somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দারুল উলুম ভাদুঘর: তিন দশকের সফর

১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ সকাল ৯:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভাদুঘরে আজ থেকে তিন দশক পূর্বে দারুল উলুম নাম নিয়ে একটি প্রতিষ্ঠানের সূচনা হয়েছিল, ঠিক দেওবন্দের দারুল উলুমকে অনুসরণ করে। যার তত্ত্বাবধান ও ছায়াতলে এর সূচনা হয়েছিল, তিনিই নিজেই তখন ঐতিহ্যবাহী জামিয়া ইউনুসিয়ার মহাপরিচালক হিসাবে কর্মরত এবং যার চেষ্টা ও নিষ্ঠায় তা বাস্তবায়িত হয়, তিনিও তখন সেই জামিয়া ইউনুসিয়ারই প্রথম সারির শিক্ষক। তারা উভয়েই নিজের কর্মস্থল ও কর্মের ব্যাপারে ছিলেন নিষ্ঠাবান ও নিবেদিতপ্রাণ। জামিয়া ইউনুসিয়া মাদরাসা সূচনা থেকেই দেওবন্দি ধারার অন্যতম কেন্দ্র। তাহলে কেন এই শহরের নিভৃত পল্লিতে দারুল উলুম নাম নিয়ে আরো একটি প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল? জামিয়ার ইউনুসিয়ার সেই সফল মহাপরিচালক, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মুসলিম জনতার ঈমান ও আকিদার পাহারাদার, সেই দরদি বয়োবৃদ্ধ মনীষী আজ নেই। তিনি বেঁচে থাকলে তার জবানিতে সেই কারণটুকু জানা যেত। তবে যার নিবেদিত চেষ্টা ও আন্তরিকতায় প্রতিষ্ঠানটি গড়ে ওঠে, তিনি আজও জীবিত। তিনি নিজে সেই কারণ ব্যাখ্যা করলে খুব ভাল হত। কিন্তু তিনি তা করবেন কি?
তিন দশক পূর্তির এই শুভলগ্নে এ প্রশ্নের উত্তর জানতে পারলে মন্দ হত না। যদিও তিনটি দশক একটি প্রতিষ্ঠানের জন্য শৈশব পেরিয়ে কৈশোরে পা রাখার মতো। কিন্তু দিনের শুরুটা শুভ হলে যেমন পরবর্তী কাজ-কর্মের গতিপথ অনুমান করা যায়, এখানেও সে রকম ভাবনা মাথায় ঘুরপাক খায়। তাই দারুল উলুম দেওবেন্দর সাথে মিলিয়ে নামকরণের যে মহৎ উদ্দেশ্য ছিল, বাস্তবে তা অর্জনের লক্ষণগুলো কতটা দৃশ্যমান, সে অনুসন্ধানের কৌতূহল নিবারণ করা বেশ দুরূহ। আবার পটভূমির বিবেচনায় দারুল উলুম দেওবন্দ ছিল পরাধীন ভারতে ইসলাম ও মুসলিম সত্ত্বার বিপর্যয় রোধকল্পে আকাশচুম্বী কুতুব মিনার। তৎকালীন উলামায়ে কেরামের সিদ্ধান্ত ছিল, পরাধীন ভারতে যেহেতু ইসলাম ও মুসলিম সত্ত্বার অস্তিত্ব নিরাপদ নয়, তাই যে করেই হোক ইসলামি শিক্ষার পথ সচল রাখতে হবে এবং একই সাথে ব্রিটিশ বেণিয়াদের যথাদ্রুত বিদায় করতে হবে। অর্থাৎ দারুল উলুম দেওবন্দের একটি লক্ষ্য ছিল ব্রিটিশ বিতাড়ন। নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে দেওবন্দ এখানে সফল। কিন্তু দারুল উলুম ভাদুঘর যখন প্রতিষ্ঠিত হয়, তখন কিন্তু বাংলাদেশ সম্পূর্ণ স্বাধীন এবং মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ। প্রশ্ন হল, স্বাধীন দেশের দারুল উলুম কোন লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে চলেছে? তার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জনের পথটা তাহলে কতটা চোখে পড়ার মতো?
