somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

১৪৫৩- ফাতিহ সুলতানের কনস্ট্যান্টিনোপল জয় ও ইসলাম বনাম ক্রিশ্চিয়ানিটি

২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ সকাল ৭:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



পর্ব -৫

ইস্তাম্বুলের স্বপ্ন (১০৭১-১৪২২)

আমি দেখেছি যে আল্লাহ বাইজান্টাইন সাম্রাজ্যের সূর্যকে তুর্কীদের প্রসাদে পাঠিয়েছেন এবং পৃথিবী জুড়ে তাদের আধিপত্য চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে, এবং তাদেরকে এ যুগের সম্রাট বানিয়েছেন এবং লোকেরা সব তাদের বশ্যতা স্বীকার করছে।

-আল-খাশগারী

তুর্কিদের উত্থানের মধ্য দিয়ে অসমাপ্ত জিহাদের চেতনা আবার জেগে উঠে। তুর্কীরা ষষ্ঠ শতাব্দীর প্রথমদিকে বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যে প্রথম আসে। তাদের উদ্দেশ্য ছিল পার্সিয়ানদের বিরুদ্ধে জোট বাঁধা। বাইজান্টাইনদের কাছে তারা কৃষ্ণ সাগরের ওপারের মানুষ ছিল, যাদের আদিপুরুষ চীন হতে এসেছে।

মধ্য এশিয়ার ঘাসে ঢাকা উপকূলে ঘুরে বেড়াত তুর্কিরা। কাছাকাছি বসতি দখল করে সেখানেই বাসস্থান গড়ত। বাইজান্টাইনরা তুর্কিদের তুর্কি নামে চেনার আগ হতেই তাদের সাথে পরিচিত ছিল। প্রথম দিকের তুর্কিরা সম্ভবত জাতিতে হান ছিল, যারা চতুর্থ শতাব্দীতে খ্রিস্টান বিশ্বে ঢুকে পড়ে; বুলগারদের সাথে মিলে যেখানে আক্রমন করত, প্লেগের মত ছড়িয়ে পড়ত। বাইজেন্টাইনরা যদিও তাদের এ ধরনের আক্রমণকে মনে করত, "পাপের জন্য ঈশ্বরের শাস্তি"।

চাচাত ভাই মঙ্গোলদের মতো তুর্কি জনগণও মাটি আর আকাশের মাঝে ঘোড়ার উপরেই দিন কাটাত । তাদের জীবিকা ছিল পশুপালন আর শত্রুদের ভূমিদখল। তাদের সম্মিলিত ধনুকের ব্যবহার এবং যুদ্ধে ঘোড়ার ব্যবহার সমসাময়িক লোকদের চেয়ে সামরিক শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছিল। এ কথা আরব ইতিহাসবিদ ইবনে খালদুনের বইয়ে পাওয়া যায়। তিনি লিখেছিলেন, “অলস লোকেরা অলসতা ও আরামে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। “তারা চারপাশের দেয়ালগুলিতে এবং তাদের সুরক্ষিত দুর্গগুলির মধ্যে নিরাপত্তা খুঁজে। তুর্কী বেদুইনদের কোনও গেট এবং দেয়াল নেই। তারা সর্বদা অস্ত্র বহন করে। তারা রাস্তার চারপাশে সাবধানে চলে। তারা যখন ঘোড়ার উপর থাকে, যেখানে রাত হয় সেখানেই অল্প ঘুমিয়ে নেয় ... । তারা ঘুমের মধ্যে প্রতিটি ঝাঁকুনি ও শব্দকে সতর্কতার সাথে নেয়। ধৈর্য তাদের চরিত্রে মিশে গেছে আর প্রকৃতিই তাদের সাহস যোগায়। " এই গুণগুলিই খ্রিস্টান এবং ইসলামী উভয় দুনিয়ার মধ্যেই শীঘ্রই পার্থক্য গড়ে দিবে।

