somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফ্ল্যাশ ফিকশনঃ অল্প কথার গল্প

১০ ই মে, ২০১৭ বিকাল ৩:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


গল্প হতে পারে কয়েক পৃষ্ঠার। গল্প হতে পারে কয়েক হাজার বর্ণের। গল্প হতে পারে কয়েক শতক শব্দের। কিন্তু গুটি কয়েক শব্দ দিয়েও গল্প বানিয়ে চমক সৃষ্টি করা যায় হৃদয়পটে। মাত্র ছ’টি শব্দ দিয়ে তেমনই এক কাজ করে বসেন মার্কিন সাহিত্যিক ও সাংবাদিক আর্নেস্ট হেমিংওয়ে। অফিসে সহকর্মীদের সাথে বাজি ধরেন যে, তিনি মাত্র ছয় শব্দ দিয়েই একটি গল্প বানাতে পারবেন। সহকর্মীরা প্রথমে বিশ্বাস করতে না পারলেও পরে হার মানেন তার ওই ছ’টি শব্দের কাছে। এভাবে অল্প কথার ভেতর অনেক না বলা কথা লুকিয়ে রেখে যে গল্প লিখা হয় তা ফ্ল্যাশ ফিকশন বা সাডেন ফিকশন নামে পরিচিত। যদিও সাহিত্যজগতে এর মজবুত কোনো ভিত্তি খুব একটা চোখে পড়েনা। তবে অধুনা এ ধরণের লেখা খুব জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে ছোট গল্প লেখার প্রতিযোগিতাও চোখে পড়ে মাঝে মধ্যে।

হোমিংওয়ে সহকর্মীদের সাথে দশ ডলারের সে বাজিতে জিতেছিলেন মাত্র ছয় শব্দে নিচের গল্পটি লিখে-
"For sale: baby shoes, never worn."
লাইনটি পড়ে প্রথমে হয়তো কিছুই বোঝা যাবেনা। এক শিশুর জন্য জুতা কেনা হয়েছিলো। সে জুতা আবার বিক্রির জন্য তোলা হচ্ছে। আবার বলা হচ্ছে এ জুতাজোড়া কখনওই ব্যবহৃত হয়নি। কিন্তু কেন? কারণ ওই বাচ্চা পৃথিবীর আলো দেখেনি। কতটুকু ভগ্ন হৃদয় নিয়ে একজন মা এমন আকুতি জানাতে পারেন! তা-ই ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছিলেন হোমিংওয়ে। এবং তিনি পেরেছেন। পরবর্তীতে তার এই ধারণার ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘সিক্স ওয়ার্ড স্টোরি’ লেখার ধারণা। সাহিত্য জগতের এ প্রবাদ পুরুষ ১৯৫৪ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।

বুকে মোচড় দেওয়া ছয় শব্দের এরকম উল্লেখযোগ্য আরও গল্পের মাঝে আরেকটি গল্প হচ্ছে-
“The Smallest Coffins are the Heaviest.”
২০১৪ সালের ১৬ই ডিসেম্বর পাকিস্তানের পেশোয়ারে আর্মি স্কুলে জঙ্গি হামলায় আটজন স্টাফ ও ১৩৪ জন শিশু শিক্ষার্থী নিহত হয়। শিক্ষার্থীদের বয়স ছিলো আট থেকে আঠারোর ঘরে। মৃত্যুর মিছিলে এতগুলো শিশুকে একসাথে দেখে নাম না জানা কোনো এক লেখক লিখেছিলেন -
“The Smallest Coffins are the Heaviest.”
লেখাটির সম্পাদনা করেছিলেন সাইফুল্লাহ গুল নামের আরেক লেখক। অথচ এমন গল্প রচিত হতে পারতো ১৯৭১ সালেই। থাক সে কথা।

ফ্ল্যাশ ফিকশনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো – এর শেষ হয়ে যায় শেষ হবার বহু আগে এবং শুরুর খানিক পরেই। তবে পাঠকের মনে তার একটা অদ্ভুত হৃদয়ছোঁয়া রেশ রয়ে যায়।

সাহিত্য জগতের আরেকটি অনবদ্য ফ্ল্যাশ ফিকশনের কথা প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যেতে পারে।
'Knock' নামের এ গল্পটির স্রষ্টা আরেক আমেরিকান, বিখ্যাত লেখক ফ্রেডরিক ব্রাউন। এ গল্পটি পৃথিবীর সংক্ষিপ্ততম ভূতের গল্প হিসেবে খ্যাত।

গল্পটি হল-
" The last man on Earth sat alone in a room. There was a knock on the door..."
"পৃথিবীর সর্বশেষ মানব একাকী একটি বদ্ধ ঘরে বসে আছে। এমন সময় দরজায় করাঘাত - টক টক টক..."
ভাবতেই গা শিউরে ওঠে। চোখ বন্ধ করে নিজেকে ওই মানুষের স্থলে কল্পনা করুন। দেখুন কেমন লাগে।

এবার স্বীয় ডুগডুগি বাজানোর পালা। বঙ্গীয় জনপদে এক দরিদ্র ফেসবুকার ছিলো। তিনি সামাজিক যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম ফেসবুকের পাতায় বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ইশুতে লিখে গেছেন বিভিন্ন ফ্ল্যাশ ফিকশন। লোকমুখে শোনা গেছে তার নাম মামুন। তার লেখা উল্লেখযোগ্য ফ্ল্যাশ ফিকশনগুলো হচ্ছে-
১।
‘মা দিবসের উপহার নিয়ে বৃদ্ধাশ্রমের দিকে সস্ত্রীক রওনা হচ্ছেন করিম সাহেব।’
-মা দিবস

২।
‘মন্ত্রীর সন্তানসম্ভবা স্ত্রীকে বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সের ধাক্কায় গুলশানে পথশিশু নিহত।’
-এপিঠ ওপিঠ

৩।
‘ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা হাজার নারীর অন্তরে।’
-বয়ঃসন্ধি

৪।
‘বিকেলে 'নারীর মর্যাদা ও অধিকার' শিরোনামের সেমিনারে বক্তব্য দেয়ার জন্য প্রাক্তন প্রেমিকাকে নারীর মর্যাদা ও গুরুত্ব বিষয়ক বক্তব্য লিখে দিচ্ছেন বিশিষ্ট প্রকৃতি গবেষক ও নারীবাদী লেখক আদিত্য আনোয়ার।’
-নারী দিবস

সর্বশেষ; ছয় শব্দের গল্প-
৫। “অথচ কথা দিয়েছিলে - 'আর কথা হবেনা'।”
-ফেরা

সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মে, ২০১৭ দুপুর ১:৩৮
৯টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×