এখানে স্মরণযোগ্য যে, দারুল উলুম দেওবন্দের প্রতিষ্ঠার পরও এর প্রাপ্তি নিয়ে কারো কারো মনে সংশয়ের জন্ম দেয়। আলিগড়ের মুসলিম কলেজে পড়ার দরুণ শিক্ষার্থীর মাঝে যে পাশ্চাত্যের ভাবধারা বাসা বাঁধে, এর বিপরীতে দেওবন্দ পড়ার দরুণ শুধু নিরেট ধর্মতাত্ত্বিক, শুধু মোল্লই তৈরি হচ্ছে বলে খোদ থানবি রহ.-এর মনে ভিন্ন একটি প্রতিষ্ঠানের আকাক্সক্ষা জাগতে থাকে। সেই চিন্তার বাস্তবায়ন ঘটে মুহাম্মদ আলী মুনগিরি রহ.-এর উদ্যোগে দারুল উলুম নদওয়াতুল উলামা লক্ষ্ণৌর প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। আবার মাল্টা জেল থেকে ফিরে শাইখুল হিন্দ মাহমুদুল হাসান রহ. মুসলিম সমাজের একতা দৃঢ়করণের লক্ষ্যে আলিগড়ে পা রাখেন। শুধু তাই নয়, দেশ ও সমাজের নেতৃত্ব উপযোগী মানুষ তৈরি করার মানসে (মাওলানা) মুহাম্মদ আলি যখন জামিয়া মিল্লিয়া প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন, এর ভিত্তি প্রস্তর হয় শাইখুল হিন্দের হাতেই। কেন তাহলে দারুল উলম দেওবন্দ প্রতিষ্ঠার পর নদওয়ার প্রতিষ্ঠা? কেনই-বা দারুল উলুম দেওবন্দের প্রথম ছাত্রকর্তৃক জামিয়া মিল্লিয়ার মতো প্রতিষ্ঠানের উদ্বোধন? ইতিহাসের আরো একটি অংশকে স্মরণে আনা যাক। ৪৭ পরবর্তী সময়ে সদ্য জন্ম-নেওয়া পাকিস্তানের করাচি নগরে দারুল উলুম নামে একটি প্রতিষ্ঠানের উদ্বোধন হয়, দেওবন্দে জন্ম-নেওয়া, দেওবন্দেরই শিক্ষক মুফতি শফি রহ.-এর হাতে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানের উদ্বোধনের সময় তিনি একটি কথা বলেন, যা বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। তবে সেই সময়ে তা বেশ ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি করেছিল! তার সেই কথাটি ছিল: এখন সেই আলিগড়েরও দরকার নেই, দরকার নেই সেই দেওবন্দেরও। কারণ আলিগড় ও দেওবন্দ ছিল ব্রিটিশ-পর্বের তথা পরাধীন আমলের প্রতিষ্ঠান। পরাধীনতার পরিপ্রেক্ষিতে তার লক্ষ্য ও কর্মক্ষমতা ছিল সীমিত। এখন এই নতুন মুসলিম দেশে দরকার আল-হামারা-কর্ডোভা ও জামিয়াতুল কারভিনের মতো সমন্বয়ধর্মী প্রতিষ্ঠান, যেখানে একই ছাদের নিচে দুনিয়া ও আখিরাতের সকল বিষয় পড়ানো হবে!
দারুল উলুম দেওবন্দ একটি ভরকেন্দ্র; বলা ভাল, চেতনার বাতিঘর। ইসলামের উৎসভূমি থেকে হাজার মাইলের ব্যবধান সত্ত্বেও তার আলোকায়ন কর্ম ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মতো। শত্রু হোক বা বন্ধু, কেউ তার এ অবদানকে অস্বীকার করে না। করার সুযোগ নেই। কিন্তু শুরুর লগ্নে যে মহিমা ও সম্মান নিয়ে তার পথচলা, পরবর্তীতে দেশ-কাল ও রাজনীতির নানা আবর্তে তাকে পড়তে হয়। ব্রিটিশদের রক্ত চক্ষুকে উপেক্ষা করেই তার পথ চলা শুরু। সেই ব্রিটিশরা যখন বিদায় নেবার পথে, দেওবন্দের সন্তানরা ভারতের প্রশ্নে দ্বিধাবিভক্ত: অখ- ভারত নাকি খ-িত ভারত? মুসলিম পরিচিতি নিয়ে প্রকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর ভারতীয় সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী মুসলিম সম্প্রদায় যেন আরো সংখ্যালঘুত্বের চাপে পড়ে। এরই মাঝে এগুতে থাকে দারুল উলুম দেওবন্দ। ব্রিটিশ-বিরোধী আন্দোলন ও ভারতের জাতীয় নানা কর্মকা-ে দেওবন্দ ও এর সন্তানগণ ছিলেন ঐতিহ্যবাহী কংগ্রেসের সমর্থক। অথচ বৃহৎ ভারতে কংগ্রেসই একমাত্র দল বা রাজনৈতিক গোষ্ঠী নয়, সেখানে ভিন্ন ধারার নানা গোষ্ঠী ও মতাদর্শী বিদ্যমান। সে সব গোষ্ঠী ও মতাদর্শের সঙ্গে পাল্লা দিয়েই দেওবন্দকে পথ চলতে হচ্ছে।
