দোয়েল আমাদের জাতীয় পাখি। শাপলা জাতীয় ফুল। কাঁঠাল আমাদের জাতীয় ফল। ইলিশ জাতীয় মাছ। জাতীয় স্বীকৃতি না পাওয়া অন্য পাখি, ফুল, ফল এবং মাছ তা হলে কী করবে বাংলাদেশে? চলে যাবে? নাকি দ্বিতীয় গ্রেডে অবস্থান করবে? না কি এক জোট হয়ে প্রতিবাদ করবে? কিছুই করবে না। ময়না, শালিক, বক, কাকাতুয়া, টিয়া কাক, গোলাপ, জুঁই, টগর, শিউলি, আম, জাম, নারকেল, বাতাবি, কৈ, মাগুর, রুই, কাতলা, মৃগেল কেউ কিছু করবে না। প্রতিবাদ করবে না। বিক্ষুব্ধ হবে না। হীনমন্যতায় ভুগবে না। যে যার মতো করে প্রকৃতিতে অবস্থান করবে। কারণ এরা আশরাফুল মখলুকাত নয়। সৃষ্টির সেরা জীব নয়। কিন্তু মানুষ? তার তো চেতনা আছে। আছে ব্যক্তি এবং সামষ্টিক অবস্থান। আছে দেশের পরিচয়। পরিচালিত হয় এবং বিচার্য হয় কালিক বিচারের মানদ-ে। আছে অনুভূতি এবং মর্যাদা বোধ। আছে তার ধর্মবোধ। সবার উপরে তার অন্তর্নিহিত নীতিজ্ঞান তাকে সব সময়ে পরিচালিত করছে। ব্যক্তি ও সামষ্টিকভাবে রাষ্ট্রের দ্বারা কিংবা আর্থ-সামাজিক রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিকভাবে সে বা তারা অপমানিত হলে, অধিকার হারা হলে মানুষ রুখে দাঁড়ায়। প্রতিবাদ করে প্রচ্ছন্ন অথবা প্রকাশ্যে নীরবে অথবা সরবে।
রাষ্ট্রধর্ম যদি ইসলাম হয়, জাতীয় ধর্ম যদি ইসলাম হয়, অন্যান্য ধর্মের স্থান তা হলে কোথায় থাকবে? নিশ্চয়ই দ্বিতীয় স্থানে। সেই সব ধর্মের অনুসারীদের অবস্থান কীভাবে বিচার্য হবে তা হলে? ওই দোয়েল, শাপলা, কাঁঠাল, ইলিশের বাইরে আর যারা রয়েছে তাদের মতো? ওদের তো অনুভূতি নেই। কিন্তু ইসলাম বাদে অন্য ধর্মাবলম্বীদের তো অনুভূতি আছে। বিচার ক্ষমতা আছে। অঙ্ক কষতে জানে। তার বেলা?
ইউরোপীয় রেনেসাঁ কিংবা সভ্যতা এ কথাই বলছে যে, রাষ্ট্রের আবার ধর্ম কিসের ধর্ম তো মানুষের। ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার_ মানবাধিকার ও মানবতার সর্ব শ্রেষ্ঠ এই উদাহরণটি কি সাংঘর্ষিক হয়ে দাঁড়াবে না বাংলাদেশের সংশোধিত সংবিধানে যদি রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম হয় তার সঙ্গে? যদি বলাও হয়, অন্য ধর্মের প্রতি রাষ্ট্র সমান নজর দেবে, তারপরেও।
কোন দলই, বিশেষ করে মুসলিম লীগের বাংলাদেশ সংস্করণ বিএনপি কিংবা উগ্র ধর্মান্ধ জামায়াতও কি প্রকাশ্যে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের সমানাধিকার অস্বীকার করে।
জামায়াত তো মনেই করে সংখ্যালঘুরা পবিত্র আমানত। মাছ যেমন গাঁও গ্রামে জিইয়ে রাখা হয় পানিতে, প্রয়োজনে ধরে এবং খায়।
সংসদ অধিবেশন চলছে। এই অধিবেশনে ২০১১-১২ অর্থ বছরের বাজেট ঘোষিত হবে। এর সঙ্গে সংবিধান সংশোধনে গঠিত কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাব উত্থাপিত হবে। পত্রপত্রিকার পূর্বাভাস থেকে জানা গেছে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম এবং সংবিধানে শুরুতে বিসমিল্লাহ ... বলবত থাকছে।
