somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি সুইসাইড নোট

২৪ শে অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ২:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



দুপুরটা পরিত্যক্ত বাড়ির মতই নিরব। এমন দুপুরে অবসাদ তীব্র হয় মাহীনের।মনে হয় বেচে থাকার মত নিরর্থক আর দূর্বিষহ একঘেয়েমী বুঝি আর কিছু নেই।
আকাশ মেঘলা তবু ঘরের ভেতর কেমন ঘুমোট গরম পাক খেয়ে যাচ্ছে।আশেপাশে কোথাও ভাঙ্গা ভুতুড়ে গলায় ডাকছে একটা কাক। গাড়ির হর্ণ আর রিকশার টুং টাং এখন একেবারেই ক্ষীন। পুরোনো কাগজ ক্রেতা ফেরিওয়ালা সেই গতিতেই আলসে সুরে ডাকছে, কাগ............জ। কাগ......জ।ফেরিওয়ালার বিষন্ন সুরের কারনেই হয়ত কাগজ শব্দটায় শূন্য একটা পৃষ্ঠার কথা মনে হল মাহীনের। সাথে সাথেই তার ভেতরের ঘাপটি মারা শুণ্যতাটা একশো পায়ে লাফ দিয়ে বেরিয়ে এল। নাহ!!!!!! বলে উঠে দাঁড়াল মাহীন। বেচে থাকা নামক অসহনীয় কার্যের একটা তাতক্ষনিক সমাপ্তি আজই তার চাই।
সিদ্ধান্তটা নিয়ে একি সাথে অস্থির আর চনমনে বোধ করল সে। আত্মহত্যারওঁ কিছু নিয়ম আছে।সে অনুযায়ী প্রথমেই লিখে ফেলতে হবে একটা সুইসাইড নোট।কিন্তু কি লেখা যায়? “আমার মৃত্যুর জন্য আমি নিজেই দায়ী।“নাহ!এমন লাইন এখন আর ধোপে টিকবে না।,অযথাই ফেসে যাবে ড্রয়িং রুমে ভাত ঘুমে থাকা কাজের ছেলেটি, বুড়ো দাড়োয়ান, কিংবা দেশের ক্ষমতাসীণ এম পি মন্ত্রিরা।হা হা! কিংবা রেবা কে একটি চিঠি? নাহ তাতে বিবাহীতা রেবা যথেষ্ট সমালোচিত হবে।এটা কি কলাম হতে পারে? হুম পারে। নিজের প্রশ্নগুলোর উত্তর নিজেই দিল এক সময়ে্র তুখোর কলামিষ্ট মাহীন রেজা।
“সারভাইবার বা জীবনযোদ্ধা শব্দটার সাথে আমি সম্মানের খুব একটা সম্পর্ক দেখি না। আমার মতে প্রকৃতির নিয়মের পেষণে পিষ্ঠ মানুষ বেচে থাকে নানা রকম ভয় থেকে। প্রথমত,পরকাল।আস্তিকরা মৃত্যু পরবর্তি একটা অনিশ্চয়তার জগত সম্পর্কে ভয় থেকে বেচে থাকতে চায়। দ্বিতীয়ত,মৃত্যু যন্ত্রণার প্রতি ভয়াবহ ভীতি । তৃতীয়ত, বেচে থাকতে চাওয়ার সংক্রমণ । পিতা মাতা বেচে থাকে সন্তানের জন্য। আর তাঁদের সন্তানরা বেচে থাকে তাঁদের সন্তানের জন্য ।কারন এখানে বেচে থাকার সাথে সন্তান্দের লালন পালন সম্পর্কিত। হ্যা যদি এই মায়ার অপারগতাকে ভালবাসা নামে সম্মান দেয়া হয় তবে জীবনযোদ্ধার সাথে সম্মান শব্দটা কিছুটা যায়। আমি মনে করি একজন আত্মহত্যাকারী প্রকৃত সাহসী। মৃত্যু ভয় আর পরকাল ভীতিকে জয় করা সোজা কথা নয়।
একটা জায়গায় পড়েছিলাম আত্মহ্ত্যা মানে আত্মার মুক্তি। আমিও তাই মানি।এইসব এই জন্য বলা আমার এই ইচ্ছা মৃত্যুর পর আমাকে একজন হেরে যাওয়া মানুষ হিসাবে দেখা হবে তা আমি চাই না। আমার আত্মহত্যার পক্ষে অনেক যুক্তি আছে, এর মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য দুটি বিষয় হল, আমার সন্তান বা অধীন কেউ নেই যাদের বা যার লালন পালনেন্য জন্য আমি প্রশ্নবিদ্ধ হব। দুই, আমি একটা ভয়াবহ ক্যান্সারের মিডল স্টেজ এ আছি। আর একটু আয়ুর জন্য ইশ্বরের কৃপার দিকে চেয়ে থাকতে আমি নারাজ। এই আত্মহত্যাকে আমি চলে যাওয়া বলব। যা একটা মৃত্যু হিসাবেই দেখতে পারেন। শরীর নামক কন্সট্যান্ট বস্তু হতে আত্মার একটা ইচ্ছাকৃত বিচ্ছেদ ঘটানো। বলতে পারেন এ সিম্পল নক আউট ।
মাহীন রেজা
২৮ শে ফেব্রুয়ারী ২০১২।
লেখাটা শেষ করে চেয়ারে হেলান দিয়ে ক্লান্ত বোধ করল মাহীন।সব সরঞ্জাম ড্রয়ারে আগে থেকেই গুছানো।সেই কথা ভাবতেই হৃদস্পন্দন বাড়তে শুরু করল তার। মাহীন এক হাতে মুখ চেপে ধরে ড্র্য়ার খুলল। বোধের সাথে চিন্তা আর করনীয়ের যোগসাজশ হওয়ার আগেই কলিংবেল দরজায় চাপড় ওঁ কান্নাকাটির আওয়াজে সে চমকে উঠল।সবকিছু ভুলে সহজ মানবিক নিয়মে দৌড়ে দরজা খুলে দেখল পাশের ফ্লাটের ছোট ছেলেটির মাথা বেয়ে গলগল করে রক্ত পড়ছে।ছেলেটির মা হাউ মাউ করে কাঁদছে।মূহুর্তেই মাহীন বেশ বদলে গেল। ছেলেটাকে কোলে তুলে নিল।তার ভেতরের অন্য কেউ একজন যেন ছেলেটির মাকে বলল ,”কিচ্ছু হবে না ওর, সব ঠিক হয়ে যাবে”।
আগামী প্রজন্মকে নিরাপদ রাখার বিষয়টা মানুষের মজ্জাগত না সংক্রমিত তা নিয়ে মাহীন রেজার সাথে একটা তর্ক যাওয়া যেতে পারে। তবে এখন না, অন্য কোণ একদিন। এখন তাকে দেখা যাচ্ছে লিফট এ, সে শক্ত করে আহত ছেলেটাকে ধরে আছে।
আর অন্যদিকে দেখা যাচ্ছে মাহীনের ফ্লাটে এখনো হা করে ঘুমাচ্ছে আবু। শুণ্য ঘরটিতে এখনো ফুলস্পিডে ঘুরছে ফ্যান। আর সুইসাইড নোটটা? সেটা কখন যেন বাতাসে ডানা পাওয়া ঘুড়ির মত মেঝেতে নেমে এসে নতুন উড়তে শেখা পাখির মত পুরো ঘরময় একটু একটু করে উড়ে বেড়াচ্ছে।

সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ২:৫৫
১৭টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

= দাওয়াত বা কোন অনুষ্ঠানে খাবার গ্রহণের সময় যে কটি বিষয় আপনার বিবেচনায় রাখা দরকার =

লিখেছেন এমএলজি, ১৪ ই অক্টোবর, ২০২৪ ভোর ৪:২৩



১. দ্রুত খাবার গ্রহণের অভ্যাস থাকলে তা কিছুটা ধীর বা প্রলম্বিত করার চেষ্টা করুন যাতে অন্য সবার বেশ আগেই আপনার খাওয়া শেষ হয়ে না যায়।

২. কোন আইটেম খুব সুস্বাদু বা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ এবং কিছু কথা......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ১৪ ই অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ১০:৩০

আমাদের ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ এবং কিছু কথা.........

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আমাদের সফলতার চেয়ে ব্যর্থতার বিষাদময় গ্লানির সঙ্গেই বোধকরি বেশি সম্পর্ক। কদাচিৎ কোনো বড় দলকে পরাজিত করার পর আমরা পুরো বাংলাদেশ এখনো আবেগে আপ্লুত... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ্‌ সাহেবের ডায়রি ।। অন্য দেশে চলে যাচ্ছে গার্মেন্টসের অর্ডার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই অক্টোবর, ২০২৪ দুপুর ১২:২০




এবার বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের অর্ডারের একটি অংশ প্রতিবেশী ভারত, পাকিস্তানসহ অন্য দেশের বাজারে চলে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। রাজনৈতিক অস্থিরতা, সরকার পতন এবং শ্রমিক অসন্তোষের কারণে দেশের সবচেয়ে বড়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন ভারতের উদ্বেগ!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই অক্টোবর, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩


ভালোভাবেই শেষ হলো সনাতনীদের বৃহৎ উৎসব দুর্গাপূজা কিন্তু দুর্গাপূজা ভালো ভাবে শেষ হওয়ায় অনেকেই বড্ড হতাশ হয়েছে; পূজা নিয়ে তারা ট্রামকার্ড খেলতে চেয়েছিল কিন্তু ট্রামকার্ড খেলার পরও সফল হতে পারেনি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

উফ্! কি দারুণ!! WOW!!!

লিখেছেন মন থেকে বলি, ১৪ ই অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৩:০৬

চোখটা সবে যেই বুঁজেছি, ডাকল হুলো 'মিঁয়াও'।
মাথায় এলো আজিব টপিক - আরি সাবাশ! WOW!!

ল্যাংটাকালে 'আমার বই'-য়ে,
আঁকল ছবি কোন আঁকিয়ে?
তালগাছেতে উলটো ঝোলে কানাবগির ছাও।
সেটাই ছিল প্রথম অবাক, প্রথম বলা - WOW!!

আরও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×