somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মোল্লা-মৌলবিরা কি সত্যি রোহিঙ্গাদের মুক্তি চান?

২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সকাল ৮:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


রোহিঙ্গাদের সমস্যা দীর্ঘ দিনের হলেও ১৯৮২ সনের পর এবারই এর নির্মমতা, গভীরতা ও বিস্তৃতি সকল মাত্রা অতিক্রম করল। ৮২ সনের অব্যবহিত পর উদ্ভূত সমস্যায় ভারত-থাইল্যান্ডসহ একাধিক মুসলিম দেশ শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়েছিল। এরপরও বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে রয়ে গিয়েছিল। এর অধিকাংশই বাংলাদেশের মূল স্রোতের সঙ্গে মিশে যায়। অল্প সংখ্যক সেই থেকে এখনো রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে বিদ্যমান। তখন ছিল দ্বি-মেরু (রাশিয়া-আমেরিকা) কেন্দ্রিক বিশ্বব্যবস্থা। আফগান যুদ্ধের পরপরই সোভিয়েত ইউনিয়ন হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ে। তখন আমেরিকা-ই পৃথিবীর সর্বেসর্বা ও অপ্রতিদ্বন্দ্বী অধিপতি হয়ে ওঠে। এর মাঝেই ৯/১১-এর ঘটনা পৃথিবীর দৃশ্যপট আচমকা পাল্টে দেয় একেবারে গোড়া থেকে। আর তাই ২০১২ সাল থেকে শুরু করে বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার ব্যাপারে একটিু হিসাবী। তবে এবারেও সঙ্কটের বিস্তৃতি ঘটলে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার নমনীয় হয়; মানবিক অবস্থান নিতে বাধ্য হয়। অন্যদিকে, এবারে অর্থাৎ ২০১৭ সালে বর্মির জান্তা সীমাহীন অমানবিক আচরণ করলেও আন্তর্জাতিক মহল যে শম্ভুক আচরণের প্রকাশ ঘটায়/ ঘটাচ্ছে, তাতে বেশি কিছু আশা করা উচিত হবে না। তাই একমাত্র ভরসা এই বাংলাদেশ: সরকার ও সুশীল সমাজ।

এবারের রোহিঙ্গা সমস্যায় দেশের অভ্যন্তরে নানা প্রান্ত থেকে ব্যাপক আকারে সাহায্য উত্তোলিত হচ্ছে। এটা অবশ্যই ইতিবাচক দিক। কিন্তু পাশের বাড়ির নিপীড়িত পুত্রবধু/ ভ্রাতৃবধুকে নিজ ঘরে আশ্রয় দিয়ে, খাইয়ে-পরিয়ে, রেখে দেওয়াই সমাধান নয়। ব্যক্তিক উদ্যোগে-উপায়ে, সামাজিক কৌশলে, গ্রাম্য সালিশির মাধ্যমে তাকে স্বগৃহে প্রতিষ্ঠা করাই যুক্তিযুক্ত। সে হিসাবে রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে আমরা তাহলে কী করতে পারি?

ইতোমধ্যে বাংলাদেশি টক-শো, দেশি-বিদেশি পত্র-পত্রিকার সংবাদ-বিশ্লেষণ ও সম্পাদকীয়তে এটা প্রতীয়মান যে, রোহিঙ্গারা ভূরাজনৈতিক সুবিধা আদায় ও শক্তি-সঞ্চয়ের জটিল ও করুণ খেলার নিরুপায় শিকার। এতে অবশ্য রোহিঙ্গা ও তাদের হঠকারী পরামর্শক গোষ্ঠীর অবদানও কম নয়। কিন্তু তাই বলে হাত গুটিয়ে বসে থাকলে তো চলবে না। বরং সমস্যা যত জটিল ও জঙ্গম হবে, ঠিক ততটা প্রস্তুতি নিয়ে তা সমাধানে নামতে হবে। তখনই শুধু পৌরুষ ও বিশ্বাসের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার সুযোগ তৈরি হবে।

