতেই সুমি ফোন করলো,
"একটা উপকার করতে পারবি?"
আমি বুঝে গেছি ততক্ষণে সে কি উপকার চাচ্ছে! তবুও বললাম, "জলদি বল।"
"টিকেট করে দে প্লিজ।" আমি জানতাম সে এটাই বলবে। রাত ১১টার বাসে টিকেট করলাম আমাদের দুইজনের। আকিবকে কল করে জানিয়ে দিলাম না হলে হাজারটা ইন্টার্ভিউ দিতে হতে পারে।

প্রত্যেকটা বাস আসতে লেট হচ্ছিল। সুমি বললো, "সিট কোথায় নিলি? সামনে? আর জানালা না পেলে খবর আছে তোর..."
আমি টিকেট বের করে ওকে দিয়ে বললাম, "এই দেখে নে, টিকেটের অনেক ডিমান্ড আছে আজ, তুই না গেলে কমপক্ষে এক হাজার টাকায় এই সিচুয়েশনে এই সিট বিক্রি করা যাবে।"
সে হেসে বললো, "প্রপোজ তো একসেপ্ট করলি না, অন্তত আমরা যাতায়াত তো একসাথে করতে পারি? নাকি সেটাও দিবি নি?"
এমন সময় কাউন্টার থেকে জানানো হল, "১১ নম্বর বাসের যাত্রীরা রেডি হোন, বাস এসে গেছে!" ঘড়ি দেখে সুমিকে বললাম, "আজকের জার্নিটা করে নিই? তারপর বোঝা যাবে বাকিটা!"

বাস চলতে শুরু করলো, সুমি কানে ইয়ারফোন দিয়ে গান শুনতে লাগলো আর আমি সামনে তাকিয়ে হেল্পার আর ড্রাইভারের মাঝের বোঝাপড়া বুঝার চেষ্টা করতে লাগলাম। হেল্পার বারবার কয়েকটা কথা বলছিল তারমধ্যে কিছু ছিল এমন "ওস্তাদ বরাবর যায়/ডাইনে গাড়ি/হর্ণ দিয়া/বাম্পারে বাম্পারে যায়" এমন আরও নানান কথা! একটু পরপর হেল্পার তার বৃদ্ধাঙ্গুলিতে পরা আঙটি দিয়ে আওয়াজ করে যাচ্ছিল। এরইমধ্যে সুমি বললো, "আচ্ছা আমি তোর সাথে জার্নি করতেছি কেন?" আমিও জিজ্ঞেস করলাম কেন? সে বললো, "আরে এতটা রাস্তা, টুকটাক কথাবার্তা বলে সময় কাটাই? এমন চুপ করে থাকতে ভাল লাগে?" আমি বললাম ঠিক আছে বলতে থাক আমি শুনতেছি!
সেদিনই হয়তো আমি প্রথমবারের মত ওর সমস্ত কথা মনোযোগ দিয়ে শুনলাম। এক এক করে সব বললো সুমি! পিয়ালের সাথে কি হয়েছিল, ডিপার্টমেন্টের বড় ভাই কি কি বলেছে আরও কত কথা! এর কথা যেন শেষ হয় না। বাস ফেরিতে উঠে পরলো কিন্তু তার কথার যেন শেষ নেই! ফেরির টপ ডেকে বসে বাতাস, প্রকৃতি আর পদ্মার গর্জন সব মিলিয়ে এক অসাধারণ অনুভূতি! শুধু যানজটে আটকে না গেলেই হলো।আর এখনও সুমির কথা চলছেই! দেখতে দেখতে ফেরি দৌলতদিয়ার পারে এসে গেল! আমি বললাম, "তোর টায়ার্ড লাগে না?"
সে দাত বের করা হাসি দিয়ে বললো, "কি জন্য টায়ার্ড লাগবে?"
বাসে উঠে আমার চোখ আস্তে আস্তে বন্ধ হওয়ার উপক্রম হচ্ছিল। সুমিকে আকুতি মিনতি করলাম যেন এবার একটু ঘুমাতে দেয় আমাকে!
আমার একটা বদ অভ্যাস আছে। আসলে এটা বদ অভ্যাস কি না জানি না কারণ বাস না চললে আমার ঘুম লাগে না আর বাস থামলেই ঘুম ভেঙে যায়! এখনও তাই হয়েছে! সুপারভাইজার কে ডেকে বললাম বাস থেমেছে কেন? সে বললো ফজরের নামাজ বিরতি! আমিও উনাকে বলে নামাজের জন্য গেলাম। নামাজ শেষে আবার বাস চলতে শুরু করলো। পূর্বাকাশে তখন ভোরের আলো ছড়াচ্ছে। সুমির মাথাটা একটু একটু করে আমার কাধের দিকে আসছে। ওরদিকে একটু মনোযোগ দিয়ে তাকালাম। দেখতে থাকলাম আর ভাবতে শুরু করলাম মানুষ ঘুমালে কি নিষ্পাপ ই না লাগে! কেন যেন আমি চাচ্ছিলাম না তার ঘুম ভাঙুক! কেয়ার করলাম কিছুটা সাথে দেখতে লাগলাম আধার ভেঙে আলোকিত হওয়া আকাশটাকে...!

