somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বেকারত্বের দিনগুলি - চতুর্থ অংশ

১৪ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৮:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




আমি বহুবার বিভিন্ন বইয়ে কিংবা দেয়ালে বা নাটক-সিনেমায় শুনেছি বা দেখেছি মানুষ একাকী চলতে পারে না। এ বিষয়ে আমার খুবই দ্বিমত ছিল কারণ আমি একাকী চলতে পারতাম। অর্থাৎ আমার কাছে তখন পর্যন্ত একাকী চলা বলতে শুধুমাত্র গুটিকয়েক বিষয় ছিল। এই ধরেন অফিস টু বাসা এবং বাসা টু অফিস! দিব্বি আরামে চলছে আমার জীবন! ধীরে ধীরে আমার আশপাশ থেকে মানুষ কমতে লাগতো কারণ সবাই যে যার জীবন গোছাতে ব্যস্ত। ছুটির একটা দিনে বিছানা থেকে কিংবা আত্ম-আরাম আয়েশ থেকে নিজেকে বাড়ির বাইরে বের করা মানসিক পরিশ্রমের এক কষ্টসাধ্য কাজ! কেন এসব বলছি?

আমার কর্মদিবস সপ্তাহে শুরু হয় শনিবার থেকে। তো আমাকে একদিন বস ডেকে জিজ্ঞেস করলেন আমার আপডেট কি? বুঝলাম না এর উত্তর তিনি কি চাইছেন! বললাম, "জ্বি স্যার এইতো চলছে..."
তিনি মনপূত উত্তর পেলেন না সেটা উনার চেহারা দেখেই বুঝা যাচ্ছে। তিনি বললেন, "তুমি আমাদের প্রোডাকশনে কবে ঢুকবা? এভাবে আর কতদিন তোমাকে অফিসে বসিয়ে রাখবো?" কথাটা শুনে বেশ খারাপ লাগলো আমার! উনার প্রেক্ষাপটে উনি হয়তো সঠিক এবং আমি পুরোটাই ভুল। উনার এমন প্রশ্নের কোনো উত্তর আমার কাছে নেই। অফিসের সমস্ত এমপ্লয়িকে তিনটা ডিপার্টমেন্টে ভাগ করা হয়েছে। বাকি দুইটা ডিপার্টমেন্টে কাফি জনবল রয়েছে কিন্তু আমি পরে গেলাম এমডি এবং উনার বিশ্বস্ত এমপ্লয়ির সাথে। উনাকে আমি নিজস্ব নামকরণ দিয়েছি, তেলের ক্ষণি! তবে উনার নাম মুরাদ। এই অফিসে নাকি উনার কর্মজীবন প্রায় ৭ বছর!
যাই হোক, সপ্তাহে আমার চারবার এমডি স্যারের সাথে বাহিরে বিভিন্ন মিটিং এ যেতে হয় কিংবা উনি অন্য কাউকে নিয়ে যান। ফিরতে ফিরতে অফিস ছুটির সময় পার হয় হয় অবস্থা! আমি বসে বসে মশা মারি বা ঘুম তাড়ানোর জন্য এর ওর সাথে গল্প করি। বলে রাখা ভাল, স্যার কোনো রিক্রুটমেন্টে ফিমেল ক্যান্ডিডেট এলাউ করেন না। তো আজ গল্পের ফাকে ফাকে অনেকেই বলেছে "আজ আমি মহা ব্যস্ত, সময় নেই ফাউ আলাপ করার!"
টিমে শুধু আমি একা, কোথাও আটকে গেলে বুঝানোর কেউ নেই, সমাধান তো পরের কথা! বাসায় এসব প্র‍্যাক্টিস করার সুযোগ নেই কারণ পৌছানো মাত্রই খাওয়া আর ঘুমের সময় হয়ে যায়!
যাক গে, তো এই হল কথা আজ বস আমার আপডেট জানতে চাইলেন। আমি মুখ ফুটে বলতেও পারলাম না স্যার আমি একা একা পারছি না! তবুও বললাম, "স্যার, এমনটা না, আসলে স্যার কোথাও আটকে গেলে হেল্প করার মত কেউ নাই! আপনি তো অনেক ব্যস্ত আর মুরাদ ভাই তো সাপোর্টে থাকেন, আমি কাকে জিজ্ঞেস করবো স্যার?"
একটু ঝাঁঝালো আওয়াজে তিনি উত্তর দিলেন, "অফিসে কি ইন্টারনেট নেই? গুগল, ইউটিউব, এসও(Stack Overflow) এসব নেই? এসবে সার্চ করতে কি কষ্ট হয়? তোমার মত সারা বিশ্বের মানুষ এসব থেকে নিজেদের সমস্যা সমাধান করে আর তুমি পারো না? ফাজলামি?"
আমি চুপচাপই থাকতাম। কারণ অফিসে দুইটা রুলস!
এক, বস সবসময়ই সঠিক।
দুই, যদি বস ভুল হোন তবে এক প্রথম রুলটা ফলো করুন৷

