কেএল সিটি ঘুরে ঘুরে আরও অনেক কিছু দেখা হলো । মসজিদ দেখতে গিয়ে একটা মজার কান্ড ঘটেছে সেটা শেয়ার করছি আপনাদের সাথে । বাস মসজিদ চত্বর থেকে কিছুটা দুরে রাখা হয়ে ছিল । বাসের মেয়েরা ভাবছি আমরা কি মসজিদের ভেতরে যেতে পারবো কিনা / যাওয়া উচিত হবে কিনা ।
গাইড উসমান আগে আগে নেমে গেছে । আমরা বাসের জানালা দিয়ে দেখছি মসজিদের দোতলায় বেগুনী রং এর বোরখা পরা অনেক গুলো মহিলা । সবাই একই রকম বোরখা পরা । কি ব্যাপার ! মনে হচ্ছে কোনো গ্রুপ মসজিদ দেখতে এসেছে । সবাই যেহেতু একই রকম বোরখা পড়ে এসেছে নিশ্চয়ই কোনো ধার্মিক গ্রুপ হবে ।
কেনো যে সাথে করে বোরখা নিয়ে আসলাম না ? আফসোস !
আমরা সবাই সালোয়ার কামিজ পড়া । এটাও শালীন পোষাক । সবাই মাথায় কাপড় ভালো করে জড়িয়ে ওজু করে এগোচ্ছি । বেগুনী বোরখা গ্রুপের সবাই নিচে নেমে পাশের বারান্দা মতো জায়গায় বোরখা খুলে স্বরুপে ফেরত আসছেন । সকলেই যথারীতি টপস আর হাফ প্যান্ট ।
আমি বেকুব এর মতো তাকিয়ে দেখছিলাম ।
মসজিদ এলাকা । হাসতেও পারিনা ।
খেয়াল করে দেখলাম ফরেনারদের জন্য বিশেষ ব্যাবস্থা । হাফ প্যান্ট পার্টিদের আপাদমস্তক বোরখায় ঢেকে তারপর ভেতরে ঢুকতে হয় ।
পরদিন প্রতিযোগিতা । মজা করে ঘুরছি । পরীক্ষায় যে কি হয় আল্লাহ মালুম !
মসজিদে ঘুরতে ঘুরতে প্রার্থনা করছি । ওখানেও একপাশে স্যুভেনির শপ আছে । তসবিহ্ , চাবির রিং , সুরমা , খেজুর , ড্রাই ফ্রুট , জায়নামাজ আরও অনেক কিছু পাওয়া যায় তবে দাম বেশ চড়া ।
বাচ্চাদের পরীক্ষার জন্য আরেকটা সুন্দর হোটেলে আয়োজন করা হয়েছে । সকাল বেলা সবাই দুরু দুরু বুকে হাজির হলাম । আমার নিজের পরিক্ষার সময় ও এতটা টেনসড ছিলাম না ।
এই হোটেল টাও খুব সুন্দর । খোলামেলা লবির এক পাশে পিয়ানো কিন্তু বাজানোর কেউ নেই । আমাদের সাথের অন্যান্য সকলেই পিয়ানো ও তার আশেপাশে ফটো সেশনে ব্যাস্ত ।আমার টেনশনে গলা শুকিয়ে যাচ্ছে ।
দোতলায় বড় একটা হল রুমে বাচ্চাদের পরীক্ষা নেয়া হলো । চীন, সিংগাপুর, ভারত ,জাপান, দক্ষিন আফ্রিকা এবং আরো দেশ থেকে বাচ্চারা এসেছিল । মালয়েশিয়ান পিচ্চি গুলো তো ছিলই । চাইনিজ বেবী গুলা সবচাইতে কিউট আর বাচ্চাদের মা গুলা খবিশ । কেমন করে যেন তাকায় । আফ্রিকান মহিলা গুলা সবচেয়ে আন্তরিক আমার মতে ।আনকমন বোরখা , বড় বড় ওড়না মাথায় পেচানো আর গা ভর্তি সোনার গয়না । নিজেরাই এগিয়ে এসে পরিচিত হলো । বিশাল শরীর আর গায়ের রং দেখে কিছুটা ভয় পেয়েছিলাম কিন্তু ওরাই সবচেয়ে অমায়িক ।
পরীক্ষা শেষ হলো । লান্চ ব্রেক এর পর রেজাল্ট । আমরা হোটেলের অদূরে অন্য একটা রেস্টুরেন্ট এ খেতে গেলাম । ফিরে এসে দেখি রেজাল্ট ঘোষনা করার জন্য হল রুম প্রস্তুত করা হচ্ছে ।
একে একে সব দেশের ফলাফল ঘোষনা শেষে আমরা খুশি মনে হোটেলে ফেরত চলে এলাম । বিকেলে চায়না টাউনে গেলাম কেনাকাটার উদ্দেশ্যে । ওখানে অনেক দোকানের সেলসম্যান বাংগালী । আমাদের কথা ( বাংলা ) শুনে অনেকেই এগিয়ে আসলো কথা বলতে । চিনি না জানি না কোন দিন দেখাও হয় নাই কিন্তু এতটাই আপন সুরে কথা বলছিল সবাই অবাক না হয়ে পারিনি ।
ছোটবেলায় বড়মা বলতো - শশুড় বাড়িতে যখন যাবি তখন বাপের বাড়ির এলাকার কোনো অপরিচিত মানুষ দেখলেও মনে শান্তি লাগবো । প্রবাসী বাংগালী যারা অনেক দিন ধরে ওখানে রয়েছেন তারা নিজেরাই ছোট ছোট দোকান চালাচ্ছেন । ঘড়ি , চাবির রিং , পারফিউম , ব্যাগ আরও টুকটাক শপিং আমি ওখান থেকেই করে নিলাম ।
বাটু কেভ । নাম শুনে প্রথমে বুঝতে পারিনি আসলে এটা কি । সোনালী রং এর বিশাল মুর্তির পেছনে উচু পাহাড় , পাহাড়ের গায়ে ঘন সবুজ গাছের আস্তরন । মুর্তির নাম মুরুগান । পাশ দিয়ে ২৭২ টা খাড়া সিড়ি বেয়ে গুহা মুখে পৌছাতে হয় । গুহার ভেতর ছোট বড় অনেক মুর্তি । পুরোহিত গন পূজা অর্চনায় ব্যাস্ত ।
নিচে বেশ কিছু ফুলের দোকান , খাবারের দোকান রয়েছে । পাশে বাধানো পুকুরে ভেসে বেড়াচ্ছে অসংখ্য গোল্ড ফিস । নানান রং এর মাছ গুলো দেখে খুব ভালো লাগলো ।
চলবে---
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ১০:৩১