somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

১৪৫৩- ফাতিহ সুলতানের কনস্ট্যান্টিনোপল জয় ও ইসলাম বনাম ক্রিশ্চিয়ানিটি

২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ সকাল ১১:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



পর্ব-২

"রোমান সাম্রাজ্যের সিংহাসন হলো কনস্ট্যান্টিনোপল,"

জর্জ ট্র্যাপেজুনটিওস এ কথা বলে গেছেন- পাশাপাশি এটাও বলেছেন- যিনি রোমানদের সম্রাট, তিনি গোটা পৃথিবীর সম্রাট।

আধুনিক জাতীয়তাবাদীরা কনস্টান্টিনোপল অবরোধকে গ্রীক ও তুর্কি জনগণের মধ্যে লড়াই হিসাবে ব্যাখ্যা করেন!  তবে এ জাতীয় সরীলকরণ আসলে বিভ্রান্তিকর। উভয় পক্ষই এই লেবেলগুলি অনায়াসে একে অপরকে লাগিয়ে দেয় অথচ তারা এটা বুঝেই না। অটোমান বা ওসমানীয়রা, আক্ষরিক অর্থে সুলতান ওসমানের বংশধর। ইতিহাসে হয় অটোমান নতুবা সরাসরি মুসলমান বলে উল্লেখ করা হয়েছে। মনে রাখতে হবে, "তুর্ক" শব্দটি একটি হেরে যাওয়া রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়েছিল।  ১৯২৩ সালে নতুন প্রজাতন্ত্র তৈরির জন্য ইউরোপ থেকে এ নাম ধার না করা পর্যন্ত "তুরস্ক" নামটি কেউ জানতোও না। ১৪৫৩ সালের ওসমানীয় বাহিনী ছিল বহুজাতিক, বিভিন্ন সংস্কৃতির মানুষের, যদিও তাদের জাতিগত পরিচয় নিয়ে তাদের তেমন মাথাব্যথা ছিল না। শেষপর্যন্ত একসাথেই তারা যুদ্ধ করত ও জয়লাভ করত। অটোমানদের প্রধান বাহিনী ছিল স্লাভস, এর শীর্ষস্থানীয় জেনারেল ছিল গ্রীক, এর অ্যাডমিরাল ছিল বুলগেরিয়ান, এবং সুলতান নিজে সম্ভবত ছিলেন অর্ধেক সার্বিয়ান বা মেসিডোনিয়ান (মায়ের দিক হতে)।

মধ্যযুগীয় সম্রাটের প্রতি অনুগত থাকার জটিল ধাঁধাঁ বুঝা কঠিন, যেমন- হাজার হাজার খ্রিস্টান সেনাবাহিনী এড্রিন থেকে সুলতানকে সাহায্য করতে এসেছিল। তারা কনস্টান্টিনোপলের গ্রীক-ভাষী বাসিন্দাদের জয় করতে এসেছিল (সেখানে খ্রিস্টধর্ম ব্যাপার ছিল না), যাকে আমরা এখন বাইজেন্টাইন বলে থাকি।  এ শব্দটি ইংরেজিতে প্রথম  ব্যবহৃত হয় ১৮৫৩ সালে। অবরোধের ঠিক চারশো বছর পরে। এ নগরের অধিবাসীরা রোমান সাম্রাজ্যের উত্তরাধিকারী হিসাবে বিবেচিত হত এবং সে অনুযায়ী নিজেদেরকে রোমান হিসাবে উল্লেখ করত। কিন্তু সত্যটা হলো তাদের নেতৃত্ব দেয়া সম্রাট ছিল অর্ধেক সার্বিয়ান এবং এক চতুর্থাংশ ইতালীয়। প্রতিরক্ষায় সৈন্যদের বেশিরভাগ অংশ ছিল পশ্চিম ইউরোপের লোকদের দ্বারা পরিচালিত, যাদের বাইজেন্টাইনরা "ফ্রাঙ্কস" নামে ডাকত: ভালোভাবে পর্যালোচনা করলে, তারা জাতিতে ভেনিসিয়ান, জেনোস এবং কাতালানস, কিছু জাতিগত তুর্কিও তাদের দলে ছিল , আর ছিল কিছু ক্রিটানস - এবং একজন স্কটিশ।