দেশের ভেতরে রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক ব্যক্তিদের কাছ থেকে এ বিষয়ে জাতীয় ঐক্যমত্যের আহ্বান জানানো হচ্ছে। এনিয়ে বর্তমান সরকারও নানা চাপের মুখে। কিন্তু সরকার যেহেতু দলীয়, তাই সরকারকে দলীয় স্বার্থের দিকে তাকাতে হয়-ই। অর্থাৎ সরকারি তরফ থেকে জাতীয় ঐক্যের সম্ভাবনা কম। কারণ, সরল মুখে এ নিয়ে জাতীয় ঐক্যের কথা বলে মুখে ফেনা তুললেও এখানে সুযোগের সদ্ব্যবহার করে ভিন্ন পথে যে কেউ পা রাখবে না, তার নিশ্চয়তা নেই। কারণ, এ খেলাটি একান্ত ঘরের খেলা নয়, তাতে দেশ-বিদেশের নানা কুশীলব নানাভাবে অভিনয় করার চেষ্টা করছে। তাহলে রোহিঙ্গা-সঙ্কট সমাধানের উপায় কী?

তা আছে, আলবত আছে। এর জন্য প্রথমেই মোল্লা-মৌলবিদেরকে আত্মসর্বস্বতা ও দলীয় প্রেম ত্যাগ করতে হবে। মনে রাখতে হবে, রোহিঙ্গা-সঙ্কটটি যতটা জটিল ও করুণ, বিশ্বসম্প্রদায় ততটাই নিষ্ক্রিয়। তুরস্কের কথা মাথায় রেখেই বলা যায়, বিপুল এ-বিশ্বে বাংলাদেশই এ-নিয়ে বেশি উদ্বিগ্ন, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও সক্রিয়। পার্শ্ববর্তী ভারত, চায়না, থাইল্যন্ড এ নিয়ে ভীষণ কৌশলী। আবার বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বাম মহলও বেশ সতর্কতার সঙ্গে মন্তব্য ও বক্তব্য পেশ করছে। রোহিঙ্গা-সঙ্কট নিয়ে সব চেয়ে বেশি ব্যথিত-মথিত সাধারণ ইসলাম-ধর্মীয় সমাজ, বিশেষত মাদরাসা-সংশ্লিষ্ট আলেম-ওলামা, যাদের এ-দেশে তাচ্ছিল্য ভরে মোল্লা-মৌলবি বলা হয়। আমিও শিরোনামে তাই ব্যবহার করেছি। কারণ, আলেম-ওলামা বা ওলামা-মাশায়েখ হিসাবে চিহ্নিত হওয়ার জন্য যে উদারতা, মহত্ত্ব, আত্মত্যাগ তাদের থেকে প্রকাশিত হওয়ার কথা, অন্তত এ-বিষয়ে তা হয় নি। তারা যদি নিজ কর্মপরিধি ও আচরণ দিয়ে সে পরিচয় তুলে ধরতে পারেন, আমি এই শব্দবন্ধের জন্য ক্ষমা চেয়ে নেব। এ ক্ষমাপ্রার্থনা তখন আমার গর্বের বিষয় হবে।

সে যাক গে। আমাদের মোল্লা-মৌলবিরা এ নিয়ে বাহ্যত অত্যন্ত ক্ষুব্ধ। মসজিদে-সমাবেশে, পাবলিক প্লেসে, অন্তর্জালে এরা নানা বাক্যবাণে নিজের মন-মানসিকতার প্রকাশ ঘটাচ্ছেন। আবেগের চাপে, না-কি আসলেই, কেউ কেউ নির্বোধ উক্তি ও ফর্মুলা পেশ করতেও দ্বিধা করছেন না। যেমন- সুচি সম্পর্কে অশালীন-অমার্জিত উক্তি, অথচ মিয়ানমারের জেনারেল সম্পর্কে নীরবতা; সরকারকে মিয়ানমার আক্রমণ করার পরামর্শ; মিয়ানমারের বিরুদ্ধে জিহাদ করার ফতোয়া; রোহিঙ্গাদেরকে দেশের অভ্যন্তরে সব সময়ের জন্য রেখে দেওয়ার পরামর্শ ইত্যাদি! কোনো কোনো অপরিণামদর্শী গবেট মিয়ানমার জান্তার আচরণের জন্য দেশি বৌদ্ধদের প্রতি কুৎসিত অঙ্গুলি নির্দেশ করছে!! অথচ এরা জানে না যে, রোহিঙ্গা ছাড়াও মিয়ানমারে ২০/২৫ লাখ মুসলিম জনতার বসবাস। আর মুসলিম জনতা সেখানে না থাকলেও ‘উদোর পিণ্ডি বুদোর ঘাড়ে’ চাপিয়ে, আক্রমণ বা জিহাদি ফায়সালা রোহিঙ্গা-সঙ্কটের কোনো সমাধান নয়। কারণ, বাংলাদেশ স্বল্প আয়ের দেশ। যে-কোনো রকম যুদ্ধের অর্থ-যোগান-দান তার পক্ষে একান্ত অসম্ভব। আবার রোহিঙ্গা-সঙ্কটটি মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ বিষয়। অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে যুদ্ধে জড়ানো বিবেক ও আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। উপরন্তু তা আন্তর্জাতিক ভূরাজনীতির অংশ, সেখানে হঠকারী কোনো সিদ্ধান্ত নিলে আম ও চালা দুই-ই হারানোর আশঙ্কা আছে।