ছাবি্বশ-সাতাশ বছর অর্থনীতি পড়িয়ে এর উপর লিখতে স্বচ্ছন্দবোধ করি এবং লিখছিও। কিন্তু দেশটাকে যখন সাংবিধানিকভাবে পাকাপোক্ত সাম্প্রদায়িক বানানোর গণতান্ত্রিক চেষ্টা চলছে, তখন এর বিরুদ্ধে কিছু বলাটা কর্তব্য মনে করছি। অন্তত আমার সাংবিধানিক অবস্থানের বিবেচনা বোধ থেকে এই মনে করা।
ফুল জাতীয় হয়, পাখি জাতীয় হয়, মাছ জাতীয় হয়, ফল জাতীয় হয়, হতে পারে। তখন অন্যান্য ফুল, পাখি, মাছ, ফল নিজেদের দ্বিতীয় শ্রেণী ভাবে না। রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তে তারা দ্বিতীয় শ্রেণীতে বনে যায় না। সুতারং এর বিরুদ্ধে কথাও বলে না, বলতে পারেও না। কারণ ওদের চেতন শক্তি নেই। কিন্তু মানুষ? রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম হলে, অন্য ধর্মের মানুষ দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকে যে পরিণত হবে, তা হাজারো কথার মারপ্যাঁচে ঠেকানো যাবে না।
রাষ্ট্র সর্ব ধর্মের প্রতি সমান আচরণ করবে। নিশ্চয়ই করবে। এর ভিতর দিয়ে আধুনিক উদারতা প্রকাশ পাবে। কিন্তু দ্বিতীয় শ্রেণীতে পরিণত হওয়ায় যে সীমান্ত রেখা সাংবিধানিকভাবে তৈরি হলো তা ঘুচবে না।
মনিব দয়ালু হলে নিজ সন্তান ও কাজের ছেলের মধ্যে আচরণগত ভেদ বিন্দু মাত্র না থাকলেও পার্থক্য তাতে ঘুচবে কি? কারণ এই পার্থক্য তো মৌলিক।
হায়রে বাংলাদেশ নিয়ে একি লিখছি। এত ধৃষ্টতা আমরা পাই কোথায়।
পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা করেও জিন্নাহর ভাষায় পাকিস্তান হলো ুগড়ঃয বধঃবহ ঃৎঁহপধঃবফ ঢ়ধশরংঃধহচ্ অর্থাৎ পোকায় খাওয়া খুদে পাকিস্তান। বাংলাদেশ সেই পাকিস্তান ভেঙে বেরিয়ে আসা একটি সত্তা। ইসলামিক পাকিস্তানের কায়েমি সামরিক বেসামরিক আমলাতন্ত্র ও ধর্মান্ধতা থেকে বেরিয়ে এসে ইতিহাসের ঐতিহ্যিক স্বাতন্ত্র্যে সমৃদ্ধ দেশটির নাম বাংলাদেশ। '৪৮ থেকে '৭১-এ সময়ের প্রতিটি গণতান্ত্রিক ও সশস্ত্র সংগ্রাম তার অবয়ব ও আত্মার রসদ যুগিয়ে বাংলাদেশকে তৈরি করেছে গণতান্ত্রিক, ধর্ম নিরপেক্ষ বাঙালি জাতীয়তাবোধে স্নাত একটি দেশ হিসেবে। বাংলাদেশের পরিচয় সেটাই ছিল।
তখন কি বাংলাদেশ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ট ছিল না? পঁচাত্তর পূর্ব পর্যন্ত বাংলাদেশের আদর্শিক অবস্থান ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র, বাঙালিত্ব এবং অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য সমাজতন্ত্র এ নিয়ে তো কোন প্রশ্ন প্রকাশ্যে কেউ তোলেনি। বা এ নিয়ে তো কোন জাতীয় বিতর্ক সৃষ্টি হয়নি। সংলাপ হয়নি।
প্রশ্ন উঠতে পারে, রাষ্ট্রধর্ম তো এরশাদের আমল থেকেই সংবিধানে স্থান নিয়েছে। আমরা তো মেনে নিয়েছি।