ইসলাম ও খৃষ্টধর্মের সংঘর্ষ: মুসলিম ও ক্রুসেডাররা

পশ্চিম এশিয়ার কেন্দ্রে এসে বারবার তুর্কি উপজাতিরা হানা দিতে থাকে; নবম শতাব্দীর মধ্যে তারা ইরান ও ইরাকের মুসলিম জনগোষ্ঠীর সংস্পর্শে আসে। বাগদাদের খলিফা তাদের লড়াইয়ের বৈশিষ্ট্যগুলিতে মুগ্ধ হয়ে তাদের সেনাবাহিনীতে সৈন্য হিসাবে নিয়োগ দেয়। দশম শতাব্দীর শেষের দিকে সীমান্ত অঞ্চলে তুর্কিদের মধ্যে ইসলাম দৃঢ়়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়, তবুও তারা তাদের জাতিগত পরিচয় এবং ভাষা বজায় রাখে। কিছুদিনের মধ্যেই তারা তাদের মালিকদের কাছ থেকে ক্ষমতা দখল করতে শুরু করে। একাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে তুর্কি রাজবংশ, সেলজুকরা বাগদাদে সুলতান হিসাবে আবির্ভূত হয় এবং এর শেষের দিকে ইসলামী বিশ্ব, মধ্য এশিয়া থেকে মিশর তুর্কি শাসনে চলে যায়। ইসলামী বিশ্বে তাদের উত্থানের গতি মুসলিমদের মধ্যে কোন বিরক্তি সৃষ্টি তো করেইনি উল্টো তাদের এই ক্ষমতায় আসাকে অলৌকিক হিসাবে সবাই গ্রহণ করে।

মুসলিমদের কাছে মনে হতে থাকে- "তারা ইসলামের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনতে এবং দ্বন্দ্বে লিপ্ত মুসলিমদের এক করতে এসেছে!"

এসময় মিশরে ফাতিমি (মডারেট ইসলাম) শিয়া রাজবংশের উদ্ভব হয়। অপরদিকে তুর্কি সেলজুকরা, শক্তভাবে সুন্নি আকীদা মেনে চলা বেছে নিয়েছিল, তারা "গাজী" হিসাবে নিজেদের পরিচয় দেয়া শুরু করে। পাশাপাশি কাফের ও উদারপন্থীদের (মডারেট ইসলাম) বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করে। রাজনৈতিক ইসলামের চেতনা তুর্কিরাই চালু করে। তুর্কি প্রভাবের অধীনে, আবার আরবদের অসমাপ্ত বিজয়ের উদ্যোগ নেয়া হয়। খ্রিস্টান শত্রুদের বিরুদ্ধে আবার ধর্মযুদ্ধের শুরু হয়। যদিও সালাহ উদ্দিন নিজেই কুর্দি ছিলেন, তবুও তিনি এবং তাঁর উত্তরসূরীরা সেনাবাহিনী পরিচালনা করেছিলেন যার নীতি তুর্কি ছিল। ত্রয়োদশ শতাব্দীতে আল-রাওয়ান্দি লিখেছিলেন, "সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর," ইসলাম আবার শক্তিশালী হয়ে উঠেছে … আরব, পার্সিয়ান, রোমান ও রাশিয়ানদের মাটিতে তুর্কিরা তরোয়াল হাতে নিয়েছে। আর তাদের তরোয়াল যেকোন মানুষের বুকে কাঁপন ধরায় ”

আনাতোলিয়ার দক্ষিণ সীমান্ত বরাবর খ্রিস্টান ও মুসলমানদের মধ্যে যে চাপা আগুন বহুদিন ধরে জ্বলছিল তা হঠাৎ করেই দাউদাউ করে জ্বলে উঠে। বাগদাদের সেলজুকরাও- তুর্কীদের নিয়ে চিন্তিত ছিল-কারণ, তুর্কীদের অভিধানে কোন শান্তিচুক্তি ছিল না, "হয় মার না হয় মর"। সেলজুকরা তুর্কীদের হাতে রাখতে তাদেরকে পশ্চিমা বাইজান্টিয়ামে আক্রমণ করতে উৎসাহিত করল। একাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে গাজী যোদ্ধারা খ্রিস্টান আনাতোলিয়ায় ঘন ঘন আক্রমণ চালানো শুরু করলো। প্রতিউত্তরে কনস্টান্টিনোপলও চূড়ান্ত আঘাত হানার পরিকল্পনা করে।

