somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"যশোর"

১৩ ই মার্চ, ২০২১ রাত ১১:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




অভ্র যাদের সামনে বড় গলায় বলতো মীম তার গার্লফ্রেন্ড, তার কথা মতই চলে এখন তাদের সামনে দাঁড়ানো তো পরের কথা, কোনরকম তাকানোর অবস্থাও নেই অভ্রের! মিল্লাত বন্ধুটাও পাশে এসে বসে না! জনপ্রিয় সেই নাম "অভ্র ভাই" আজ অনেকের কাছে কেমন যেন অচেনা! হঠাৎ করেই খুব একা হয়ে গেল সে। সুমনা মেয়েটাও কথা বলে না! অভ্র কাউকে বুঝতে দেয় না ভিতরে কি চলছে তার, সবখানে স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করে কিন্তু সবাই তো তাকে চেনে কিন্তু দেখে না!

হামজা একদিন ক্লাস থেকে বের হয়ে দেখে অভ্র একা একা বসে আছে! ঝুঁকি সত্ত্বেও অভ্রের কাছে গিয়ে ডাক দিয়ে বলল,
"ভাই যদি দুই মিনিট সময় থাকে কিছু কথা বলতাম আপনাকে, প্লিজ!" অভ্র ঘড়িতে তাকিয়ে ১২০ থেকে উল্টা গুনতে শুরু করল!
হামজা সামনে এসে বলল, "ভাই, মীমের সাথে শুধুমাত্র স্বাভাবিক কথাবার্তা হয় যা একজন নরমাল ছেলে-মেয়ের মাঝে হয়! বিশ্বাস করেন ভাই আমি তাকে পছন্দ করি না, না সে আমাকে পছন্দ করে! আর আমি এমন ভাবতেও পারি না। আমি এসবের যোগ্য নই ভাই!"
অভ্র বলল, "৩০ সেকেন্ড!"
"ভাই আমার যা বলার বলে ফেলছি, আমার মন ইংরেজি S এর মত পেঁচানো নয়, এটা আরবি হরফ আলিফের মত সোজা!"
অভ্র আবারও বলল, "১৫ সেকেন্ড!"
অভ্র আর কিছু বলল না, পরে হামজা বলল, "সময় শেষ? আসি, আল্লাহ হাফেজ, আল্লাহ তায়ালা আপনার ভাল করুক।"
অভ্র বসেই রইল! হামজার খারাপ লাগছে কারণ অভ্র তাকেই শত্রু ভাবছে! গেট দিয়ে বের হতেই মীম ডাক দিল কিন্তু হামজা থামলো না! হামজা ডাক শুনেছে তবুও অভিনয় করে নিল। মীম কল করল, একের পর এক কল! কোনরকম দ্রুত হেটে হামজাকে ধরে ফেলল। মীম জিজ্ঞেস করল, "কি হল ডাকছি কানে যাচ্ছে না নাকি নিচ্ছো না?"
হামজা বলল, "মুড ভাল না, রুমে যাচ্ছি।"
"যাকে কখনও মুড অফ মুডে দেখিই নি সে আজ মুড অফ করে হেটে যাচ্ছে!! অবিশ্বাস্য!"
টঙের দোকানে বসে হামজা বলল, "আরে ওই অভ্র আমাকেই কালপ্রিট ভাবে তোমাদের দুইজনের মাঝে! তার কথায় সে বুঝাতে চায় আমার আর তোমার মাঝে রিলেশনশিপ চলছে যা আমি কল্পনাতেও ভাবি না কখনও!"
মীম কিছুক্ষণের জন্য চুপ হয়ে গেল। খামোশভাবে থাকতে দেখে হামজা জিজ্ঞেস করল, "তোমার আবার কি হয়েছে?"
"কিছুই না!"