এদিকে দিন যত এগুচ্ছে, বিশ্বরাজনীতির উত্থান-পতন ও নানা যোগাড়যন্ত্র সমানতালে চলছে। রাশিয়াকেন্দ্রিক সোভিয়েত ইউনিয়নের যখন গোড়া পত্থন হয়, দেওবন্দ তখন আত্মপ্রকাশের মধ্যগগণে। কিন্তু এর পতন আমেরিকার একচ্ছত্র আধিপত্যকে অবশ্যম্ভাবী করে তোলে। রাশিয়ার পতনের অন্য সকল কারণের মাঝে উল্লেখযোগ্য একটি হল, আফগানিস্তানের মুজাহিদিনের সঙ্গে দীর্ঘদিনব্যাপী রক্তক্ষয়ী লড়াই, যা মুসলিম শক্তির অমিত সম্ভাবনার ইঙ্গিতবাহী। সেই শক্তির ঢেউ সকল আধিপত্যবাদী, সা¤্রাজ্যবাদী, সর্বোপরি সকল কায়েমি স্বার্থবাদীদের উপকূলে আছড়ে পড়ে। নড়েচড়ে বসে সমগ্র পৃথিবী। আর তখন থেকেই মুসলিম শক্তির ঐক্যপ্রক্রিয়ার বিভিন্ন কেন্দ্রগুলো সবার নজরে আসে। ইতিহাস সাক্ষী, দারুল দেওবন্দ তেমনই একটি কেন্দ্র, যা শুধু ভারত উপমহাদেশ নয়, সমগ্র পৃধিবীতেই তার প্রভাব-বিস্তারী আবেদন তৈরি করতে সক্ষম। আর এ জন্যই দেওবন্দকে নানা প্রতিকূলতার ভিতর দিয়ে যেতে হচ্ছে। দেওবন্দ যে দেশে অবস্থিত, সে দেশেই আজ মৃসলিম ও ইসলামি পরিচিতি অস্বস্তির জন্ম দেয়। দেওবন্দ যে দেশ থেকে ব্রিটিশ বেণিয়াদের তাড়ানোর জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়েছিল, সে দেশেই অগুণতি মানুষ নাগরিকত্বহীন হয়ে পড়ছে। সে দেশেই নিরাপত্তার অজুহাতে একটি রাজ্যের বিশেষ মর্যাদাকে ভূলুণ্ঠিত করা হচ্ছে। আর এ সবের লক্ষ্য হচ্ছে ইসলাম ও মুসলিম পরিচিতিকে চাপের মুখে রাখা, এর স্বাভাবিক বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করা।
বাংলাদেশ-পাকিস্তানে, এমনকি এশিয়ার বাইরেও দেওবন্দি চেতনার অনুসারী নানা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তাদের সকলের অবস্থা ভারতে অবস্থিত মূল কেন্দ্রের মতো ততটা বিপ্রতীপ নয়। তাহলে ইতিবাচক নানা অবস্থার মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাওয়া সেই সব প্রতিষ্ঠানের অবদান কী কী? বটে, পাকিস্তানের দারুল উলুম করাচি ও দারুল উলুম বিন্নুরিটাউন দেওবন্দি চেতনার ইলমি ধারাকে ভিন্ন মাত্রা দান করেছে। এখানেই প্রশ্ন আসে আজকের দারুল উলুম ভাদুঘরকে নিয়ে। সেই ভাদুঘর মাদরাসার প্রতিষ্ঠা ও তত্ত্বাবধানে যারা ছিলেন, তারা কেউ তো রাজনীতির মাঠের লোক নন, তারা ছিলেন ইলমি ও আমলি পরিবেশের মানুষ। বাংলার জমিনে সর্বসম্মতিক্রমে রইসুল মুফাচ্ছিরিন নামে খ্যাত ও পরিচিত ‘বড় হুজুর’-এর মনের দাবি পূরণে এই প্রতিষ্ঠান কতটা সক্ষম? কিংবা সে সময়ের তরুণ, বর্তমানের বৃদ্ধ হাফেজ মাওলানা ইমরান সাহেবের চাহিদা-পূরণের দ্বারপ্রান্তে কি পৌঁছুতে পেরেছে এই প্রতিষ্ঠান? বা বর্তমান বড় হুজুর মাওলানা মনিরুজ্জামান সিরাজীর অভীষ্ট কি পূরণ হতে চলেছে এই মাদরাসার মাধ্যমে?
