somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দেশের সেরা মেধাবীদের অসাধারণ কৃতিত্ব :)

২২ শে জুন, ২০১১ বিকাল ৩:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বুয়েটের মাহদী, নোমান ও রাশেদ এক নতুন ধরনের ‘অ্যানটেনা ডিজাইন তত্ত্ব’ উদ্ভাবন করেছেন, যার মাধ্যমে একই সঙ্গে চারটি ফ্রিকোয়েন্সিতে যোগাযোগ করা সম্ভব। এ উদ্ভাবনের জন্য স্বীকৃতি মিলল ঘরে-বাইরে দুক্ষেত্রেই। বুয়েট থেকে তাঁরা পেলেন থিসিস গ্রুপের বেস্ট অ্যাওয়ার্ড আর এমআইটির জার্নালে প্রকাশিত হলো তাঁদের গবেষণা তত্ত্ব।

তারবিহীন ফ্রিকোয়েন্সিনির্ভর যেকোনো যোগাযোগের কাজটিই এবার অনেক সহজ হয়ে যাবে, তা সেলফোনের মাধ্যম হোক কিংবা এয়ারক্র্যাফট, রাডার, স্পেসক্র্যাফট বা নিরাপত্তা নজরদারির মতো বৃহত্তর পরিসরেই যোগাযোগ হোক না কেন। এখন তা সম্ভব হবে দ্রুতগতিতে, কম সময়ে এবং যুগপৎভাবে। বুয়েটের মাহদী-নোমান-রাশেদ উদ্ভাবিত ‘চার ফ্রিকোয়েন্সি বিশিষ্ট অ্যানটেনা ডিজাইন তত্ত্ব’ নতুন এ সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে।
এই ‘চার’ শুধু একটি সংখ্যাই নয়, এটি চারদিক ছাড়িয়ে, চার ধাপ এগিয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা। এখন পর্যন্ত যোগাযোগের ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের আবিষ্কার-উদ্ভাবন থেমে ছিল দুটি ফ্রিকোয়েন্সি পর্যন্তই। বুয়েটের এই তিন ধীমান দেখালেন নতুন পথ। উদ্ভাবন করলেন অ্যানটেনার এমন এক ডিজাইন তত্ত্ব, যার মাধ্যমে একই সঙ্গে চারটি ভিন্ন ক্ষেত্রে যোগাযোগ করা সম্ভব।
কাজের শুরুটা হয়েছিল খুব সাধারণভাবেই। স্নাতক শেষ ধাপে অ্যাকাডেমিক রিসার্চের অংশ হিসেবেই মাহদী রহমান চৌধুরী, আবদুল্লাহ আল নোমান অভি ও রাশেদ আলম যুবরাজ বেছে নিয়েছিলেন ফ্রিকোয়েন্সিবিষয়ক অ্যানটেনা ডিজাইন তৈরির কাজ। পরবর্তী ঘটনাগুলো অনেক গতিময়। দিন-রাত চলল মাইক্রোস্ট্রিপ অ্যানটেনা নিয়ে তিনজনের বিশদ পড়াশোনা আর তথ্য সংগ্রহের কাজ। প্রজেক্ট সুপারভাইজার অধ্যাপক আবদুল মতিনের কাছে তাঁরা নিয়মিত তাঁদের কাজের অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা করেন এবং বিকিরকবিষয়ক তত্ত্বগুলো রপ্ত করেন। সঙ্গে চলতে থাকে অ্যানটেনার আকার ছোটকরণের কাজও।
কিন্তু এই গবেষণায় নেমে তাঁরা দেখতে পেলেন বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা। যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকজন পিএইচডি গবেষক ফ্রিকোয়েন্সি বাড়ানো ও এর মানোন্নয়নের কাজে বেশি দূর অগ্রসর হতে পারেননি। কাজগুলো কেন সফল হলো না, তাঁরা সে কারণ অনুসন্ধান শুরু করলেন। তাঁরা খুব দ্রুত লক্ষ করলেন, এ ধরনের অ্যানটেনার ডিজাইনের সুনির্দিষ্ট কর্মপদ্ধতি বা সুনির্দিষ্ট তত্ত্ব নেই। তাঁরা আরও একনিষ্ঠভাবে কাজ করে চললেন। শুধু কর্মপদ্ধতিই নয়, বরং এ ধরনের অ্যানটেনা ডিজাইনের নতুন গাণিতিক তত্ত্ব উদ্ভাবন করলেন মাহদী। যা দিয়ে কেবল নতুন অ্যানটেনার নকশা নয়, তার সঙ্গে আগের গবেষকেরা কেন ব্যর্থ হয়েছিলেন, সেটাও বের করা সম্ভব হলো। পাশাপাশি তাঁরা দেখালেন, তাঁদের ডিজাইনকৃত অ্যানটেনা কীভাবে বিদ্যমান সাধারণ অ্যানটেনার চেয়ে চার গুণ ক্ষমতাসম্পন্ন বিকিরক হিসেবে কাজ করবে। এরপর তাঁরা অল্প কিছু দিনের মধ্যেই দুই ফ্রিকোয়েন্সি ছাড়িয়ে তিন ফ্রিকোয়েন্সির অ্যানটেনার তত্ত্ব ও ডিজাইন তৈরি করতে সক্ষম হলেন। এ কাজে সফল হওয়ার পর তাঁদের কর্মপদ্ধতি ও তত্ত্ব তাঁরা যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (এমআইটি) জার্নালে প্রকাশের জন্য পাঠান। বিশেষজ্ঞদের রিভিউয়ের পর এমআইটির প্রগ্রেস ইন ইলেকট্রোম্যাগনেটিক রিসার্চ লেটার্স (পিআইইআর লেটার) শীর্ষক জার্নালে প্রকাশিত হয় তাঁদের এই তত্ত্ব।
