প্রযুক্তির ছোঁয়ায় আজ আমাদের জীবন ধন্য হলেও আমরা ক্রমশ হারিয়ে ফেলছি আমাদের জীবনের স্বাভাবিক চাওয়া-পাওয়া। দৈনন্দিন জীবনের কঠোর পরিশ্রমের পর যখন সাপ্তাহিক এক-দুই দিন অথবা বার্ষিক কয়েকদিন কর্মস্থল থেকে অবসর পাওয়া যায়, তখন সেই দিনগুলো আমাদের নিজের মতো করে উপভোগ করতে অনেক সময়ই বিঘ্ন ঘটায় আজকের প্রযুক্তি। প্রকৃত অর্থে ছুটি কাটানো আজকাল এক রকম অসম্ভব। হাতের কাছেই থাকছে ল্যাপটপ, মুঠোফোনসহ নানা প্রযুক্তি পণ্য। তাই ছুটিতে সমুদ্রতটে বসে ইমেইল চেক করেন কেউ, কেউবা ডিনারের টেবিলে ব্যস্ত মুঠোফোন নিয়ে। তাহলে নির্লিপ্ত ছুটি কাটানো আর হলো কোথায়।
এ কথা মানতেই হবে, প্রযুক্তির কল্যাণে জীবন অনেক সহজ হয়ে গেছে। এখন অফিস থেকে হাজার মাইল দূরে থাকলেও সার্বক্ষণিক যোগাযোগ সম্ভব। যখন-তখন চাইলেই অফিসের খোঁজ-খবর নেয়া যায় ইমেইল চেক করে কিংবা সহকর্মীদের ফেসবুক ঘেঁটে। কিন্তু, মানুষের শরীর-মন কখনও কখনও সম্পুর্ন অবকাশও চায়। তাই এসব থেকে বছরে কিছুদিন দূরে থাকা খুব জরুরি। আর সেই সময়টা হচ্ছে বার্ষিক ছুটির সময়।
কীভাবে প্রযুক্তি পণ্য থেকে দূরে থাকবেন। কয়েকটি উপায় আছে।
১. সবচেয়ে মোক্ষম উপায় হচ্ছে, ছুটিতে যাওয়ার আগে একেবারে বিশ্বস্তজনকে নিজের ফেসবুক, ইমেইল ইত্যাদির দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়া। এরপর সেই বিশ্বস্তজনের দায়িত্ব হবে, আপনার ইমেইল, ফেসবুকসহ যাবতীয় ইলেকট্রনিক যোগাযোগ মাধ্যমের পাসওয়ার্ড বদলে দেয়া। যাতে আপনার মন চাইলেও আপনি ছুটিতে থাকাকালে এসবে ঢুকতে না পারেন। ছুটি থেকে ফিরে এসে আবারও এসবের দায়িত্ব বুঝে নিলেই হলো।
২. দিনের একটি নির্দিষ্ট সময় বেছে নেয়া। ছুটিতে থাকাকালীন দিনে আধ ঘণ্টা বা সপ্তাহে দুই ঘণ্টা ইন্টারনেট দুনিয়ায় বিচরণ করবেন আপনি। এর বেশিও নয়, কমও নয়। নির্দিষ্ট সময় শেষ হওয়া মাত্র ল্যাপটপ বা মুঠোফোন বন্ধ করে দিন। অথবা অন্য কাউকে দিয়ে দিন। সব সময় এসব নিজের কাছে রাখা চলবে না কিছুতেই।
৩. ছুটির সময় নিজেকে ব্যস্ত রাখুন প্রিয়জনদের সঙ্গে। তাদের সঙ্গে খেলাধুলায় মেতে উঠুন, গল্পগুজব করুন, আড্ডা দিন। আর ভুলে যান ইন্টারনেট দুনিয়ার কথা। এ কাজটি সহজ করতে খাবার টেবিলের ওপরে কখনো মুঠোফোন রাখবেন না। ছুটিতে থাকাকালীন সেটির জায়গা হোক সুটকেসে কিংবা দূরে কোথাও। যাতে তার নাগাল পাওয়া দুরূহ হয়। নিজের অজান্তেই হাত যেন সেটির নাগাল না পায়। ছুটিতে গিয়ে এমন প্রযুক্তি চর্চা না করাই ভালো, এতে প্রিয়জনের সঙ্গে উপভোগ্য সময়গুলোর অবমূল্যায়ন করা হয়।
অবশ্য অনেকে মোবাইল ফোন, চ্যাটিং বা ফেসবুকে এতটাই আসক্ত যে চাইলেও এর থেকে দুরে থাকতে পারে না। আর কারো ছুটিতে গিয়েও যদি অতীব জরুরি কোন ভাবনা মনে থাকে, তাহলে মুঠোফোন বেশি দূরে না রাখাই উত্তম।