দারুল দেওবন্দের প্রতিষ্ঠা ১৮৬৬ সালে। ভারত স্বাধীনতা অর্জন করে ১৯৪৭ সালে। ইংরেজ-বিরোধী দূর্গ দেওবন্দ মাদরাসার লড়াইয়ের সফলতা আসতে প্রায় পোণে এক শতাব্দি চলে যায়। দেওবন্দের প্রতিষ্ঠাতা কাসেম নানুতুবি রহ. বলতেন, “দেওবন্দ মাদরাসা ৫০ বছর টিকে থাকলেই যথেষ্ট। ততদিনে ব্রিটিশ বিদায় নেবে, দেশ শাসন করবে মুসলিমরা। তখন এ মাদরাসার প্রয়োজন হবে না।” না, তার দেওয়া সময়ের ভেতর ব্রিটিশরা বিতাড়িত হয় নি। ব্রিটিশ বিতাড়নের পর শাসন-ব্যবস্থা মুসলিম-সমাজের অনুকূলেও থাকে নি। তার গড়া প্রতিষ্ঠান এখনো বিদ্যমান। তবে অন্য লক্ষ্যে, অন্য উদ্দেশ্যে। সে উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই দেওবন্দের শাখা-প্রশাখা বাড়তে থাকে। কিন্তু সেই সব শাখা-প্রশাখা প্রত্যাশা পূরণে কতটা সক্ষমতার পরিচয় দিয়ে চলেছে, তা আজকের দিনে একটু হিসাব নেওয়া যেতে পারে।
এখন দেওবন্দি ধারার সর্বত্র পঠন-পাঠনের আনুষ্ঠানিকতা অনেক অনেক বেশি। কিন্তু নিরেট গ্রন্থপাঠ ও ইলমচর্চা ইউরোপের ভূখ- স্পেনেও কম হয় নি। সে-পর্বের ইসলামি ও জ্ঞানগত গবেষণা মুসলিম ও বিশ্ব সভ্যতার গর্ব বটে। কিন্তু কোথায় সেই স্পেন, কোথায় সেই আন্দালুসিয়া? তাই আজকের কোনো প্রতিষ্ঠান যদি ধর্ম ও তত্ত্ব গবেষণায় নিয়োজিত থাকে, তাকে বাধা প্রদান করার সুযোগ নেই। কিন্তু সেই চর্চার ভবিষ্যত কতটা নিরাপদ, সে ভাবনাও মাথায় রাখতে হবে। ভবিষ্যৎ-পরিকল্পনাহীন শিক্ষা-ব্যবস্থা আবেগের বাহন হতে পারলেও অবশেষে তার অস্তিÍত্ব হুমকির মুখে পড়ে যায়।
দেওবন্দি সিলসিলার মাদরাসা কমছে না, বরং বাড়ছে। কিন্তু সেই বৃদ্ধিও গুণগত প্রভাব দেশ-রাষ্ট্র ও সমাজে কতটা দৃশ্যমান? মুসলিম বিবেকের চোখের সামনে আরাকানি মুসলিমরা বাপ-দাদার ভিটে-মাটি থেকে উচ্ছেদ হল। সেই আরাকান অঞ্চলে অন্য প্রতিষ্ঠান না থাকলেও জনতার সাহায্যে পরিচালিত কওমি মাদরাসা ছিল কয়েক শো। ইলম ও জ্ঞানের চর্চা ছিল দেওবন্দি ধারার অন্য সব প্রতিষ্ঠানের মতোই। প্রশ্ন হল, ইলম ও জ্ঞান র্চচার পরেও তারা এতটা শেকড়হীন হল কীভাবে? তারা বিশ্বের দরবারে বাস্তুহীন এক জাতি! অর্ধ শতকেরও বেশি সময় ধরে তাদের নিয়ে নানা রকমের খেলা হল। তো সে সব ইসলামি জ্ঞানের অধিকারীরা বিশ্বের দরবারে ও নিজেদের মাঝে মুক্তির কোন বার্তাটি দিতে পেরেছেন?
