somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

# # কেক কাহিনী # # 

২৪ শে মার্চ, ২০১৪ সকাল ৯:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমাদের মফস্বল এলাকায় একটা মাএ বেকারী । তাও সব দিন কেক পাওয়া যেত না । ছোট ছোট ফুল ওলা ক্রীম দেয়া কেক গুলো নজর কাড়তো । আববা দেশের বাইরে থাকতেন তাই দাদুমনিই ভরসা । কাকু মনিরা তখন ও স্কুল কলেজে পড়ছে ওরা বড় জোর চকলেট ,আইসক্রিম কিনে দিত । আমি মনে মনে অপেক্ষা করতাম আববা যখন আসবে তখন প্রতিদিন বেকারি থেকে ফুলওলা কেক কিনবো । এখন সেসব দিনের কথা মনে করে স্মৃতিকাতর হই ।
আববা ছিলেন শখের রাধুনী । অবশ্য দেশের বাইরে যারা থাকেন তারা আস্তে আস্তে পাকা রাধুনী হয়ে যান । মাঝে মাঝে আববা বিরিয়ানী , খেবসা, আর মুগ ডাল দিয়ে খাসীর মাংস রান্না করে সবাইকে খাওয়াতেন । আমি একদিন বললাম কেক বানাতে । আববা অনেক গুলো ডিম ,চিনি, ময়দা, ঘি আরও কি কি যেন কিনে আনলেন । বড় একটা বোলে সব কিছু ঘুটে মিশালেন । বাড়ির সবাই জড়ো হয়ে দেখছে উনি কি করছেন । কেউ কেউ তো বলছে আরে এইটা তো ডিমওলা তেলের পিঠার গোলা বানাইতাছে ।
তখন তো আর ওভেন ছিল না । মাটির চুলায় কি করে কেক বানানো হবে সেইটা নিয়া সবাই গবেষনা করছে। আববা একটা সসপ্যানে কেকের গোলা ঠেলে ঠাকনা লাগিয়ে চুলায় দিলেন । সসপ্যান এর নিচে দিলেন রুটি ভাজার তাওয়া । আম্মা কে বললেন আস্তে আস্তে চুলায় জ্বাল দিতে। আমি তো খুশিতে সারা বাড়িতে নাচতেছি । কখন কেক রান্না হবে কখন খাবো ।
ঘন্টা খানেক পর কেক বের করে ছোট ছোট টুকরা করে সবাই কে খাওয়ানো হলো ।সেটাতে ছিলনা সাজানোর জন্য কোনো ক্রীম বা কোনো ফুল পাতার নকশা তবু মনে হচ্ছিল ওটাই বিশ্বের সবচাইতে মজার খাবার ।
মাঝে মাঝে টিভির কোনো অনুষ্ঠান দেখে অতি উৎসাহিত হয়ে আমি নতুন কিছু রান্নার এক্সপেরিমেন্ট চালাতাম । প্রায়ই রান্না বিগড়ে যেত । মা রাগে গজগজ করতেন তেল চিনি মশলা নষ্ট হচ্ছে বলে । বড়মা ঠিকই উৎসাহ জোগাতেন । আমি যাই রান্না করি না কেন ওটার খুব প্রশংসা করতেন । আমিও দ্বিগুন খুশিতে নতুন রান্নার সাবজেক্ট খুজে বের করতাম ।
বড়মা মানে আমার দাদি । ওনার মেয়ের খুব শখ ছিল অথচ আল্লাহ তার ঘরে পর পর চার টাই ছেলে দান করেছেন । বড় ছেলের ঘরে যখন আমার জন্ম হলো তখন সবচেয়ে বেশি খুশি হয়েছিলেন বড়মা । মেয়ের আদর বললে কম বলা হবে আমাকে চোখের মনি করে রেখেছিলেন শেষ দিন পর্যন্ত । কথায় কথায় বলতেন , " তোকে মাটিতে রাখিনাই পিপড়া কামড়াবে বলে , মাথায় রাখিনাই উকুনে খাবে বলে " বুকে জড়াইয়া রাখছি সবসময় ।