বিষয়টি ছিল এমন, আমাদের মনোজগতে বঙ্গবন্ধু হত্যা পরবর্তী ৯০ সাল পর্যন্ত সব শাসনকেই আমরা অপ শাসন বলে মনে করে আসছি। সেখানে এই সময়কার শাসকগোষ্ঠীর রাজনৈতিক কারণে ধর্মের ব্যবহারের কারণ আমাদের কাছে অস্পষ্ট ছিল না। বিশ্ব প্রতিক্রিয়ার অংশ হিসেবে আমাদের দেশীয় প্রতিক্রিয়াশীলদের কাছে ইসলাম ছিল পলিটিক্যাল ইসলাম। যেমন ভারতের বিজেপি, শিব সেনার হিন্দুত্ব ছিল পলিটিক্যাল হিন্দুত্ব। আমরা মেনে নিয়েছি এটা হলো অপশাসনের প্রতিচ্ছবি।
কিন্তু এখন? বহু চড়াই-উতরাই পেরিয়ে বহু রক্ত ঝড়িয়ে ভাইয়ের হত্যা, বোনের সম্ভ্রমহানির বিনিময়ে, দুঃশাসন, কুশাসন, সম্প্রদায়িক সম্পদের লুটপাটের প্রেক্ষাপটে ভূমি ধস বিজয় অর্জন করল আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট। আদর্শিক অবস্থানে এই মহাজোট বাংলাদেশকে ধারণ করে। কোন বাংলাদেশ? ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ। আমরা তাই জানি। কারণ এর যে ঐতিহাসিক সত্যতা রয়েছে।
কি সেই ঐতিহাসিক সত্যতা যার ভিত্তিতে এই আওয়ামী লীগ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে ছিল। যে পাকিস্তান ধর্মীয় রাষ্ট্র হিসেবে শুরুতেই আত্মপ্রকাশ করে এবং এর নিট ফল হিসেবে অকার্যকর রাষ্ট্র হিসেবে এখন ধ্বংস হতে চলেছে। শেষ হয়ে যাচ্ছে।
এই আওয়ামী লীগ সেই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছে, যে পাকিস্তান তার দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উৎখাত করতে করতে আজ প্রায় শূন্যের কাছে চলে গেছে। একই সঙ্গে বাঙালি জাতিসত্তার অস্তিত্বকে করেছে সম্পূর্ণ অস্বীকার। মোহাম্মদ আলী স্বয়ং ঢাকায় এসে ১৯৪৮-এর ২১ মার্চ যখন ঘোষণা করলেন ুখবঃ সব সধশব রঃ াবৎু পষবধৎ ঃড় ুড়ঁ ঃযধঃ ঃযব ংঃধঃব খধহমঁধমব ড়ভ চধশরংঃধহ রং মড়রহম ঃড় নব ঁৎফঁ ধহফ হড় ড়ঃযবৎ খধহমঁধমব. অহু ড়হব যিড় ঃৎরবং ঃড় সরংষবধফ ুড়ঁ রং ৎবধষষু ঃযব বহবসু ড়ভ চধশরংঃধহচ্ এই আদর্শিক ঘোষণার বিরুদ্ধে পরবর্তীতে যুদ্ধ করেছে। বাংলাদেশ হয়েছে। দেশ স্বাধীন করেছে।
সুতরাং সেই আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট যখন ক্ষমতায় এলো ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্টতা নিয়ে তখন তো আমরা '৭১ পরবর্তী আবার সেই বাংলাদেশকেই সঙ্গত কারণে দেখতে পাব বলে বিশ্বাস করতে পারি। বিশ্বাস কেন, সেই বাংলাদেশকেই তো দখব। এ নিয়ে তো আপস-রফার কোন অবকাশ থাকতে পারে না। পার্থক্য যেটা প্রত্যাশিত, তাহলো সময়ের পরিবর্তনে বিচারের দেশীয় ও বৈশ্বিক অর্থনীতির পরিবর্তনের অভিঘাতে বাংলাদেশের পরিবর্তন। তা বলে তো সাংবিধানিকভাবে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে পরিণত হতে পারে না। কিন্তু সেটাই তো হতে যাচ্ছে এখন। তার অর্থ কি আমরা আদর্শিকভাবে পিছিয়ে আছি?
