somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মানুষ হওয়ার মন্ত্র

০৪ ঠা জুন, ২০১১ সকাল ৮:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আপনার নামটা জানতে পারি?
রাহুলের এমন কথায় কিছুটা বিরক্ত হলো সিমি। বিরক্ত হওয়ারই কথা। চেনা নেই, জানা নেই। হুট করে ছেলেটা তাকে বলছে, আপনার নামটা জানতে পারি! এটা কোনো কথা হলো! এভাবে কেউ প্রশ্ন করে। এমনিতেই বিরক্তির চরম শিখরে পৌঁছে গেছে সিমি। একঘণ্টা যাবৎ ভাঙা এক দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে আছে সে। মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে অনেকক্ষণ ধরে। থামার লক্ষণ বোঝা যাচ্ছে না। হয়তো বা বৃষ্টির কল্যাণে আরো অনেকক্ষণ এই ভাঙা দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচার জন্যই এই দোকানের সামনে আশ্রয় নিয়েছে সিমি। তবুও বাঁচা সম্ভব হয়নি। দোকানের টিনের ছাউনিটার ওপর দিয়ে মনে হয় যুদ্ধ হয়ে গেছে। টিনের ছাউনিটিতে কয়টা ফুটো আছে গুনতে বসলে হাজারটার ওপর ফুটো বের হবে আশা রাখা যায়। এমন ফুটোসমৃদ্ধ টিনের ছাউনির নিচে দাঁড়িয়ে থাকলেও বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচা সম্ভব নয়। শুধু মাথাটা কোনোমতে বাঁচাতে পেরেছে সিমি। প্রায় পুরো শরীর ভিজে গেছে। অন্য দিন হলে পাঁচ মিনিট পরপরই বাসের দেখা মিলতো। আজই ব্যতিক্রম। বাসের টিকিটিও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। বৃষ্টিতে পাঁচ হাত দূরেরও কিছু দেখা যাচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে বাস না আসাটাও স্বাভাবিক। আশ্চর্য লাগছে সিমির। একটু ভয় লাগছে, একটু সংকোচ হচ্ছে। মুষলধারে এই বৃষ্টির মাঝে ভাঙা এক দোকানের সামনে ভেজা শরীর নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে একজন পুরুষ, একজন নারী। আশপাশে কেউ নেই, শূন্যতা চারপাশে। আজকাল অচেনা মানুষদের বিশ্বাস করা কঠিন। কোন ধান্দায় কোন মানুষ থাকে সেই হিসাব করাটাও কষ্টসাধ্য। পাশের ছেলেটা কোন ধান্দায় কথা বলতে চাচ্ছে। সেটাও ঠিক বুঝতে পারছে না সিমি। শরীরের ওপর তার কোনো নজর আছে কিনা সেটাও সিমির কাছে বোধ্যগম্য নয়। বাস আসলে খুব শান্তি পেতো সিমি। তাড়াতাড়ি এই সংকোচময় পরিস্থিতি থেকে রেহাই পাওয়া যেতো।
-আমার নাম রাহুল। আপনার নামটা? আবারো নাম জিজ্ঞাসা করলো ছেলেটা। এবার সিমি পাশ ফিরে রাহুলের দিকে তাকালো। অনেক্ষণ যাবৎ দুজন পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে ঠিকই তবে একবারও তাকায়নি সিমি। তাকানোর প্রয়োজনবোধও করেনি। কি প্রয়োজন একজন অপরিচিত ছেলের দিকে তাকানোর। তার চেয়ে মুষলধারে বৃষ্টি দেখা ঢের ভালো। তবে ছেলেটা অসুন্ধর নয়। হালকা পাতলা গড়ন। ফর্সা মুখম-ল। চাহনিতে মায়া আছে। এককথায় আকর্ষণ করার মতো। আপনি আমার নাম জানতে চাইছেন কেন? আমি কি আপনার পূর্ব পরিচিত? আজকাল মেয়েদের দেখলেই আপনাদের কথা বলতে ইচ্ছা করেÑ তাই না। রেগে গিয়ে কথাটা বললো সিমি।
সিমির এমন কথায় রাহুলের কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা গেলো না। পলকহীনভাবে তাকিয়ে থাকলো সিমির দিকে।
-আপনার কি মনে হচ্ছে আমি ভিনগ্রহের কোনো প্রাণী! মনুষ্য প্রজাতির সঙ্গে আমার কোনো মিল নেই। আমার নাক, মুখ, চোখ হাত পা সবই আছে। আমি একজন মানুষ, আপনার মতোই রক্তেমাংস গড়া একজন মানুষ। এভাবে আমার দিকে তাকিয়ে থাকার কোনো অর্থই হয় না। রাহুলের তাকানোর ভঙ্গি দেখে বললো সিমি। এবারো রাহুলের কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা গেলো না। শুধু মিটিমিটি হাসছে।
-আপনার হাসি কিন্তু বাঁদরের মতো। আপনার এখানে থাকা মানাচ্ছে না। আপনার উচিত গাছে গাছে ঝোলা। কিচিরমিচির করা। আপনি এখানে দাঁড়িয়ে আছেন কেন? যান, গাছে গাছে ঝোলেন। আরো রেগে গেলো সিমি।
-আপনাকে রাগলে কিন্তু বাঁদরের মতো দেখায় না। বেশ সুন্দর দেখায়। হাসতে হাসতে কথাটা বললো রাহুল।
-সুন্দর দেখাক বা কুৎসিত। তাতে আপনার কি? কোন অধিকারে আপনি এসব কথা বলছেন। আপানাদের মতো ছেলেরা এসব কথা বলেই মেয়েদের পটানোর চেষ্টা করে। আপনি সুন্ধর, আপনি হাসলে মুক্তো ঝরে। আরো কত কি! আপনার মতলবটা কি?