সপ্তাহ দুই পরে, একদিন দুপুরে আকিব কল করে বললো বিকালে কলেজ মাঠে দেখা করার জন্য। আমিও ঠিক সময়মত চলে গেলাম! হঠাৎ করে কে যেন আমার উপর ভর করে চলতে শুরু করলো! পিছনে ঘুরতেই দেখি আমির! জিজ্ঞেস করলাম কবে আসছিস তুই? সে বললো, "এয়ারপোর্টে নেমেই শুনলাম ৪০মিনিট পর নভোর টাইম! আর দেরি করি নাই সোজা ল্যান্ড করলাম এখানে সকাল বেলায়।"
আকিব এসে আমিরের সাথে তাল মিলিয়ে শুরু করলো সুমিকে নিয়ে কথা বার্তা বলা! সেই সাথে আমার ব্রেনওয়াশ করা। আমি বারবার বললাম, "আমি ওর উপযুক্ত না রে ভাই, বুঝতেছিস না কেন?" আকিব বললো, "তাহলে সত্যি একটা কথা বল?"
- কি বলতাম? আমি সত্যি ছাড়া মিথ্যা বলছি আজ পর্যন্ত তোদের?
- আমার বিশ্বাস আছে, আকিব বললো
- কি বলতাম?
আকিব বললো, "পুরা ঘটনাই তো বললি জার্নির শুধু একটা কথা বলিস নি!"
আমির অত্যন্ত কৌতূহল নিয়ে বললো, "কি বলে নাই সে?"
"বাস থেকে সুমি নেমে যাওয়ার পর তোকে কল করে কিছু বলে নাই?" আকিবের কথা শুনে বললাম, "তুই কি করে জানিস? সুমি বলছে তোকে?" আমির বললো, "যেই বলুক, সুমি কি বলছে?"
সুমিকে বিদায় দিয়ে সে যে সিটে বসে ছিল সেটায় বসলাম। তারপরই সুমির কল এল, "একটা কথা বলি?"
- হুম বল,
- তোর ব্যবহার আর আমার সাথে কথা বলার টোনটা আমাকে বাধ্য করে এটা ভাবতে যে তুই আমাকে খুব দুরের মনে করিস! এমন ভাবে আমার সাথে কথা বলিস যেন এক মিনিট হল আমরা পরিচিত হইছি।
- তুই ভুল বুঝতেছিস..
- থাক, কথা শেষ করলাম, ধন্যবাদ সবকিছুর জন্য।
এটাই বলছে সে!
এটা শুনে আমির বললো, "কিছু বলার নাই তোকে!" আকিব বললো, "আমি জানি, কিছুটা হলেও তুই ওর কথা ভাবিস। আমাদের বলিস না কারণ আমরা এখন আর একসাথে আড্ডা দিতে পারি না বলে হয়তো!"
আমি বললাম, "এমন কিছুই না, তোরা আমাকে ভুল বুঝলি।" আমির বললো, "তাহলে শুদ্ধ প্রমাণ কর নিজেকে? কল করে সরি বল?"
"সেটা স্যার বলবেন না, অনেক বড় ইগো তার! যাই হোক আর কোনো কথা লম্বা করবো না। চা সিগারেট খেয়ে বের হয়ে যাই। বেশ টায়ার্ড আমি!" আকিব বললো।