আর হ্যাঁ, কমবেশি সকল ইসলামি দলই সাহায্য নিয়ে রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। এ জন্য তাদের ধন্যবাদ। কিন্তু লাগোয়া দেশের মুসলিম জনতার এ মহা দুর্দিনে তথাকথিত মোল্লা-মৌলবিরা সম্মিলিতভাবে, অভিন্ন করণীয় নির্ধারণে এখনো এক মঞ্চে বসতে পারেন নি। বিচ্ছিন্নভাবে কাজ করে, মিটিং-মিছিল-লংমার্চ (নাকি রংমার্চ!) করে, মিয়ানমারের পতাকা ও সুচির ছবি পুড়িয়ে, উচ্চৈঃস্বরে গলাবাজি করে, নিজেদের ও জনতাকে প্রবোধ দেওয়ার চেষ্টা করছেন বটে। কিন্তু এগুলো রোহিঙ্গা-সঙ্কট নিরসনে কোনো গতি আনতে পারবে না। এ সঙ্কট উত্তরণের জন্য সবাইকে আত্মপ্রকাশের লোভ ও দলীয় স্বার্থ ত্যাগ করে, অর্থসহ নানা রকম নিবেদনের মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। এক সাথে বসে বাস্তবসম্মত করণীয় নির্ধারণ করতে হবে। এবং একদিন-দুদিনের জন্য নয়, দীর্ঘ মেয়াদি একটি পরিকল্পনা হাতে নিয়ে মাঠে নামতে হবে। তখন হয়ত-বা কিছুটা আলোর মুখ দেখা যেতে পারে।

সকল মোল্লা-মৌলবি এক সঙ্গে বসে যে-কোনো একটি ফর্মুলার বিষয়ে মতৈক্যে পৌঁছাতে পারেন। হয়ত তাদের নিজেদের মাথায়ও সঙ্কট-সমাধানের নানা প্রস্তাবনা ও ফর্মুলা কাজ করছে। তবে এবিষয়ে আমি মৌলিক একটি প্রস্তাব বা ফর্মুলা পেশ করছি। যারা রোহিঙ্গা-চেতনায় কাতর, তারা নিজের মাথায় ঘুরপাক-খাওয়া ফর্মুলাসহ এটিও বিবেচনায় নিতে পারেন। এছাড়া শেষের দিকে একাধিক গৌণ বা সহায়ক প্রস্তাবও থাকছে। মৌলিকটা হল: ইতোমধ্যে মিডিয়ায় প্রকাশ যে, বি. চৌধুরী ও ড. কামাল হোসেন সমন্বিতভাবে রোহিঙ্গা-সঙ্কট নিয়ে জাতীয় সমাবেশের মাধ্যমে ঐক্যমত্যের আহ্বান জানিয়েছেন। এ দু-জনই, সদয় ও সজ্জন। এর মাঝে বি. চৌধুরী জাতীয় হলেও ড. কামাল কিন্তু স্বনামধন্য আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব। পৃথিবীর নানা অংশে জাতিগত ও রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব-সংঘাত নিরসনে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক নানা সংস্থা তার সাহায্য নিয়ে থাকে। তিনি এ দেশেরই নাগরিক এবং সংবিধান-প্রণেতা। এহেন ব্যক্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ আহ্বানের পর রোহিঙ্গা চেতনাধারী শীর্ষ পর্যায়ের মোল্লা-মৌলবির কোনো ফলোআপ বা রেসপন্স না দেখে বুঝতে পারছি, ড. কামাল হয়ত গোবরে পদ্মফুল। না-হয় এদেশের মোল্লা-মৌলবি একান্ত স্বার্থপর, দলান্ধ। শেষ কথায় মোনাফেক, মানে মুখে এক তো বুকে আরেক। অর্থাৎ এরা বাহ্যত রোহিঙ্গাদের নিয়ে চিৎকার-ফুৎকার করলেও বাস্তবে এর সমাধানে এরা অনাগ্রহী। কারণ, বড় রকমের বিপর্যয়ের মুহূর্তে আত্মমগ্নতা, আত্মম্ভরিতা ও অযৌক্তিক বৃত্তবন্দিতা বে-মানান। তখন সমাধানের উপযুক্ত-যোগ্য ব্যক্তিদের সাথে নিয়ে, তাদের যথাযথ মূল্যায়ন করে ও তাদের সাহায্য নিয়ে উদ্ধার পাওয়াই মূল কথা এবং তা অবশ্যই ইখলাস ও নিষ্ঠার পরিচয়।

