somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাবা, ছাতাটা সরে গেল

০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ সকাল ৮:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বিজয়ের মাস ডিসেম্বরের ৩ তারিখ, মংগলবার বাবা না ফেরার দেশে চলে যাবার সময়টায় আমি মন্ট্রিয়েল পিয়েরে ট্রুডো এয়ারপোর্টে।সিভিল এভিয়েশনের ট্রেনিং এ ব্যস্ত ছিলাম । বাংলাদেশ সময় ভোর ৫টায় বাবা চলে গেলেন। স্থানীয় সময় রাত ৬টায় খবরটা প্রথমে দেশ থেকে এলো টিপুভাইয়ের কাছে। তখন আমি ভীষন ক্লান্ত ও বিধ্বস্ত। আমার বাসায় বন্ধু মিহির,মিঠু, বিপুল ভাই গল্প করছে।আমি চুপচাপ বসে তাদের কথা শুনছি। এসময় সংগীতশিল্পী জুবায়ের টিপুভাই দরোজার সামনে দাঁড়িয়ে দু:সংবাদটি দিলেন।
: কাকা,আপনি কি ঠিক আছেন, মানসিক অবস্থা কেমন?
আমি বুঝতে না পেরে বললাম, কেন ভাই, লিটল বিট টায়ার্ড বাট আমি ঠিক আছি।
: আপনার বড়ভাই ফোন দিয়ে জানিয়েছেন আপনার বাবা আর নেই। কিছুক্ষন আগেই তিনি চলে গেছেন না ফেরার দেশে।
মুহুর্তেই আমার রুমে পিনপতন নিরবতা নেমে এলো।আমি কথাটা বিশ্বাস করবো কি করবো না কোন বোধশক্তি তখন আমার নেই। কিছুটা হতবিহ্বল হয়ে গেলাম।আমি টিপুর মুখের দিকে ফ্যালফ্যাল তাকিয়ে অপেক্ষা করি আরো কিছু শোনার জন্য।
টিপুভাই খুব আবেগপ্রবণ মানুষ।আমার কস্ট কি রকম হতে পারে ভেবে সামনে থেকে দ্রুত চলে যেতে পারলেই যেন বাচেন।সবাই মন খারাপ করে চুপচাপ। নিরবতা ভংগ করে ভেজাকন্ঠে বলি, সেকেন্ড স্ট্রোকের পর বাবা আর উঠতে পারলো না।
বিপুলভাই সান্তনা দিয়ে বলেন, বাসায় কথা বলেন।জানাজা,দাফন কোথায় কি হবে জেনে নেন।
প্রবাসে এসে মিহিরও তার বাবার মৃত্যু সংবাদ পেয়েছিল। সেই কস্ট বুকে চেপে কিভাবে দিন কাটিয়েছে তার কিয়দংশ শুনিয়ে আমার কস্টকে হাল্কা করতে চাইলো।
আমার অনাবাসি জীবনের এ বন্ধুরা স্বপ্রনোদিত হয়ে মন্ট্রিয়েল, অটোয়া, টরন্টো ও দেশে আমার বন্ধু স্বজনদের দু:সংবাদটি ফোন, মেসেজ ও সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে ছড়িয়ে দিল। অনেক রাত অবধি সবাই আমাকে ঘিরে বসেছিল কিন্তু তখন আমি তীব্রভাবে চাইছিলাম একটু একা হতে । একা চুপচাপ কাদতে চাই। অনেক রাত হওয়ায় ওদের একরকম জোর করে বিদায় করি।
বন্ধুরা চলে যাবার পর রুমে এসে লাইট অফ করে ঘন্টাখানেক ঝিম মেরে বসেছিলাম।যে কোন মৃত্যুসংবাদে আপনজনরা কেদে বুক ভাসায়।কিন্তু আমি সাথে সাথে কাদতে পারিনি। বাবার চলে যাবার ৩ ঘন্টা পর নিজেকে আর সামলে রাখতে পারিনি।অঝোড় কান্নায় বুক ভিজেছে, বালিশ ভিজেছে।
অনেক রাত জেগে বাসার খবর নিচ্ছিলাম। দেশে বারবারই কয়হা হচ্ছিল বড়ভাইয়ের সাথে। একটবারের জন্য মায়ের সাথে কথা বলার সাহস হয়নি।
আমি জানি মায়ের কি পরিমান কস্ট হচ্ছে। বাবার ফার্স্ট স্ট্রোকের পর গত ৩ টি বছর মা পরম মমতায়,যত্নে বাবাকে আগলে রেখেছিলেন। ফিজিও থেরাপিস্ট, হাউজ ফিজিশিয়ান, দু'জন ফূটফরমায়েশ খাটার লোক থাকার পরও মা নিজেই বাবার সব কিছু করতেন।বাবার জন্য আমাদের দুইভাইয়ের চেয়ে মায়ের কাছে হাহাকার শুন্যতাটা অনেক বেশী। সেই ভয়ে মায়ের সাথে কথা বলতে পারিনি।
প্রবাস জীবন মানুষকে যে কি নির্মম বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয় তা টের পেলাম আবারও।বাবার চলে যাবার ৮ ঘন্টার মধ্যে একটা রাত পার করে ভোরে ছুটতে হয় ট্রেনিংয়ে।মেট্রো এবং বাসে এয়ারপোর্ট যেতে যেতে বারবার চোখ মুছতে হল।এরমাঝে ২/৩ বার দেশে কথা হলো, সব ঠিকঠাক মতন হল কি না, মায়ের অবস্থা এখন কেমন এসব জেনে মন হাল্কা করার চেস্টা করছিলাম।
ট্রেনিংয়ে গিয়ে কেন যেন কলিগ কিংবা অফিসের কাউকে আমার বাবার কথা বলতে পারলাম না। হয়তো আমি চাইনি কেউ আমাকে, ওহো নো! বলুক। কিংবা সমবেদনা দেখাতে গিয়ে বাবার কথা জানতে চেয়ে আমার দু'চোখ অশ্রুসজল করুক।
সারাদিন এয়ারপোর্টে ট্রেনিং শেষে বাসায় ফিরে ভয়ে ভয়ে মায়ের সাথে কথা বলতে গিয়ে বুঝলাম মা কিছুটা সামলে নিয়েছেন।কিন্তু আমি আর নিজেকে সামলাতে পারিনি। দু'দিন যে কাঁদতে পারিনি বুঝতে পেরে মা আমাকে কাঁদতে দেন। মায়ের কাছে কেঁদেছি শিশুদের মতন হাউমাউ করে।
ফোন রাখার আগে মা শুধু বললেন, বাবার জন্য দোয়া করো, পিতামাতার জন্য সন্তানের দোয়াটা বড়। রাব্বি হুমহামা কামা রাব্বায়িনা সাগিরা।
------------
৯.১২.২০১৮
মন্ট্রিয়েল,কুইবেক
কানাডা
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:১৩

ফেসবুকে বাঙালিদের মধ্যে ইদানিং নতুন এক ফতোয়া চালু হয়েছে, এবং তা হচ্ছে "দাওয়াতের নিয়্যত ছাড়া কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।"
সমস্যা হচ্ছে বাঙালি ফতোয়া শুনেই লাফাতে শুরু করে, এবং কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×