সেদিন রাতে ঘুম আর ঠিকমত হল না। অনেক চেষ্টা করলাম ওর কথা মাথায় না আনার জন্য কিন্তু হচ্ছিল না! এসব ভাবতে ভাবতে ফজরের আযানও হয়ে গেল! বিকালে বাইরে হাটতে বের হলাম। অনেক সাহস করে সুমিকে কল করলাম। সে রিসিভ করেই বললো,
"কি অবস্থা তোর?"
আমি সরাসরি বললাম, "আমি কয়েকটা কথা বলতে কল করছি।"
"হুম বল।"
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম, "আমি আসলে খুবই দুঃখিত আর লজ্জিত তোর কাছে! আসলে.." সে আমাকে থামিয়ে দিয়ে বললো, "এ এক মিনিট এক মিনিট, হইছে কি তোর আজকে? সরি কেন?"
- আমার করা খারাপ ব্যবহার এর জন্য। আমি জানি আমি কোনোদিনই ভালভাবে কথাবার্তা বলি নি তোর সাথে। এজন্য খুব সরি!
এক নিশ্বাসে কথা গুলো বলে ফেললাম। এসব শুনে সুমি বললো, "হঠাৎ করে তোর মধ্যে এমন চেঞ্জ আসলো কিভাবে?"
এর উত্তর তো আমার কাছে নেই! তাই বলে দিলাম, "তুই বুঝবি না! আর আবারও সরি।" এই বলে কল কেটে দিলাম। কেমন যেন হার্টবিট বেড়ে গেছে মনে হচ্ছে! কেমন যেন অস্থিরতা কাজ করছিল এই ভেবে যে কিছু উল্টাপাল্টা বললাম না তো আবার? যাক সেসব, এরপর হাটতে শুরু করলাম। হাটতে হাটতে আকিবের কল! রিসিভ করলাম, "কি রে তুই কি সিটি পার্ক রোডে নাকি?" আমি আশেপাশে তাকিয়ে দেখলাম আকিব আছে কিনা কিন্তু দৃষ্টিসীমায় পেলাম না! বললাম, "হ্যা তুই ও কি আশেপাশে?"
"হয়, দাঁড়া, একসাথে দৌড়াই, আসতেছি দুই মিনিট!"
কিছুক্ষণের মধ্যেই চলে আসল আকিব।
"আমি যাচ্ছিলাম, তোকে দেখে অটো থেকে নেমে গেলাম। আয় দুই রাউন্ড দৌড়াই, দেখি এখন পারিস নাকি আমার সাথে?"
আমি বললাম, "এখন কি পারবো তোর সাথে?"
আমরা দৌড়াতে শুরু করলাম এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই আমি কাহিল হয়ে গেলাম, শরীর আর চলে না চলে না ভাব! আকিব বললো, "একসময় আমি পারতাম না তোর সাথে কিন্তু সময় পাল্টাইছে না?" আমি হাপাতে হাপাতে বললাম, "এজন্যেই তুই ফিট আর আমি ফ্যাট! আয় বসি কোথাও.."
সুমির সাথে কথা হয়েছে এটা জানালাম না। জিজ্ঞেস করলাম কবে ছুটি শেষ কবে? বললো দুইদিন পর। আর আমি এরপরের দিন যাচ্ছি। কিন্তু এবারও যে সুমি আবারও সফরসঙ্গী হতে যাচ্ছে সেটা আর বললাম না।

বাসা থেকে বের হওয়ার সময় আম্মু এবার আমাকে একা ছাড়তে নারাজ! বাস স্ট্যান্ড পর্যন্ত যাবেই। তারপর আর কি করার, আম্মুও আসলো সাথে। গিয়ে দেখি সুমির সাথেও ওর আম্মু আছে! সুমিকে দেখে আমার কানে কানে আম্মু বললো, "ওহ আচ্ছা এইজন্য আমাকে আসতে দিচ্ছিলি না? বুঝলাম!" আমি বললাম, "না আম্মু এমন কিছু না, আর ওকে তো তুমি অনেক আগেই থেকে চেন..." কিন্তু সুমির আম্মু আমাকে এই প্রথম দেখলো! সবার সাথে কথাবার্তা এবং বিদায় দিয়ে বাসে উঠে পরলাম।
সিটে বসার সাথে সাথে সুমির কথা শুরু, "আচ্ছা আমি না হয় আম্মুকে সাথে করে কাউন্টার পর্যন্ত আনতেই পারি কিন্তু তুই কোন দুঃখে আন্টিকে নিয়ে আসলি?"
- তো কি করবো? জিদ ধরে ছিল বাসে উঠার আগ পর্যন্ত দেখবে আমাকে!
- বাপরে বাপ! আন্টিতো সেই! আন্টি কি বলছে তার শিশু বাচ্চাটার খেয়াল রাখতে?
- আর পচাইস না রে, মাফ চাই!
সুমি একটু পরপর একথা ভেবে হেসেই যাচ্ছিল।
যাত্রাবিরতিতে খুব কফি খাওয়ার ইচ্ছা হল। সুমিকে বললাম সেও রাজি! কফিতে চুমুক দিতে দিতে সুমি বললো, "আচ্ছা সেদিন তুই হুট করে কল দিয়ে সরি বললি যে?"
- মনে হল বলা উচিৎ তাই বললাম
"এমন তো হচ্ছে না যে তুই আমার প্রেমে পরতেছিস?" কেন যেন একথা শুনে আমার কাশি চলে এল! "আরে কি হল? আচ্ছা থাক কিছু বলবো না আমি.. এই যে টিস্যু নে।" আমি দেখলাম সুমি খুব কষ্টে হাসি থামিয়ে রেখেছে! বললাম, "হেসে নিতে পারিস, তাও এমন করিস না।"