একা দারুল উলুম ভাদুঘর মাদরাসার দায় নয় সে সব প্রশ্নের উত্তর খোঁজা। কিন্তু বিশ্বব্যাপী পরিবেশ-প্রতিবেশ বিদ্যমান, তাতে এসব প্রশ্নকে এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই কারো। কারণ, দিকে দিকে এখন মুসলিম সমাজের পতনের ধ্বনি। সেই ধ্বনির মুর্হূমুর্হু আওয়াজের মাঝখানে বর্ষপূর্তি পালনের আনুষ্ঠানিকতা তখনই সার্থক হবে, যখন পতনরোধের কোনো বার্তা-পরিকল্পনা এখান থেকে ঘোষিত হবে।
বর্ষপূতি পালনের এই রেওয়াজ অবশ্য নতুন নয়, দারুল উলুম দেওবন্দও শতবর্ষী অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল। সেই অনুষ্ঠানের রুদাদ দেখার সৌভাগ্য আমার হয় নি। হলে সেখানে কী রকম বার্তা ছিল, অনুধাবন করতে সুবিধা হত। তবে শতবর্ষসহ বর্ষপূর্তি পালনের নানা নজির এই বাংলাদেশেও আছে। এই সব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের বর্ষপূর্তি পালনের মাঝখানেই জগৎ ও দেশজুড়ে মুসলিম পরিচিতির নানা সঙ্কট তৈরি হচ্ছে। সেই সঙ্কট উত্তরণের কোনো দিশা সে-সব অনুষ্ঠানে দেওয়া হয়েছিল বলে জানা নেই।
পৃথিবীর বড় বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা সমাপনান্তে শিক্ষার্থীদের সনদ বিতরণ উপলক্ষ্যে এক রকমের অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। যাকে বাংলায় বলা হয় সমাবর্তন এবং ইংলিশে বলা হয় কনভোকেশন। পুঁজিবাদের ¯্রােত তীব্র হওয়ার পর এই সমাবর্তনের কদর আরো বেশি। কারণ, এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের উন্মুক্ত বাজারে ছেড়ে দেওয়া হয়। যাতে শিক্ষার্থী এবং পুঁজিবাদী নানা প্রতিষ্ঠান নিজেদের চাহিদা-পূরণের জায়গাটুকু বেছে নেওয়ার সুযোগ পায়। বে-সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এর মাধ্যমে নিজেদের প্রচার-প্রসারে মনোযোগী হয়। কওমি ধারার প্রতিষ্ঠানগুলোতে দেওয়া হয় পাগড়ি, যা ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে অনেক বরকতময় হিসাবে বিবেচিত। এই পাগড়ি প্রদান মানে পাগড়িপ্রাপ্ত ব্যক্তি ধর্মীয় জ্ঞানের পরিপূর্ণতায় প্রাতিষ্ঠানিকভাবে স্বাীকৃত। কিন্তু প্রশ্ন হল, প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি নিয়ে সে-সব পাগড়িপ্রাপ্ত মানুষজন মুসলিম সমাজের গুণগত ও সংখ্যাগত অগ্রগতি সাধনে কতটা সক্ষম, এই মুহূর্তে তার হিসাব নেওয়ার দরকার। মূল কথা হল, দেওবন্দ মাদরাসার প্রতিষ্ঠা হয়েছিল ইসলাম ও মুসলিম পরিচিতিকে নিষ্কণ্টক করার লক্ষ্যে। এখন দেওবন্দের অনুসারী নানা প্রতিষ্ঠান ও নানা রকমের অনুষ্ঠান হওয়া সত্ত্বেও আন্তর্জাতিক ও জাতীয় পরিসরে ইসলাম ও মুসলিম পরিচিতি কতটা কণ্টকমুক্ত হতে পারছে? বা কীভাবে পারবে? সে নির্দেশনাটুকু দিতে পারলেই এ অনুষ্ঠানের সফল হবে বলে মনে হয়।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের তাওফিক দান করুন। আমিন।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৩:০৬

অবশেষে মিল্টন সমাদ্দারকে গ্রেফতার করেছে ডিবি। এবং প্রেস ব্রিফিংয়ে ডিবি জানিয়েছে সে ছোটবেলা থেকেই বদমাইশ ছিল। নিজের বাপকে পিটিয়েছে, এবং যে ওষুধের দোকানে কাজ করতো, সেখানেই ওষুধ চুরি করে ধরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×