এখানে বলে নেওয়া ভাল যে, শুধু ড. কামাল কেন, এদেশে দক্ষ, যোগ্য ও সফল কূটনৈতিকের সংখ্যাও তো কম নয়। আন্তর্জাতিক মহলে যাদের বিশ্বাসযোগ্যতা আমাদের দুর্দিনের সহায় হতে পারে। ৭১-ও প্রবাসী বাঙালিরা দেশের পক্ষে অসামান্য অবদান রেখেছেন। আজকের রোহিঙ্গা-সঙ্কট, যা বিস্ফোরোন্মুখ ভূরাজনৈতিক বোমা, শত্রুরা তা অমাদের বিরুদ্ধে যে-কোনো সময় ব্যবহার করতে পারে। তাই এই সঙ্কটে দেশি-বিদেশি নাটের গুরুদের দুষ্ট হাত লাগার আগেই যথাযোগ্য ব্যক্তিদের মাধ্যমে তা সমাধান করে নেওয়াই যুক্তিযুক্ত। যে সমস্যার সমাধান যে পথ দিয়ে করতে হয়, সে পথে না গিয়ে হা-হুতাশ করে, মুর্খ ভক্তবৃন্দকে তাক লাগিয়ে দেওয়া যায়, বাহবা নেওয়া যায়। কিন্তু মানবিক বিপর্যয়ের মুহূর্তে এ হেন প্রবণতা কোন অভিধায় চিহ্নিত হবে, তা তাদের ভেবে দেখার অনুরোধ জানাই।

দেশের বয়োবৃদ্ধ ও তরুণ সচেতন মোল্লা-মৌলবি যথাদ্রুত একত্রিত হয়ে এ ব্যাপারে একটি কমিটি গঠন করতে পারেন, চূড়ান্ত একটি সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, ততই মঙ্গল। তারা একত্রিত হয়ে ড. কামাল বা বি. চৌধুরীকে আহ্বায়ক করে একটি জাতীয় কমিটির জন্য অনুরোধ করতে পারেন। আরো ভালো হবে, বাম ঘরানার অধ্যাপক সিরাজুল চৌধুরীকে সঙ্গে নিতে পারলে। মনে রাখতে হবে, ধর্মীয় পথ দিয়ে এর সমাধানের কোনো সুযোগ নেই। সুতরাং ধর্মনিরপেক্ষ ব্যক্তিবর্গের মাধ্যমেও যদি তুলনামূলক মুক্তির একটি পথ উন্মুক্ত হয়, তাও মন্দ নয়। আবার জাতীয় পর্যায়ের সে কমিটিতে মোল্লা-মৌলবিকে থাকতে হবে, এমন কোনো কথা নেই। সর্বোচ্চ যা হতে পারে, তা হলঃ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আবু আহমেদ বা বাউবির সাবেক ভিসি ড. শমসের আলীর নাম প্রস্তাব করা যেতে পারে, যদি তাদের জামায়াতি কোনো কানেকশন না থাকে। তবে অবসরপ্রাপ্ত নানা ঘরানার কূটনৈতিকদের অবশ্যই সাথে নিতে হবে। কাদের কাদের নেওয়া যাবে, এ-বিষয়ে উপর্যুক্ত দুই/তিন বিশিষ্ট ব্যক্তিই নির্ধারণ করবেন। এখানে মোল্লা-মৌলবির কাজ হবে তাদের কাছে অনুরোধ করে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের কমিটি গঠন করা এবং এগুলোর অর্থ-সংস্থানের ব্যবস্থা করা। যেহেতু কাজটি আন্তর্জাতিক বা উপ-আন্তর্জাতিক, তাই দেশ-বিদেশে নানা প্রতিনিধি পাঠাতে খরচের দরকার। সেই খরচটির যোগান দিক বাংলার মোল্লা-মৌলবির প্রতিনিধিবর্গ ।