শীতের সকাল, রসায়ন ৪৬তম ব্যাচের বিদায়কাল! মিল্লাত দেখলো অভ্র অনেকদিন পর বেশ খুশি। সবার সাথে হাসি মুখে কথা বলছে। সেদিন মীম অনেক খোঁজাখুঁজি করছিল হামজাকে। অনেকবার কল করেও পায় নি! অনুষ্ঠান শেষে অভ্রের সামনাসামনি হল হামজা! হামজা কিছু না বলে পাশ কাটিয়ে যাবে তখনই অভ্র ডাক দিল তাকে।
"হামজা! এখন তুই আর মীম...." হামজা তাকে থামিয়ে দিয়ে বলল, "ভাই অনেক হয়েছে মীমকে নিয়ে বাজে মন্তব্য আপনার। আমি হাজার বার বলছি মীমকে আমি বন্ধু ছাড়া কিছুতেই দেখি না। আপনি যে নজরে মানুষ দেখেন আমার নজর এমন না।"
এমন সময় মীম উপস্থিত! হাপাতে হাপাতে বলল, "আরে তুমি এখানে আর আমি দুনিয়া খুঁজে বেড়াচ্ছি তোমাকে!" অভ্র দেখছে মীমকে কিন্তু মীমের নজর হামজার দিকে! সে আবারও বলল, "একটা কথা বলার জন্য খুঁজছিলাম তোমায়।"
হামজা বলল, "হুম বল, কি হয়েছে?"
"আমি আর না বলে থাকতে পারছি না!" অভ্র তাকিয়ে দেখছে মীমের অস্থিরতা। যেন অনেকদিনের জমানো কথা জমাট বেধে আছে! হামজার মাথায় বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। সে শুধু চিন্তা করছে মীম কি বলে ফেলবে আর অভ্র কি ভেবে নেবে! অনেকক্ষণ পর মীম বলল, "সরি কিন্তু আমার মনে হয় তোমাকে অনেক ভালবেসে ফেলেছি!" এতটুকু কথা অভ্রের মেজাজ রক্তগরম করে দেয়ার জন্য খুবই বেশি! হামজা নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না! কিছুক্ষণ আগেই অভ্রের সামনে হামজা যা যা বলল মীম এক নিমিষেই সব ধূলিসাৎ করে দিল! অভ্র হামজার দিকে তাকিয়ে আছে! হামজা ধমক দিয়ে বলল, "আমি কখনও বলছি তোমাকে ভালবাসি বা কোন ফিলিংস?" অভ্র হামজার কাধে হাত রেখে বলল, "হয়েছে হামজা, আর নাটক করতে হবে না, অনেক কিছু বুঝলাম।" হামজা বলল, "আরে ভাই আপনি তো সবসময়ই বেশি বুঝেন! জিজ্ঞেস করেন মীমকে আমি কোনদিন তাকে নিয়ে প্রেম ভালবাসা কখনও ভেবেছি কিনা!"
মীম রেগে বলল, "ওই তোমার কাছে উত্তর চাইছি আমি? বলেছি নাকি আমাকেও জানাও তুমি ভালবাসো কিনা? এত এডভান্স ভাবো কেন?"
অভ্র হাটা দিল, তার সহ্য হচ্ছে না এখানে দারিয়ে এমন সব কথা শোনা! মীম অভ্রকে পুরানা কথাই ফেরত দিল। সে আর কোথাও দারালো না। এক হাটায় গেটের বাইরে চলে গেল। বুঝতে পারল মীমের মনে অভ্রের জন্য এক বিন্দু ভালবাসাও জন্মায় নি!