সেদিনের সফরটা এভাবেই শেষ হল। কেমন যেন মনে হচ্ছিল আসলেই আমি সুমির কথা খুব বেশি মনে করছি আগের চেয়ে। আর ওর কথা মনে হওয়ার জন্য একমাত্র দায়ী আকিব আর আমির। আমিরকে কিছু বলতে পারবো না কারণ থাকে বিদেশ কিন্তু আকিব কে যা ইচ্ছা বলতে পারবো! দিলাম কল, রিসিভ করতেই বললো, "কিরে দোস্ত কি খবর?" আমি এত খবর দিতে বা নিতে পারবো না তাই সোজা একগাদা গালাগাল করে কল কেটে ফোন বন্ধ করে দিলাম। এবার চিন্তা করুক কেন এমন করছি!
বিকালে আবারও হাটতে বের হলাম আর তখনই সুমির সাথে দেখা! সামনে এসে কথার মেশিন চালু করে দিল, "তোর মোবাইল কোথায়? কতবার কল করতেছি, মেসেজ দিচ্ছি কিন্তু বন্ধ পাচ্ছি কেন?" আরও নানান কথা।
আমি বললাম, "আকিবকে কল করে অনেক গালাগালি করছি তো তাই ফোন অফ করে রাখছি আর চালু করতে মনে নাই!"
"এখন চালু কর, দেখবি কত টেক্সট আসবে!"
শান্ত গলায় বললাম, "ঠিক আছে আমাকে তো পেয়ে গেছিস? এখন তো আর ফোনের দরকার নাই?" এরপর একসাথে হাটা শুরু করলাম। সেও শুরু করলো বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা! এরমধ্যে জানালো উচ্চশিক্ষার জন্য দেশের বাইরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। হঠাৎ করে কথা থামিয়ে বললো, "শোন, তোকে আমিও কিছু কথা বলতে চাই, সোজা সোজা উত্তর দিবি?"
আমি সম্মতি জানালাম। সে বলতে শুরু করলো,
- যদি দেশের বাইরে যাওয়ার সুযোগ পাই, আমার সাথে কথা বলা বন্ধ করবি না তো?
- সেটা কেন করবো? হ্যা যদি আমেরিকা যাস তাহলে দেখা গেল ঘুমের জন্য কথা হল না! এছাড়া ওকে।
- ভুলে যাবি না তো?
আমি বুঝতে পারছিলাম সে আসলে কি বলতে চাচ্ছে! উত্তরটা কেমন করে দিব চিন্তা করছিলাম। পরে বললাম, "ওখানে গেলে তো তুই নিজেই আমার কথা ভুলে যেতে পারিস, ব্যস্তও থাকবি!"
- হয়তো খুব তাড়াতাড়ি চলে যাবো তাই স্বল্প সময়ে আরও একটা প্রশ্নের উত্তর দিবি?
আবারও সম্মতি জানালাম।
- সত্যি করে বল, আমাকে কি তোর একদমই পছন্দ হয় না? তুই ভাল করেই জানিস এখানে আমি একমাত্র তোকেই সবচেয়ে বিশ্বাস করি।
আমি আর ঘুরিয়ে ফিরিয়ে কিছু বললাম না। সরাসরি বললাম, "ভালবাসি কিনা জানতে চাস, তাই তো? হুম ভালবাসি, ভাল লাগে তোকে, খুব! আর এবার সত্যিই বলছি, বানিয়ে না!"
এরপর আমি উল্টা দিকে হাটা শুরু করলাম। এরচেয়ে বেশি কিছু বলার নাই। সুমির দিকে তাকিয়ে থেকে কথা বলতে পারি না। দৃষ্টি সবসময় ওর নাক/ঠোট আর বেশিরভাগ সময় এদিকে সেদিকে থাকে, ইমোশনাল হওয়ার আগে চলে এলাম। ফোন চালু করতেই একেরপর এক সুমির টেক্সট! এরই মধ্যে আকিবের কল! রিসিভ করতেই বললো, "কি রে তুই এত গালাগাল দিলি কেন? কপাল ভাল তোরে রিপ্লাই দিতে পারি নাই কারণ ব্যাটালিয়নের সাথে ছিলাম।"
আমি বললাম, "দোস্ত সুমিকে সব বলে দিছি!"
- মানে? সব মানে?
- সরি বললাম আর সেই সাথে ভালবাসা কথাও! ফ্রি হয়ে দেখা করিস অনেক কথা আছে তোর সাথে।
আকিবকেও কিছু বলতে দিলাম না। হেটেই যাচ্ছিলাম সেদিন যে পর্যন্ত পা চলতে পারবে!


(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১০:৩৫
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×