somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফেসবুক স্ট্যাটাস সংগ্রহ: ৩৯ (অক্টোবর)।

৩১ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১১:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১ অক্টোবর, ২০১৩:

# ৩, ৫, ৬ এবং ৮ নং অভিযোগে সাকা'র ফাঁসির রায় হয়েছে। একটু একটু করে কলঙ্কমুক্ত হচ্ছি। একটু একটু করে মিটিয়ে দিচ্ছি ইতিহাসের সব দায়বদ্ধতা। বাই দ্যা ওয়ে, ফাঁসি যখন নিশ্চিত তখন তা উপভোগ করাই শ্রেয়। জয় বাঙলা।

৩ অক্টোবর, ২০১৩:

# ১) একটা বিদেশী প্রবাদ আছে, 'Birds of same feather folk together'। প্রবাদটা মাথায় এসেছে অন্য একটা কারণে। গতকাল সাকাকে ডিফেন্ড করে একটা 'দুর্গন্ধময়' নোংরা পোষ্টে দেখলাম আমার বন্ধুদের মাঝে ১৫ জন 'লাইক' দিয়েছে। লাইক দেওয়াটা সম্মতিই ধরে নিলাম। ধরে নিয়ে একটা খারাপ অনুভূতি হলো। এ কাদের সাথে অনলাইনে বন্ধুত্ব আমার! কারও বন্ধুত্বের রিকোয়েস্ট ইগনোর করি না সাধারণত। একটা কারণ অবশ্যই আলসেমি। কার ফেক অ্যাকাউন্ট, কার অ্যাক্টিভিটি কী, কার কোন কোন পেজে লাইক এসব খুঁটিয়ে দেখায় আলসেমি তো আছেই, সময়ও জোটে না সবসময়। আমি নিশ্চিত, বাঁশেরকেল্লায় গেলে শ'খানেক মিউচুয়াল পেয়ে যাবো হয়তো। ওড়না আর চটি পেজগুলোতেও মিউচুয়ালের সম্ভাবনা নিতান্ত কম হবে না। তবে এভাবে হয়তো বেশিদিন চলতে পারবো না। অ্যালার্জেনস অ্যাভয়েড করে চলতে চেষ্টা করি। অনেক আগে একবার লিখেছিলাম, সহমত এবং ভিন্নমতের সাথে চলা যায় কিন্তু 'অপমত' এর সাথে সহাবস্থান সম্ভব না।

২) বাংলাদেশ নিউজিল্যান্ড সিরিজের জন্য ১৪ সদস্যের দল ঘোষণা করেছে। ঘরোয়া লীগকে প্রাধান্য দেওয়াটা সবসময়ই চমৎকার। আল আমিন, নাঈম, রাজ্জাক ফিরেছে শুধু ঘরোয়া পারফরমেন্স দেখিয়ে। রুবেলও ইনজুরি থেকে ফিরে সম্পূর্ণ রিদমে। একটা সিলেকশন নিয়ে কিছুটা আপত্তি আছে। যখন ম্যানেজমেন্ট জানে এনামুল হক বিজয়ের ফুটওয়ার্কে সমস্যা, আউটসুইংয়ে বড় ধরনের সমস্যা বোধ করে তাই চাইলে আরেকটু ম্যাচিউর হওয়া পর্যন্ত বা আর দু'-তিনটা সিরিজ জহুরুলকে কন্টিনিউ করাতে পারতো। তবে সিলেকশনের পিছনে হাবিবুল-মিনহাজুলের হোম কন্ডিশন ব্যাপারটা কাজ করেছে সম্ভবত। আমাদের পিচে তো আর খুব একটা সুইং মিলবে না। যাই হোক, স্কোয়াড নিয়ে খুব খুশি। লুকিং ফরোয়ার্ড। কত্তদিন পর বাংলাদেশের খেলা! মার্শাল আইয়ুবের অভিষেকের দিকে তাকিয়ে আছি। মার্শালের পার্ট টাইম লেগ স্পিনটাও ভাল্লাগে।

৩) স্যাররা একটা কথা বলেন, একটা রোগীকে ক্লিনিকে ভর্তি করা থেকে হাসপাতালে ভর্তি করা শ্রেয়। ক্লিনিকে একটা রোগ ডায়াগনোসিস হয় একজন ডাক্তার দ্বারা। আর হাসপাতালে একটা রোগীকে স্পেশালিস্ট পর্যন্ত যাওয়ার আগে ইন্টার্নী থেকে শুরু করে তিন-চার গ্রেডের ডাক্তার অতিক্রম করে যেতে হয়। সুতরাং হাসপাতালে ভর্তি অবস্থায় ভুলের সম্ভাবনা ঢের কম থাকে। অনলাইনের ক্ষেত্রেও এই অনুভূতিটা সম্প্রতি হয়ে গেলো। কয়েকদিন আগে একটা ভুল তথ্য লিখেছিলাম অসাবধনতাবশত এবং অজ্ঞতা থেকে। সাথে সাথেই অনেকের তীব্র রোষের স্বীকার হলাম। কেউ কেউ তো গালিও দিয়ে গেলো। গালিতে সমস্যা নেই। অনেকের শব্দ ভান্ডার সীমিত থাকতেই পারে। আর শব্দসম্ভার সীমিত হলে গালি ছাড়া মত প্রকাশের শব্দ পাওয়াও তো সহজ নয়, না কী? তবে ভালো অনুভূতিটা হলো- ভুলটা থেকে সঠিকটা জানলাম এবং ছোটখাটো একটা শিক্ষা হলো। লাভ টু লার্ন ফ্রম মাই মিসটেকস্ִ।

৪) অনেকদিন পর গতকালটা বেশ রিল্যাক্স গেছে। শ' খানেক গান শুনেছি, দু'টো সিনেমা দেখলাম, রিকশায় ঘুরলাম। প্রিয়জনদের কিছু ছবি, জমে থাকা এসএমএস পড়লাম। রাস্তায় যা যা পেলাম, চটপটি-ফুচকা-আখের রস-চিংড়ির বড়া-হালিম সব ঘুরে ঘুরে রাস্তায় দাঁড়িয়েই খেয়ে বেড়িয়েছি। সাধারণত চ্যাট না করলেও গতকাল ঘন্টা খানেক চ্যাটও করেছি ফেসবুকে। ফেসবুকে ইদানিং একটা ট্রেন্ড এসেছে 'হ্যাপিনেস ইজ' দিয়ে কিছু লেখা। গতকাল মনে হচ্ছিলো লিখি, 'হ্যাপিনেস ইজ- চিন্তামুক্ত হয়ে নিজের ইচ্ছা এবং সামর্থ্য অনুযায়ী একটা দিন পার করা'।

৪ অক্টোবর, ২০১৩:

# বন্ধু লিপু একবার বলেছিলো, বুঝলি রণি, বাংলাদেশে যতবার মেজর পাবলিক পরীক্ষা হয়, প্রশ্ন ফাঁস হয় তার থেকে কয়েকটা বেশি। পরীক্ষা থেকেও প্রশ্ন বেশি ফাঁস হয় কিভাবে এটা হুট করে তখনি মাথায় ঢোকেনি আমার। জিজ্ঞাস করেছিলাম, ক্যামনে কী? ও উত্তর দিয়েছিলো, দু'-একটা পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে জেনে আগে থেকেই পরীক্ষাটা বন্ধ হয়ে যায়। পরে যখন পুনরায় ওই পরীক্ষাটা হয়, তখন আবারও প্রশ্ন ফাঁস হয়। দ্বিতীয়বার একটু কম পরিসরে হয় আর কী। কিন্তু হয়ই। বুঝছিস?

কথাটা নির্মম সত্য। বিসিএস বা আরও কিছু পাবলিক পরীক্ষায় লিখিত এবং ভাইভা থাকে। যদিও সেটাতেও দূর্ণীতি আছে তবুও পরবর্তী কয়েকটা ধাপের বেশিরভাগই সম্ভবত পার করতে হয় একটা মিনিমাম যোগ্যতা দিয়ে। কিন্তু মেডিকেল অ্যাডমিশনের মত একটা পাবলিক পরীক্ষা, যার একমাত্র মূল্যায়নই হয় একটা মাত্র ওএমআর শীট দিয়ে, সেখানেও প্রায় প্রতিবছর কমবেশি প্রশ্ন ফাঁস হচ্ছেই। নাম মনে নেই তবে একটা অনলাইন পত্রিকার শেয়ার করা লিংকে কয়েক মাস আগে আট থেকে নয় পর্যন্ত জিপিএ ধারীদের বিগত কয়েক বছরে সরকারী মেডিকেলে চান্সের একটা পার্সেন্টেজ দিয়েছিলো। সেটা বেশ স্বাস্থ্যবান পার্সেন্টেজই ছিলো। এবং এটার মাঝে কোনো রহস্য নেই। শুধু চান্সই না, উপরের সারির মেডিকেলে ভর্তি হচ্ছে মেট্রিক-ইন্টারে বেশ লো স্কোরিং করারা! আপনি হয়তো তর্ক জুড়ে দেবেন, ক্যান, আট-সাড়ে আট জিপিয়ে নিয়ে মেডিকেলে চান্স পাওয়া বুঝি সম্ভব না? উত্তরটা আমি দেবো না। একজন মেডিকেল পরীক্ষার্থীকে জিজ্ঞাসা করেন। উত্তর পেয়ে যাবেন। প্রশাসন বা সরকার কিভাবে এসব বছরের পর বছর ওভারলুক করে আসছে, কে জানে!

অনেক আগে থেকে এসবে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। জানি এগুলো হয়। কোনোবার কম আর কোনোবার বেশি, এই যা। এবার ব্যাপারটা নিয়ে বেশরকম অস্বস্তি লাগার কারণ একমাত্র ছোট ভাইয়ের আজকে অ্যাডমিশন টেস্ট ছিলো। গতকাল রাত্রেই টুকটাক শুনেছিলাম প্রশ্ন ফাঁস হওয়ার কথা। গায়ে লাগাইনি। আজ তো সকাল থেকে অনলাইনে ফাঁস হওয়া প্রশ্ন এবং উত্তরপত্র দেখলাম। সত্যতা জানি না তবে শুনছি গণহারেই নাকি প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে এবার। নাথিং টু ডু!