অবরোধের সময় অংশগ্রহণকারীদের সাধারণ পরিচয় বা আনুগত্য নির্ধারণ করা যেহেতু কঠিন , তাই লড়াইয়ের একটি মাত্রা নির্ধারণ করতে তখনকার ইতিহাসবিদরা কখনও ভুলেনি - সেটা হলো বিশ্বাসের। মুসলমানরা তাদের প্রতিপক্ষকে "অবিশ্বাসী কাফের," "হতভাগা মুশরিক," হিসাবে উল্লেখ করেছে; জবাবে মুসলমানদের ডাকা হয়েছে “প্যাগান,” “বর্বর বেদুঈন” অথবা “বিশ্বাসঘাতক তুর্কী”।

সত্য প্রতিষ্ঠার জন্য ইসলাম ও খ্রিস্টধর্মের মধ্যে দূরপাল্লার লড়াইয়ে সবসময় কনস্টান্টিনোপলই প্রথম সারিতে ছিল। এটি এমন এক জায়গা যেখানে সত্য প্রতিষ্ঠার জন্য ৮০০ বছর ধরে যুদ্ধ হয়েছে এবং এবং এখানেই ১৪৫৩ এর বসন্তে একেশ্বরবাদে বিশ্বাসী দুটি প্রধান ধর্মের মধ্যে নতুন এবং স্থায়ী দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয় ।



দ্বিতীয় অধ্যায়ঃ "জ্বলন্ত সাগর" (৬২৯-৭১৭)

"হে যীশু, বিশ্বের শাসক ও কর্তা, আমি আপনাকে এই শহর এবং এর অধীনের রাজ্য এবং রোমের সকল শক্তি উৎসর্গ করছি।"

-কনস্টান্টিনোপলে, কনস্টান্টাইন দ্য গ্রেটের স্মৃতিস্তম্ভে লেখা

এ শহরটির জয় করার ইচ্ছা মুসলিমদের ইসলামের প্রায় শুরু থেকেই। কনস্টান্টিনোপলের বিরুদ্ধে জিহাদের যুদ্ধের উৎসাহ স্বয়ং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী দিয়ে শুরু হয়েছিল।

৬২৯ সালে, "রোমানদের স্বৈরশাসক"হেরাক্লিয়াস এবং বাইজান্টিয়ামের আঠারোতম সম্রাট, পুণ্য লাভের আশায় জেরুসালেম যাচ্ছিলেন।

এটি ছিল তাঁর জীবনের স্মরণীয় মুহূর্ত। পার্সিয়ানদের ধারাবাহিকভাবে তিনি যুদ্ধে হারিয়েছিলেন এবং খ্রিস্টীয় জগতের সবচেয়ে পবিত্র নিদর্শন "ট্রু ক্রুশ"কে ফিরে পেয়েছিলেন। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল পুনরায় হলি সেপুলচারের গির্জায় ক্রুশটি ফিরিয়ে দেয়া।

ইসলামী ইতিহাস অনুসারে, শহরে পৌঁছে তিনি একটি চিঠি পেলেন। সহজভাবে এটাতে লেখা ছিল:

“আল্লাহর নামে, যিনি সবচেয়ে দয়ালু ও পরম করুণাময়:

এই চিঠিটি বাইজেন্টাইনদের শাসক, হেরাক্লিয়াসের কাছে, আল্লাহর বান্দা এবং তাঁর রাসূল মুহাম্মদ (স) এর কাছ থেকে এসেছে। হেদায়েতের অনুগামীদের প্রতি আল্লাহ শান্তি বর্ষণ করুন, আমি আপনাকে আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণের জন্য আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। ইসলাম গ্রহণ করুন এবং এর বিনিময়ে আল্লাহ আপনাকে দ্বিগুণ প্রতিদান দান করবেন। তবে আপনি যদি এই আমন্ত্রণটি প্রত্যাখ্যান করেন তবে আপনি নিজে আপনার লোকদেরকে বিভ্রান্তির পথে ঠেলে দিবেন ”

এই চিঠির লেখক কে হতে পারে তা নিয়ে হেরাক্লিয়াসের কোনও ধারণা ছিল না।  তবে তিনি অনুসন্ধান করেন এবং এর বিষয়বস্তু নিয়ে কিছুটা শ্রদ্ধার সাথে আচরণ করেন যদিও দূতকে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন।