মার্চ ১০৭১ সালে, সম্রাট রোমানাস, চতুর্থ ডায়োজিনস এই পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে পূর্বের খ্রিস্টানদের সাহায্য চান। তেমন কোন সাড়া না পেয়ে নিজেই যুদ্ধ ঘোষণা করেন তুর্কীদের বিরুদ্ধে। পূর্ব আনাতোলিয়ার মানজিকার্ট, এখানে গায়ে পড়ে অনেকটা যুদ্ধে জড়ান ডায়োজিনস। সেলজুক সুলতান " আলপ্ আরসালান" (যার অর্থ সিংহ হৃদয়) এ যুদ্ধ করতে রাজি ছিলেন না। তাঁর বাহিনী রওয়ানা হয়েছিল মিশরে ফাতিমি শিয়া শাসনের বিরুদ্ধে। কিন্তু রাস্তায় বাইজেন্টাইন আক্রমণের কথা শুনেন। তিনি আনাতোলিয়ায় ফিরে এসে ডায়োজিনসকে সন্ধির প্রস্তাব করেন, কিন্তু উত্তরে ডায়োজিনস যুদ্ধের ঘোষণা দেয়। কিন্তু মুসলমানদের ক্লাসিক আক্রমণাত্মক কৌশলের কাছে বাইজেন্টাইন ভাড়াটে সৈন্যরা টিকতে পারেনি। রোমানাসকে বিজয়ী সুলতানের সামনের মাটিতে চুমু খেয়ে বেঁচে থাকতে হয়। এটি ছিল বিশ্ব ইতিহাসের একটি টার্নিং - এবং কনস্ট্যান্টিনোপলদের জন্য একটি বিপর্যয়। এখানে সুলতান আরসালানের একটি বিখ্যাত ঘটনা না বললেই নয়-

বাইজান্টাইন সম্রাট ডায়োজিনসকে যখন সুলতান আরসালানের সামনে বন্দী অবস্থায় আনা হয়, তিনি ডায়োজিনসকে জিজ্ঞেস করেন-

আরসালানঃ ধর যুদ্ধে তুমি জয়ী হয়েছ, তাহলে তুৃমি আমার সাথে কি করতে?

ডায়োজিনসঃ আমি তোমাকে হয়ত হত্যা করে ফেলতাম নতুবা গলায়, হাত,পায়ে শিকল পরিয়ে সারা শহর ঘুরাতাম

আরসালানঃ এতটুকুই? কিন্তু আমি তোমাকে এর থেকে বড় শাস্তি দিতে চাই।

ডায়োজিনসঃ (ভয়ার্ত কন্ঠে) কি সেই শাস্তি?

আরসালানঃ আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিলাম। তুমি মুক্ত।

মানজিকার্টের যুদ্ধ ছিল খ্রিস্টানদের জন্য "ভয়াবহ দিন", ভূমিকম্প হলে যেভাবে ধ্বসে পড়ে, খ্রিস্টানদেরও ভবিষ্যত তখনি ধ্বসে পড়েছিল। যদিও তারা তা আঁচ করতে পেরোছিল অনেকপরে।