দেখেনই তো, রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীরা একটু গায়ে ব্যথা হলেই সাথে সাথে সিঙ্গাপুর দৌড়ায়; কেন জানেন তো? থাক, সব বলতে হয় না। ইদানিং আবার কী সব আইন-কানুন, ধারা-টারা আছে। বুঝে নিয়েন। বুদ্ধিমানের জন্যে ঈশারাই কাফি!

৬ অক্টোবর, ২০১৩:

# একমাত্র ছোটভাই খুলনা মেডিকেলে চান্স পেয়েছে। পেয়েই বাপির কাছে দাবী করেছে ২ লক্ষ টাকা ক্যাশ। আমি ফোন দিলাম। আমাকে উত্তেজিত কন্ঠে বললো, 'তোকে ২ লাখের মধ্যে ২৫ হাজার দিবো। বেশি হলে ৩০ হাজার দিতে পারি। আর কিন্তু চাইবি না।'



ছোটকাল থেকে শুনে এসেছি মা-বাপির একটা লং চেরিশড ড্রিম ছিলো পরিবারের চারজনই মেডিকেল রিলেটেড হবে। আজ সেটা পূর্ণ হলো। আমার পরিবারে বিগত কয়েক বছরে আজকে সবচেয়ে খুশির দিন।

৭ অক্টোবর, ২০১৩:

# ১) যতটুকু জেনেছি তাতে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হওয়া আনিকা তাহসিন উদ্ভাসে ইঞ্জিনিয়ারিং কোচিং করে মেডিকেলে রেকর্ড ব্রেকিং ৯৬.৫ নাম্বার পেয়েছে। অথচ অনুমান করে বলা যায় ন্যূনতম শ' খানেক ছাত্র-ছাত্রী প্রশ্ন পেয়েই পরীক্ষা দিয়েছে। তবে এই মেয়েটা বোকা কিসিমেরই হবে হয়তো। যারা প্রশ্ন পায় তারা জেনে শুনে বুদ্ধি করে ৮০ টার আশেপাশে দাগিয়ে চলে আসে। যে মেয়েটার মাথায় এইটুকু বুদ্ধি কাজ করেনি সেই হবে ঢাকা মেডিকেলের রোল ওয়ান! সেলুকাস, ডু ইউ স্টিল অ্যালাইভ?

২) 'দেবী দুর্গার আরেক নাম খালেদা জিয়া। তিনি এই বাংলায় শেষ অবতার রূপে এসেছেন বাঙলাকে অসুর মুক্ত করতে।' (গয়েশ্বর চন্দ্র রায়)



বাই দ্যা ওয়ে, কয়েকটা প্রশ্ন ছিলো গয়েশ্বর দা'র কাছে। তো খালেদা দেবী কিভাবে গত নির্বাচনে 'মানুষ' শেখ হাসিনার কাছে এভাবে পরাস্ত হয়েছিলেন? নো অফেন্স, দ্যাট মীনস ম্যান ইজ সুপিরিয়র দ্যান দ্যা ক্রিয়েটর?



সেকেন্ডলি, দেবী দুর্গাকে দশমীর দিন নদীতে বিসর্জন দেওয়া হয়। গয়েশ্বর দা' কি সে ব্যাপারে কিছু ভেবে রেখেছেন?

শেষমেশ, ধর্মানুভূতি কপচাতে আইসেন না। এদেশে হিন্দুদের ধর্মানুভূতি অনেক আগেই ভেস্তে গেছে। যে দেশে হরতালে গাড়ি-দোকানপাটের সাথে নিয়ম করে মন্দির ভাঙা হয়, যে দেশে রাজাকারের ফাঁসির রায়ের শোধ তোলা হয় প্রতিমা ভেঙে, মন্দির জ্বালিয়ে, যে দেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হয় হিন্দু মেয়ে ধর্ষণের মধ্য দিয়ে; সেদেশে হিন্দুদের আবার ধর্মানুভূতি কী? হ্যা?

৩) জামায়াতের সেক্রেটারি কসাই কাদের মোল্লার ফাঁসি খুব সম্ভবত: নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই। এজন্য কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার কতৃপক্ষ প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। ফাঁসির জন্যে দঁড়ি আনা হচ্ছে জার্মানি থেকে (পাকিস্তান দঁড়ি রপ্তানি করে না?)। খোজা হচ্ছে জল্লাদও।



বাই দ্যা ওয়ে, শাহবাগে স্বচক্ষে কয়েক লক্ষ জল্লাদ দেখেছিলাম কাদের মোল্লার জন্যে। আর কারা কতৃপক্ষ নাকি জল্লাদ খুঁজতেছে!!!

৪) রাতে খেয়ে এসে গান শুনতে শুনতে স্ট্যাটাস লিখি। পুনমের গাওয়া একটা প্রিয় গান বাজছে প্লে লিস্টে। গানটার একটা অংশ খুব প্রিয়:



'আজ তোমার মেঘে মেঘে রংধনু

আজ তোমার মেঘে মেঘে রং

আজ তুমি মেঘে মেঘে যেমন ইচ্ছে তেমন

ভালোবাসা নিয়ে আসি আজ আমি

মেঘে মেঘে সারাক্ষণ।'

৯ অক্টোবর, ২০১৩:

# : বাবুল, এসব কী? নিজের বাপ-মার নাম ধরে গালি দিচ্ছিস কেন?

: স্যার, হ্যারা আমারে আরও আগে জন্ম দিলো না ক্যান? তাইলে তো গোলাম-আলীমদের লাহান আইনের ফাঁকফোঁকরে সোন্দর ঘর বান্ধতে পারতাম। দুধ-ডিম-আমের আচার খাইতে পারতাম। দোষটা কার? গালি দিমু না কিরল্যাগি?

# ১) শুরুতে মুরালি মুড়িমুড়কির মত উইকেট পেতো। প্রতিপক্ষের একটা জুটি দাঁড়িয়ে গেছে। এক প্রান্ত দিয়ে মুরালি আসলেই মনে হতো ব্রেক থ্রু আসছেই। কিন্তু একটা সময়ে এসে ব্যাটসম্যানরা মুরালিকে পড়ে ফেলেছিলো। ক্যারিয়ারের শেষ দিকে মুরালিকে উইকেট পেতে বাধ্য হয়ে বোলিংয়ে কিছু পরিবর্তন আনতে হয়েছিলো। মাঝেমধ্যে উইকেট পেতে সংগ্রামও করতে হয়েছে। মুরালির একটা সাক্ষাৎকারে ও বলেছিলো, টেস্টেও গিলি আর ভীরুকে আমি ফ্ল্যাইটেড ডেলিভারি করি না। অজন্থা মেন্ডিস বা সুনীল নারিনের ক্ষেত্রে বিষয়টা আরও প্যাথেটিক। ফ্রিকী বোলিং দিয়ে শুরুতে টেস্টে সফল হলেও শেষ পর্যন্ত টেস্ট একাদশে আর স্থায়ী হতে পারেনি। আজ দুপুরে একবার ফেসবুকে এসে দেখলাম সবাই সাকিবের বোলিং নিয়ে তির্যক মন্তব্য করছে। এই মরা উইকেটে বা এতদিন পর টেস্ট ক্রিকেটে ফেরা একজন ওয়ার্ল্ড ক্লাস বোলারের বিষয়ে একদিনে মন্তব্য করা সাজে না। তবু আমার কেন যেন মনে হচ্ছে সাকিবের ক্ষেত্রেও এই একই জিনিসটা হচ্ছে। প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের বেশি অ্যাটেনশন পেতে পেতে ওর বোলিংয়ের খুঁটিনাটিও জানা হয়ে গেছে। এর আগের বেশ কিছু টেস্টেও সাকিবের বলার মত বোলিং পারফরমেন্স মনে করতে পারছি না। বোধহয় বোলিংয়ে কিছু নতুনত্ব যোগ করার সময় এসেছে। পরের সিরিজ থেকে সাকলাইনকে পাবে। দেখা যাক। আরেকটা কথা, ক্রিকেটে ওল্ড ইজ গোল্ড একটা প্রবাদ আছে, 'ফর্ম ইজ টেম্পোরারি বাট ক্লাস ইজ পার্মানেন্ট'। হোপ, নো ওয়ান ডাউব্ট অ্যাবাউট দ্যা ক্লাস অফ সাকিব।

২) প্রথম দিন শেষে ২৮০ রানে ৫ উইকেট। ওন্য যেকোনো দেশে, যেকোনো সাধারণ উইকেটে বা যেকোনো প্রতিপক্ষের বিপক্ষে প্রথম দিনের শেষে এই সংখ্যাগুলো মানে চোখ বন্ধ করে বলে দেওয়া যায় দিনটা দু' দলের জন্যেই প্রায় 'ইকুয়াল' ছিলো। কিন্তু এই মরা, স্লো, ফ্ল্যাট পিচ, যেখানে বোলারকে ভালো বোলিংয়ের চেষ্টা করতে করতে ক্লান্ত হয়ে অবশেষে ব্যাটসম্যানের ভুলের জন্যে তীর্থের কাকের মত হা করে বসে থাকতে হয়, সেটা বিবেচনায় নিলে আজকের দিনের জয়ী দল বাংলাদেশ। আরিফুল ইসলাম রনি ভাই উনার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, 'এমন স্লো উইকেট, ব্যাটসম্যানরা চাইলে বোলার বোলিং করার পর চায়ের কাপে দু'-একটি চুমুক দিয়ে শট খেলতে পারে।' বিগত কিছু টেস্ট ধরে 'হোম অ্যাভান্টেজ' না পেয়ে আফসোস করা লাগছে। ভিটোরি নেই, জিতান প্যাটেল নেই। কোনো কোয়ালিটি স্পিনারই নেই নিউজিল্যান্ড দলে। উইকেট এমন হতে হবে যে তামিমের বোলিংও পাঁচ-সাত ডিগ্রি ঘুরবে। সোহাগ-রাজ্জাকের বল অনুমানই করা যাবে না। তা না, উল্টো কঙ্ক্রিটের পিচ বানিয়ে 'অ্যাওয়ে অ্যাডভান্টেজ' এর ব্যবস্থা করে রেখেছে কিউরেটর!



