ঝুম বৃষ্টি পড়ছে, বারান্দায় বসে বৃষ্টির দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ছেলেটা। কানে হেডফোন। হাতে গিটার। গান বাজছে কিন্তু শুনছে না,মনে হচ্ছে অনেকদূর থেকে কিছু শব্দ ভেসে আসছে। গিটার এ সহজ ছেলেমানুষী Dm chord এর সুর। বৃষ্টি তার খুব পছন্দের। বৃষ্টির প্রতি এক অদ্ভুত আকর্ষণ আছে তার মাঝে। বৃষ্টির ঝুমঝুম আওয়াজ তাকে এক ভিন্ন জগতে নিয়ে যায়।
ছেলেটাকে দেখলে যে কেও প্রথমে একটু ভুল ধারণা করবে।। নিজেকে সে খুব আত্মবিশ্বাসী হিসেবে উপস্থাপন করলেও মোটেও সে তা নয়।। তাই তো নিজেকে আর বাকি সবার থেকে একটু আলাদা করে রাখতেই বেশি পছন্দ করে।
হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠলো। স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে অপরিচিত এক নাম্বার দেখল। ধরার ইচ্ছা নেই। তাই আবার সেই বৃষ্টির ঘোরে ডুবে যেতে চাইলো। তবে পারল নাহ। আবার সেই অপরিচিত নাম্বার। ফোনটা বেজে যাচ্ছে, একটু বিরক্তি নিয়ে রিসিভ করলো।
হ্যালো।
অপর প্রান্ত থেকে এক ধরনের স্তব্ধতা। হয়তো জানালার পাশে। তাই বাতাসের শব্দ গুলো ছাড়া আর কিছুই শোনা যাচ্ছে নাহ।
কে বলছেন আপনি? ফোন দিয়ে কথা বলেন না।। কি এগুলো?
ওপাশ তখনও চুপ।
শুনুন, যদি কথা না-ই বলেন তবে আর ফোন দিয়ে বিরক্ত করবেন না। বলেই ফোনটা রেখে দিলাম।
বাইরে তাকিয়ে দেখি বৃষ্টি থেমে গেসে। ধুর। কিচ্ছু ভালো লাগে নাহ। বাসার সবাই ঘুম। ওয়ালেটটা নিয়ে বের হয়ে গেলাম। রাত বাজে ১২ টা। মোরের চায়ের দোকান টা এখন ও খোলা। গিয়েই মামার কাছ থেকে ১ কাপ গরম চায়ে চুমুক দিয়ে আবার ভাবনায় মগ্ন হলাম।
আবার ফোন আসল। কিছুটা ঘোরের মধ্যে থেকেই নাম্বার টা না দেখেই ধরলাম ফোন টা।
হ্যালো।
একটা মিষ্টি হাসির শব্দ শুনতে পেলাম। আর সাথে সাথেই বুকের ভেতর এক ধরনের মোচর দিয়ে উঠলো। হারিয়ে গেলাম আরো ৪ বছর আগের দিন গুলোয়।
-এই। তুমি এমন কেনো?
কেমন?
এই যে। খুব পচা। আমাকে সব সময় রাগাও।
তোমাকে রাগলে যে অনেক সুন্দর লাগে তাই রাগাই।
আমাকে আর রাগাবা নাহ। তাইলে আমি কিন্তু একদিন অনেক দূরে হারিয়ে যাবো।
এই চুপ। একদম উলটা পালটা কথা বলবা নাহ। আমি তোমাকে আমাকে ছেড়ে কথাও যেতে দিব না।সারাটা জীবন আমরা একসাথে থাকব।
সত্যি থাকবা তো?
হুম। সত্যি।
আবার সেই মিষ্টি হাসিটা শুনে এইবার সচেতন হলাম। বললাম, কে আপনি?
অপর প্রান্তে থেকে আর কোনো শব্দ নেই। সম্পূর্ণ স্তুব্ধতা। ফোনটা ইচ্ছে করেই রেখে দিলাম।