somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাজেটে প্রত্যাশা : প্রসঙ্গ শিক্ষা

০৭ ই জুন, ২০১১ সকাল ৭:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০-এ প্রাথমিক শিক্ষা অষ্টম শ্রেণীতে বিস্তরণের সিদ্ধান্ত ও প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষাকে শিশুদের আনুষ্ঠানিক শিক্ষা শুরুর আগে বিদ্যালয়-প্রস্তুতিমূলক প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা চালু, বিদ্যালয়ে বাড়তি শিক্ষকের পদ সৃষ্টি ও শ্রেণীকক্ষ বৃদ্ধি, সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে বিরাজমান বৈষম্য দূরীকরণ, বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগ কমিশন গঠন, উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার মান যাতে একটি মর্যাদাপূর্ণ আসনে স্থিত হয় তার ব্যবস্থা গ্রহণ, সব পর্যায়ে শিক্ষকদের নিয়মিত বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করার লক্ষ্যে বিদ্যমান প্রশিক্ষণ ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো সিদ্ধান্তের প্রেক্ষাপটে ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার খসড়া চূড়ান্ত প্রায় অবস্থায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ৯ জুন ২০১১-২০১২ অর্থবছরের বাজেট সংসদে উত্থাপন করবেন।
উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত করতে বাধা উত্তরণে বাজেটকে ঘিরে প্রত্যশা
এ কথা সত্য, গত ৪০ বছরে বাংলাদেশের বেশ কিছু অর্জন উল্লেখযোগ্য। এর মধ্যে রয়েছে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষায় ভর্তির ক্ষেত্রে ছেলে ও মেয়েশিশুর মধ্যে সমতা অর্জন, খাদ্য উৎপাদন ৩২ মিলিয়ন মেট্রিক টনে উন্নীত হওয়ার মধ্যদিয়ে খাদ্যে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ৭.০ থেকে ২.৭ শতাংশে হ্রাস, গড় আয়ু ৬৬.৬ বছরে উন্নীত হওয়া, ৫০ শতাংশের অধিক দারিদ্র্য হ্রাস, মহান একুশে ফেব্রুয়ারির আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি লাভ, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের ছাত্রছাত্রীদের হাতে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ, শিক্ষা, প্রশাসন, স্বরাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নারীদের গুরুত্বপূর্ণ পদে অবস্থান, মেয়েদের অংশগ্রহণসহ ক্রীড়া ক্ষেত্রে ব্যাপক প্রসার, আন্তর্জাতিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের উল্লেখযোগ্য সাফল্য প্রদর্শন, শিক্ষায়, পাঠদানে তথ্যপ্রযুক্তির উল্লেখযোগ্য প্রসার ইত্যাদি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে গত ১২ মাসে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৬.৬৬ শতাংশ। যদিও সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) ভিন্ন মত ব্যক্ত করে সরকারের পরিসংখ্যানের যথার্থতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাইয়ের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য পন্থা অনুসরণ করা সমীচীন বলে মনে করি। শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যানবেইস পরিবেশিত তথ্য দেরিতে হালনাগাদ করা হয়। সেসব তথ্য যে পুরো ঠিক কি না তা নিয়েও প্রশ্ন থাকায় জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ এ ব্যানবেইসকে আরও শক্তিশালী করার সঙ্গে সঙ্গে বেসরকারি উদ্যোগেও পৃথক শিক্ষা তথ্যভা-ার গড়ে তোলার বিধান রাখা হয়েছে। প্রবৃদ্ধির হার নিয়ে সিপিডি'র ভিন্ন মত সত্ত্বেও বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ৮০০ ডলার ছাড়িয়ে বর্তমানে ৮১৮ ডলার। গত অর্থবছরে যা ছিল ৭৫০ ডলার। এসব অর্জনের পরও ঘুরে ফিরে যে প্রশ্নটি বার বার উঠে আসে। তা হলো, এর সুফল দরিদ্র মানুষরা কতটুকু নিতে পারছে? আরও প্রশ্ন: উন্নয়নের গতি কি আরও ত্বরান্বিত করা যেত না? অর্জনের তালিকা ও ব্যাপ্তি কি আরও প্রসারিত করা সম্ভব ছিল না? প্রথম প্রশ্নে আমার জবাব নেতিবাচক হলেও পরের দুই প্রশ্নে তা অবশ্যই হ্যাঁ-সূচক। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে বৈষম্য বঞ্চনার অবসান ঘটিয়ে শিক্ষায় যথাস্থানে প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ-বরাদ্দ দেয়া হলে, শিক্ষাক্রমকে জীবন জীবিকামুখী করা গেলে, দেশ ও বিদেশের শ্রম-কর্মবাজারের চাহিদা অনুযায়ী পাঠ্যক্রম ঢেলে সাজাতে পারলে প্রতিবছর কর্ম-বাজারে প্রবেশকারী ১০ লাখ তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থান নিশ্চিত করণের ক্ষেত্রে যে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হতো তাতে সন্দেহ নেই। এসব না হওয়াতেই ৬ কোটির বেশি মানুষ এখনো দারিদ্র্য সীমার নিচে। শ্রমশক্তির অধিকাংশই স্বল্প উৎপাদনশীলতাভিত্তিক অনানুষ্ঠানিক শ্রমদানে নিয়োজিত, যা প্রধানত স্বল্প আয়ের কর্মসংস্থান করে থাকে। স্বল্প মজুরির কারণে পোশাক, টেক্সটাইল ও পাটশিল্প খাতে বর্তমানে প্রায় ১৫ লাখ শ্রমিকের ঘাটতি। ধান কাটার মৌসুমে ধান কাটার লোকের অভাব। শিক্ষার কথা বলতে গেলে মাধ্যমিক ও পরবর্তী শিক্ষাস্তরে শিক্ষার্থীদের প্রবেশ সীমিত। শিক্ষার সর্বস্তরে মান প্রশ্নবিদ্ধ। মাধ্যমিকে ছাত্র ভর্তি হার ৪১ শতাংশ অর্থাৎ ৫৯ শতাংশের বাইরে। জেন্ডার ব্যবধানসহ বিভিন্ন কারণে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা অসমাপ্ত রেখে ছাত্রীরা বিপুল সংখ্যায় স্কুল থেকে ঝরে পড়ে। মাধ্যমিক স্তরে ছাত্রীর ভর্তির হার ৩৬ শতাংশ মাত্র। ধনী ও দরিদ্রের ব্যবধান, প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে দূরবর্তী অবস্থানে বসবাসরত আদিবাসী ও প্রতিবন্ধীদের শিক্ষায় কাঙ্ক্ষিত উন্নয়নের পথে বাধা বিভিন্নমুখী। বর্তমানে শিক্ষায় জিডিপি'র বরাদ্দ ২.৩ শতাংশ এবং সরকারের বার্ষিক মোট ব্যয়ের ১৪ শতাংশ। নেপালে শিক্ষায় জিডিপি'র ৪ শতাংশ এবং জাতীয় ব্যয়ের ২০ শতাংশ বরাদ্দ। সিঙ্গাপুরে জিডিপি'র ৩.৭ শতাংশ এবং মোট ব্যয়ের ২৩.৪ শতাংশ। থাইল্যান্ডে জিডিপি'র ৪.২ শতাংশ এবং মোট ব্যয়ের ২৫ শতাংশ। মালয়েশিয়ায় শিক্ষায় ব্যয় মোট ব্যয়ের প্রায় ২৯ শতাংশ।
শিক্ষায় অর্থায়নের সম্ভাব্য উৎস
এদেশে স্কুল-কলেজ, টোল, মক্তব সবকিছু প্রতিষ্ঠিত হয়েছে স্থানীয় জনগণের অকৃপণ অবদান ও উদ্যমের মধ্যদিয়ে। এখন সেসব নিঃশেষপ্রায়। এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে প্রচলিত স্থানীয় স্বশাসন ও উন্নয়ন কাঠামোকে ভেঙে-চুরে প্রায় সবকিছু সচিবালয়ে নিয়ে আসা হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদ, জেলা পরিষদগুলোর শিক্ষা কর ধার্য করার ক্ষমতা রহিত করে সবকিছুর দায় এখন সরকারের কাঁধে। স্থানীয় জনগণের শক্তি-সামর্থ্য, উদ্যম