পিচ আর মাহমুদউল্লাহকে বাদ দেওয়াটা ইগনোর করলে বাকি সবই ভালো ছিলো আজ; ফিল্ডিং, ক্যাচিং, আম্পায়ারিং এবং কদিন ধরে উদ্বিগ্ন করে রাখা আবহাওয়াটাও। বেস্ট অফ লাক টুমরো, টাইগারস।

৩) কোটা পদ্ধতির বিপক্ষে এত আন্দোলন করে হলোটা কী? সব জায়গায় কোটা। ট্রাইবুনালেও কোটা! আবদুল আলীম তো শেষমেশ প্রতিবন্দী কোটাতে টিকে গেলো! বাই দ্যা ওয়ে, আমার মাথায় ঢোকেনি ফাঁসটা আসামীর পায়ে দেওয়ার নিয়ম, নাকি গলায়? পঙ্গুত্ব দুরে থাকুক, পা না থাকলেও ফাঁসি দিতে সমস্যা কী? ৫৮৫ টা খুনের সময় কি জানোয়ারের বাচ্চাটা শহীদদের বয়স, শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়েছিলো? প্রহসন!

আমি রণি, সজ্ঞানে এই মানবতাবাদী রায় প্রত্যাখ্যান করলাম। ৫৭ ধারা, ১৫৭ ধারা বা ১০৫৭ ধারা পুচি না।

১০ অক্টোবর, ২০১৩:

# ১) এক ম্যাচ দিয়ে প্লেয়ার বিবেচনা করা সমীচীন না। অভিষেকে বা শুরুতে দুর্দান্ত কিছু করে দেখিয়ে পরবর্তীতে হারিয়ে যাওয়ার নজির নিতান্ত কম না। জ্যাক রুডলফ বা ইয়াসির হামিদ দিব্যি চোখে ভাসছে। দেড়দিন মাঠে ফিল্ডিং-বোলিং করার পরে আবার মাঠে নেমে মার্শাল আইয়ুব যে মন:সংযোগ দিয়ে প্রতিটা বল ফেস করেছে তা নি:সন্দেহে প্রশংসার দাবী রাখে। মুশি নিশ্চয়ই ড্রেসিংরুমে ওর পিঠ চাপড়েই দিয়েছে দিন শেষে। ঘরোয়া রেকর্ড বলে অন্তত ক্রিকেটের লংগার ভার্সনটাতে ছেলেটার কাছ থেকে বাংলাদেশ দীর্ঘ সার্ভিস আশা করে।

২) ১১ জনের দলে এমন একটা প্লেয়ার থাকতে হয়, ক্যাপ্টেন খুব ভালো করে জানে ৫-৭ ম্যাচ পর তার কাছ থেকে একটা ম্যাচে সার্ভিস পাওয়া যাবে, আদতে খুব একটা কাজে লাগবে না; তবু তাকে রাখতে হবে। গিলক্রিস্ট, শেবাগ, আফ্রিদি, গিবসদের ইতিহাস আপনার-আমার অজানা নয়। এই একটা প্লেয়ার খুব একটা কন্ট্রিবিউট করে না কিন্তু যেদিন করে সেদিন বাকিদের আর খুব বেশি কিছু করার থাকে না। এই একটা প্লেয়ারকে লক্ষ্য করে প্রতিপক্ষের একাধিক পরিকল্পনা করতে হয়। প্লান এ, প্লান বি এমনকি প্লান সি পর্যন্ত লাগে। বাকিরা সেই সুযোগে অ্যাডভান্টেজটা পায়। সাথে সাইকোলজিক্যাল বেনিফিট তো আছেই। তামিম ইকবাল বাংলাদেশের সেই স্পেশাল প্লেয়ার। দলে থাকুক। অতি দৃষ্টিকটু আউট হোক, স্রেফ ব্যাপার না। ওর দিনে ও খেলে দেবে।

৩) বাংলাদেশের দল ঘোষণার পরই লিখেছিলাম, এনামুল হক বিজয়ের ফুট মুভমেন্ট এখনও টেস্ট উপযোগী না। হোম ম্যাচ বলেই হয়তো হাবিবুল-নান্নুরা আস্থা রেখেছে। সেটা আজ দেখা গেলো। তবে এক্ষেত্রে আরেকটা রিভার্স যুক্তিও আছে। শেবাগকে দেখেন। ওর পা তো আরও নড়ে না। অফ ড্রাইভ খেলার সময় মনে হয় শেবাগ স্রেফ প্যারালাইজড পেশেন্ট। অথচ ওর টেস্ট গড় ৫০ এর উপরে। ভিভ রিচার্ডস একবার বলেছিলো টেস্টে টেকনিক থেকেও টেম্পারমেন্ট বেশি ইম্পর্ট্যান্ট। তাই এনামুলকে নিয়েও খুব একটা চিন্তার কিছু নেই। অল্প বয়েস। অস্ট্রেলিয়ায় যে বয়সে ব্যাটিং-বোলিংয়ের হাতেখড়ি হয়, এনামুল সেই বয়সে টেস্ট ক্রিকেট খেলছে! শিখবে।

৪) টেস্টে খুব ছোট ভুলের বিশাল মূল্য দিতে হয়। রুবেলের একটা নো বলের চড়া মূল্য দিতে হয়েছে শেষ উইকেটে ১২৭ টা অতিরিক্ত রান দিয়ে! তবে ওয়াটলিং-বোল্ট জুটিটাকে অনুপ্রেরণা হিসেবে নিতে পারবে বাংলাদেশ। এই পিচে যে জোকের মত লেগে পড়ে থাকলে আউট করা দু:সাধ্য ব্যাপার সেটা তো ওয়াটলিং-বোল্ট চোখে আঙুল দিয়েই দেখিয়ে দিয়েছে।

৫) ফলো-অন এড়াতেই এখনও ১৬৬ রান করতে হবে। সেটাই প্রথম দুই সেশনে মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত। মমিনুলের ব্যাটিংয়ের খুব একটা ভক্ত না তবু ওর কাউন্টার অ্যাটাকিং ব্যাটিং ভালো লেগেছে। ৭১ বলে ৭৭ রানটা যদি পিটারসেন বা ভিলিয়ার্স করতো, তাহলে চারিদিকে বলাবলি হতো, 'ওয়্যাট অ্যা ডোমিনেটিং ব্যাটিং, ওয়্যাট ক্লাস!' অথচ মমিনুল করেছে বলে, 'কী করস মমিন' বা 'টি-টুয়েন্টি খেলস টেস্টে? টি-টুয়েন্টিতে তো পারস না রে মমিন' টাইপ কথাগুলো আসছে। আসলে বেশ কয়েক বছর টেস্টের অ্যাপ্রোচ বদলে গেছে। আপনার যদি মমিনুলের দুর্দান্ত কাউন্টার অ্যাটাকিং ব্যাটিংটা দেখে অবাক লাগে তাহলে নিশ্চিত থাকুন আপনি খানিকটা পিছিয়ে আছেন বা কালেভদ্রে টেস্ট ক্রিকেট দেখেন।

৬) দু'দিন আগে দিলশান টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দিলো। আজ ক্রিকেট ছেড়ে দেওয়ারই ঘোষণা দিলেন ক্রিকেট ইতিহাসেরই সর্বশ্রেষ্ট ক্রিকেটার। ২০০ তম টেস্ট খেলেই ক্রিকেট ছেড়ে দেবেন শচীন। হঠাৎ দেশে সিরিজ আয়োজন করে অবসর নেওয়ায় একটু 'অন্য গন্ধ' পাচ্ছি। সে যাই হোক, শচীনকে একবারই দেখেছি স্বচক্ষে। মিরপুর স্টেডিয়ামে। ওই ম্যাচেই শততম সেঞ্চুরী করেছিলো শচীন এবং ম্যাচটা জিতেছিলো বাংলাদেশ।

৭) মনে হয় না শেষ দুই দিনেও স্পিন ধরবে। ডিআরএসটা না থাকায় ভুগতে হতে পারে। আগামীকালটা ভালো গেলেই জেতার আশা শুরু হবে। আরও ৯ সেশনের খেলা বাকি। লং ওয়ে টু গো। গুড লাক টুমরো, টাইগারস্ִ।

১১ অক্টোবর, ২০১৩:

# অ্যাশেজে অ্যাস্টন অ্যাগার ৯৮ রান করার পরে অস্ট্রেলিয়ান প্রধানমন্ত্রী কেভিন রুড সোস্যাল নেটওয়ার্কে ঘোষণা করেছিলেন, 'ইটস্ִ অ্যাস্টন অ্যাগার ডে'। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, 'আজকে মমিনুল হক দিবস' ঘোষণা দিতে কত বাকি?

# ১) দলের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যানটা যখন ক্রিজে যায় তখন শুধুমাত্র অপর প্রান্তেই একজন কোয়ালিফাইড ব্যাটসম্যান থাকে। ওই একটা উইকেট গেলেই তাকে লড়তে হয় টেল এন্ডার নিয়ে। স্বাভাবিক ব্যাটিং থেকে সংগ্রাম করতে হয় বেশি। পরে আর কোনো ব্যাটসম্যান নেই। অথচ একটা ধাপ প্রমোশন দিলেই ও আরেকটু বেশি সময় ক্রিজে থাকার সময় পায়। একটু চিন্তামুক্ত হয়ে খেলতে পারে। নাসির এই সুযোগটা এতদিনে পায়নি। কবে পাবে জানি না। অন্যান্য দলগুলোর দিকে তাকান। ওরা ওদের সেরা ব্যাটসম্যানকে সর্বোচ্চ ব্যবহার করে। অথচ টেস্ট-ওয়ানডে আর টি-টুয়েন্টি যাই হোক নাসির লোয়ার মিডল ওর্ডার ব্যাটসম্যান। বাংলাদেশ দলের সর্বোচ্চ অ্যাভারেজের মালিক ৬-৭ এ ব্যাট করে! অবশ্য আমার মনে করায় কিচ্ছু যায় আসে না। টিম ম্যানেজমেন্ট নিশ্চয়ই আমার থেকে ভালো বোঝে।

২) 'আজ সব গোলাপ চুপসে গেছে অবন্তীর ঠোঁটে'। আজ সব বিশেষণ হেরে গেছে মমিনুলের ব্যাটে। অসাধারণ ইনিংস। অথবা শুধু অসাধারণ শব্দটা মমিনুলের ইনিংসটা ব্যাখ্যা করতে যথেষ্ট নয়। বাংলাদেশী বাঁহাতি হিসেবে সর্বোচ্চ স্কোর ১৮১ (আগেরটা তামিমের। ২০১০ এ ইন্ডিয়ার বিপক্ষে ১৫১), ৯৮ বলে শতরান করে দ্বিতীয় দ্রুততম টেস্ট সেঞ্চুরী (রেকর্ডটা তামিমের। ২০১০ এ লর্ডসে ৯৪ বলে), এবং চতুর্থ বাংলাদেশী হিসেবে দেড় শতাধিক রান করার কৃতিত্ব (তামিম, আশরাফুল আর মুশফিক করেছে আগে) দেখানো সব রেকর্ড গুলো মিলিন হয়ে গেছে এই সময়যোগী দুর্দান্ত ইনিংসটার কাছে। ব্যক্তিগত ভাবে আমি মমিনুলের ব্যাটিংয়ের ফ্যান না। ওর স্টাইল বা স্কিলও আমার মনে ধরে না খুব একটা। এবং কেন যেন মনে হয় উপমহাদেশের বাইরে ওকে স্ট্রাগল করতে হতে পারে। কিন্তু দিন শেষে রানটাই আসল। এবং সেজন্য সম্পূর্ণ কৃতিত্বই ওর প্রাপ্য। ব্রাভো!

