somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শহরতলী'র দ্বিতীয় অ্যালবাম 'অপর পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য': ২০১৩ সালের সেরা ব্যান্ড অ্যালবাম।

৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

'থিয়েট্রিক্যাল রক ব্যান্ড' শব্দটাই প্রথম শুনি ২০১০ এর শেষের দিকে, শহরতলী ব্যান্ডটাকে নিয়ে করা একটা পত্রিকার ফিচারে, ব্যান্ডটির প্রথম অ্যালবাম 'বরাবর শহরতলী' রিলিজ হওয়ার পরপরই। আমি 'থিয়েট্রিক্যাল ব্যান্ড' বলতে ঠিক কী বোঝায় তখন জানতাম না। 'বরাবর শহরতলী' শুনলাম। খুব আহামরি কিছু না। তবে গানের আয়োজনে প্রচন্ড রকম বৈচিত্র। সঙ্গীতায়োজনে নতুনত্ব। গানের মধ্যেই কথোপকথন, গীতিকবিতা, আবৃত্তি। এককথায় প্রথাগত ব্যান্ডগুলো থেকে পুরোপুরি ভিন্ন স্বাদ। এরকম ভিন্নতা নিয়ে মাঝেমধ্যেই কিছু ব্যান্ড আসে। একটা দু'টো ভালো গান উপহার দিয়ে আবার হারিয়েও যায়। তাই এতটা গুরুত্ব দিয়ে আর খোঁজখবর রাখা হয়নি। পরে ব্যান্ড সদস্য এবং ভোকালিস্ট মিশুর একটা সাক্ষাৎকারে জেনেছিলাম 'থিয়েট্রিক্যাল' শব্দের ব্যাখ্যাটা। অনেকটা এরকম, থিয়েটারে যেমন নাচ, গান, অভিনয়, কবিতা দিয়ে সবকিছুকে একই বিন্দুতে এনে একটা আলাদা আবহ সৃষ্টি করা হয়, শহরতলী ব্যান্ডও অনেকটা তাই। গানের মধ্যে থেকেই সাথে গীতি কবিতা, কথোপকথন, আবৃত্তি যোগ করে আলাদা একটা আবহ সৃষ্টির চেষ্টা করে ব্যান্ডটি।

শহরতলীর প্রথম কাজ ছিলো সম্ভবত: 'নিয়ন আলোয় স্বাগতম' অ্যালবামে 'আসাদের খোলা চিঠি'। ২০০৭ এর এই দারুন কাজটা শুনেছি গত বছর। ব্যান্ড মিক্স অ্যালবামে 'ফেলানি' গানটি প্রচন্ড মুগ্ধ করার পর আর বিপুল জনপ্রিয়তা পাওয়ার পরই গুগলে শহরতলীর যাবতীয় কাজ খুঁজে প্রথম অ্যালবামের বাইরে মাত্র ওই একটা কাজই পাই। তিন বছর পর আরেক ডিসেম্বরেই এসেছে শহরতলীর দ্বিতীয় অ্যালবাম 'অপর পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য'। ভালো লাগার ব্যাপারটা পুরোটাই আপেক্ষিক জেনেই লিখছি, এটাই ২০১৩ এর সেরা ব্যান্ড অ্যালবাম। এই অ্যালবামও থিয়েট্রিক্যাল। গানের মধ্যেই চারটা কবিতা আছে; সলিল চৌধুরী, নির্মলেন্দু গুন, পুর্ণেন্দু পত্রী আর ব্যান্ডেরই পারফরমিং ভোকাল সোহাগের। দু'টো গানে সংলাপ ব্যবহৃত হয়েছে। বাকি চারটা প্রথাগত রক আর মেলো রক।

পুর্ণেন্দু পত্রীর কবিতাকে গীতি কবিতায় রূপ দিয়ে অসাধারণ একটা সূচনা অ্যালবামের, 'মুখবন্ধ' শিরোনামে। 'বাঁধন' শিরোনামের গানটিতে নির্মলেন্দু গুনের 'তোমার বন্ধন' কবিতার গীতিরূপ দেওয়া হয়েছে। 'গণ জোয়ার' নিয়ে একটা গান আছে। শাহবাগ, শাহবাগের সব শ্লোগানের গীতিরূপই শুধু উঠে আসেনি গানটাতে, একই সাথে উঠে এসেছে জনপ্রিয়তা রক্ষার এই যুগে দাঁড়িপাল্লার দুই প্রান্ত ঠিক রেখে চলার নষ্ট সময়ে স্বাধীনতার পক্ষে ব্যান্ডটার পরিষ্কার অবস্থান। অ্যালবামে আছে ভাষা আন্দোলন নিয়ে বর্তমান প্রেক্ষাপটের গান 'দেশমাতার কাছে চিঠি'। আছে হাহাকার, আর্তনাদ, বেদনা আর আর্তি এক করা একটা গান, 'মা'। 'আহবান' গানটাতে সলিল চৌধুরীর 'শপথ' কবিতার গীতিরূপের সাথে চে গুয়েভারারা কিছু সংলাপ, শপথ আর দ্রোহের মন্ত্র। মিশুর গায়কী আর সোহাগের আবৃত্তিতে গানগুলো এককথায় অসাধারণ। সাথে সানি'র ড্রাম, তপনের বেস গিটার, সৌরভের লিড গিটার, রূপমের কী-বোর্ড আর পিয়ানোতে মনোমুগ্ধকর সংগীতায়োজন। যাত্রী, মেঘদলের পর মাত্র কয়েকটা গান দিয়েই 'প্রিয়' বলার মত আরেকটা ব্যান্ড যোগ হলো।

শেষের আগে 'দেশমাতার কাছে চিঠি'র কয়েকটা লাইন শেয়ার করি, 'মা, নয়মাসের অবিচল ধৈর্য, উত্তাল বেদনার পরই তো তুমি না। শৈশবে যে শিশু উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখতো, যৌবনে প্রাচুর্যের মোহে সে লাগামহীন টাট্টু ঘোড়া। বেয়াড়াপনা তার রন্ধ্রে-রন্ধ্রে। দু' দশক আগেও এটাকে বোধহয় দুষ্টুমি বলা যেত। কিন্তু এখন, কিন্তু এখন নষ্টামি বলা ছাড়া আর গতি দেখছি না। তোমার প্রসব বেদনার ক'বছর আগে যে ধ্বণী বা বর্ণমালার জন্য জীবন হারিয়ে শহীদ পেলাম, সেই সালাম-বরকত-রফিক-জব্বারের রক্তভেজা শার্ট জাদুঘরে না থেকে ওই শার্টের একটা সুতাও যদি আমার হৃদয়ে থাকতো তাহলে বুলিতে যে মিথ্যা আর ঝুলিতে যে পাপ তার সাধ কিছুটা হলেও মোচন হতো'।



এই আটপৌড়ে শহর, পথ ভেঙে চলা আটশো সাতাশ প্রজাতির মানুষ, ফ্যাকাশে আবেগ-অনুভূতির ঢেউ, বেরসিক জ্যাম, লোড শেডিং, কানে তালা লাগা গাড়ির হর্ণ, ভাজকরা বাদামের ঠোঙা, প্রেমিকার কড়ে আঙুল আর রাতভোরের গান গেয়ে চলতে থাকুক প্রিয় 'শহরতলী'। আর নতুন বছরে প্রিয় মানুষেরা পৃষ্ঠা উল্টাক। তাদের জন্যে কেনা উপহারে যোগ হোক 'অপর পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য'।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×