তিন ফ্রিকোয়েন্সির অ্যানটেনার তত্ত্ব ও ডিজাইন তৈরির সফলতার পর এই গবেষণার ধারাবাহিকতায় তাঁরা চার ফ্রিকোয়েন্সিবিশিষ্ট অ্যানটেনার তত্ত্ব ও ডিজাইন উদ্ভাবন করেন। এমআইটির পিআইইআর লেটার এবং পিআইইআর-এম জার্নাল ছাড়াও এ তত্ত্বের নানা দিক নিয়ে বিভিন্ন জার্নাল ও সেমিনারে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে আই-ট্রিপল-ই, পিআইইআরএস, ইইউ-ক্যাপ প্রভৃতি।
যেহেতু এটি ছিল বুয়েটের অ্যাকাডেমিক গবেষণা, তাই এল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মূল্যায়নের পালা। বুয়েটের ৩৭টি রিসার্চ গ্রুপের মধ্যে মাহদী-নোমান-রাশেদ গ্রুপটি ‘বেস্ট সায়েন্টিফিক পোস্টার অ্যাওয়ার্ড’ লাভ করে।
বুয়েট থেকে তিনজনই সম্প্রতি বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করেছেন। মাহদী চেষ্টা করছেন উচ্চতর গবেষণার জন্য দেশের বাইরে যেতে, আর নোমান ও রাশেদ দুজনই এমএস করছেন বুয়েট থেকে। থেমে নেই তাঁদের গবেষণার কাজ, তাঁদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন পরবর্তী ব্যাচের শিক্ষার্থীরাও। উদ্দেশ্য চার ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ডের ক্ষুদ্রাকৃতির এই নতুন অ্যানটেনা ডিজাইনের আরও উন্নতি সাধন করা।
রিসার্চ গ্রুপ লিডার মাহদী বলেন, ‘পাটের জিনতত্ত্ব্ব আবিষ্কৃত হয়েছে বাংলাদেশ থেকে। আমাদের উদ্ভাবিত চার ফ্রিকোয়েন্সির অ্যানটেনার ডিজাইন তত্ত্ব তেমনি বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি পাওয়ার যোগ্য। আমরা চেষ্টা করছি মৌলিক কাজ হিসেবে এর পেটেন্ট (মেধাস্বত্ব) সংরক্ষণ করতে। কিন্তু এটি ব্যয়বহুল হওয়ায় ব্যক্তিগতভাবে তা করা দুরূহ। সরকারের উচিত এর পেটেন্ট সংরক্ষণে এগিয়ে আসা। কারণ এর সঙ্গে বাংলাদেশের সম্মানের প্রশ্ন জড়িত।’
সুত্র
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জুন, ২০১১ বিকাল ৩:৩৯
১২টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা সকলের দায়িত্ব।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩৮



এগুলো আমার একান্ত মতামত। এই ব্লগ কাউকে ছোট করার জন্য লেখি নাই। শুধু আমার মনে জমে থাকা দুঃখ প্রকাশ করলাম। এতে আপনারা কষ্ট পেয়ে থাকলে আমি দায়ী না। এখনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখনো নদীপারে ঝড় বয়ে যায় || নতুন গান

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:২০

এ গানের লিরিক আমাকে অনেক যন্ত্রণা দিয়েছে। ২৪ বা ২৫ এপ্রিল ২০২৪-এ সুর ও গানের প্রথম কয়েক লাইন তৈরি হয়ে যায়। এরপর ব্যস্ত হয়ে পড়ি অন্য একটা গান নিয়ে। সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেতনার সময় জামায়াত বদ্ধ ইসলামী আন্দোলন ফরজ নয়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৮



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৩। তোমরা একত্রে আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধর! আর বিচ্ছিন্ন হবে না। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর।যখন তোমরা শত্রু ছিলে তখন তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×