দেশীয় গ্রহণযোগ্যতায় অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর বিকল্প নেই। বি. চৌধুরীকে নিয়ে বিএনপি বা আওয়ামী লীগের আপত্তি থাকতে পারে, কিন্তু রোহিঙ্গা-সঙ্কটকে সামনে রেখে তা নিরসন করা যাবে, আশা করা যায়। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ড. কামালের বিকল্প নেই। তাই যত দ্রুত সম্ভব তাদের দ্বারস্থ হতে হবে। প্রস্তাবিত সেই কমিটির কাজ হবে প্রথমত রোহিঙ্গাদের নিজ দেশের মাটিতে নিরাপদভাবে ফিরিয়ে দেওয়া। তা ছাড়া যতদিন তাদের ফিরে যাওয়ার নিশ্চয়তা তৈরি না হবে, ততদিন আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর সহায়তায় বাংলাদেশের মাটিতে মানবিক সুযোগ-সুবিধাসহ জীবনধারনের নিশ্চয়তা তৈরি। ড. কামাল চাইলে এবং দেশের ব্যক্তিদের সহায়তা থাকলে তা ১০০% মাত্রায় সফল না হলেও বিফল হওয়ার শঙ্কা নেই। আবার ড. কামালের পরামর্শমতো বাইরের সদস্যদেরও যুক্ত করা যেতে পারে। মোট কথা হল, যে কোনো মূল্যে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে স্বাভাবিক জীবনযাপনের নিশ্চয়তা বিধান করা।

আমাদের দেশের বিভিন্ন মাজারে, ওরসে, ওয়াজ মাহফিলে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে যেভাবে টাকা সংগ্রহ করা যায়, তা অভূতপূর্ব। এ কৌশলটা রোহিঙ্গা মানুষের মুক্তির কাজে ব্যবহার করলে মন্দ হয় না। অর্থ -সংস্থানের নেতৃত্বে মোল্ল-মৌলবিরাই থাকুন। তারা নিজেরা পরস্পরে পরামর্শ করে অর্থ-সংস্থানের আরো কী কী পথ হতে পারে, নির্ধারণ করতে পারেন। কিন্তু অর্থ উত্তোলন ও তা ব্যয়ের জন্য একান্ত স্বচ্ছ উপায় অবলম্বন করতে হবে। সে উপায়টি নিজেরা আলোচনা করে, প্রস্তাবিত কমিটির অনুমোদন নিয়ে প্রয়োগ করতে হবে। যেহেতু, কাজটি নিতান্ত মানবিক, তাই এখানে মানুষের আস্থা ধরে রাখার জন্য সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করাই হবে বিবেক ও ইমানের দাবি।

দেখেছি, জুনায়েদ বাবুনগরী শরণার্থী রোহিঙ্গা শিশু কোলে নিয়ে কাঁদছেন! দেশের সকল ইসলামি দল ও উপদল নিজ কর্মী বাহিনী নিয়ে রোহিঙ্গা-পুনর্বাসনের ছবি তুলে ইন্তর্জাল ভাসিয়ে দিচ্ছেন। সরবে-নীরবে অনেকেই জনতার কাছ থেকে চাঁদা উত্তোলন করছেন। তাদের সবার প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, এটা রোহিঙ্গা-সঙ্কট সমাধানের কোনো পথ নয়। আমাদের কান্নায়, সভা-সমাবেশে, শ্লোগানে, মিছিলে ও লংমার্চে মিয়ানমারের নীতি পাল্টানোয় কোনো ভূমিকাই পালন করবে না। তাই হে মোল্লা-মৌলবির দল, যদি সত্যি সত্যি আপনারা রোহিঙ্গাদের মানুষ মনে করেন, তাদেরকে ‘উম্মতে মুহাম্মদি’র অন্তর্ভুক্ত মনে করেন, তাহলে ব্যক্তিগত ও দলীয় স্বার্থ ত্যাগ করুন। যাদের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের মুক্তি সম্ভব, তাদের কাছে করজোড়ে আবেদন করুন। রোহিঙ্গাদের স্বাভাবিক জীবনের জন্য আকুতি জানান। এতে আপনারা কেউ ছোট হবেন না। বরং এর মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা আপনাদের মর্যাদা বৃদ্ধি করবেন।