হামজা রুমে এসে সোজা শুয়ে পরল। আতিক তার অস্থিরতা দেখে জিজ্ঞেস করল, "কি হয়েছে? এত অস্থির কেন?"
হামজা ঢকঢক করে পানি শেষ করে বলল, "ভাই মীম আজ আমার সর্বনাশ করে দিছে!"
আতিক বিস্মিত হয়ে বলল, "কি!!!! তরে রেপ করে দিছে! তুই তো ইতিহাসের...."
"আরে ভাই আমার বলার মানে ওটা না! আপনি বুঝেন নাই কি ঘটনা?" "না!"
হামজা বলল, "আর বইলেন না, অভ্র ভাই আর আমি কথা বলে পুরানা বিষয় গুলা ক্লিয়ার করছিলাম তখনই কোত্থেকে মীম এসে ডিরেক্ট আমাকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে বসল!
আমি যাকে নিয়ে কখনও অন্য নজরে দেখি নি সে কিভাবে আমাকে এমন প্রস্তাব দিতে পারে বলেন?"
আতিক এতক্ষণ ধরে হামজার কথা শুনে চেহারায় বিরক্তিকর রেখা এনে বলল, "তুই কি মাইয়া? স্কুলে পড়িস?"
হামজা চুপ হয়ে গেল! বলল, "কেন ভাই?"
"বলদ, মীম নিজে এসে বলছে তোরে, কোনো ছ্যাঁচড়ামি তো করিস নাই তুই?"
"হ্যা সেটা তো করি নাই।" হামজা বলল।
"হ্যা তো অভ্রকে সাইডে রাখ, নিজেকে প্রশ্ন কর, আল্লাহ আমাদের সবাইকে ভাল মন্দ বিচার করার জন্য এই ব্রেন দিছেন, তাই ব্রেনরে কাজে লাগা। অভ্রের কথা ভেবে লাভ হবে না, মীম যদি আসলেই তারে পছন্দ করতো তাহলে আমরা বুঝতাম।"


বন্ধুরা মিলে রাতে খাওয়ার আয়োজন করেছে। ব্যাচমেটরা মিলে আড্ডা গানে রাত পার করে দেয়ার প্ল্যান রেডি। অভ্রের ফোনে একেরপর এক কল দিয়েই যাচ্ছে বাকিরা! মিল্লাত অনেক চেষ্টা করেও অভ্রের সাথে যোগাযোগ করতে পারে নি। আড্ডাগান থেকে একটু সাইডে এসে হামজাকে কল করল সে। রিসিভ করতেই বলল,
"আজ কি অভ্রকে দেখছিস? অনেক ফোন করতেছি কিন্তু শালা রিসিভই করতেছে না!"
"আসলে ভাই...."
হামজা মিল্লাতকে সবকিছু বিস্তারিত বলল। সবকিছু জানার পর মিল্লাত অভ্রকে কল দিল না। একা ছেড়ে দিল!


"কি রে ভাই? একাই বসে আছিস ছাদে?" হুজাইফা জিজ্ঞেস করল। "কিছুই না আবার অনেক কিছু!" হুজাইফা হামজার দিকে বলল, "কিছু তো অবশ্যই হয়েছে তাও আবার বিরাট কিছু! শিওর।" হামজা সমস্ত ঘটনা খুলে বলল। হুজাইফা সিগারেট ফেলে দিয়ে বলল, "তুই তো সিগারেট টানিস না, না হলে ফিলিংসের সাথে অনেক কথা শেয়ার করতে পারতাম।"
হামজা বলল, "তোরে ছাড়া এটা শেয়ার করবো কার সাথে?"
"শোন, সোজা কথা বলি, যদি আসলেই তোর মনে মীমের জন্য কোনো ফিলিংস থেকে থাকে তাহলে প্রকাশ করে দে আর যদি না থাকে তাও বলে দে। কিন্তু কারও ভয়ে সত্য গোপন করা কিংবা অনুভূতি প্রকাশ না করা এটা খুবই খারাপ অভ্যাস। আজ অভ্র বলদের জন্য মীমকে ছেড়ে দিবি, কাল আরেক মীমের তোর বউ হবে তার পিছনেও যদি আরেক অভ্র থাকে তখনও কি ছেড়ে দিবি? সত্যকে ফেইস করতে হবে না?"
হামজা অনেক্ষণ চুপ থেকে বলল, "তাহলে কি বলে দিব?" হুজাইফা বলল, "আমাকে বলিস কেন? তোর মনে যা আছে সেটাই বলবি, হ্যা অথবা না।"
হামজা বলল, "তুই তো ওকে দেখিস নি তাই না?" "না!"
"ঠিক আছে, তাহলে পরশু বিকালে তাকে দেখাবো কিন্তু বাসার কাউকে জানানো যাবে না!"