যাক বড়মার কথা আরেকদিন বলবো । আজ কেক এর কাহিনী বলি । বাড়িতে মাটির চুলায় কেক বানানোর রিস্ক নিতে সাহস হয় নাই । কয়েক বছর পর ভাগ্যচক্রে ঢাকায় নির্বাসিত হইলাম । প্রচলিত রান্না বান্না মানে যা প্রতিদিন আমরা খাই আরকি সেগুলো তো তেমন পারিনা । মাঝে মধ্যে অতিব আনকমন দু চার পদ করার প্রয়াস চালাই । এর মধ্যে একদিন শুনলাম আমার ভাসুরের মেয়ে কোন রান্না শেখার ক্লাসে জয়েন করেছে। বেকারি , থাই , চাইনিজ আইসক্রিম আরও কত কি আইটেম । শুধু শিখেই যাচ্ছে বাসায় কিছুই বানায় না । আমি তক্কে তক্কে থাকি কবে কেক বানাবে আমি শুধু ভাল করে আইটেম ও পরিমাপ টা খেয়াল করে দেখবো ।
অবশেষে আমার প্রতিক্ষার অবসান হইলো । রান্নাঘরে ডাক পড়ল সহযোগিতা করার জন্য । আমি অধীর আগ্রহ নিয়ে গেলাম । টুকিটাকি কাজে সাহায্য করলাম কিন্তু আসল জিনিষটাই দেখতে পারলামনা । সে কি করলো, কেক এর সব উপকরন অন্য রুমে মিশিয়ে তারপর আমার সামনে ওভেন এ বেক করলো । আমি শুধু বেক করাটাই দেখলাম ।কি কি যে কিভাবে দিল কিছুই বুঝলাম না ।
কিছুদিন পর ওর কাছে গিয়ে বললাম আপনাদের রান্না শেখার ক্লাসে রেসিপি কাগজে লিখে দেয় । আমাকে কেক বানানোর রেসিপি টা একটু দিবেন ? আমি লিখে নেব ।
সে অনেকক্ষন খোজাখুজি করে বলল কোথায় যে গেল খুজেই পাচ্ছি না ।
অথচ আমি জানতাম নীল রংএর একটা ফাইলে সব কাগজ রাখা আছে । সেদিনের কথা মনে করে আজও হাসি । ওকে মনে মনে ক্ষমা করে দিয়েছি । সেদিনের ব্যাবহার আমার উপকারই করেছে।

আরও পরের কথা ,
কর্তাকে বলে কয়ে ১০০০ টাকা নিলাম গ্যাস ওভেন কিনবো বলে । টিনের চারকোনা বাক্সের মতন এটা গ্যাসের চুলার উপর বসিয়ে ওভেন এর মতো ব্যাবহার করা যায় ।
ওটাতেই প্রথম কেক বানালাম । একেবারে পারফেক্ট । আমার নিজের চোখ কে বিশ্বাস হচ্ছিল না । আব্বা কে বানিয়ে খাওয়ালাম খুব প্রশংসা করেছিলেন ।
মনে হচ্ছিল টাইম মেশিনে চড়ে আমি শৈশবে ফিরে গেছি । তা ধিন ধিন নেচে বেড়াচ্ছি সারা বাড়ি । আল্লাহর অশেষ রহমতে ইলেকট্রিক ওভেন , মাইক্রোওভেন সবই হয়েছে টিনের বাক্স ওভেন টাও যত্ন করে রেখে দিয়েছি । ভিন্ন ভিন্ন স্বাদের কত রকমের কেক বানাই কিন্তু যাদের খাওয়াতে পারলে সবচেয়ে শান্তি লাগতো আজ তারাই চলে গেছেন দূরে ...... ব হু দু রে .......।

সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ১০:২৯
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×