somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিলম্ব মানেই মৃত্যু-১ ( লাইকারগাস )

১৮ ই আগস্ট, ২০১১ বিকাল ৪:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


প্রায় ত্রিশ শতাব্দী আগে পেলপোনেশিয়াতে , মানে আধুনিক গ্রীস দেশের দক্ষিণাঞ্চলে একটা শক্তিশালী লড়াকু রাজ্য ছিল যার নাম স্পারটা ।সে রাজ্য শাসন করতেন আর পাঁচটি রাজ্যের মতই, একজন রাজা। একদা এই স্পারটার সিংহাসনের উত্তরাধিকারী হলেন চেয়ারিলাস, যিনি তখনো নাবালক। তাই স্বাভাবিক কারনেই শক্তিশালী শাসক তিনি ছিলেন না, দেশটা শাসন করতেন তাঁর কাকা লাইকারগাস । ভ্রাতুষ্পুত্রের অভিভাবক এবং প্রতিভু হিসেবে। এই উচ্চ পদে থাকার জন্য লাইকারগাসের অনেক শত্রু জন্মাই ছিল। যে জন্য তাঁকে পড়ে দেশ ত্যাগ করে হইছিল।
দেশান্তরের বছরগুলি কিন্তু তাঁর পক্ষে নিস্ফলা হয় নাই। তিনি প্রচুর অবকাশ পেলেন নানা বিষয় পর্যবেক্ষণ করতে এবং সে সব বিষয় নিয়ে ভাবতে। লাইকারগাস মিসর আর এশিয়ার মাইনরে ব্যাপক পরিভ্রমণ করলেন। তিনি ক্রিট গিয়েছিলেন। অবশেষে যথা সময়ে নিজের দেশে ফিরে আসেন। সঙ্গে করে নিয়ে আসলেন নতুন একটা সংবিধানের খসড়া । লাইকারগাস এর সংবিধান অনুসারে রাষ্ট্রের প্রধান হবেন সমান ক্ষমতা সম্পন্ন দুই জন রাজা, বংশানুক্রমে , তাদের সহায়তা করবেন বর্ষীয়ানদের একটা সভা- স্পারটার ২৮ জন বর্ষীয়ান ব্যাক্তি হবেন সেই সভার সদস্য । তার উপর , গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা হবে নাগরিক দের সভায়, ত্রিশ এর অধিক বয়সের নাগরিকদের ভোট দেয়ার অধিকার থাকবে। লাইকারগাসের আইন নাগরিকদের মধ্য সাম্যের ভিত্তিতে সম্পত্তি বন্টন এবং অনেক গুলি গণতান্ত্রিক উদ্ভাবনের প্রবর্তন করছিলেন।
কথিত আছে যে লাইকারগাস তাঁর দেশবাসীদের কাছে প্রতিজ্ঞা করিয়ে নিয়েছিলেন যে তিনি বিদেশ ভ্রমন সেরে ফিরে না আসা পর্যন্ত তাঁর আইনের যেন পরিবর্তন না করা হয়। তারপর তিনি স্পারটা ত্যাগ করেন। দৃঢ় প্রতিজ্ঞায় অবিচল রইলেন যে বনবাসে উপবাসী থেকে প্রান ত্যাগ করবেন। মৃত্যুর পূর্বে আদেশ দিলেন যে তাঁকে যেন দাহ করা হয় এবং ভস্মাদি সমুদ্রে ছিটিয়ে দেয়া হয়। স্পারটানরা যাতে তাঁর দেহাবশেষ ফিরিয়ে নিয়ে যেতে না পারে।সেই জন্য এইভাবে তাদেরই প্রতিজ্ঞার নিগড়ে তাদের আবদ্ধ রেখে তাঁর রচিত সংবিধান চিরস্থায়ী করতে চেয়েছিলেন।
লাইকারগাসের প্রবর্তিত আইন গুলি অধিকাংশই মানুসের জ্ঞান এর চূড়ান্ত নিদর্শন বলা যেতে পারে। এখানে আমাদের কাছে যেটা জরুরী সেইটা হল আইন গুলি মানুষের শারীরিক সক্রিয়তা বজায় রাখার দিকে নজর দিয়েছিল। এই লক্ষ্যের দিকে দৃষ্টি রেখে তারা স্পারটার লোকদের জীবনধারা পুঙ্খানুপুঙ্খও রুপে নিয়ন্ত্রন করতে চেয়েছিল। একই বিধান দারা ব্যাক্তি গত সম্পত্তি সীমিত করা হয়েছিল, দেশের জঙ্গনের জন্য স্বাস্থ্যপ্রদ আর পরিমিত জীবনযাপনের নির্দেশ দেয়া হয়ে ছিল। আমৃত্যু স্পারটান্দের প্রতিরক্ষা সেবার দায় নিতে হত। রাষ্ট্র যুদ্ধে জড়িয়ে পড়লে তাতে ভাগ নিতেই হত। ঘরসংসারে বেশি মন দেয়া নিষিদ্ধ ছিল। খাওয়া দাওয়া করতে হত সিসিটিয়া (siritia) বা সাধারন ভোজনাগারে। সাত বছর বয়স পর্যন্ত সিশুদের শিক্ষা দীক্ষা নিতে হত রাষ্ট্র পরিচালিত বিদ্যালয়ের বিজ্ঞ শিক্ষকদের কাছে। স্পারটার কঠোর শিক্ষা ব্যবস্থার কথা প্রবাদ বাক্যে পরিনত হইছিল।