হঠাৎ একদিন মিল্লাতের ফোনে কল আসলো অভ্রের! রিসিভ করতেই অভ্র বলল, "চলে যাচ্ছি! বিকাল ৪টার বাস, শ্যামলী কাউন্টারে আসবি?"
মিল্লাত সম্মতি জানালো।
ঠিকঠাক সময়ে মিল্লাত কাউন্টারে এল। অভ্র ভিতরে ডাক দিল তাকে। মিল্লাত জিজ্ঞেস করল, "যাওয়ার ডিসিশন নিলি অথচ আগে জানাস নি কেন?"
অভ্র সিগারেট জ্বালিয়ে বলল, "কি আর হবে বাদ দে!" মিল্লাত আর কিছু বলল না।
অভ্র বলল, "আবার কবে দেখা হবে এটা জানি না তাই আমার কোন ব্যবহারে মনে কষ্ট পেয়ে থাকলে আমাকে মাফ করে দিস!"
মিল্লাত ভাবতে লাগল এটা কি সেই অভ্র কিনা! অভ্র আবার বলল, "এবার চাকরির প্রিপারেশন নিব। অনেক সময় নষ্ট হয়েছে।"
শেষ বারের মত চির বিদায় ভেবে মিল্লাতকে জড়িয়ে ধরে বাসে উঠে গেল অভ্র!


"তারপর হুজাইফা? কেমন লাগল?"
হুজাইফা বলল, "কি বলবো? ভাষা নাই রে ভাই!"
হামজা বলল, "এজন্যেই ভয় লাগে। কারণ আমার সাথে যায় না সে। তুই যদি অভ্রকে দেখতি তাহলে বুঝতি পারফেকশন কেমন হতো!"
"এ ভাই, বারবার অভ্র অভ্র করিস কেন? তুই জানিস অভ্র থেকে কতগুণ ভাল তুই?"
হুজাইফা আবার বলল, "তোরে আমি চিনি ছোট থেকেই, একসাথে বড় হইছি, খেলছি, মারামারি করছি। আমার চেয়ে ভাল কি অভ্র জানবে তোরে?"
হামজা বলল, "ম্যাচ করে না যে!" হুজাইফা বলল, "ম্যাচ কোনো কিছুই করে না, ম্যাচ করে নিতে হয়।" "তাহলে কি করব এখন? আমি এসব দিকে খুব ভিতু!"
"হুম, এটা আমি জানি। আচ্ছা বাসায় কথা বলবো?" হামজা ভয় পেয়ে বলল, "আরে ভাই, আমার কলিজা অর্ধেক এখনই উড়ে যাচ্ছিল! কি কথা বলবি তুই? বাদ দে, চাকরি বাকরি হলে বিয়ের কথা কইস। আরও দশ বছর অপেক্ষা কর ভাই!"


"তাহলে আমি হ্যা বলে দিব?" বাসস্ট্যান্ডের কফিশপে বসে হামজা জিজ্ঞেস করল।
"শোন ভাই, ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা কর, চোখ বন্ধ কর, দেখবি ওর চেহারাই বারবার ভেসে উঠবে! পরে দেখবি কাজে মনোযোগ দিতে পারবি না!" হুজাইফা বলল। "চল ঠিক আছে, যাই করি তোকে জানাবো।"
হুজাইফাকে বাসে উঠিয়ে দিয়ে বাসার দিকে হাটা দিল হামজা। হুজাইফার কথাগুলো চিন্তা করতে থাকলো। যেদিকে তাকায় মীমের সাথে কাটানো হাসি মুহূর্তগুলো ভেসে বেড়াতে থাকে। চিন্তা করছে এবার গিয়ে মনের কথা বলেই দিবে!