৩) একমাত্র মুশফিক যখন একটু সেট হয়ে যায় তখনই আমার মনে হয় ওই প্রান্ত দিয়ে আর উইকেট পড়বে না। বাংলাদেশ দলটাতে এই মুহূর্তে নাসির সবচেয়ে দৃষ্টি সুখকর হলে সবচেয়ে সলিড টেকনিকটা মুশফিকের। ঘাড় অবধি কয়েকটা বাউন্সার আজ পিচের উপর স্যাডো করা দেখে রাহুল ড্রাবিড় আর জ্যাক ক্যালিসের কথা মনে পড়ে গেছে।

৪) নিউজিল্যান্ড দলের সেরা বোলার ব্যাটিংয়ের মতই 'ম্যান উইথ গোল্ডেন আর্ম' কেন উইলিয়ামসন। ওর সেই ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই ও যা করে তাইই ভালো লাগে। এছাড়া কোরে অ্যান্ডারসন টুকটাক ভুগিয়েছে, সেটা সামান্যই। বাকিরা 'অর্ডিনারি'। যদি মমিনুলের সেঞ্চুরী দেখে ব্যাটসম্যানদের সফল মনে হয় তবে ব্যর্থতার কথাও বলি। সাকিব-নাসির-মার্শাল হাফ সেঞ্চুরী মিস করেছে সেট হওয়ার পরেও। মুশফিক মিস করেছে প্রত্যাশিত সেঞ্চুরীটা।

৫) নিউজিল্যান্ড শেষ উইকেটেই ১২৭ করেছে। বাংলাদেশের ৩ টা উইকেট হাতে। ৮৯ রান পিছিয়ে। আজকের সারা দিনের সবচেয়ে বড় আফসোসটা হলো খেলা শেষ হওয়ার মাত্র চার ওভার আগে নাসির আউট হয়ে গেছে। একজন সেট ব্যাটসম্যান থাকলে উল্টো লিডই আশা করতাম। 'লিজেন্ডারি' আবুল থাকলেও হতো। রুবেল-রবিউল তো ব্যাটটার গ্রিপও ঠিকমত ধরে না! এখন আশাটা ৫০ রানের। রাজ্জাকের একটু পর পর অ্যাডরেনালিন রাশ হয়। সেটা না করে সোহাগকে একটু সাপোর্ট দিতে পারলে হয়ে যাবে আশা করি। পিচে একটু একটু ক্রাক দেখা দিয়েছে। টার্ণ নেই। আশাও করছি না খুব একটা। অসমান বাউন্সই ভরসা। দেখা যাক। গুড লাক টুমরো, টাইগারস।

১৩ অক্টোবর, ২০১৩:

# প্রসঙ্গত একটা ঘটনা শেয়ার করি। ছোটকালে ইনডোরে শর্টপিচ ক্রিকেট খেলতাম। মাঝে মধ্যে বিশেষ নিয়মে টেস্টও খেলতাম। সিস্টেমটা ছিলো এরকম- দুই ঘন্টা সময় থাকলে ৩০ মিনিট করে চার ভাগ করে চার ইনিংস। সময় কম থাকলে মাঝে মাঝে ২০ মিনিটে ভাগ করে এক ঘন্টা বিশ মিনিটেরও ম্যাচ খেলতাম। তো হতো কী, চতুর্থ ইনিংসে যেই প্রতিপক্ষ জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় রানের কাছাকাছি চলে যেত তখন ইচ্ছে করে ওভারের দুইটা বল মারা হতো মাথার উপর দিয়ে বাউন্স আর বাকি চারটে বলের ২-৩ টা মারা হতো অফ অথবা লেগ স্ট্যাম্পের অনেক বাইরে দিয়ে। টেস্ট তো, নাগালের বাইরে দিয়ে গেলেও সহসা ওয়াইড হতো না। সাথে ওভার করতে ইচ্ছাকৃত বেশি সময় ব্যয় করা হতো। ফিল্ডার আস্তে আস্তে হেঁটে বল কুড়িয়ে ফেরত দিতো সময় অপচয় করতে। কারণ ৩০ মিনিট হয়ে গেলেই তো ড্র! হারা লাগতো না অন্তত।

ঠিক একই ঘটনা ক'দিন আগে অ্যাশেজে দেখেছি। আপনার কী ধারণা, ২৫৬ যদি বাংলাদেশ চেজ করে কাছাকাছি যেত তাহলে ব্রেন্ডান ম্যাকালাম সীমা লঙ্ঘন না করে এই কাজটাই করতো না? টেস্টে দিনের ৯০ ওভারে সাধারণত ২৮০-৩০০ রান ওঠে। সেখানে ওর্ধেক ওভারে প্রায় একই রান এবং তাও পঞ্চম দিনের পিচে, কতটুকু কঠিন, ভেবে দেখেছেন? মুশফিক-জার্গেনসেন এবং টিম ম্যানেজমেন্ট ব্যাপারগুলো খুব ভালোভাবেই জানে। তাই অযথা টার্গেটের পিছনে দৌড়ায়নি। পরে এই প্রায় অসম্ভব রান তাঁড়া করে ৫-৭ টা উইকেট হারিয়ে ফেলে ড্র করলে ম্যাকালাম সংবাদ সম্মেলনে এসে বলতো, 'আমরা আসলে টেস্টটা জিতেই গেছিলাম। ইশ! একটুর জন্যে!' এটা শুনতে নিশ্চয়ই ভালো লাগতো না! আর হ্যা, চেজটাকে 'প্রায় অসম্ভব' বললাম এই কারণে যে স্মৃতি-গুগোল-ক্রিকইনফো ঘেঁটে ৪০-৪৫ ওভারে চতুর্থ ইনিংসে ২৫০+ চেজ করে জেতার কোনো নজির পেলাম না।

বাই দ্যা ওয়ে, একটা ড্র টেস্ট জেতার মতই আনন্দ দিলো। মমিনুলের দেড় শতক, সোহাগের দুর্দান্ত সেঞ্চুরী। সাথে ১৩৬ বছরের টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাস আর দুই হাজারের বেশি টেস্ট ম্যাচের মাঝে একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে একই সাথে শতক এবং হ্যাট্রিক। যেটা করতে পারেনি সোবার্স-বোথাম-ইমরান-কপিল-ক্যালিসরাও। টেস্ট খেলোয়াড় হিসেবে ২৯ তম এবং বাংলাদেশী হিসেবে দ্বিতীয় হ্যাট্রিক। সাথে মুশফিক-সাকিবের হাফ সেঞ্চুরী এবং তরুণ তুর্কি মার্শাল আইয়ুবকে আবিষ্কার; ড্র আর ফ্ল্যাট পিচকে নেগেটিভ ধরার পরেও অনেক পজিটিভ নোটস্ִ লেখা যাবে চট্টগ্রাম টেস্টকে নিয়ে। অবশ্য টাইগারদের ইদানিং আর পজেটিভ নোটস্ִ লেখার দিন নেই। জয় অথবা পরাজয়। এটাই বর্তমান বাংলাদেশ ক্রিকেটের বিজ্ঞাপন। ওয়েলডান টাইগারস্ִ, ইউ ওয়্যার দ্যা বেটার টিম ইন দ্যা লাস্ট ফাইভ ডে'স্ִ।



সবশেষ, অনেকদিন ধরে অমীমাংসিত একটা প্রশ্ন: ফ্ল্যাট পিচ তো রোলার আর দুর্মুজ দিয়ে পিটিয়ে লেবাররাই তৈরি করে দিতে পারে। সেটা তৈরি করতে শুধু শুধু বিদেশ থেকে এনে এত খরচ করে কিউরেটর পোষা কেন?

# ১৩৬ বছরের টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে সম্ভবত: এই প্রথম কেউ একই ম্যাচে সেঞ্চুরী এবং হ্যাট্রিক করে দেখালো। বাংলাদেশ বিবেচনায় অলক কাপালীর রেকর্ডে ভাগ বসিয়ে দিলো সোহাগ। মাত্র কয়েক মিনিটের ব্যবধানে মমিনুলের টেস্টটা সোহাগ গাজীর টেস্ট হয়ে গেলো! হ্যাটস্ִ অফ। অল হেইল টু সোহাগ। আনবিলিভ্যাবল অ্যাচিভমেন্ট!