অপরদিকে পারস্যের "রাজাধিরাজ" খসরুকে অনুরূপ একটি চিঠি পাঠানো হয়েছিল। খসরু দম্ভভরে চিঠিটি ছিঁড়ে ফেলে। এই খবরের শুনে নবী (স) এর কঠিন জবাব ছিল: "তাকে বল যে আমার ধর্ম এবং আমার রাজ্য এমন সীমাতে পৌঁছে যাবে যা খসরুদের পক্ষে কখনও অর্জন করা সম্ভব হয়নি।"

খসরুর পক্ষে তা দেখে যাওয়া সম্ভব হয়নি- পারস্য মুসলমানদের হাতে আসার এক বছর আগে আততায়ীর হাতে প্রাণ হারাতে হয়। সেই ভবিষ্যদ্বাণীর আছর শুধু পারস্য নয় খ্রিস্টান বাইজান্টিয়াম এবং এর রাজধানী কনস্ট্যান্টিনোপলের উপরও পড়েছিল। যা একসময় বাইজান্টিয়াম আর কনস্ট্যান্টিপোলের সম্রাটদের সকল অর্জন ধুলোয় মিশিয়ে দেয়।



এ চিঠি পাঠানোর আগের দশ বছরে মুহাম্মদ (স) আরব উপদ্বীপের সামন্তবাদী উপজাতিদের ইসলামের বাণী প্রচারে ব্যস্ত ছিলেন। এবং একসময় তাদেরকে একত্রিত করতে সফল হয়েছিলেন। এক আল্লাহর বাণীতে অনুপ্রাণিত করে এবং অসাম্প্রদায়িক মনোভাব সৃষ্টির মধ্য দিয়ে কলহলিপ্ত আরবের গোত্রগুলোকে একটি সংঘবদ্ধ সেনা বাহিনীতে রূপান্তরিত করেন।

ধীরে ধীরে আরব অঞ্চলের বাইরে মুসলিম সেনাবাহিনী অগ্রসর হয়। তাঁদের কাছে বিশ্বাসের ভিত্তিতে দুটি স্বতন্ত্র অঞ্চলে বিশ্ব বিভক্ত ছিল। একদিকে মুসলিম অঞ্চলগুলি দারুল ইসলাম বা "ইসলামের ঘর"; অন্যদিকে, যে রাজ্যগুলি এখনও ইসলাম গ্রহণ করেনি, তারা দার আল-হারব, "যুদ্ধের ঘর" নামে পরিচিত ছিল। ৬৩০ সালের মধ্যে মুসলিম সেনাবাহিনী বাইজেন্টাইন সীমান্তের আশেপাশে উপস্থিত হতে শুরু করে। এসব অঞ্চল তাঁরা ঝড়ের গতিতে দখল করে নেয়, বিপক্ষ দলের কাছে মনে হত অদৃশ্য কোন শক্তি তাঁদের উপর ভর করে আছে ।

তাছাড়া আরবরা ছিল আগ্রাসী, সম্পদশালী এবং কঠোর। তারা সিরিয়ায় হাস্যকর ভাড়াটে সেনাবাহিনীকে পুরোপুরি হতবাক করে দিয়েছিল। তারা ছিল কুশলী। প্রথমে আক্রমণ করত, তারপরে মরুভূমিতে পিছু হটে যেত।  এতে প্রতিপক্ষ তাদেরকে ধাওয়া করতে বিরান মরুভূমিতে চলে আসত। সুযোগ বুঝে আরবরা চারদিক থেকে ঘিরে ধরত এবং প্রতিপক্ষ বেঘোরে প্রাণ হারাত।

