ভোজ্যতেলের কৃত্রিম সংকট তৈরি করার জন্য ব্যবসায়ীরা এবার সরাসরি চক্রান্তে নেমেছে। আসন্ন রমজানকে সামনে রেখে ভোজ্যতেল আমদানি সত্ত্বেও ব্যবসায়ীরা তেল খালাসে জাহাজ জেটিতে ভিড়াচ্ছে না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ভোজ্যতেলের জাহাজের জন্য তিন দিন ধরে বিশেষায়িত জেটি বরদ্দ রাখা সত্ত্বেও তেল খালেসের জন্য কোন জাহাজ জেটিতে আসছে না। রমজানে তেলের চাহিদা, স্বাভাবিকভাবেই বর্তমান সময়ের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে যায়।
ব্যবসায়ীরা এ সুযোগটাকে কাজে লাগাতেই এই নতুন কৌশলে তেলের দাম বাড়ানোর চেষ্টা করছে।
সহযোগী দৈনিক পত্রিকার তথ্যমতে, গত বুধবার বিকেল পর্যন্ত বন্দরে তেলের জাহাজ ছিল তিনটি। বন্দরের পরিবহন বিভাগ, এমটি স্টারলিঙ্ক ভারনেট গ্রেসের স্থানীয় এজেন্টকে জেটিতে জাহাজ ভিড়িয়ে তেল খালাস শুরু হচ্ছে না কেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তার ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠি দিয়েও কোন ফল পাওয়া যায়নি।
১০ হাজার মেট্রিক টন ভোজ্যতেল নিয়ে এমটি মালিয়ান চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে আসে গত সোমবার। প্রতি ২৪ ঘণ্টায় বহির্নোঙরে ২ হাজার মেট্রিক টন তেল খালাস হয়। গত দুই দিনে এই জাহাজ থেকে মাত্র ২ হাজার টন নামানো হয়েছে।
এই অনুপাতে তেল খালাস হতে থাকলে আরও তিন দিন লাগবে সম্পূর্ণ তেল খালাস করতে। অথচ বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের জেটিতে প্রতি ২৪ ঘণ্টায় ৫-৬ হাজার মেট্রিক টন তেলও খালাস করা সম্ভব হয়েছে।
ইতোমধ্যেই দুই দিনের ব্যবধানে সয়াবিনের দাম প্রতি মণে ৬০-৭০ টাকা বেড়ে ৪ হাজার ২৫০ টাকা হয়েছে। অর্থাৎ কেজিতে বেড়েছে প্রায় ৪-৫ টাকা। পাম এবং সুপার পাম তেলের দাম কেজিতে বেড়েছে দুই টাকার বেশি।
ভোজ্যতেল সহনীয় রাখতে বাণিজ্যমন্ত্রী একাধিকবার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সপ্তাহখানেক আগেও রমজানে দ্রব্যমূল্য ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখার লক্ষ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ব্যবসায়ীদের আরেক দফা বৈঠক হয়। সেই বৈঠকেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। বারবার বাণিজ্যমন্ত্রীর হম্বিতম্বিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ব্যবসায়ীরা নিজেদের ইচ্ছামতো দাম বাড়িয়েই যাচ্ছে।
ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট ভাঙা সরকারের পক্ষে সম্ভব হয়নি। বিভিন্ন কৌশলে এবং ধূর্ততার সঙ্গে ব্যবসায়ীরা ক্রেতার পকেট কেটে যাচ্ছে। এ দৃষ্টান্ত আর একবার পাওয়া গেল। রমজানে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর কৌশল হিসেবে জাহাজ জেটিতে না ভিড়ানো।
কোন ভয়-ভীতি, আলোচনা, বৈঠক কিছুকেই পাত্তা দিচ্ছে না ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীদের কাছে সরকার শুধু অসহায় নয়, পরাজিতও। ব্যবসায়ীরা নানা অজুহাতে সরকারকে বস্ন্যাকমেইল করে যাচ্ছে। সরকার কীভাবে এর জবাব দেবে, আমরা জানি না। তবে আগামী রমজানে তেলের দাম যে আকাশচুম্বী হবে সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। ক্রেতাদের আবার এক চরম ভোগান্তিতে পড়তে হবে, সরকার যদি ভোজ্যতেল সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনতে না পারে। সরকারের ব্যর্থতায় ক্রেতারাও এভাবে ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি হয়ে রয়েছে।
উপস্থিত ক্ষেত্রে সরকার ভোজ্যতেল আমদানিকারকদের জাহাজ না ভিড়ানোর কৌশলটিকে নস্যাৎ করতে পারলেও কিছু কাজ হয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কি সেদিকে নজর দেবে? উদ্যোগী হবে?