১৪ অক্টোবর, ২০১৩:

# লোকটা ডাক্তার। একজন সাধারণ এমবিবিএস ডাক্তার বেঁচে থাকার জন্যে মোটামুটি ভালো একটা এমাউন্টের টাকা ইনকাম করার যোগ্যতা রাখে। বড় কোনো পোষ্ট গ্রাজুয়েশন ডিগ্রি না থাকুক, ছোটখাটো একটা ডিগ্রি হলেও অ্যামাউন্টটা যথেষ্টই। চোখ বন্ধ করে একটা বিয়ে থা করে পরিবার পরিজন নিয়ে নিভৃতে-শান্তিতে দিন কাটানো যায়। অথচ লোকটা এসব বাদ দিয়ে গণজাগরণের মুখপাত্র হয়ে গেলেন। জঙ্গি-খুনি-ধর্ম ব্যবসায়ী-রগ কাটা সন্ত্রাসীদের নাম্বার ওয়ান টার্গেট হতে দ্বিতীয়বার ভাবলেন না। রাজাকার আর জামাত-শিবিরের সাথে এক বাতাসে নি:শ্বাস নেবেন না, আমার মত লক্ষ তরুণের কথাটা নিজের মাঝে ধারণ করে রাস্তায় নেমে গেলেন। ক'দিন আগে অনেকদিন পর টিভিতে দেখলাম। সাদা চামড়াটা পুড়িয়ে মোটামুটি তামাটে করে ফেলেছেন। এক আস্থাভাজনের কাছে শুনেছিলাম, দিনের পর দিন আজিজ-পিজি সহ বিভিন্ন জায়গায় লুকিয়ে থাকেন। সবকিছু ছেড়ে দিলেও আর কোনোদিন উনি পরিবার পরিজন নিয়ে স্বচ্ছন্দে মার্কেটে যেতে পারবেন? কাঁচা বাজার থেকে পালংশাক কিনতে পারবেন? মোড়ে দাঁড়িয়ে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে দিতে ফুচকা খেতে পারবেন? জেনে শুনেই জীবন থেকে এসব বিসর্জন দিয়েছেন। জানামতে, চাইলেও নিজের মায়ের সাথেও সবদিন দেখা করতে পারেন না! কে জানে কোন রাস্তার বাঁকে রাজীব হায়দারের মতই জামাত-শিবির মৃত্যুকূপ খুঁড়ে রেখেছে লোকটার জন্যে!

লোকটাকে নিয়ে অনেক নোংরামি হয়েছে। উনার মায়ের ছবি ফটো এডিট করে পর্যন্ত অনলাইন প্রোপাগান্ডা আর নোংরামি করেছে জামাত-শিবির। কেউ বলেছে রাজাকারের নাতি। সুশীলরা চেয়েছে পাঞ্জাবীর হিসেব। উনি চাইলেই বলতে পারতেন, একজন ডাক্তারের ইনকামের পরে মাসিক যে টাকাটা বাড়তি থেকে যায় তা দিয়েই ত্রিশ দিনে ত্রিশটা নতুন পাঞ্জাবী কেনা সম্ভব। আশ্চর্য ব্যাপার, উনি বলতেই যাননি। এত বিপথে নেওয়ার চেষ্টা করার পরেও মূল ফোকাসটা একটুও নাড়াননি। বিগত কয়েক বছরে শীর্ষ পর্যায়ে এত মাথা ঠান্ডা মানুষ আমি দেখিনি। এবং কেউ এখন আর অস্বীকার করতে পারবেনা এখন যে উনি বিফল হয়েছেন। কাদের মোল্লার ফাঁসি এবং জামাত-শিবির নিষিদ্ধ; মূল যে দাবী দু'টো নিয়ে রাস্তায় নেমেছিলেন তার একটা সম্পূর্ণই পূরণ হয়েছে, আরেকটা আংশিক। হিসেব করলে শেষ পর্যন্ত যথেষ্টই সফল বলে দেওয়া যাবে। এবং ইতিহাসে একজন সফল মানুষ হিসেবে তার নাম লেখা থাকবে, নিন্দুকদের নোংরামি নয়।

একটা অভিযোগ অবশ্য আমি স্মীকার করি। রাজনৈতিক স্বার্থে শেষদিকে একটা রাজনৈতিক দল সম্ভবত: উনাকে প্রভাবিত করেছে। সেটা অস্বাভাবিক কিছু না। আজকে আটপৌড়ে আমজনতা থেকে কালকে মানুষ যদি আপনাকে নেতা বলে মানতে শুরু করে, একজন প্রভাবশালী নেতা থেকে আপনার উপর বেশি আস্থা রাখে, কোটি কোটি মানুষ আপনার কথাতে মোমবাতি জ্বালায়, শহীদদের চিঠি লেখে; ক্ষমতায় থাকা একটা মহল আপনার উপর কতৃত্ব করতে, অথবা আপনার কাজে বাগড়া দিতে আসবেই। সারাজীবন গ্রে-লাভ বেইলি-ডেভিডসন পড়া একজন লোকের পক্ষে এসব রাজনৈতিক প্যাঁচ এত সহজে বোঝা সহজ ব্যাপার হওয়ার কথা না নিশ্চয়ই! তাছাড়া স্বার্থ পূরণে একটা রাজনৈতিক দলের সাথে সমঝোতা করে চলা ছাড়া উপায়ও ছিলো না। কারণ দেশের বৃহত্তম একটা দলই যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি দিতে চায়। বাকিরা স্রেফ এর বিপক্ষে।

মানুষটার নাম ডা: ইমরান এইচ সরকার। বার পাঁচ-সাতেক স্বচক্ষে দেখলেও কথা হয়নি কখনো। স্যোসাল নেটওয়ার্কেও উনি আমার বন্ধু তালিকায় নেই এবং তাকে ফলোও করি না আমি। কিন্তু এই মানুষটা সম্পর্কে একটা সময় হতে আমার ভীষণ শ্রদ্ধা। এবং আজকে আমার এই লেখাটা ডাক্তার বলে উনাকে জাস্টিফাই করতে লেখা না। বাংলাদেশে লাখ খানেক ডাক্তার আছে। আজ মানুষটার জন্মদিন। শুভ জন্মদিন ইমরান ভাই। মুখে-অনলাইনে অনেকেই বাঘ-ভাল্লুক শিকার করে ফেলে। আর রাজপথের নেড়ি কুত্তারা আপনাকে সমীহ করে, আপনাকে নাম্বার ওয়ান টার্গেট করে ক'দিন পরপর তালিকা প্রকাশ করে। ভালো থাকবেন। সাবধানে থাকবেন।

১৬ অক্টোবর, ২০১৩:

# কাছে-দূরে, দেশে-বিদেশে, মোবাইল-ট্যাব-ল্যাপটপ বা ডেক্সটপের সামনে; যে যেখানে বসে এই স্ট্যাটাস দেখছেন, সকলকে 'ঈদ মোবারক'। 'ট্যাগ'-এর নয়, আমরা ত্যাগের মহিমায় মহিমান্বিত হই।

১৮ অক্টোবর, ২০১৩:

# ১) স্মার্ট ফোনের সাথে তুলনা করে ইদানিং ম্যাক্সিস ফোনের একটা প্রচন্ড বিরক্তিকর অ্যাড প্রচারিত হচ্ছে। মনে পড়ে গেলো এই ম্যাক্সিসই বছরখানেক আগে '১০০% ইসলাম ফোন' শিরোনামে দৈনিক পত্রিকাগুলোতে বিজ্ঞাপন দিতো। তখন, লগ-ইন করে দেখলাম ১৩ই নভেম্বর ২০১২ তে 'আসছে ১০০% হিন্দু ফোন' নামে একটা স্যাটায়ার লিখেছিলাম। আমার এক ব্রাহ্মণ বন্ধুর অনুভূতিতে আঘাত লেগে গেছিলো। কিছু গালি-হুমকি দিয়ে আমাকে ব্লক মেরে দিয়েছিলো। ওর হুমকিতে এত্তটাই ভীত হয়ে পড়েছিলাম যে ভয়ে 'আব্বা' বলে চিৎকার দিয়ে ফেলেছিলাম! সেই থিমকে উপজীব্য করে ম্যাক্সিস নতুন বিজ্ঞাপন করেছে; 'আব্বা'!

২) ভ্যাগ্যিস অঞ্জন দত্ত সুমনের মত বাংলাদেশের খোঁজখবর রাখেন না। তা না হলে ড: ইউনুসের সাম্প্রতিক শান্তির বাণীটা শুনে নতুন লিরিক লিখে বসতেন,

'ব্যাংকে ঢুকলে হাত ভেঙে দেবো

বলেছে ইউনুস দাদাটা

অন্য ব্যাংকে যাচ্ছি তাই

খঞ্জনা, আমি আর আসবো না!'

৩) খুব কাছাকাছি সময়ে অনেকগুলো উৎসব গেলো। ঈদ-পূজা-ক্রিকেট। খুব আশা করেছিলাম উৎসবের আনন্দকে পূর্ণতা দিয়ে কোনো একটা রাজাকারকে কুরবানি দেওয়া হবে। হয়নি। সে যাই হোক, আবার গৎবাধা জীবন। আবার ভাজ পড়া পুরাণো রুটিন। দিনশেষের ক্লান্তিরা। সামনে হয়তো আবার অনেকগুলো গ্যাঞ্জাম-হরতাল-অবরোধ-ভাঙচূর-মৃত্যু একসাথেই আসছে। অনেকটা আলোর পরে অন্ধকারের ন্যায়। অঞ্জনের একটা গানের লাইন আছে-

'সুদিন আসবে বলে ওরা, আগুন জ্বালায়

আর হাজার হাজার মানুষ, মরে যায়

দেখবে বলে আকাশটাকে মাথা উঁচু করে

শুধুই লম্বা কালো ধোঁয়া দেখে যায়।'

৪) @[100000180377564:Dr-Shuvro] দাদা আমাকে লিভারপুলের হোম জার্সি গিফ্ִট্ִ করেছে। এই ফিলিংস লিখে বা বলে বোঝানোর মত না। এর আগেও একটা মিলানের জার্সি গিফ্ִট্ִ করেছিলো। দাদা এসি মিলানের কট্টর সমর্থক। এক সময়ের শিরোপা প্রত্যাশী মিলান-লিভারপুলকে এখন চ্যাম্পিয়নস্ִ লীগে কোয়ালিফাই করার জন্যে খেলতে হয়। অনেক পিছনে পড়ে গেছে। তবু প্ল্যাস্টিক সাপোর্টারদের মত অন্য কোনো দল পাল্টায়নি দাদা। আমিও। ব্যস্ততার মুহূর্তেও বাংলাদেশের খেলা বাদে সপ্তাহান্তে একদিনই নিয়ম করে ঘন্টা দেড়েকের জন্যে টিভির সামনে বসি। সেটা লিভারপুলের ম্যাচটার জন্যেই।

৫) মাঝে মাঝে হোমপেজ দেখে অনুভূত হয় আকাশ ছেড়ে চাঁদ ফেসবুক ওয়্যালেই ওঠে! মেঘের বদলে আসলে স্ট্যাটাস বক্স থেকেই বৃষ্টি ঝরে পড়ে! বাই দ্যা ওয়ে, প্রকৃত অর্থে বৃষ্টিস্নাত বা চন্দ্রাহত হলে সাথে সাথে কেউ ফেসবুকে আসতে পারে? এরা ঠিক কী দিয়ে চাঁদ বা বৃষ্টি দেখে? আঙুল দিয়ে?