ও প্রতিনিধিত্বশীল কাঠামোর পুনর্বিন্যাসের মাধ্যমে স্থানীয় জনগণের ক্ষমতায়ন আজ শিক্ষায় অর্থায়নের জন্য প্রাসঙ্গিক ও জরুরি। আমি বিশ্বাস করি, দেশে শিক্ষায় অর্থায়নের পরিবেশ এখন অনেক বেশি অনুকূল। প্রবাসী বাংলাদেশি ও স্থায়ীভাবে বিদেশে বসবাসরত বাঙালিদের এক্ষেত্রে সম্পৃক্ত করাও কার্যকর একটি ব্যবস্থা হতে পারে। প্রয়োজনে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনাধীনে বিদেশি বিনিয়োগও নেয়া যেতে পারে।
চূড়ান্তপ্রায় ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার আলোকে এবারের বাজেটে প্রত্যাশিত লক্ষ্য
সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা অর্জন ও তা অষ্টম শ্রেণীতে উন্নীতকরণ। নিরক্ষরতা দূরীকরণ। শিক্ষায় বরাদ্দ ও শিক্ষার সুযোগের মধ্যে গ্রাম ও শহর নারী ও পুরুষ, সাধারণ ও কর্মমুখী শিক্ষা, সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং ছাত্র-শিক্ষকের মধ্যে বৈষম্য দূরীকরণ। কারিগরি ও বিজ্ঞানশিক্ষায় শিক্ষিত, নৈতিক মূল্যবোধে সমৃদ্ধ একটি নতুন প্রজন্ম সৃষ্টি। দেশের ও বিদেশের শ্রমবাজারের উপযোগী ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি। লক্ষ্য পূরণে সম্ভাব্য পরিমাণগত কার্যক্রম : প্রাক-প্রাথমিকসহ শিক্ষার সব স্তরে প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষক নিয়োগ। বর্তমানে নির্ধারিত সংখ্যা অনুযায়ী মহিলা শিক্ষক নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ। শিক্ষাবৃত্তি ও আর্থিক সহায়তার সংস্থান করে দরিদ্র শিক্ষার্থী, বিশেষ করে ছাত্রী ভর্তির হার বৃদ্ধি ও তাদের শিক্ষাসমাপন পর্যন্ত বিদ্যালয়ে ধরে রাখার কর্মসূচি গ্রহণ। শিক্ষার্থীদের শিক্ষায় আকর্ষণ সৃষ্টি ও বৃদ্ধির লক্ষ্যে শিক্ষা ও শিক্ষা উপকরণ সরবরাহ এবং শিক্ষাব্যবস্থার আধুনিকীকরণ। প্রতি জেলা ও উপজেলা সদরে ছাত্রী ও নারী শিক্ষকদের জন্য যৌথ নিবাস এবং একাধিক দিবা যত্ন কেন্দ্র স্থাপন। লক্ষ্য পূরণে গুণগতমান উন্নয়নের সম্ভাব্য উদ্যোগ : পাঠ্যক্রম, পাঠ্যপুস্তক, পাঠদান ও অর্জিত জ্ঞানের মূল্যায়ন পদ্ধতি অধুনিকীকরণ। মাধ্যমিক স্তরে বিজ্ঞান ও গণিত বিষয়কে গুরুত্ব প্রদান। মাধ্যমিক স্তরে বা সমমানের মাধ্যমিক শিক্ষায় তথ্যপ্রযুক্তি ও কারিগরি শিক্ষাক্রম চালু এবং ছাত্রীদের কারিগরি শিক্ষায় সমসুযোগ নিশ্চিতকরণ। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কম্পিউটার শিক্ষক, বিজ্ঞান ও গণিতের বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগ। মাদ্রাসা শিক্ষাকে সাধারণ শিক্ষার বিভিন্ন ধারার সমপর্যায়ে উন্নীত করে সমসুযোগ নিশ্চিতকরণ। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষার গুণগতমান ও পাঠদান উন্নয়নে বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ। জেন্ডার ও অঞ্চলভিত্তিক মনিটরিং, বিশ্লেষণ ও রিপোর্টিংয়ের ব্যবস্থা গ্রহণ।
শিক্ষানীতি ২০১০-এর আলোকে অর্থায়নে সম্ভাব্য অগ্রাধিকার