তুর্কিরা মানজিকার্টের পর থেকে সহজেই আনাতোলিয়ায় প্রবেশ করার সুযোগ পায়। তাদের শক্তি বৃদ্ধি হওয়ার সাথে সাথে একটু একটু করে মানচিত্রও বাড়তে থাকে। ইরান এবং ইরাকের উষ্ণ মরুভূমি থেকে, উচ্চ মালভূমি থেকে উঠে আসা একটি যাযাবর গোষ্ঠী এভাবে আস্তে আস্তে একটি শক্তিশালী জাতিতে পরিণত হয়। পাশাপাশি সুফি, দরবেশ, বিচরণকারী মহাত্মা যারা জিহাদের ও একইসাথে স্রষ্টার রহস্যময় বাণী প্রচার করতেন, খ্রিস্টান সম্প্রদায় তাদের রহস্যময় ব্যক্তিত্বের প্রতি আকৃষ্ট হওয়া শুরু করল। মনজিকার্টের বিশ বছরের মধ্যে তুর্কিরা ভূমধ্যসাগরীয় উপকূলে পৌঁছে যায়। এ অঞ্চলের খ্রিস্টানরা কেউ কেউ ইসলাম গ্রহণ করছিল, কেউ কেউ কনস্ট্যান্টিনোপল থেকে চাপিয়ে দেয়া উচ্চ কর আদায়ের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেয়ে খুব খুশি হচ্ছিল। অপরদিকে ইসলাম খ্রিস্টানদেরকে “আসমানী কিতাব প্রাপ্ত জাতি” বলে ধরে নেয়। ইসলামী আইন অনুসারে তাদেরকে ধর্ম পালনের সুরক্ষা দেয়। সিসিম্যাটিক খ্রিস্টান সম্প্রদায় তো ঘোষনা দিয়েই বসে, তুর্কি শাসনের বশ্যতা স্বীকার করে : "তারা ন্যায়বিচার এবং সুশাসনের কারণে তুর্কী প্রশাসনের অধীনে থাকতে পছন্দ করে। "

মূলতঃ বাইজেন্টাইনদের নিজেদের অভ্যন্তরীণ কলহ তুর্কিদের জন্য বাইজানটিয়ামকে টুকরো টুকরো করে ফেলা সহজ করে। ১১৭৬ সালে আরেকদল বাইজেন্টাইন সেনাবাহিনী পরাজিত হয়। এ যুদ্ধে তুর্কীদের সামনে তারা টিকতেই পারেনি। পাশাপাশি বাইজেন্টাইনদের লোকবল ও সম্পদের বড় অংশই চিরতরে হারিয়ে যায়।১২২০ সালের মধ্যে পশ্চিমা ইতিহাসবিদরা "আনাতোলিয়াকে" "তার্চিয়া" হিসাবে উল্লেখ করা শুরু করেন।

ক্রুসেডেররা এসময় তুর্কি ইসলামের অগ্রযাত্রা রুখার সবচেষ্টা শুরু করে। তাদের সেলজুকদের বিরুদ্ধে ধারণা ছিল, "একটি অভিশপ্ত জাতি যারা ঈশ্বরের কাছ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন"

পোপ দ্বিতীয় আরবান ১০৯৫ সালে ঘোষণা করেন "আমাদের জমি থেকে এই জঘন্য জাতি নির্মূল করতেই হবে"

কিন্তু পূর্বের বাইজেন্টাইন আর পশ্চিমের ক্রুসেডারদের মধ্যে দ্বন্দ্ব ছিল চরম পর্যায়ে। বাইজেন্টাইনরা চাইত মুসলিমরা এ জায়গা থেকে চলে যাক। মন থেকে তাদের ক্রুসেডার ভাইদের সমর্থন করত ঠিকই,কিন্তু তাদের রাজ্যের আশেপাশে মুসলিমদের হটানোর জন্য বারবার ক্রুসেডারদের আনাগোনা তাদের জন্য যন্ত্রণার ছিল। অপরদিকে ক্রুসেডাররা চাইত তাদের বাইজেন্টাইন অর্থোডক্স ভাইয়েরা তাদের সবভাবে সাহায্য করুক। যদিও তাদের চাওয়াপাওয়ার তালিকা ছিল বিশাল। এভাবে একই ধর্মের দুই ভিন্ন মতের লোকদের মধ্যে অবিশ্বাস, পারস্পরিক যোগাযোগের অভাব চরম পর্যায়ে চলে যায়। পাশাপাশি এসময়ে তারা একে অপরকে দেখে এতটুকু বুঝতে পারে, তাদের ধর্ম এক হলেও আচার আচরণে সুবিশাল পার্থক্য রয়েছে। একসময় গ্রীকদের কাছে মনে হতে লাগলো, "মুসলিম বর্বর সৈন্যদের থেকে এদের খুব বেশি পার্থক্য নেই"। "ক্রুসেড আসলে ভন্ডামি ছাড়া কিছুই না, আসল লক্ষ্য রাজ্য দখল।"