৬) খবরে পড়লাম, কোলকাতা প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটিতে 'এনিগ্যমা অফ লাভ' বিষয়ে গ্রাজুয়েশন কোর্স শুরু হতে যাচ্ছে। হাসির কিছু নেই। সাইকোলজির ছোট ছোট বিষয়ের উপর কোর্স থাকতে পারলে ভালোবাসার উপরে তো অবশ্যই থাকা উচিত। এতদিন কেন ছিলো না, সেটাই বরং বিষ্ময়ের! বাংলাদেশে অদূর ভবিষ্যতে এমন দারুণ কিছুর অপেক্ষায় আছি। ইন্টারনেটে টাইমস অফ ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে যখন ভালোবাসা নিয়ে কোর্স চালুর কথা পড়ছি, তখন হেডফোনে বাজছে ভীষণ, ভীষণ প্রিয় একটা রবীন্দ্রসঙ্গীত। প্রায় হাজার দুয়েক রবীন্দ্রসঙ্গীতের বেশিরভাগই শোনা হয়নি। যা শুনেছি তার মাঝে ব্যক্তিগত পছন্দে এই গানটা প্রথম দু'-তিনটার মাঝেই থাকবে:



'ভালোবেসে সখী, নিভৃতে যতনে আমার নামটি লিখো- তোমার মনের মন্দিরে।

আমার পরাণে যে গান বাজিছে তাহার তালটি শিখো- তোমার চরণমঞ্জীরে।

ধরিয়া রাখিয়ো সোহাগে আদরে আমার মুখর পাখি- তোমার প্রাসাদপ্রাঙ্গণে।

মনে ক'রে সখী, বাঁধিয়া রাখিয়ো আমার হাতের রাখী- তোমার কনককঙ্কণে।

আমার লতার একটি মুকুল ভুলিয়া তুলিয়া রেখো- তোমার অলকবন্ধনে।

আমার স্মরণ-শুভ-সিন্দুরে একটা বিন্দু এঁকো- তোমার ললাটচন্দনে।

আমার মনের মোহের মাধুরী মাখিয়া রাখিয়া দিয়ো- তোমার অঙ্গসৌরভে।

আমার আকুল জীবনমরণ লুটিয়া টুটিয়া নিয়ো- তোমার অতুল গৌরবে।

২০ অক্টোবর, ২০১৩:

# : বাবুল, দেশের তো ১২ টা বাজার ইঙ্গিত পাচ্ছি রে।

: স্যার, কী যে বলেন, আমার জানামতে তো দেশের '২৫'টা বাজতে যাচ্ছে!

২৩ অক্টোবর, ২০১৩:

# ১) নিউজিল্যান্ড হ্যাভ লার্ন ফ্রম মিসটেকস্ִ অ্যান্ড ডান ইট রাইট। চট্টগ্রাম টেস্টের ভুলগুলো থেকে অতিদ্রুতই শিখে নিয়েছে ওরা। তাদের মূল শক্তির জায়গা পেস বোলিং। যতই স্পিন সহায়ক পিচ হোক, চতুর্থ-পঞ্চম দিনে পিচ ভাঙার প্রচ্ছন্ন হুমকি থাকার পরেও চার পেসার নিয়ে নামার সাহস দেখিয়েছে। এবং তারা তাতেই সফল। এই কাজটা অস্ট্রেলিয়া-সাউথ আফ্রিকাও করে। উপমহাদেশে এসে চার-এক পেস কোয়াট্রেটেই স্ট্রিক্ট থাকে। খুব বাধ্য না হলে কম্বিনেশন ভাঙে না। অথচ চট্টগ্রাম টেস্টে সম্ভবত: কিউইদের ১৭ উইকেটের ১৬ টাই পেয়েছে বাংলাদেশী স্পিনাররা। সাথে মিরপুরের কিছুটা স্পিন বান্ধব উইকেট। সেখানে একটা পেসারকে ড্রপ করার সাহসী ডিসিশন নিলেও নেওয়া যেতো। ফরচুন ফেভারস্ִ দ্যা ব্রেভ।



২) হামিশ রাদারফোর্ডকে বেশ পছন্দ। দারুণ স্ট্রোক মেকার। উইকেটের দুই পাশেই স্বচ্ছন্দে শট খেলে। টেস্টে না পারলেও শর্টার ফরম্যাটে বড় হুমকি হবে।

৩) অ্যাটাক ইজ দ্যা বেস্ট ডিফেন্স্ִ। এই কথাটাই বিশ্বাস করি। ক্ষেত্র বিশেষ বাদে ১০০ বলে ৩০ রান করা থেকে আজকালকার টেস্টে ৬০ বলে ৪৫ রান করা বেশি কার্যকরী। তামিম-মমিনুল-মার্শালরা ওই পথে হাঁটায় খুশিই হয়েছিলাম। কোরে অ্যান্ডারসন সেটার পুনরাবৃত্তিই করে দেখালো। পরের ইনিংসেও সাকিব-তামিমদের অ্যাটাক করা বেঁছে নেওয়াই সমুচিত হবে। দু'-একটা বল এক্সট্রা লাফাচ্ছে বা নিচু হচ্ছে। ডিফেন্সিভ মুড বরং বিপদ ডেকে আনতে পারে। পিচ ভাঙছে। কতটুকু সম্ভব এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না তবে এই মুহূর্তে আগে নিউজিল্যান্ডের লেজটা মুড়তে হবে। লেজের আঘাত সবচেয়ে প্যাথেটিক। মনে হচ্ছে ২২০ এর উপরে যেকোনো লিডই ফাইটিং হবে। ২৭০+ কিছু জেতার জন্যে যথেষ্ট হবে। দেখা যাক।

২৪ অক্টোবর, ২০১৩:

# ১) সেদিন হঠাৎ অমিত 'এইটা শুনে দ্যাখ্ִ' বলে আসিফ আকবর-ন্যান্সির নতুন অ্যালবাম থেকে হেমন্ত মুখার্জীর 'আয় খুকু আয়' গানটার রিমেক চালালো। গানটায় ন্যান্সির অংশটুকু শেষের পর যেই হেমন্তের কন্ঠের জায়গায় আসিফ আকবরের গলা শুনলাম ওমনি শুয়ে থাকা অবস্থা থেকে উঠে বললাম, 'এক্ষুনি বন্ধ কর'। কয়েক শ' বার শোনা গানটার ওই জায়গাটায় কান হেমন্ত ছাড়া আর কেউকে গ্রহন করতে পারেনি। অথচ যখন 'রক উইথ রবীন্দ্রনাথ' বের হলো বা অর্ণব-শিরোনামহীন ভিন্ন আঙ্গিকে, ভিন্ন মিউজিক কম্পোজিশনে রবী ঠাকুরের গানগুলো বাজারে এনেছিলো বা 'ক্ষ' ব্যান্ডটা কম্পোজিশন পরিবর্তন করে 'আমার সোনার বাংলা' গাইলো, তখন আমি তার পক্ষেই ছিলাম! সহজ যুক্তি ছিলো, জেনারেশন গ্রহন না করলে এটা আপনিতেই বন্ধ হয়ে যাবে। আগের অবস্থানটা থেকে না সরলেও আসিফের গলাম হেমন্তের গান আমার কান গ্রহণ করেনি। সেই ছোটবেলা থেকে; যতদিন ফিডব্যাক, ভূমি বা চন্দ্রবিন্দুর খোঁজ পাইনি, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, মান্না দে, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, প্রতুল মুখোপাধ্যায়, ভূপেন হাজারিকার গান এতো শতবার বাসার ক্যাসেট-সিডি প্লেয়ারে বেজেছে, আর মা-বাপির সৌজন্যে এতবার শুনেছি যে এসব গানের সুর একটু ভিন্ন হলে তা আর মস্তিষ্ক গ্রহণ করে না; এটা অবশ্য খুব সম্প্রতি প্রচ্ছন্নভাবে অনুধাবন করলাম। আর প্রায় সাথে সাথেই কী-না আমার গান শোনার হাতিখড়ির এক নায়ক পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেন। ভালো থাকুন মান্না দে।

২) 'ইটস দ্যা ওয়ে হাউ টু চেঞ্জ ইয়োর গেম অ্যাকোর্ডিং টু ন্যাসেসিটি'। তামিম পুরোপুরি নিজের খেলাটা বদলে ম্যাচটা বাঁচিয়ে দিয়েছে। একথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে ১৫৫ রানে ট্রেইল করার পর চতুর্থ দিনের অসমান বাউন্সের পিচে বাংলাদেশই ব্যাকফুটে ছিলো। তামিমের জন্যে খারাপই লাগছে। দু'বার কাছাকাছি গিয়েও কাঙ্খিত সেঞ্চুরীটা হলো না। নববধুকে উৎসর্গ করার মত বিশেষ কিছু করে দেখাতে পারলো না। তামিমের উদ্ִযাপনটার দিকে চেয়ে আছি। ওর উদ্ִযাপন বিশেষ ধরণের হয়। এশিয়া কাপে ৪ আঙুল দেখানোটা এখনও চোখে ভাসে। তামিম একটা স্ট্যাবল জায়গায় আনার পর বিদায় নিলেও সামনে নিয়ে যাচ্ছে রঞ্জিত ফার্নান্ডোর 'মামানুল'। আজ ক্রিকইনফোতে টি'র কিছুক্ষণ পর দেখলাম এক ফ্যান কমেন্ট করে গিয়েছে, ৫ ম্যাচ পর স্যার ডন ব্রাডম্যান, স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডসের থেকে মমিনুলের রান বেশি! না, স্যার ডন ব্রাডম্যান বা স্যার ভিভের সাথে তুলনায় যাচ্ছি না, শুধু নিজের কিউরিসিটি থেকে একটা প্রশ্ন, শেষ কবে বিশ্বের কোন ব্যাটসম্যানকে এই জাতীয় অসমান বাউন্সের উইকেটে রান ট্রেইল করা অবস্তায় মমিনুলের মত এরকম অসাধারণ কাট শটগুলো খেলতে দেখেছেন?