লাইকারগাস যে কেবল শিক্ষার তত্ত্ব উদ্ভাবন এবং তাঁর গুরুত্ব নির্দেশ করতে সক্ষম হইছিলেন তাই নয়, তাঁর ভাবনাগুলি প্রচার করতেও তিনি ছিলেন তেমনই দক্ষ। গল্প আছে একবার তিনি একটা কুকুর মায়ের দুটি বাচ্চা নিয়ে তাদের রেখে দিলেন গভির একটা গর্তে, গর্তে কেউ নামত না, দরি দিয়ে পানি আর খাবার নামিয়ে দেয়া হত। ওই মায়েরই অন্য দুইটি ছানাকে লাইকারগাস বেড়ে উঠতে দিলেন মানুষ আর অন্য জানোয়ারদের মধ্যে ।বাচ্চারা সব বড় হয়ে উঠলে লাইকারগাস অনেক লোক জড়ো করে একটা পরীক্ষা করে দেখালেন সর্বসমক্ষে । এই কুকুর গুলির সামনে তিনি ছেড়ে দিলেন একটা খরগোশকে । লাইকারগাসের প্রত্যাশা অনুযায়ী যে কুকুর ছানাকে স্বাধীনভাবে বড় হয়ে উঠতে দেওয়া হয়েছিল সে খরগোশ কে তারা করে মেরে ফেলল।
গর্তের মধ্য যেটা বড় হইছিল তাঁর আচরণ হল একেবারে আলাদা, ভাইকে সাহায্য করা ত দূরে থাকুক , খরগোশ দেখে সে দিল ভোঁ দৌড় । চরিত্র গঠনের জন্য শিক্ষার উপযোগিতার এর থেকে বিশ্বাসযোগ্য প্রমান আর কি হতে পারে? গল্পটা যদি সত্য হয় তবে বলতে হবে প্রয়োগ ধর্মী প্রশিক্ষণ – বিজ্ঞানের প্রবর্তক ছিলেন লাইকারগাস।
(চলবে)

আরও জানতে এই খানে দেখুন।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই আগস্ট, ২০১১ বিকাল ৪:৪৫
১০টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা সকলের দায়িত্ব।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩৮



এগুলো আমার একান্ত মতামত। এই ব্লগ কাউকে ছোট করার জন্য লেখি নাই। শুধু আমার মনে জমে থাকা দুঃখ প্রকাশ করলাম। এতে আপনারা কষ্ট পেয়ে থাকলে আমি দায়ী না। এখনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখনো নদীপারে ঝড় বয়ে যায় || নতুন গান

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:২০

এ গানের লিরিক আমাকে অনেক যন্ত্রণা দিয়েছে। ২৪ বা ২৫ এপ্রিল ২০২৪-এ সুর ও গানের প্রথম কয়েক লাইন তৈরি হয়ে যায়। এরপর ব্যস্ত হয়ে পড়ি অন্য একটা গান নিয়ে। সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেতনার সময় জামায়াত বদ্ধ ইসলামী আন্দোলন ফরজ নয়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৮



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৩। তোমরা একত্রে আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধর! আর বিচ্ছিন্ন হবে না। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর।যখন তোমরা শত্রু ছিলে তখন তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×