নিকটাস ক্রোনিয়েটস অভিযোগ করেছিলেন, "ক্যাথলিকরা অভিমানী, চরিত্রের দিক থেকে নির্মম ... এবং বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের প্রতি তাদের হিংসার শেষ নেই "। অনেক ক্ষেত্রে বাইজান্টাইনরা প্রায়শই তাদের সাথে বসতি স্থাপনকারী মুসলিম প্রতিবেশীদের পছন্দ করত। যাদের সাথে ক্রুসেড শুরু হওয়ার আগে শতাব্দী ধরে পাশাপাশি থেকে পরিচিতি ও শ্রদ্ধাবোধ জন্মেছিল।

“আমাদের অবশ্যই ভাই হিসাবে সাধারণভাবে বাস করতে হবে, যদিও আমরা রীতিনীতি, আচার-আচরণ এবং ধর্মের ক্ষেত্রে আলাদা , ”কনস্টান্টিনোপলের একজন ধর্মযাজক একবার বাগদাদের একজন খলিফাকে লিখেছিলেন। " ক্রুসেডাররা বাইজেন্টাইনদেরকে "ভুলপথে চলা" খ্রিস্টান হিসেবে দেখত। অপরদিকে সেলজুক এবং তুর্কি সেনারা নিয়মিত বাইজেন্টাইনদের হয়ে লড়াই করতেন। ক্রুসেডাররা এটি জানতে পেরে হতবাক হয়েছিল যে মাতা মেরিকে উৎসর্গ করা শহরটিতে একটি মসজিদ রয়েছে। "কনস্টান্টিনোপলের লোকজন সম্পদ নিয়ে অহঙ্কারী, তারা বিশ্বাসঘাতক, ভুল ধর্মবিশ্বাসী," ক্রুসেডার ওডো দে ডিউইল ঘোষণা করেন। আরও মজার বিষয়, কনস্টান্টিনোপলের সম্পদ এবং এর মণিমুক্তো বাঁধানো ধ্বংসাবশেষ, দামী জিনিসপত্রের দেখে ক্রুসেডারদের মুখ হা হয়ে যেত।

মার্শাল অব শ্যাম্পেন লিখেছিলেন: "বিশ্বের প্রথম থেকেই," একটা শহরে এত ধন-সম্পদ আর কখনও দেখা যায়নি। বুঝা যাচ্ছে সবার লোভ এক দিকেই ছিল। পশ্চিমের সামরিক, রাজনৈতিক এবং বাণিজ্যিক সব চাপ ছিল বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের উপর। দ্বাদশ শতাব্দীর শেষ দিকে এসব কনস্ট্যান্টিনোপলে দৃশ্যমান আকার ধারণ করে। শুরুটা হয় শহরে একটি বিশাল ইতালীয় ব্যবসায়ী সম্প্রদায় প্রবেশের মাধ্যমে। ভেনিসিয়ান (ইতালির ভেনিসের অধিবাসী) এবং জেনোইসদেরকে (ইতালির জেনোয়ার অধিবাসী) বিশেষ সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয় এবং সে অনুযায়ী তারা লাভবান হয়। সবকিছুতে লাভ খোঁজা আর প্রবল বাস্তববাদী ইটালিয়ানরা শহরের মানুষের মাঝে জনপ্রিয় ছিল না। উল্টো গোল্ডেন হর্নের ওপারে একটি প্রাচীরযুক্ত শহর গড়ে তুলে তারা। "তারা সম্পদ এবং সমৃদ্ধিতে কনস্ট্যান্টিনোপলকে ছোট করার চেষ্টা করত।" এতে বাইজেন্টাইনদের মধ্য ইতালিয়ানদের মাধ্যমে আক্রান্ত হওয়ার ভয় কাজ করা শুরু করে। ১১৭১ সালে গালাতাকে গ্রীকরা আক্রমণ করে এবং ধ্বংস করে দেয়। ১১৮৩ সালে বাইজান্টাইন জেনারেল অ্যান্ড্রোনিকোস "দ্য টেরিবল" পুরো ইটালিয়ান সম্প্রদায়ের উপর গণহত্যা চালায়। ১২০৪ সালে পারস্পরিক সন্দেহ ও সহিংসতার এই ইতিহাসটি কনস্টান্টিনোপলকে এমন এক বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দেয় যে যার জন্য গ্রীকরা কখনও ক্যাথলিক পশ্চিমকে পুরোপুরি ক্ষমা করতে পারবে না। বাইজেন্টাইন অর্থোডক্স খ্রিস্টান আর ক্যাথলিক পশ্চিমের খ্রিস্টান মুখোমুখি দাঁড়ায়। সূচনা হয় এক উদ্ভট যুদ্ধের, যার নাম ইতিহাসে- চতুর্থ ক্রুসেড।
(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ সকাল ৭:৩৫
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হেঁটে আসে বৈশাখ