"আমার এরোগেন্স, একরোখা ভাব আজ আমাকে এপর্যন্ত এনেছে! সবসময় নিজের কথাই ভাবতাম। আমার ওয়াইফ যাকে আমি খুব ভালবাসতাম...." অভ্র চুপ হয়ে গেল। চোখের কোণা ভিজে গেল তার এতটুকু বলতে গিয়ে! ডা. নাজনীন কথাগুলো শুনল। উনি প্রশ্ন করলেন, "ভালবাসতেন মানে?" অভ্র বলল, "সেও আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। শেষ যেদিন আমার সাথে কথা হয়েছিল সে বলেছিল আমি আমার জীদের কাছে সবাইকে মাথা নত করাই! এমনটা যদি আমাদের বাচ্চাদের সাথেও আমি করে ফেলি তাই সেও আমাকে ছেড়ে দিয়েছে! আমি শুধু এখন ভাবি যদি ওই সময়টা ফেরত পেতাম যখন আমি কারও কথা শুনতাম না, সবার সৎ উপদেশ আমি না শুনে উড়িয়ে দিতাম, ওই সময়টা আরেকবার পেলে আমি সবার আগে মাফ চেয়ে নিতাম! আমার দুই হাত এখন নামাজেও উঠে না! অনেক কিছু চাওয়ার আছে কিন্তু মুখ দিয়ে বের হয় না। আল্লাহ তায়ালা আমার চরম শাস্তি দিচ্ছেন যার প্রাপ্য আমি!" ড. নাজনীন বলল, "আপনার ওয়াইফ যিনি ছিলেন উনি এখন কোথায়? জানেন কিছু?"
অভ্র বলল, "নাহ, আমি এখন শুধু আমার পুরানো বন্ধু মিল্লাতের সাথে দেখা করতে চাই! মিল্লাত একমাত্র ভাল করে বুঝে আমাকে! কত শাসন করেছে কিন্তু আমি শুনিনি!"
"ওকে, এবার আপনার রেস্টের পালা, রেস্ট খুবই জরুরী আপনার জন্য। যে অবস্থায় আপনাকে পেয়েছিলাম তাতে আমরা বেশ চিন্তিত ছিলাম।"


হামজা আজ বেশ চিন্তিত! আয়নার সামনে দারিয়ে কিভাবে কি বলবে সেটার চর্চা করে যাচ্ছে। কিন্তু নিজের সামনেই কিছু বলতে পারছে না মীমের সামনে কি বলবে! টেবিল ফ্যানটা সামনে রেখে দিল। এই অল্প সময়েই শরীর ঘেমে উঠেছে তার! কিছুই বলতে না পেরে রাগে পরিপাটি হামজা তার সুন্দর শার্ট বদলে সাধারণ কাপড় পরে নিল। ক্লাসের দিকে আগাতেই আতিকের সাথে দেখা! আতিক তাকে দেখে বলল, "ব্যাপার কি? বের হওয়ার সময় দেখি সেই পরিপাটি হচ্ছিল কিন্তু হঠাৎ কি হল তোর?" "আরে ভাই বইলেন না, মুড অফ বিকালে বলবো নে।"
সেদিন আর মীমের সাথে দেখা হয় নি। হামজা ভাবছে বেশ ভালই হয়েছে। হুজাইফাকে কল করে সমস্ত ঘটনা বলল। হামজার কথা শুনে হুজাইফা হাসতে থাকলো! শেষে বলল, "থাক, যদি কখনও সে কথা তোলে তখন বলিস!"

অভ্র চুপচাপ বসে আছে। মোবাইল বের করে মীমের ছবি দেখছে। বিদায়ের দিন কিছু ছবিতে মীমের চেহারাও উঠেছিল। এমন সময় মিল্লাত কল করে বলল, "সার্টিফিকেট নিবি না?"
"থাক না, যে কয়দিন ভার্সিটিতে থাকবে ততদিন হারানোর ভয় নেই!"
মিল্লাত হেসে দিল! বলল, "আচ্ছা আমি সামনের মাসে যাবো। তুই আসবি?"
"আমি এই বছরে আর আসছি না।"
মিল্লাত অবাক হয়ে গেল! বলল, "মানে? কি করবি তুই? মাস্টার্স করবি না? তোর না বাইরে যাওয়ার ইচ্ছা ছিল? নাকি বিসিএসের প্রিপারেশন নিচ্ছিস?" অভ্র বলল, "বিসিএসের প্রিপারেশন নিব। একটা অবস্থান দরকার, আমায় যেন "না" বলার সাহস কেউ পায় না।"
মিল্লাত বলল, "মানে? তুই কি মীমের কথা বলছিস?" "হুম, মীমকে আমার চাই। আমার ছাড়া আমি মীমকে অন্য কারও হতে দিব না।"
"পাগলামি করিস কেন?"
"পাগলামি না, সিরিয়াসলি বলছি! ও আমার না হলে আমি ওকে মেরে ফেলবে তারপর নিজেকে মারবো!" এতটুকু বলেই অভ্র কল কেটে দিল!
মিল্লাত মনে মনে বলল, "অভ্র, তুই তাহলে এখনও পাল্টাস নি!"


