৪.
তুই ফেলে এসেছিস কারে
মন মনরে আমার...
শীত আসি আসি করছে। তাপমাত্রা দিন দিন দ্রুত হিমাংকের নীচে নামছে। প্রকৃতিতে রুপের পরিবর্তনটা স্পস্ট। রাস্তার দু'পাশের বৃক্ষরাজির সবুজ পাতাগুলো হলুদ, খয়েরি, লাল বর্ন ধারন করেছে।একটু ঝিরিঝিরি বাতাসে টুপটাপ ঝরছে।আমার বহুতল ফ্ল্যাটের জানালার ভারীপর্দা সরালে গাছের পাতার রংগিনরুপ দেখে মন ভাল লাগার কথা। কিন্তু ইদানীং মন ভীষন ভার হয়ে থাকে।সারাক্ষন কি যেন খুঁজে বেড়ায়। এখানের ফুড়ুত ফাড়ুত করে ছুটে আসা কাঠবেড়ালি কিংবা পায়ের কাছে উড়ে আসা ধুসরছাইবর্নের কবুতরগুলো আর ভাল লাগা জাগায় না। হাসিমাখা মুখের আড়ালে কি এক অদ্ভুত মন খারাপ করা সময় সারাক্ষন ঘিরে থাকে!
ক্লাস শেষে মেট্রোচেপে বাসায় ফেরার পথে হাজারো মানুষের ভীড়ে চোখ দুটো কি যেন খুঁজে বেড়ায়।নানাবর্নের, ভাষার মানুষগুলোর সৌন্দর্য্য, কথাবলার ঢং, চালচলন কিছুই এখন মুগ্ধতা ছড়ায় না।মনটা বারবার ছুটে যায় প্রায় ১১ হাজার মাইল দূরে, প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশে। হ্রদয়জুড়ে শুধুই কোলাহলময় নারায়ণগঞ্জ, ঢাকার যানজট,রিক্সার টুংটাং, লেন না মেনে চলা এলোমেলো বিশৃংখল যানবাহন, শীতলক্ষ্যা নদী, কারওয়ানবাজারে ফুটপাতে শামীমের টংয়ের চায়ের দোকান,পেট্রোবাংলার সামনে সন্ধ্যাবেলা অজ্ঞাত এক খালার বানানো চিতই পিঠা,সরিষা ভর্তা,একুশে টিভির গলির আড্ডা, একটু রাতের দিকে সোনারগাঁও হোটেলের লবি কিংবা পুলসাইডে দীর্ঘ আড্ডা। আমার অফিস কলিগ,টিপিএ'র সদস্য, ভাই,বোন, কাজিন, ভাগিনা - ভাগ্নে, ভাস্তে, ভাস্তি, কাকা ও ফুপিরা। কৈশোর, তারুন্যের বন্ধুরাতো আছেই।
বুকের খুব গভীরের রক্তক্ষরন কেউ দেখে না। ঠিকই টের পাই ভেতরের ক্ষরন ও ভাংচুর। ক্লান্তি অবসাদ নিয়ে বাসায় ফিরেই বিছানায় উপুড় হয়ে কতক্ষন যে বালিশে মুখ বুঝে পড়ে থাকি, বলতে পারব না। কখনো কখনো কানের সামনে ল্যাপটপে বাজতে থাকে রবীন্দ্র সংগীত, লালন কিংবা দেশাত্ববোধক গান। ক্ষুধা আর মনখারাপ নিয়ে যখন ফোলাফোলা চোখ মেলে দেখি ওয়ালে ঝুলছে লাল সবুজের পতাকা তখন আবেগে কাঁপি, চোখ দু'টো আবারও ঝাপসা হয়ে আসে।
আহা আমার প্রিয় দেশ,প্রিয় জন্মভূমি কতদিন দেখি না তোমায়।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে অক্টোবর, ২০১৮ রাত ১২:৪৭