মুসলিম সেনাবাহিনী বড় বড় শহরগুলি ঘেরাও করতে খুব বেশি সময় লাগেনি।  তাদের দুর্দান্ত যুদ্ধকৌশলের কাছে একসময় সব বড় শহরগুলির পতন ঘটে। প্রথমে দামেস্কের পতন হয়, তারপর জেরুসালেম; ৬৪১ সালে মিশর আত্মসমর্পণ করে, ৬৫৩ সালে আর্মেনিয়া। মাত্র বিশ বছরের মধ্যে পারস্য সাম্রাজ্যের পতন ঘটে এবং ইসলামী রাষ্ট্রে পরিণত হয়। তাঁদের বিজয়ী হওয়ার বেগ ছিল চমকে দেয়ার মত। পাশাপাশি তাঁদের, স্থানীয় জনগণের সাথে মিশে যাওয়ার ক্ষমতা ছিল অসাধারণ। ঐশ্বরিক বাণী আর ইসলামী আদর্শের দ্বারা পরিচালিত, মরুভূমির লোকেরা, দেশীয় খ্রিস্টানদের সহায়তায় মিশর ও ফিলিস্তিনের ডকইয়ার্ডে "সমুদ্রপথে পবিত্র যুদ্ধ পরিচালনা করার জন্য" নৌবাহিনী তৈরি করে।  ৬৪৮ সালে তারা সাইপ্রাস জয় করে। ৬৫৪ সালে বাইজেন্টাইনদের এক নৌবহরকে পরাজিত করে ফিনিক্সের যুদ্ধে। অবশেষে ৬৯৯ সালে, মুহাম্মদ (স)মৃত্যুর চল্লিশ বছরের মধ্যে খলিফা মুয়াবিয়া খোদ কনস্টান্টিনোপল  আক্রমণের জন্য এক বিশাল উভচর বাহিনী প্রেরণ করেন। চারদিকে মুসলিম বাহিনীর বিজয়ের বাতাস বইছিল, সুতরাং, তিনি সাফল্যের প্রতি কঠিন আশাবাদী ছিলেন।

খলিফা মুয়াবিয়ার কাছে, এটি ছিল একটি উচ্চাকাঙ্ক্ষী দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার চূড়ান্ত পরিণতি। তিনি তাঁর সূক্ষ্ম ধারণা ও কল্পনা এবং নিখুঁততার সাথে যুদ্ধটি সম্পাদন করতে চেয়েছিলেন। ৬৬৯ সালে আরব সেনাবাহিনী শহরের বিপরীতে এশিয়ান তীর দখল করে।পরের বছর ৪০০ টি জাহাজের একটি বহর দারদানেলিস দিয়ে যাত্রা করে এবং মর্মর সাগরের দক্ষিণ পাশে সাইজিকাস উপদ্বীপে একটি বেস তৈরি করে।

দীর্ঘাস্থায়ী অভিযানের জন্য মুসলিম সেনাবাহিনী ছিল যথেষ্ট নিত্যপণ্য । এবং  শহরের পশ্চিমাঞ্চল পেরিয়ে মুসলমানরা প্রথমবারের মত ইউরোপের তীরে পা রাখে। সহজে অবরোধ করা যাবে এমন একটি বন্দর তাঁরা জব্দ করে এবং শহরের আশেপাশের অঞ্চলগুলিতে বড় আকারের অভিযান চালায়। অপরদিকে বাইজেন্টাইনরা, কনস্টান্টিনোপালেই, তাদের বিশাল দেয়ালের পিছনে আশ্রয় নেয়। তাদের নৌবহর গোল্ডেন হর্নে নোঙর করে রাখে, যাতে সুযোগমত মুসলিম বাহিনীর উপর পাল্টা হামলা চালানো যায়।

৬৭৪ থেকে ৬৭৮ এর মধ্যে একের পর এক পাঁচ বছর ধরে আরবরা ধীরগতিতে এই অভিযান পরিচালনা করে। প্রতিবছর বসন্ত এবং শরতের মধ্যে তারা দেয়াল ঘেরাও করে, পাশাপাশি মুসলিম নৌ-বাহিনী বাইজেন্টাইন বহরের সাথে যুদ্ধে অংশ নেয়।  চলমান লড়াইয়ে জড়িত উভয় পক্ষই একই ধরণের যুদ্ধজাহাজ ব্যবহার করে। ঘুরেফিরে দুপক্ষই একই ক্রুদেরও ব্যবহার করেছিল। যেহেতু আরবদের আগে নৌপথে যুদ্ধের অভিজ্ঞতা ছিল না।তাই মুসলমানরা লেভান্ট বিজয়ের পর সেখানকার খ্রিস্টানদের কাছ থেকে নৌপথে যুদ্ধের দক্ষতা অর্জন করেছিল। এসময়কার প্রতিটি শীতে আরবরা সিজিকাসে তাদের ঘাঁটিতে দলবদ্ধ হত, তাদের জাহাজগুলি মেরামত করত এবং পরের বছরের জন্য আরও কঠিন প্রস্তুতি গ্রহণ করত। আসলে তাঁদের বিশ্বাস ছিল বিজয় সুনিশ্চিত। 