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০০


বৈশাখ, বৈশাখের ঝড় ধূলিবালি
উঠন জুড়ে ঝলমল করছে;
মৌ মৌ ঘ্রান নাকের চারপাশ
তবু বৈশাখ কেনো জানি অহাহাকার-
কালমেঘ দেখে চমকে উঠি!
আজ বুঝি বৈশাখ আমাকে ছুঁয়ে যাবে-
অথচ বৈশাখের নিলাখেলা বুঝা বড় দায়
আজও বৈশাখ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছায়ানটের ‘বটমূল’ নামকরণ নিয়ে মৌলবাদীদের ব্যঙ্গোক্তি

লিখেছেন মিশু মিলন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



পহেলা বৈশাখ পালনের বিরোধীতাকারী কূপমণ্ডুক মৌলবাদীগোষ্ঠী তাদের ফেইসবুক পেইজগুলোতে এই ফটোকার্ডটি পোস্ট করে ব্যঙ্গোক্তি, হাসাহাসি করছে। কেন করছে? এতদিনে তারা উদঘাটন করতে পেরেছে রমনার যে বৃক্ষতলায় ছায়ানটের বর্ষবরণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বয়কটের সাথে ধর্মের সম্পর্কে নাই, আছে সম্পর্ক ব্যবসার।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৫০


ভারতীয় প্রোডাক্ট বয়কটটা আসলে মুখ্য না, তারা চায় সব প্রোডাক্ট বয়কট করে শুধু তাদের নতুন প্রোডাক্ট দিয়ে বাজার দখলে নিতে। তাই তারা দেশীয় প্রতিষ্ঠিত ড্রিংককেও বয়কট করছে। কোকাকোলা, সেভেন আপ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানুষের জন্য নিয়ম নয়, নিয়মের জন্য মানুষ?

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৪৭



কুমিল্লা থেকে বাসযোগে (রূপান্তর পরিবহণ) ঢাকায় আসছিলাম। সাইনবোর্ড এলাকায় আসার পর ট্রাফিক পুলিশ গাড়ি আটকালেন। ঘটনা কী জানতে চাইলে বললেন, আপনাদের অন্য গাড়িতে তুলে দেওয়া হবে। আপনারা নামুন।

এটা তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন খাঁটি ব্যবসায়ী ও তার গ্রাহক ভিক্ষুকের গল্প!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৪


ভারতের রাজস্থানী ও মাড়ওয়ার সম্প্রদায়ের লোকজনকে মূলত মাড়ওয়ারি বলে আমরা জানি। এরা মূলত ভারতবর্ষের সবচাইতে সফল ব্যবসায়িক সম্প্রদায়- মাড়ওয়ারি ব্যবসায়ীরা ঐতিহাসিকভাবে অভ্যাসগতভাবে পরিযায়ী। বাংলাদেশ-ভারত নেপাল পাকিস্তান থেকে শুরু করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×