"সরি স্যার, এবার থেকে আরও বেশি পরিমাণ ঘাটাঘাটি করবো।" চুপচাপ বেরিয়ে গেলাম রুম থেকে। দিনকে দিন অফিসে আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে। আমি পারছি না একা একা এসব করতে। বুঝতে পারলাম মানুষ একা চলতে পারে না। আমি এসব সমস্যার সমাধানের জন্য আমার সেই সাগর ভাইকে কল করে সব বললাম এবং উনি আমাকে সমাধান দিলেন, "তুমি অন্য কোনো কিছুতে মনোযোগ না দিয়ে কাজ শেখ। যাস্ট ইগ্নোর দ্যা রেস্ট!"
আবারও ধরে নিলাম অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ব্যক্তি যখন বলেছেন তাহলে ঠিকই বলেছেন!

কিছুদিন পর, অফিসে নতুন একজন ইন্টার্ন এলেন। বলে রাখি, এই অফিসে আমরা যারা আছি, সবাই কারও না কারো রেফারেন্সে এখানে চাকরি করছি। জব পোর্টালে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে কারো এখানে নিয়োগ হয় নি। তো নতুন ইন্টার্ন আসলেন, সবার সাথে পরিচয় হলেন, কথাবার্তা হল। ছেলেটা বসলো আমার পাশেই, নাম আকিব। এরমধ্যে স্যার ডাকলেন রনি ভাইকে, উনি সেই ডোন্ট কেয়ার অ্যাটিটিউডের এমপ্লয়ি। কিছুক্ষণপর রনি ভাই এসে আমাকে বললেন, "আপনি আজ উনাকে আমাদের কাজ সম্পর্কে ধারণা দিন।" তারপর আকিবকে বললেন, "আপনার জন্য ল্যাপটপ কাল রেডি থাকবে এবং আপনার ডেস্ক এটাই।"
একদা এমডি স্যার আমাকে বলেছিলেন আমার একার জন্য কোনো আয়োজন তিনি করবেন না অথচ আজ উনি আকিবের জন্য সমস্ত ব্যবস্থা করলেন! আসলেই মানুষ পরিবর্তনশীল।

এই বিষয়টা আমি এক রিমোট কলিগের সাথে শেয়ার করলাম। উনার নাম আবদেল। উনাকে রিমোট কলিগ বললাম কারণ উনি অফিসে আসেন সন্ধ্যায় এবং সন্ধ্যা থেকে তিন চার ঘন্টা অফিসে কাজ করেন, তারপর বাসায় গিয়ে আরেকটা টিউশনিও করান! আর সারাদিন মার্কেট রিসার্চ করেন। এভাবে অনেক কথাই বললাম এবং উনি শুনে বললেন, "আরে এসব ব্যাপার না, ইগ্নোর করো।"
আমি কিছুটা ফ্রেশ হওয়ার জন্য নিচে এলাম। এর কিছুক্ষণ পর কল এল রনি ভাইয়ের। উনি বললেন এমডি স্যার আমাকে ডেকেছেন। আমি চা শেষ করে চলে গেলাম স্যারের রুমে। তিনি ঢুকতেই বাকিদের কিছুক্ষণপর আসতে বললেন। আমাকে বললেন দরজা চাপিয়ে দিতে। তারপর শুরু হল উনার ধমক! উনি ধমকে বললেন, "আমি কাকে কি দিব না দিব সেটা নিতান্তই আমার ব্যাপার! তুমি এসব নিয়ে বলার কে? এত নাখুশ ছেলে কেন তুমি?"
আমার বুঝতে দেরি হল না এটা কার কারসাজি! প্রথমত ছোটকাল থেকেই আমি ধমককে ভয় পাই এবং এই ভয়েই চুপচাপ থাকি। আমি কোনোরকম এক্সকিউজ করলাম ন। চুপচাপ দারিয়ে রইলাম আর উনার ধমক শুনলাম। শুধু বললাম, "স্যার আমি যেতে পারি? নতুন ইন্টার্নকে কিছু ধারণা দিতে বলেছেন সেসব তাকে বলতে হবে।"
এবার তিনি আওয়াজ কিছুটা নরম করে বললেন, "শোন, তুমি খুব ভাল একটা ছেলে, কেন এসব ব্যাপারে নাক গলাও? ইগ্নোর করতে শিখবে কবে তুমি? যাও আজ তাড়াতাড়ি বের হও, বাসায় যাও।"
সালাম দিলাম না আজ তাকে। বের হয়ে ব্যাগ নিয়ে দরজা খুলে সোজা বাসস্ট্যান্ডের দিকে হাটা দিলাম। ইচ্ছা করেই অ্যাটেন্ডেন্স শিটে আউট টাইম আর সাইন করলাম না। যা হবে কাল দেখা যাবে। অনেক সহ্য করেছি না, আর না!

