গ্রামীনফোন ছয়টি অপারেটরের মধ্যে একমাত্র অপারেটরে যে লাভ করছে। গত বছর কোম্পনীর মার্কেট রেভিনিউ শেয়ার অর্জনের লক্ষ মাত্রা ছিল ৫২%, সেখানে কোম্পনী অর্জন করেছে ৫২.১% ! গ্রাহক সংখ্যার যে লক্ষ মাত্রা ছিল সেটিও অর্জিত হয়েছে (সম্ভবতঃ ৪৪% মার্কেট শেয়ার)। তারপরেও গ্রামীনফোন হঠাৎ করেই তার কর্মীদের উপর চড়াও হয়েছে। ৪৬০০ কর্মী থেকে তারা নাকি এক ধাক্কায় ২০০০ এ কর্মী নামিয়ে আনতে চায়। অথচ তারা একবারও এ দেশের প্রেক্ষাপট নিয়ে ভাবেনি। এটাতো এমেরিকা নয় যে চাকরি চলে গেল আর আমি ঘন্টা চুক্তিতে ম্যাকডোনাল্ডস বার্গারে কাজে লেগে গেলাম ! এ দেশে একজন মানুষের চাকরীর উপর পুরো একটি পরিবার নির্ভর করে !
যে কর্মীদের অক্লান্ত পরিশ্রমে গ্রামীনফোন গত ১৫ বছর ধরে এ দেশে ১ নম্বর স্থান ধরে রেখেছে, তাদেরকেই আজকে তারা ব্যবহৃত টিস্যু পেপারের মত ফেলে দিচ্ছে। এ যেন পুরোপুরিই বেনিয়া মনোবৃত্তি। অতীতেও ইউরোপিয়ানরা উপনিবেশ স্থাপন করে যেভাবে পৃথিবী শোষন করেছে ঠিক সেরকম আচরণ!
ফেইসবুকে গ্রামীনফোনের অফিসিয়াল পেইজে জনৈক আফরিন ইসলাম লিখেছেনঃ
" বাংলাদেশের শ্রম বাজারের জন্য এটি অবশ্যই কোন ভাল খবর নয়। এতে নিয়োগ দাতা হিসেবে গ্রামীনফোনের সুনাম ক্ষুন্ন হবে। ভাল মানব সম্পদ গ্রামীনফোনে যোগ দিতে নিরুতসাহিত হবে। যদি জনবল বেশী হয়ে থাকে, সেটার দ্বায়ভার গ্রামীনফোনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরই নিতে হবে, কারণ তারা নিজেদের প্রোফাইল ভারী করার জন্যই অধিক লোক নিয়োগ করেছে, বেশী বেশী কাজ দেখিয়েছে। তার দ্বায়ভার একজন সাধারণ কর্মীর উপর চাপানো অন্যায়। বাংলাদেশের মত দেশে এতে যে মানবিক বিপর্যয় দেখা দেবে সেটা টেলিকম খাতের জন্য একটি খারাপ দৃর্ষ্টান্ত হয়ে রইবে।
যেসব দক্ষ কর্মীর শ্রমে গ্রামীনফোন আজ দেশের এক নম্বর মোবাইল ফোন অপারেটর, তাদের এমন দুর্দশায় ফেলে দেয়া কোন শোভনীয় কাজ হতে পারে না। আমাদের প্রিয় অপারেটরের কাছ থেকে আমরা এ ধরণের আচরণ আশা করি না। হয়ত অচিরেই এজন্য গ্রামীনফোনকে মূল্য দিতে হবে। সুদিন সব সময় থাকে না।"
বিষয়টি সত্যি চিন্তার বিষয় এবং এ দেশের শ্রম বাজারের জন্য একটি অশনি সংকেত। গ্রামীনফোনে কিন্তু ভিন গ্রহের কেউ চাকরি করে না, আপনার আমার ভাই বোনেরাই চাকরি করে। আজকে যারা পড়াশোনা করছে তারাও হয়ত গ্রামীনফোনে চাকরির একটা স্বপ্ন দেখছে। যে লোকটির আজ চাকরি চলে যাবে, চিন্তা করুন তার সামাজিক অবস্থা ! সে যখন অন্য কোথাও একটি চাকরির জন্য যাবে তখন তার অবস্থা ! দেশেতো আর এত ফাকা পজিশন পড়ে নেই, যে গেলেই সে তার যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি পেয়ে যাবে।
আমাদের সবারই এ ব্যাপারটি নিয়ে চিন্তা ভাবনা এবং মত প্রকাশ করা উচিত। সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা উচিত। আমরা হয়ত অনেকে গ্রামীনফোনকে পছন্দ করি না, হারামীর ফোন বলে ডাকি। গ্রামীনফোনের কর্মীদের দুরবস্থা দেখে হয়ত আজ আমরা মুচকি হাসছি, হাত তালি দিচ্ছি, কিন্তু ভুলে যাবেন না, এই খারাপ দৃষ্টান্ত একদিন বুমেরাং হয়ে আপনার আমার উপরেই আসবে, ক্ষতিগ্রস্থ হব আপনি, আমি বা আমাদের আত্মীয় স্বজন। দেশের অন্যান্য কর্পোরেট হাউসগুলোও যদি এ ধরণের খারাপ কালচার প্রাকটিস করা শুরু করে, তবে সেটা ভবিষ্যতে আমাদের জন্যই খারাপ হবে। আসুন আমরা সবাই এই অমানবিক কাজের বিরুদ্ধে আমাদের কলম ধরি, উচ্চ কন্ঠ হই।
এ সংক্রান্ত অন্যান্য পোস্টগুলোঃ
ব্যয় কমাতে কর্মী ছাঁটাই করছে গ্রামীণফোন
ব্যয় কমাতে কর্মী ছাঁটাই করছে গ্রামীণফোন.......ছাটাই ইতিমধ্যেই চলছে,
দলে দলে কর্মী ছাঁটাই চলছে গ্রামীণফোনে! মানবিক সংকটে হাজারো তরুন/তরুনী!!
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জুলাই, ২০১২ বিকাল ৪:২৩