শিক্ষায় অর্থবরাদ্দ অব্যাহতভাবে বৃদ্ধি করে জিডিপি'র ৬ শতাংশ ও মোট ব্যয়ের ২০ শতাংশে উন্নীতকরণ। শিক্ষাব্যবস্থার বিকেন্দ্রীকরণ, বিশেষ করে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনা পুনর্বিন্যাস। কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষায় শিক্ষার্থী ভর্তির বর্তমান হার ৬ শতাংশ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে ২৫ শতাংশে উন্নীতকরণ। মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক ও সমমানের মাদ্রাসায় কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা চালু। শিক্ষানীতি ২০১০-এর আলোকে পাঠ্যক্রম, শিক্ষকদের শিক্ষাক্রম ও পেশা-পূর্ব ও পেশা-পরবর্তী অব্যাহত প্রশিক্ষণ কর্মসূচি গ্রহণ। সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মানে সমদর্শিতা প্রতিষ্ঠা, মনিটরিংয়ের জন্য অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলোর শিক্ষার্থীদের জন্য উপযোগী সিলেবাস প্রণয়ন, পাঠদানে মান উন্নয়ন, নিয়মিত মনিটরিং ও শিক্ষকদের বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণ কর্মসূচি আধুনিকীকরণ। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যকর বিকেন্দ্রীকরণের উদ্যোগ গ্রহণ। বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে শিক্ষকদের অংশগ্রহণ উৎসাহিত, অধিকতর ফলপ্রসূ করতে শিক্ষক সংগঠনগুলোর সহায়তা গ্রহণ ও জাতীয় শিক্ষা কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্তকরণ। শ্রেণীকক্ষে শিক্ষকদের পাঠদান উন্নয়ন পর্যবেক্ষণ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির সংস্কারের জন্য পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ প্রয়োজন।
আট প্রত্যাশা
১. চর ও হাওড় এলাকায় বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা সাময়িক ভাসমান নৌকা স্কুল স্থাপন করেছে। সে বিবেচনায় প্রত্যন্ত, দুর্গম এলাকায় নতুন বিদ্যালয় স্থাপন, চর-হাওড় এলাকায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য 'ওয়াটার বাস' চালু করা যেতে পারে। ২. বিদ্যালয় ম্যাপিং করে যেখানে দরকার সেখানেই বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা ও এমপিওভুক্তির জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দ দিতে হবে। এমপিওভুক্ত অনেক বিদ্যালয়ে প্রয়োজনের চেয়ে অধিকসংখ্যক শিক্ষার্থী থাকলেও শাখা খোলার অনুমতি দেয়া হয় না। স্থানীয় চাহিদার ভিত্তিতে স্বল্পতম সময়ে শাখা খোলার অনুমতিসহ এমপিও'র আওতা বৃদ্ধির জন্য বাজেটে আরও অর্থ বরাদ্দ দেয়া প্রয়োজন। বর্তমানে উপবৃত্তি কাঠামো পর্যালোচনা করে চাহিদাভিত্তিক ও পর্যাপ্ত উপবৃত্তি প্রদানের ব্যবস্থা করা দরকার। ৩. শিক্ষায় মেয়ে শিশু ও নারীর অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে যে ইতিবাচক ধারা সূচিত হয়েছে তা জোরদারে বিদ্যালয়ের ভিতরে ও বাহিরে মেয়েদের নিরাপত্তা, টয়লেট সুবিধা ইত্যাদি নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দ দেয়া জরুরি। ৪. শিক্ষার ক্ষেত্রে মানসম্মত তাত্তি্বক ও প্রায়োগিক গবেষণার প্রসারে বিশেষ করে কৃষি শিক্ষা ও কৃষিবিষয়ক গবেষণায় সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা বাড়াতে অধিক বাজেট বরাদ্দ আবশ্যক। ৫. দুযর্োগ-পরবর্তীকালীন সময়ে দ্রুত শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর লক্ষ্যে বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ রাখা প্রয়োজন। ৬. শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে দুপুর বেলা বিস্কুটের পরিবর্তে গরম খাবারের ব্যবস্থা করা দরকার। ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যে এ ধরনের উদ্যোগের ফলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ঝরে পড়ার হার ১২ শতাংশ থেকে ৩ শতাংশে নেমে এসেছে। আমাদের দেশেও প্রতিটি বিভাগে পিছিয়ে পড়া এলাকার অন্তত দুটি করে মোট ১২টি উপজেলায় প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের জন্য মধ্যাহ্ন আহারের পাইলট কার্যক্রম শুরু করা যেতে পারে। ৭. ১৯৯০ সনের বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা আইন অনুযায়ী প্রাথমিক শিক্ষা অবৈতনিক হলেও শিক্ষার্থীদের জন্য পরিবারকেও প্রায় সরকারের সমপরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে হয়। এক্ষেত্রে শিক্ষা খাতে অভিভাবকদের ব্যয় নূ্যনতম পর্যায়ে নামিয়ে আনার জন্য খাতা, পেনসিল, পোশাক-পরিচ্ছদ ইত্যাদি বাবদ পরিবারের ব্যয় কমাতে বাজেটে পর্যাপ্ত বরাদ্দ প্রয়োজন। এক্ষেত্রে সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠী অগ্রাধিকার পেতে পারে। প্রাথমিক শিক্ষাকে রাষ্ট্রের পূর্ণ দায়িত্ব হিসেবে রেখে বাকি স্তরগুলোতে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগের মধ্যে সমন্বয় করে স্বল্পতম সময়ের মধ্যে উন্নয়ন প্রক্রিয়া জোরদার করা যেতে পারে। ৮. প্রতিকূল আর্থ-সামাজিক কারণে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মেধাবী শিক্ষকের পেশা ত্যাগের বর্তমান প্রবণতা বন্ধ ও তাদের শিক্ষকতায় ধরে রাখার জন্য বেতনকাঠামো পুনর্বিবেচনা করে আকর্ষণীয় বেতন-ভাতা, নিয়মিত পদোন্নতি ও পেনশন নিশ্চিত করা দরকার। বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারীদের প্রত্যাশা, তাদের ন্যায়সঙ্গত দাবিগুলোর মধ্যে অন্তত কয়েকটির জন্য এবারের বাজেটে বরাদ্দ থাকবে। চারদলীয় জোট সরকারের আমলে বন্ধকৃত এবং বর্তমান মহাজোট সরকার কর্তৃক চালুর দুই মাস পর স্থগিতকৃত টাইম স্কেল পুনরায় চালুর জন্য, ১৯৯১-এর পরিবর্তে বর্তমানে প্রচলিত স্কেলে চিকিৎসা ভাতা ও বার্ষিক প্রবৃদ্ধির জন্য বাজেটে সংস্থান থাকবে বলে তাদের একান্ত প্রত্যাশা। সে সঙ্গে তারা আশা করেন, ডিগ্রি কলেজে বিভিন্ন বিষয়ে তৃতীয় শিক্ষক, যোগ্যতার সব শর্ত পূরণ করেও বছরের পর বছর এমপিও-বঞ্চিত প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষক কর্মচারীদের নতুন এমপিও'র জন্য অর্থ বরাদ্দ থাকবে।
এসব প্রত্যাশার আলোকে মানবসম্পদ উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত করার লক্ষ্য নিয়ে ৯ জুন জনাব এএমএ মুহিত জাতীয় সংসদে বাংলাদেশের যে চলি্লশতম বাজেট (২০১১-১২ অর্থবছর) উপস্থাপন করবেন তাতে শিক্ষায় কাম্য বরাদ্দ, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যয়ের প্রস্তাব কতটুকু অন্তর্ভুক্ত থাকবে, শিক্ষা সংশ্লিষ্ট ও শিক্ষা উন্নয়নে আগ্রহী সব ব্যক্তি ও সংস্থা তা দেখার গভীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষায় আছেন। মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে ৩০ জুন ১৯৭২ অর্থমন্ত্রী তাজ উদ্দিন আহমেদ পেশ করেছিলেন ৭৮৬ কোটি টাকার বাজেট। জনাব মুহিতের ২০১০-১১ অর্থবছরের বাজেট ছিল ১ লাখ ৩২ হাজার কোটি টাকার। এবার তা টাকার অঙ্কে আগের চেয়ে বড় হবে না আগের মতোই থাকবে, তা দেখার আগ্রহও আছে অনেকেরই।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×