"তো আপনার রাতে ঘুম হয় না? এবং একই ধরনের স্বপ্ন ঘুরেফিরে দেখেন?" ড. আলপনা জিজ্ঞেস করলেন। "জ্বি ম্যাম! সেই দুইটা মানুষ, চেহারা দেখা যায় না, শুধু একজনের চোখজোড়া দেখতে পাই, কান্নাজরিত!"
ডাক্তার জিজ্ঞেস করলেন, "আপনার জীবনে এই দুইজনের সাথে আপনি কি কোনো খারাপ কিছু করেছেন?"
"ইক্সকিউজ মি?"
"আমার বলার কারণ হল এটাই যে ছোট কোনো কারণে এমন হবে না, নিশ্চিত বড় কোন ঘটনা লুকিয়ে আছে আপনার মধ্যে!" ড. আলপনার কথা শুনে অভ্র কিছু বলল না।
"তাদের জন্য আমি খুব ডিপ্রেশনে থাকতাম। তারা একে অপরকে খুব ভালবাসতো আর আমি ওই মেয়েটাকে ভালবাসি!" অভ্রের কথা শুনে বলল, "দেখুন সবসময় ওষুধ সব রোগের সমাধান হয় না, কিছু কিছু জিনিস আপনার নিজ থেকে সামলাতে হবে। নিজেকে ব্যস্ত রাখুন।"


একদিন ক্যান্টিনে বসে মীম হামজাকে জিজ্ঞেস করল, "আচ্ছা, ফিউচার প্ল্যান কি তোমার?"
হামজা বলল, "কনফিউজড! নিজেও জানি না কি করবো!" একটুপর হামজা আবার বলল, "ভাবছি সরকারি চাকরির জন্য প্রিপারেশন নিব!"
মীম হেসে বলল, "এসব কে ফিউচার প্ল্যান বলে না গাধা!"
"আরে বাদ দাও তো, যা হবে দেখা যাবে। আল্লাহ যেদিকে ইচ্ছা নিয়ে যাক, আমার কি প্রয়োজন আমার চেয়ে আল্লাহ বেশি ভাল জানেন।"
"তোমার এই কথাটাই আমার বেশি ভাল লাগে।"
হামজা জিজ্ঞেস করল, "কোনটা?"
"এই যে, কথায় কথায় আল্লাহ কে স্মরণ কর!"
হামজা বলল, "আমি এই সময়ের কথা ভাবি না, আমি আল্লাহর কাছে সবসময় বলি, এখন আমাদের সংসারে কোনো অভাব নেই, হাসি খুশিতেই দিন চলে যায়! যদি হঠাৎ কোনো কারণে অভাব চলে আসে তখনও যেন আমি আল্লাহর প্রতি এই ভরসা, আস্থা ভুলে না যাই। সবসময় যেন ভালভাবে চলি। ব্যস, এটাই আমার দরকার। যাই হোক, ক্লাসের টাইম হয়ে যাচ্ছে, তুমি থাকো, আল্লাহ হাফেজ!"