গত ম্যাচে ম্যাকালাম যে কাজটা করেছিলো, আগামীকাল মুশফিকও সেই একই কাজটা করবে আশাকরি। ৪০-৪৫ ওভারে ২৫০+ একটা স্কোর ধরিয়ে দেবে। উই নো, মুশি হ্যাভ গাটস্ִ। ওয়েল প্লেড টাইগারস। দ্যাটস দ্যা প্রোপার ওয়ে অফ প্লেইং টেস্ট ক্রিকেট।

৩) ইউনুস খান না কে জানি বলেছিলো, 'বাংলাদেশের টেস্ট স্ট্যাটাস কেড়ে নিয়ে আফগানিস্তানকে দিয়ে দেওয়া উচিত'। বাই দ্যা ওয়ে, টেনশন কইরেন না মিসবাহ বাহিনী, মাত্র ৯৯ রানে অল-আউট হওয়ার পরেও আর ইনিংস পরাজয়ের পথে থাকার পরেও সাকিব-মুশফিকরা কোনোদিন বলবে না, 'পাকিস্তানের টেস্ট স্ট্যাটাস কেড়ে নিয়ে উগান্ডা বা সাইপ্রাসকে দিয়ে দেওয়া উচিত'!

২৬ অক্টোবর, ২০১৩:

# : বাবুল, শেখ হাসিনা আধাঘন্টা ফোন করার পরেও নাকি খালেদা জিয়া ফোন ধরেননি?

: স্যার, নাহ্ִ, এই বাকশালী নাস্তিক সরকার আরামের ঘুমটাও কেড়ে নিচ্ছে!

# দারুণ একটা রাত গেলো। সুয়ারেজের হ্যাট্রিকে লিভারপুল একতরফা জিতে গেছে। গত দুই বছর ধরে মরিনহোর 'হেল ক্লাসিকো'র বদলে দারুণ একটা এল ক্ল্যাসিকো দেখলাম। শুধু মেসি না, নেইমারও সমান দুর্দান্ত। পাকিস্তানও হেরে গেছে ইনিংস ব্যাবধানে। সুপার স্যাটার্ডে নাইট ফর মি!

২৮ অক্টোবর, ২০১৩:

# স্যার কিয়ৎক্ষণ মনোযোগ দিয়ে পড়া পত্রিকাটি ছুড়িয়া ফেলিয়া হঠাৎই বাবুলকে ডাক দিলেন। বাবুলের আসিতে কিঞ্চিৎ দেরি হইয়া গেলো। ইহাতে স্যার দাত মুখ খিঁচিয়া অতিশয় ক্রুদ্ধ হইয়া বলিয়া উঠিলেন, 'হতচ্ছাড়া, এতক্ষণ লাগে আসতে? কী এমন গুরুকান্ড করছিলি রে?' বাবুল এদিক ওদিক চাহিলো। ছেঁড়া দৈনিকটি দেখিয়া সদা মৃদুভাষী শিক্ষকের হঠাৎ ক্ষোভের কারণটি অনুমান করিতে দেরি হইলো না। কিয়ৎ ভাবলেশহীন হইয়া বলিলো, 'স্যার, কী হয়েছে? এত উচ্চস্বরে তো সহসা ডাকেন না।' স্যার তারস্বরে বলিয়া উঠিলেন, 'বেটির কান্ড দ্যাখোস নাই? মুক্তিযোদ্ধারা গণহত্যা করেছে-একথা বলেছে!' বাবুল একটি মিচকি হাসি দিতে যাইয়াও দিলো না ইহা ভাবিয়া যে পশ্চাতে স্যার না একখানা বসাইয়া দেয়! তাঁহার মুড ভালো নহে। তবে অবিলম্বে স্বভাবসুলভ কন্ঠে বলিয়া উঠিলো, 'স্যার, প্রতিটা হস্তমৈথুনে পঞ্চাশ থেকে পাঁচশ মিলিয়ন শুক্রানু বের হয় যা দিয়ে প্রায় পঞ্চাশ কোটি মানুষ জন্ম নিতে পারে। ধারণা করি, আপনি যে খবরটা পড়ে পত্রিকাটা ক্রোশে ছুড়ে ফেলে দিয়েছেন, ওটা পড়ে মাত্রই এতগুলো প্রান কমোডে ফ্ল্যাশ করে আসলাম। আপনার ডাকে আসতে দেরি হওয়ার হেতু এটাই। আর, একদিক দিয়ে উনি তো মিথ্যা বলেন নি। বেশিরভাগ মুক্তিযোদ্ধাই নি:সন্দেহে সুপুরুষ ছিলেন। আর ইজাকুলেশন একটা শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া। সুতরাং, নয় মাসে আমার মত কত শত গণহত্যাই না তাঁরা করেছে তার খবর যিনি বলেছেন সম্ভবত: উনিই ভালো জানবেন!'

# 'মুক্তিবাহিনীই গনহত্যা চালিয়েছে।' (-খালেদা জিয়া)



আফগানিস্তান আমেরিকাতে গনহত্যা চালিয়েছে। ফিলিস্তিন ইসরাইলে গনহত্যা চালিয়েছে। এবং ইহুদীরা নাৎসি বাহিনীর উপর গনহত্যা চালিয়েছে। (-ইচ্ছামানুষ রণি)



এ বানিয়া, কবে আমি সাইকোলজির ডাক্তার হবো রে?

২৯ অক্টোবর, ২০১৩:

# তোমরা আমাকে কিছু কিডনি দাও, আমি তোমাদের শান্তিতে নোবেল প্রাইজ এনে দেবো।



ছবি এবং লিংক কার্টেসী: বিবিসি।


# সাংবাদিক: ওয়েল প্লেড মুশি। আপনি-নাঈম এবং বিশেষত রুবেলের পারফরমেন্সে অতি সহজেই জিতে গেলেন। কিউইরা আপনাদের সাথে পারছেই না। গতবার তো ওয়াশ করে দিয়েছিলেন। এবারও কী.…



মুশফিক: ওভাবে বলবেন না। অ্যাকচুয়ালি ইউ নো, ম্যাচের দৈর্ঘ্য যত কমে আসে ছোট দলগুলো তত ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে। সে হিসেবে ব্ল্যাক ক্যাপস্ִরা দারুণ প্রতিদ্বন্দ্বিতাই করেছে। দলে সাউদি-এলিয়টের মত বেশ কিছু প্রতিভাবান প্লেয়ার আছে। উইলিয়ামসন-রাদারফোর্ডের মত তরুণ তুর্কিরা উঠে আসছে। দলটা শিখছে। দলের অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানরা আরেকটু মন:সংযোগ দিলে আর বোলাররা ভালো এরিয়াতে বোলিং করতে পারলে আগামীতে আমাদের মত বড় দলগুলোকেও একদিন হারাতে পারবে। এনিওয়ে, ওয়েল প্লেড নিউজিল্যান্ড। বেটার লাক নেক্সড টাইম।

৩০ অক্টোবর, ২০১৩:

# ক্রিকেটে আমার প্রথম বড় স্মৃতি ১৯৯৬ এর বিশ্বকাপ। স্পষ্ট মনে আছে রমেশ কালুভিথারানা আর সনৎ জয়সুরিয়াকে নিয়ে বাপ-চাচারা খুব আলোচনা করতো। এটুকু বুঝতাম ওরা খুব অ্যাগ্রেসিভ খেলে। বলের কাছাকাছি রান করতে পারে। বড় হওয়ার পর '৯৬ বিশ্বকাপের পুরানো হাইলাটসগুলো দেখেছি। জয়সুরিয়ার ৬৭ বলে ৮২, ৪৩ বলে ৪৪, ৯৩ বলে ৭৯ আর কালুভিথারানার ২২ বলে ২৬ এবং ৫১ বলে ৩৩ ই উল্লেখযোগ্য। এখন আহামরি কিছু মনে না হলেও সেকালে এগুলোই বিশাল কিছু ছিলো। এটা নিয়েই তখন ঢের মাতামাতি। দৈনিকে পাতাভর্তি আলোচনা। এরপর ওয়েস্ট ইন্ডিজের রিকার্ডো পাওয়েল এলো। ওয়েস্ট ইন্ডিজের খেলায় শুধুমাত্র পাওয়েলের ব্যাটিংটা দেখার জন্যেই বসে থাকতাম। এরপরও কম বেশি কুইক রান মেকাররা এসেছে। সাইমন্ডস, ফ্লিনটফ, ক্রেইগ ম্যাকমিলান, গিলি, ভীরু। কিছুক্ষণ ভাবলে আরও কিছু নাম বলতে পারবো হয়তো। কারণ আজকের মত মোড়ে মোড়ে মুড়ি-মুড়কির মত বিগ হিটাররা তখন যথেষ্টই বিরল ছিলো। একটা ওয়ানডে ম্যাচে সহসা একটা ছক্কাই দেখা যেতো না। গাঙ্গুলি-ইনজিরা হঠাৎ হঠাৎ বিশাল একটা-দু'টা ছক্কা মেরে দিতেন। সেসব দেখতে তখন সে যে কী আনন্দ! পাওয়ার হিটিং এতটাই উপভোগ্য ছিলো যে বাপির সাথে যখন ক্রিকেট নিয়ে গল্প জুড়ে দিতাম তখন ঘুরেফিরে রিচার্ডসের মিড উইকেট দিয়ে ছক্কা, শ্রীকান্তের রিভার্স সুইপ বা তখনকার নাসের হোসেইনের বোলারস্ִ ব্যাক ড্রাইভে এসে ঠেকতো। এক প্রজন্মের খেলোয়াড়দের সাথে আরেক প্রজন্মের ক্রিকেটারদের মেলানো ঠিক না। ভিন্ন প্রজন্মের ক্রিকেটারদের তুলনাও ঠিক পছন্দ না। সেকারণে মাত্র ১১৭ ম্যাচে ১৭ সেঞ্চুরী করার অবিশ্বাস্য দক্ষতা দেখানোর পরও বিরাট কোহলিকে ৭৮ ম্যাচ পর্যন্ত সেঞ্চুরীই না করতে পারা টেন্ডুলকারের উত্তরসুরি ভাবতে পারি না। ছোট্ট একটা উদাহরণ দেই। যেমন স্লোয়ার বাউন্সার আর স্লোয়ার ইয়োর্কার আমার নজরে এসেছে 'টি-টুয়েন্টি এরা' শুরু হওয়ার পর। আপার কাট, সুইচ হিট, দিল স্কুপ আর হেলিকপ্টার শট এতটাই নতুন যে শটগুলোর সাথে বর্তমান ব্যাটসম্যানদের নামই সেটে আছে। তাই গ্রেট প্লেয়ার তাদেরই বলি যারা ভিন্ন ভিন্ন প্রজন্ম ফেস করেছে এবং সেই সময়গুলোতেও সম্ভাব্য সেরাই ছিলো। বর্তমান ক্রিকেটারদের মাঝে সম্ভবত: টেন্ডুলকার-ক্যালিসরাই ভিন্ন ভিন্ন প্রজন্মের প্রতিনিধিত্ব করে যাচ্ছে।