এরি মধ্যে সর্বোচ্চ আদালত কর্তৃক সংবিধানের ৫ম সংশোধনী বাতিল হয়েছে। বাতিল হয়েছে ৭ম সংশোধনী। সংসদে ব্রুট মেজরিটি আওয়ামী লীগের। সুতরাং এই আওয়ামী লীগই তো ফিরে যাবে '৭২-এর সংবিধানে। নিশ্চিত করবে সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র। যে আদর্শিক অবস্থান থেকে তারা শুরু করেছে যুদ্ধাপরাধীর বিচার। যে আদর্শিক অবস্থান থেকে একদা আওয়ামী মুসলিম লীগ আওয়ামী লীগে রূপান্তরিত হয়েছিল।
এখন দুর্বলতা কোথায়? কোন সমীকরণে দেশকে সাম্প্রদায়িক বানানোর চেষ্টা চলছে। এখন যদি আওয়ামী লীগ '৭২-এর সংবিধানে ফিরে যেতে না পরে, তাহলে দেশ স্থায়ী সাম্প্রদায়িক দেশে পরিণত হবে। কারণ আগামীতে নির্বাচনে এমন ভূমি ধস বিজয় যে আবার হবে তার নিশ্চয়তা কোথায়।
সাম্প্রদায়িকীকরণের এই ভীরুতা ও দুর্বলতা কি ভোটের রাজনীতির কারণে। ভোটের হিসাব করলে ভুল হবে। ২০০৬-এ আওয়ামী লীগ তো নির্বাচনী অাঁতাত করেছিল মৌলবাদী খেলাফত আন্দোলন ও ইসলামী ঐক্যজোটের একাংশের সঙ্গে। লাভ হয়েছে কি কিছু? বরং চারদিকে সমালোচনার ঝড় উঠেছিল এবং আওয়ামী লীগকে তা হজম করতে হয়েছিল।
একটি সহজ সত্য বুঝি, যত সমীকরণ মেরুকরণ হোক, ধর্মান্ধগোষ্ঠী, প্রাক্তন মুসলিম লীগার তথা বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী ব্যক্তিরা, এদের পরিবার পরিজন এবং দ্বিজাতি তত্ত্বে বিশ্বাসী মধ্যবিত্তরা কোন দিনও আওয়ামী লীগকে ভোট দেবে না। রাজনৈতিকভাবে সব খুইয়ে যতই তাদের মন যুগিয়ে চলার চেষ্টা করা হোক যোগ-বিয়োগ করা হোক। ২০০৬ সালেই তো তার প্রমাণ মিলেছে।
মাঝখানে সংখ্যালঘুরা ঘুরে দাঁড়াবে। তাদের কাছে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আদর্শগত বিচারে বিএনপির কোন পার্থক্য থাকবে না আর। বাস্তবে প্রায়োগিক বিচারে কে কতটা অসাম্প্রদায়িক সেই প্রশ্ন থাকলেও, আদর্শিকভাবে এই ধর্মনিরপেক্ষতার কারণেই বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা ঐতিহ্যগতভাবে আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে আসছে। এটা একটা দিক। সংখ্যালঘুরা আওয়ামী লীগের ভোট ব্যাংক। কিন্তু রাষ্ট্রীয় চরিত্র যদি সাম্প্রদায়িক হয়, তা হলে সেই ভোট ব্যাংকে নতুন মেরুকরণ শুরু হয়ে যাবে। আর ধর্মনিরপেক্ষতা শব্দটি সংবিধানে থাকল কি থাকল না, তার আর কোন অর্থ থাকবে না। এদিকে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম। অন্যদিকে সংবিধানে থাকছে ধর্মনিরপেক্ষতা। এই ডিলেমাকেই বলে সোনার পাথর বাটি।
বলা হয়েছে আওয়ামী লীগ তো রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানে সনি্নবেশিত করেনি। একেবারে সত্য কথা। কিন্তু আজ একক সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে রাষ্ট্রীয় চরিত্রকে অসাম্প্রদায়িক না বানিয়ে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ইসলামকে রেখে দিলে বা আবার সনি্নবেশিত করলে, এর দায়ভার চিরকালের জন্য যে বর্তমান ক্ষমতাশীলদের ঘাড়েই বর্তাবে তা কি অস্বীকার করা যাবে? '৭৫-এর পরবর্তী যে অপশাসন দেশকে সাম্প্রদায়িক