-আমি কোনো মতলবে আপনার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করছি না। আমি যথেষ্ট ভদ্রভাবে আপনার সঙ্গে কথা বলেছি। আপনি নিজেই বলুন তো কোনো অভদ্র আচরণ আমি করেছি কিনা। এবার প্রশ্ন জুড়ে দিলো রাহুল।
-এখনো কোনো অভদ্র আচরণ করেননি সত্য। কিন্তু করতে কতোক্ষণ।
-আমি আসলে অন্য চিন্তা নিয়ে আপনার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছি। বৃষ্টির কারণে আমরা এই দোকানের সামনে আটকা পড়ে আছি প্রায় ১ ঘণ্টা যাবৎ। কিছুটা কাকতালীয় বলতে পারেন আমরা এখানে শুধু দুজন অবস্থান করছি। আশপাশেও কাউকে নজরে আসেনি। মানুষ স্বভাবতই কথা না বলে থাকতে পারে না। আমরা দুজন মানুষ এখানে দাঁড়িয়ে আছি অথচ কেউ কথা বলছি না এটা অবশ্যই বিরক্তির কারণ। অন্তত আমার কাছে। বৃষ্টি কখন থামবে সেটা আমি কিংবা আপনি বলতে পারবো না। সেটা হতে পারে আরো এক ঘণ্টা কিংবা দুঘণ্টা। কথা না বলতে পারলে মনের ভেতর একটা অশান্তি তৈরি হয়। আমি চেষ্টা করছিলাম আপনার সঙ্গে কথা বলে বিরক্তিকর সময়টা পার করতে। আপনি বললেন আমি কোন অধিকারে কথা বলছি। আমাদের সবচেয়ে বড় পরিচয় আমরা মানুষ। আমরা মানুষ হিসেবে দুজন দুজনার সঙ্গে কথা বলার অধিকার রাখতেই পারি। হয়তো বা আপনি আমার পূর্বপরিচিত কেউ না। তাই বলে তো এমনও নয় যে আপনি অন্য কোনো গ্রহের প্রাণী। দুজনই মানুষ। দুজনার রক্তের রঙই লাল। একটানা কথাগুলো বললো রাহুল।
কথাগুলো ভালো লাগলো সিমির। ভাবলো, তাইতো, ছেলেটা তো ঠিকই বলেছে। আমাদের সবচেয়ে বড় পরিচয় আমরা মানুষ। কিন্তু আমরা কজনই বা এটা অনুভব করতে পারি। আমরা কজনই বা একজন আরেকজনের কাছাকাছি আসতে পারি। আমরা মানুষ এটা অনুভব করে কাছাকাছি তো আমরা আসি না, বরং মানুষ হয়ে একজন মানুষকে দূরে ঠেলে দেই। সামান্য একটা কারণ নিয়ে মানুষকে খুন করি। টাকার জোর দেখিয়ে গরিবদের অবহেলা করি। ক্ষমতার জোর দেখিয়ে অসহায় একজনকে পথে বসিয়ে দেই। আমরা মানুষ, সৃষ্টির সেরা জীব। তারপরও কিছু কিছু সময় আমরা নিকৃষ্ট জীবের পরিচয় দেই। যা আমাদের মতো মানুষের পক্ষে কখনই মানানসই নয়। কিন্তু পৃথিবীর অন্যান্য জীব কখনই নিজেদের ক্ষতি করার চেষ্টা করে না। বরং দলবদ্ধভাবে একে অন্যের উপকারে আসার চেষ্টা করে।
-আমি আজ আসি। বৃষ্টি কমে এসেছে। কথাটা বলেই হাঁটা ধরলো রাহুল। তারপর পেছন ফিরে হাত নেড়ে বিদায় নিলো। সিমিও হাত নেড়ে বিদায় জানালো রাহুলকে। তারপর হাঁটা ধরলো নিজ গন্তব্যে যাওয়ার জন্য। পেছনে পড়ে রইলো অচেনা, অজানা একজনের দেয়া মানুষ হওয়ার মন্ত্র।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×