বাই দ্যা ওয়ে, যে প্রসঙ্গে কথাগুলো এলো, দ্রুত রান তোলা; সেটা এখন একটা ট্রেডিশন হয়ে গেছে। টি-টুয়েন্টির প্রচলন এবং আগ্রাসন খেলাটার অ্যাপ্রোচই বদলে দিয়েছে। অথচ একটা সময় ছিলো, আমি নিজেই সাক্ষী, ১৫০-১৭০ এর কাছাকাছি রান ছিলো 'ফাইটিং স্কোর'। ২২০ প্লাস যেকোনো রানই প্রায় উইনিং স্কোর বলে ধরা হতো। টি-টুয়েন্টিতেই যেখানে ইদানিং হরহামেশা ২০০ প্লাস স্কোর চেজ হয়, গেইল-ম্যাকালামরা টি-টুয়েন্টিতেই দেড়-দু'শো করে বসেন সেসব দেখে অভ্যস্ত এখনকার প্রজন্মের হয়তো উপরের লেখাগুলোকে কল্পকাহিনীই মনে হতে পারে! এইতো ভারত কদিনের ব্যবধানেই দু'বার সাড়ে তিনশ' রান কী অনায়াসেই না চেজ করে দেখালো। ক্রিকেট এতটাই বদলেছে যে ৩৫০ রানও অস্ট্রেলিয়ান বোলিং অ্যাটাক পরপর দু'বার ডিফেন্ড করতে পারলো না!

৩১ অক্টোবর, ২০১৩:

# ১) আফটার সাচ্ִ অ্যা ডোমিনেন্ট উইন, হোপ আই অ্যাম নট দ্যা ওনলি ওয়ান হু থিঙ্কস্ִ উইনিং দ্যা টস অ্যান্ড ব্যাট ফার্স্ট ওয়্যাজ অ্যা রং ডিসিশন। মাঠে যথেষ্ট পরিমান শিশির। এই ভেজা বলেও রাজ্জাক-সোহাগ-রিয়াদ-মমিনুলরা যে দক্ষতার সাথে বল করেছে তা দেখে মনে হয়েছে ডেভ ওয়্যাটমোরের মত জার্গেনসেনও ভেজা বল দিয়ে স্পিনারদের বোলিং প্রাকটিস করান। অল হেইল টু আওয়ার স্পিনারস্ִ।

২) কেন উইলিয়ামসন নিশ্চয়ই এই মুহূর্তে 'কিউই সাকিব'। আমার ধারণা ওর থেকে ভালোভাবে আর কোনো কিউই ব্যাটসম্যান স্পিন রিড করতে পারে না। সাথে দশ ওভার কার্যকরী স্পিন করে স্কোয়াডে এক্সট্রা একজন ব্যাটসম্যান নেওয়ার সুযোগ করে দেয়। বাংলাদেশের সাকিব নেই আর নিউজিল্যান্ডের উইলিয়ামসন চলে যাওয়াতে দুই দলই এক জায়গায় দাঁড়িয়ে গেছে। এবং এতে প্রমান হয়ে গেছে নিউজিল্যান্ডের থেকে বাংলাদেশ দলটার শক্তিমত্তা বেশি।

৩) বাংলাদেশের পক্ষে ওয়ানডেতে আগের সর্বোচ্চ রান সাকিবের ৩৬৮৮ আজকে ছাড়িয়ে গেছে তামিম ইকবাল। তামিমের রান ৩৭০২। এই মুহূর্তে বাংলাদেশের পক্ষে ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ। রাজ্জাকেরও দেখলাম ২০৩ ওয়ানডে উইকেট। এই মুহূর্তে জাতীয় দলের হয়ে খেলছে এবং ২০০ উইকেট আছে এমন স্পিনার সম্ভবত রাজ্জাক একাই। আজমল, সোয়ান, মেন্ডিস, অশ্বিন; কারোরই উইকেট সংখ্যা তো ২০০ এর নিকটেও না!

৪) একটা ব্যাটসম্যান পরিস্থিতি সামাল দিতে, বল পুরানো করতে, বোলারকে ক্লান্ত করতে বা স্ট্রাইক চেঞ্জ না করা সহ নানা কারনে ডিফেন্ড করে, ডট বল দেয় বা দিতে হয় ইচ্ছে করেই। কিন্তু একটা আন্তর্জাতিক ব্যাটসম্যান সিঙ্গেল নেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করছে ওভারের পর ওভার এবং ব্যর্থ হচ্ছে, অত:পর বাধ্য হয়ে স্লগ হিটিংয়ে যাচ্ছে এবং সেটাও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে; এটা স্রেফ দৃষ্টিকটূ। চ্যাম্পিয়নস্ִ ট্রফিতে কেন উইলিয়ামসনের পরিবর্তে আসা লুক রঙ্কিকে এই অবস্থায় পড়তে দেখেছি একাধিকবার। তারপরেও জাতীয় দলে ডাক পাওয়াটা বলে দেয় নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেটের কোর কতটা দূর্বল। ইদানিং অবশ্য দু'-একজন বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানকেও দেখছি।

৫) যে নিউজিল্যান্ড একবিন্দু পাত্তা পায় না বাংলাদেশের কাছে, পরপর দু'বার হোয়াইটওয়াশ হওয়ার লজ্জা পাওয়ার দ্বারপ্রান্তে, টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপে কী-না তারাই সরাসরি অংশগ্রহণ করবে। আর বাংলাদেশকে খেলতে হবে বাছাইপর্ব। আইসিসির কৌতুকবোধ খুবই উচ্চপর্যায়ের!

৬) এক-দেড় বছর আগের কথা মনে করতে পারি। তখনও বাংলাদেশ জিততো। হয়তো একটু অনিয়মিতই। শুধুমাত্র বাংলাদেশ জিতলেই হোমপেজে খেলা নিয়ে স্ট্যাটাস দেখতাম। এছাড়া না। ওইদিন একটা নিয়ম পালন করতাম। যতগুলো স্ট্যাটাস পড়তো তার সবগুলোতেই লাইক-কমেন্ট করে আসতাম। আর এখন একটা উইকেট পড়লে, ক্যাচ মিস হলে বা কেউ একটা ছক্কা মারলেই যে পরিমান স্ট্যাটাস পড়ে, যে পরিমান অ্যানালাইসিস হয় যে সেগুলোই দেখে শেষ করতে পারি না। আর জেতার পরে সব স্ট্যাটাস দেখার ইচ্ছে পোষণ করাটাই একধরণের অলীক ব্যাপার হয়ে গেছে। যে মেয়েটা 'কিচ্ছু ভাল্লাগেনা' বা 'হাই ফ্রেন্ডস্ִ, তুমরা কিরাম আছো?' স্ট্যাটাস দিতো, সেই মেয়েটাই এখন স্ট্যাটাস দেয়, 'বাংলাদেশে না শিশুশ্রম নিষিদ্ধ। এই সুইট্টো কিউট্টো মমিনুলকে দিয়ে তাহলে ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিং সবকিছুই করায় কেনু? মুহম্মদ জাফর ইকবাল, এই প্রশ্নের উত্তর দ্যান!'

সাংবাদিক: ওয়ানস্ִ এগেইন ওয়েলডান মুশি। ওয়েল প্লেড। গতদিনের মত আজকেও 'ডলা' দিয়ে দিলেন। তার মানে বাংলাওয়াশের অপেক্ষা এখন স্রেফ সময়ের ব্যাপার। না-কী?



মুশফিক: আমরা আসলে এখনও অতদূর ভাবছি না। তাছাড়া আপনাকে আগেই বলেছি, এই দলটা ভীষণ প্রমিজিং। দিনকে দিন তারা উন্নতি করছে। খেয়াল করলে দেখবেন গত ম্যাচে তারা মাত্র ২৯ ওভার খেলতে পেরেছিলো। আজ খেলেছে প্রায় ৪৭ ওভার। গত ম্যাচে মাত্র ১৬২ করেছিলো। আজ ২০৭ করেছে। এই ম্যাচে রুবেল-গাজীদের হ্যাট-ট্রিক বঞ্চিতও করেছে। সাথে অভিজ্ঞ কাইল মিলস্ִ যুক্ত হয়েছে দলে। দলটার উন্নতির গ্রাফ পরিষ্কার উপরের দিকে। পরের ম্যাচে ওরা তীব্র চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে পারে। আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।



সাংবাদিক: মাশরাফি ধীরে ধীরে পুরো রিদম ফিরে পাচ্ছে। এ ব্যাপারে…



মুশফিক: আমি ম্যাশ ভাইকে ম্যাচের মাঝের দিকে বলেছিলাম, 'ভাই, রাদারফোর্ডকে বোল্ড করে একটা স্ট্যাম্পের চলটা উঠিয়ে দিয়েছেন। আর জোরে বোলিং কইরেন না। ভাইঙ্গা যাইবো। এই উইকেট দিয়ে পরের ম্যাচটাও চালাইতে হইবো। খালি খালি বিসিবির ব্যয় বাড়াইয়া লাভ নাই।' উনি কী আর ভাবী বাদে আর কারও কথা শুনেন! দিছে টিম সাউদির উইকেট ভাইঙ্গা। পরের ম্যাচে নতুন আরেকটা কিনতে হইবো। লোকে কী অ্যামনে অ্যামনেই হেতেরে 'পাগলা' কইয়া ডাকে!
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১১:১৯
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×