"আরে মি. অভ্র! কি অবস্থা আপনার? প্লিজ হ্যাভ এ সিট।" ড. আলপনা বললেন।
"জ্বি মোটামুটি চলে।"
ড. আলপনা লগ দেখে বললেন, "আপনি লাস্ট এসেছিলেন ৪০দিন আগে! তারমানে ১০দিন লেট!"
"সরি আসলে দেশের বাইরে ছিলাম, আর আপনি বলেছিলেন নিজেকে ব্যস্ত রাখতে তাই কাজের ব্যস্ততায় ছিলাম আরকি।"
"তো এর মধ্যে সেই স্বপ্ন গুলো ছিল? আর দেখেছেন?"
অভ্র খুশি হয়ে বলল, "না আর দেখি নি। আসলে আপনি এক মাস টাইম দিলেন আর আমি আরও দশদিন বেশি সময় নিয়ে নিলাম রেজাল্ট দেখতে। তাই নেগেটিভ আসল। ভালই লাগছে!" কথাগুলো শুনে ড. আলপনা বেশ খুশি হলেন। অভ্র বিদায় নিয়ে রুম থেকে বের হতেই ওর চোখ আটকে যায় সামনে চেম্বারের দুইপাশের সামনাসামনি বেঞ্চে! ঠিক সেই স্বপ্নের মতই পোশাক পরা দুই চেহারা ওর সামনে বসা! অভ্রের আর সাহস হল না পা বাড়ানোর! মুহূর্তেই একজন হাসতে শুরু করল আরেকজন কাঁদতে শুরু করল! অভ্র ভারসাম্যহীন ভাবে ড. আলপনার চেম্বারে ঢুকে পরল! চেহারায় অস্থিরতার ছাপ দেখে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, "আর ইউ ওকে মি. অভ্র?" অভ্র কথা বলতে পারছে না। শরীর কাঁপছে তার! ড. আলপনা তাকে বসালেন। পানি এগিয়ে দিয়ে বললেন, "কি হয়েছে?"
অভ্র জিজ্ঞেস করল, "কয়টা বাজে? টাইম কত?"
"ছয়টা উনিশ।"
পানি এক নিশ্বাসে শেষ করে বলল, "আপনার করিডোরের সিসি কন্ট্রোল কি আপনার কাছে?"
"জ্বি কিন্তু কেন?"
অভ্র হাপাতে হাপাতে বলল, "আমি তাদের এইমাত্র দেখেছি। ওই দুই সিটে, দুই পাশে বসা! তাকিয়ে ছিল! আপনি, আপনি এখন থেকে দশ পনেরো মিনিট আগের ফুটেজ দেখান আমাকে, প্লিজ!"
ড. আলপনা আশ্চর্য হয়ে গেল! অভ্রের চেহারা দেখে বুঝে ফেলেছেন কিছু একটা হচ্ছে তার সাথে! তিনি পনেরো মিনিট পূর্বের ফুটেজ চালু করলেন। অভ্র দেখে বলল, "ওই যে তারা দুইজন, ওইযে সিটে বসা! এরাই।" ড. আলপনা তাদের ডেকে পাঠালেন। তারা ভিতরে আসতেই অভ্রকে জিজ্ঞেস করলেন, "এরাই কি ছিল?"
অভ্র ভয়ে ভয়ে ঘুরে তাকিয়ে দেখল, "এরা কারা? ওই দুইজন কোথায়?"
"মি. অভ্র এরাই ওই সিটে বসে ছিল! আপনার সামনেই তো ডাকলাম তাদের!" ড. আলপনা বলল।
"চেহারা কিভাবে চেঞ্জ হল?"
তাদের একজন বলল, "কি হয়েছে কিছুই বুঝলাম না! এভাবে হয়রানি করার মানে কি আমাদের? আমার ওয়াইফ প্রেগন্যান্ট!"
ড. আলপনা বললেন, "আমি খুবই দুঃখিত আপনাদের এভাবে ডাকার জন্য। জালাল, তুমি তাদের নিয়ে যাও।"
অভ্র চেয়ার টেনে বসে পরল। কি হচ্ছে তার সাথে কিছুই বুঝতে পারছে না! অভ্র তার এসিস্টেন্ট আমিনকে কল করে ভিতরে আসতে বলল। আমিনকে বলল, "ওই দুইজনকে ফলো কর। তাদের সমস্ত তথ্য আমার কাছে নিয়ে এসো রাতের মধ্যেই। লোক লাগিয়ে দাও দ্রুত!"

[চলবে]
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মার্চ, ২০২১ রাত ১১:৫৬
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×