এবং তারপরে ৬৭৮ সালে বাইজেন্টাইন নৌবাহিনীর একটি বুদ্ধিদীপ্ত চাল সব পাল্টে দেয়। যে মৌসুমে মুসলিম বাহিনী সাধারণত আক্রমণ করে তার শেষ দিকে সাইজিকাসে আরবদের প্রধান ঘাঁটিতে আক্রমণ চালানো হয়।  এ সম্পর্কে খুব ভালো বিবরণ ইতিহাসে পাওয়া যায়নি।পরবর্তী ঘটনাগুলির কোনও সমসাময়িক সংস্করণ নেই, যা আছে তার থেকে একটা ধারণা পাওয়া যায়। যা ঘটেছিল- আক্রমণকারী জাহাজগুলি প্রতিপক্ষের জাহাজের কাছাকাছি থাকায় তখনকার প্রযুক্তিতে তৈরি মিসাইল (যা আগে কোনপক্ষই দেখেনি) ছুঁড়ে আরব জাহাজগুলোর অগ্রভাগে তরল আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। মুসলিম বাহিনীর জাহাজগুলোতে বিদ্যুতের ঝলকের মতো আগুন ঝড়তে থাকে। বজ্রের মতো শব্দ হতে থাকে চারদিকে। ধোঁয়ার জন্য আরব জাহাজগুলিতে নাবিকদের দম বন্ধ হয়ে যায়। সমুদ্রের পানিতেও আগুন ধরে যাচ্ছিল। ধারণা করা হয় এতে দাহ্য আঠালো কিছু ছিল, যা কাঠের হাল এবং মাস্তুলে আটকে থাকে, এতে আগুন নেভানো মোটামুটি অসম্ভব হয়ে পড়ে।

এই আকস্মিক আক্রমণ "আরব জাহাজগুলিকে এবং তাদের নাবিকদের জীবিত পুড়িয়ে দিয়েছিল।" পুরো  নৌবহরটি ধ্বংস হয়ে যায় এবং আঘাতপ্রাপ্ত বেঁচে যাওয়া লোকেরা, “মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিল,”। পরিশেষে অবরোধ তুলে নিয়ে বাড়ি চলে যাওয়া ছাড়া আরবদের কোন উপায় থাকে না। পাশাপাশি  শীতকালীন ঝড়ে এশীয় উপকূলে থাকা ও ধ্বংসযজ্ঞের সময় বেঁচে যাওয়া যা জাহাজ অবশিষ্ট ছিল তাও ধ্বংস হয়ে যায়। এতে আমীর মুয়াবিয়ার আত্মবিশ্বাসে ফাটল ধরে। ৬৭৯ সালে তিনি নিজেদের বিপক্ষে যায় এমন শর্তে একটি ত্রিশ বছরের চুক্তি গ্রহণ করেন এবং পরের বছর তিনি মারা যান।

প্রথমবারের মতো মুসলিম সেনাবাহিনী একটি বড় ধাক্কা খায়। খ্রিস্টান ইতিহাসবিদরা এই পর্বটি সুস্পষ্ট প্রমাণ হিসাবে উপস্থাপন করে যে "রোমান সাম্রাজ্যকে ঈশ্বর বাঁচিয়ে দিতেন", তবে সত্য হলো এটি একটি নতুন প্রযুক্তি দ্বারা রক্ষা পেয়েছিল: গ্রীক রণকৌশল ও আগুনের ব্যবহার। এই অসাধারণ অস্ত্রটির কাহিনী এখনও তীব্র জল্পনা-কল্পনার বিষয় হিসাবে রয়ে গেছে। এর তৈরি প্রক্রিয়া পরবর্তীতে বাইজেন্টাইন রাষ্ট্রের গোপনীয় বিষয় হিসাবে বিবেচিত হয়। কিন্তু কথা হলো সেই ৬৭৮ সালে তরল আগুন ব্যবহার করে মিসাইল তৈরির প্রযুক্তি বাইজেন্টাইনদের হাতে আসল কিভাবে?
(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ সকাল ১১:০৯
৫টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×