এবার আসা যেতে পারে গৌণ ফর্মুলার ব্যাপারে। তা অবশ্য মূল ফর্মুলার সহায়ক হিসাবেই বিবেচিত হবে এবং তা মূল কমিটির পরামর্শ ও অনুমোদনক্রমেই পরিচালিত ও সম্পাদিত হতে পারে।

১- এদেশের ধর্মীয় প্রতিনিধিগণ আন্তর্জাতিক আন্তঃধর্মীয় সংলাপের আয়োজন করতে পারেন। সেখানে অবশ্যই দালাইলামাসহ বৌদ্ধ ভিক্ষুদেরও আমন্ত্রণ জানানো হবে। এতে রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিষয়ে আলোচনা হবে।
২-আন্তর্জাতিক ছাত্র-সম্মেলন হতে পারে, যেখানে বিশ্বের সকল ইউনিভার্সিটির ছাত্র-নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হবে। মিয়ানমারের ছাত্র প্রতিনিধির উপস্থিতিও নিশ্চিত করতে হবে। সেই সম্মেলনে রোহিঙ্গা মুসলিমদের শিক্ষা-বিষয়ক একটি সেশন হতে পারে।
৩- দেশের সকল আলেম-ওলামা মিলে জাতিসঙ্ঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর অফিসে রোহিঙ্গাদের বিষয়ে স্মারকলপি দেওয়াসহ রোহিঙ্গাবিষয়ক নানা সেমিনারের আয়োজন করা যেতে পারে। সেখানে তাদের আহবান করা হবে। প্রতিটি সেমিনারে মিয়ারমারের প্রতিনিধিকে রাখার চেষ্টা করতে হবে। অর্থাৎ শান্তিপূর্ণ উপায়ে তাদের মনে আস্থা তৈরি করতে হবে।
৪-বিভিন্ন তুখোড় ব্যক্তিদের সমন্বয়ে ঘটিত একটি প্রতিনিধি দল দেশের বাইরে জনমত গঠনের জন্য পাঠানো যেতে পারে। যারা মুসলিমদেশসহ নানা দেশের সচেতন কবি-সাহিত্যিক-বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের পক্ষে জনমত তৈরি করবেন। তারা নিজ নিজ দেশে ও সমাজে রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে তৎপর হবেন।

মিয়ানমারের প্রতিবেশী ও রোহিঙ্গা-সঙ্কটে পর্যুদস্ত হওয়ার দরুণ বিশ্বসম্প্রদায় বাংলাদেশের কথাকে নাকচ করতে পারবে না। উপরন্তু মিয়ানমারের সরকার কর্তৃক গঠিত আরাকান এ্যাডভাইজারি কমিশন, যার প্রধান হলেন জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব শান্তিতে নোবেল বিজয়ী কফি আনান, যে সুপারিশ/ প্রস্তাব করেছে, তার সবটাই মোটামুটি বাংলাদেশেল অনুকূলে, অর্থাৎ সমাধানের পথ তৈরি হয়েই আছে। এখন কাজ হলো সে পথ ব্যবহার করে গন্তব্যে পৌঁছানো। আবার কফি আনানের রিপোর্টে প্রস্তাবিত কোনো বিষয় অযৌক্তিক হলে, তা চিহ্নিত করে ভিন্ন প্রস্তাবের ব্যাপারে সবাইকে সচেতন করা একমাত্র ড. কামালের পক্ষেই সম্ভব। তাই বাংলাদেশের উচিত হবে, শুধু এ-বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে যথাযথভাবে সম্পৃক্ত করা এবং আনান কমিশনের রিপোর্ট বাস্তবায়নে মিয়ারমারকে উদ্বুদ্ধ/ বাধ্য করা। কার্যত রোহিঙ্গাদের ভবিষ্যতকে কন্টকমুক্ত করতে গেলে এর কোনো বিকল্প নেই। এর বাইরে উত্তেজনামূলক মিটিং-মিছিল, শ্লোগানধর্মী কর্মসুচি আত্মতৃপ্তি দেবে ঠিকই, বাস্তবে কোনো ফল দেবে না। তাই ভেবে দেখুন, চিন্তা করুন, কাজ করুন।

আল্লাহ তায়ালা আমাদের সহায় হোন। আমিন।

সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১:০৭
৯টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×