বাস থেকে নেমে চায়ের দোকানের সামনে দাড়ালাম। নিউজ দেখছি এবং ব্রেকিং নিউজে লেখা উঠলো, "আগামীকাল থেকে রাজধানী ঢাকার প্রবেশমুখে সকল গণপরিবহনের প্রবেশ এবং বাহিরে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। করোনা মেকাবেলায় এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মন্ত্রণালয়! তবে ঢাকা শহরে এবং ঢাকার বাহিরে চলাচলকারী বাস পূর্বেই মতই আসন বিন্যাসে চলাচল করব।"
অর্থাৎ মোট আসনের অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলবে বাস এবং ভাড়া বৃদ্ধি! এতে করে করোনা কিভাবে মোকাবেলা হবে সেটা আমার ছোট্ট মাথায় এল না কিন্তু জনভোগান্তি সীমানা পেরিয়ে যাবে এতে কোনো সন্দেহ নাই! আর আমার পকেট যে এবার আরও দ্রুত ফাঁকা হবে সেটা আর না ই ভাবি...

চলবে...
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৮:৩১
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবনের গল্প- ৯৩

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১২:২৮




দুই ভাইবোন। আপন দুই ভাইবোন।
ভাই-বোন দু'জন আলাদা হয়ে গেছে। দীর্ঘদিন ধরে তাদের মধ্যে কোনো যোগাযোগ নেই। কথাবার্তা নেই। একজন যেন আরেকজনের শত্রু। বাপের সম্পত্তির কারণে আজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

=ইচ্ছে করে ঘুরে বেড়াই=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১:১২


এই উষ্ণতায় ইচ্ছে করে ঘুরে বেড়াই নদীতে সমুদ্দুরে
বালুচরে হেঁটে বেড়াই,
ঢেউয়ে থাকি বসে, জল এসে ছুঁয়ে দিক আমায়,
হিম হাওয়া এসে ভাসিয়ে নিয়ে যাক সুখের সপ্ত আসমানে।

এই বৈশাখে ইচ্ছে করে পুকুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি শেষ কবে একটি বই পড়েছেন ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:২২


আজ ২৩ এপ্রিল, বিশ্ব বই দিবস। অনেকেই একে বলেন ‘বিশ্ব গ্রন্থ ও গ্রন্থস্বত্ব দিবস’। ইউনেসকোর উদ্যোগে ১৯৯৫ সাল থেকে দিনটি পালিত হয়ে আসছে বই, লেখক এবং কপিরাইট রক্ষার বার্তা নিয়ে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেমিট্যান্সযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৮:১৫

টাকা পাচারকারীদের ধরা খুব মুশকিল বলে উল্লেখ করে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কমিশনার মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবার আজিজী বলেছেন, টাকা পাচারকারীদের যদি কোনোভাবে ধরতে পারেন, তাহলে ছাড় দেবেন না। আজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিশুদের গুড টাচ ব্যাড টাচ শেখানো আপনার দায়িত্ব

লিখেছেন অপলক , ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১১:৩৪

বর্তমানে বাংলাদেশে একক পরিবার বেশি। আগের যুগে যৌথ পরিবারে শিশুরা বয়োজৈষ্ঠ্যদের কাছে অনেক কিছু শিখত, নিরাপত্তা পেত। এখন সে সুযোগ অনেকটাই কম। কিন্তু পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে, ৫ বছরের শিশুও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×