বানিয়েছে তার পরিবর্তন না ঘটিয়ে বরং এরই ধারাবাহিকতা যদি ক্ষমতাশীনরা বজায় রাখে, তাহলে তার দায় থেকে আওয়ামী লীগ কোন দিন মুক্ত হতে পারবে না। তখন আর জিয়া, এরশাদ আসবেন না। আওয়ামী লীগই তখন এককভাবে দায়ী থাকবে দেশকে সাম্প্রদায়িক ভাবধারায় ফিরিয়ে নেয়ার করার জন্য। কোন আওময়ামী লীগ? যে আওয়ামী লীগ একদা আওয়ামী মুসলিম লীগ থেকে মুসলিম বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগ হয়েছিল। সেই আওয়ামী লীগ যে আওয়ামী লীগ ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক শোষণমুক্ত বাংলাদেশের জন্য যুদ্ধ করেছে এবং জয়ী হয়েছে। কেন আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম করতে চাচ্ছে? এটা কি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে স্পষ্টত পশ্চাদোপসারণ নয়? আদর্শিক বিচারে আওয়ামী লীগ কি বঙ্গবন্ধুকে ত্যাগ করল? তার থেকে দূরে সরে গেল, কাগুজে বাঘদের সাময়িক আস্ফালনের ভয়ে? আওয়ামী লীগ ও মহাজোটের সাংগঠনিক শক্তির কাছে এরা এখনো নস্যি। যুদ্ধাপরাধীদের অভিযোগে নিজামী, সাঈদী, সাকা চৌধুরী, প্রমুখদের জেলে ভরা হয়েছে। অনেকেই বলেছিল এদের জেলে পাঠানো অসম্ভব। দেশি-বিদেশি ক্ষমতার মেরুকরণের এরা আর্শীবাদ পুষ্ট। কই গেল সব? ধর্মনিরপেক্ষতার প্রশ্নে আওয়ামী লীগের এই ভীরুতার স্থায়ী মূল্য দিতে হবে তাকে।
এটাও ঠিক, কাগজে-কলমে ধর্মনিরপেক্ষতা ও অসাম্প্রদায়িকতা কথা থাকলেই দেশ সাম্প্রদায়িকতা মুক্ত হবে তাও মানা যায় না। ভারত অজন্ম ধর্মনিরপেক্ষ সংস্কৃতি দৃঢ়ভাবে অনুসরণ করে আসছে। তারপরেও গুজরাটে ব্যাপক মুসলিম নিধন হয়েছে। সাম্প্রদায়িকতা একটি মনোজাগতিক বিদ্বেষ বা বিকৃতি। সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করাই যথেষ্ট নয়। দরকার হচ্ছে সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধে নিরন্তর উদর সংস্কৃতির অনুশীলন। ভারতে সংখ্যালঘুদের সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে আইনি ও আর্থ-সামাজিক এবং রাজনৈতিক দৃঢ় অবস্থান রয়েছে। ফলে সেখানে সংখ্যালঘুদের সংখ্যা ও শক্তি ক্রম প্রসারমাণ। পশ্চিম বঙ্গে ২০০১ সালের আদমশুমারিতে সংখ্যালঘু জনসংখ্যা ছিল ২৬ শতাংশ। ২০১১ সালের শুমারিতে এটা প্রায় ৩০ শতাংশে পেঁৗছেছে। শোনা যায়, সাম্প্রতিক নির্বাচনে বামদের শোচনীয় পরাজয়ের অন্যতম প্রধান নির্ধারক ছিল সংখ্যালঘুরা। কিন্তু পাকিস্তান আমল থেকেই আমাদের দেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুর সংখ্যা কমেই যাচ্ছে। পাকিস্তানে তো একদম নাই বললেই চলে।
তারপরেও বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচনে এই ধর্মীয় সংখ্যালঘুরাই কিন্তু গরিষ্ঠ থেকে নির্ধারকের ভূমিকা পালন করেন। তাদের কাছে যেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমান জায়গায় এসে না দাঁড়ায়। সংশ্লিষ্টদের এটা মাথায় রাখতে হবে।
সুতরাং আবারও বলছি রাষ্ট্রের কোন ধর্ম নেই। ধর্ম আছে মানুষের। ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার।