সম্প্রতি বিডি নিউজে প্রকাশিত “ হাসিনাকে উৎখাতে মার্কিন তৎপরতা” শিরোনামের সংবাদটি আমার দৃষ্টি কাড়ে। সংবাদটির সারসংক্ষেপ হলো, মার্কিনীরা স্বীয় স্বার্থে পাকিস্তানকে সাথে নিয়ে বর্তমান হাসিনা সরকারকে সরিয়ে দিতে উঠে পড়ে লেগেছে বলে ভারতীয় একটি গোয়েন্দা সংস্থা জানিয়েছে। সংস্থাটির মতে, এ কাজে কামিয়াব হওয়ার জন্য মার্কিন প্রশাসন অনেক অর্থও ব্যয় করছে। বাংলাদেশের সেইন্ট মার্টিন দ্বীপে মার্কিনীরা একটি নৌঘাঁটি স্থাপন করতে চায়। মিয়ানমারের রাখাইন অধ্যুষিত এলাকা কাইয়ুকপিউতে চীনের বন্দর অবকাঠামো নির্মাণ ও বাংলাদেশের প্রস্তাবিত সোনাদিয়া বন্দরের ওপর নজর রাখতে বহুদিন যাবৎ তারা একটি নৌঘাঁটি স্থাপনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলো। কিন্তু কোন অবস্থাতেই সফল হতে পারছিলনা। এ কাজটি বাস্তবায়নের জন্য এক এগারোর আমলে নোবেল বিজয়ী ডক্টর ইউনুসকে ক্ষমতায় বসাতেও তারা কম চেষ্টা করেনি। কিন্তু ইউনুস সাহেব হালে পানি পাননি। ফলে সে সময়ও তাদের আশা ভেস্তে যায়। এবার আবারো বিএনপি জামায়াতকে ক্ষমতায় বসিয়ে তাদের প্রত্যাশা পুরনের নতুন ফন্দি এঁটেছে।
গোয়েন্দা প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, মুলত ক্ষমতায় গেলে সেইন্ট মার্টিন দ্বীপে নৌঘাঁটি স্থাপনের অনুমতির প্রতিশ্রুতি দেওয়ায় বিএনপি জামায়াতকে সমর্থন দিচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার ছেলে বর্তমানে লন্ডনে থাকা তারেক রহমানের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা এ বিষয়ে বৈঠকও করেছেন বলে জানিয়েছেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।
গোয়েন্দা রিপোর্টটি যদি সত্যি হয়ে থাকে তবে বাংলাদেশের জন্য ভয়ংকর খারাপ সময় অপেক্ষা করছে তাতে কোন সন্দেহ নেই। বিএনপির চেয়ারপার্সন জেলে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান পলাতক আসামি। জামায়াতের অধিকাংশ প্রবীণ নেতা যুদ্ধাপরাধের দায়ে দণ্ড প্রাপ্ত ও বিচারাধীন। এমতাবস্থায় ক্ষমতায় যাওয়াই তাদের মুখ্য বিষয়। এ জন্য তারা দেশ বিরোধী বা জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী এমন কোন হেন কাজ নেই যে করতে দ্বিধাবোধ করবে। অথচ ওদের সাথেই হাত মেলালেন পড়গাছা শ্রেনির কিছু পরিত্যক্ত রাজনীতিক ও গুটিকতক মতলববাজ সুশীল। উদ্দেশ্য একটাই, যে করেই হোক হাসিনা সরকারকে হটাতে হবে। তাইতো ওরা নতুন প্রেমে উদ্বেলিত হয়ে বিএনপি জামায়াতের সাথে সখ্যতা সৃষ্টি করলো জাতীয় ঐক্য ফ্রন্ট নামের এক প্লাটফরম আবিস্কারের মাধ্যমে।
জাতীয় ঐক্য ফ্রন্টের কথা বলে যারা বিএনপি জামায়াতের মতো প্রতিক্রিয়াশীল ও মৌলবাদ গোষ্ঠীর সাথে জোট বেঁধেছে তাদের প্রত্যেকের অতীত ইতিহাস আমাদের কারো অজানা নয়। মান্না বা রবের মতো দালালদের কথা না হয় বাদই দিলাম। ড কামাল হোসেন ও কাদের সিদ্দিকি যে আদর্শকে ধারন করে সারাটা জীবন রাজনীতি করেছেন তারা কি করে সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী স্রোতধারা এক নদীর সাথে মিলিত হতে পারলেন? একজন বঙ্গবন্ধুকে রাজনৈতিক পিতা ও অন্যজন রাজনৈতিক গুরু বলে দাবি করে বঙ্গবন্ধু বঙ্গবন্ধু বলে মুখে ফেনা তুলেন। বিএনপি জামায়াতের সাথে তাদের সাম্প্রতিক প্রেমবন্ধন কি ওই পিতা ও গুরুর সাথে, কিংবা তাঁর দল বা রক্তের সাথে বেইমানী করার শামিল নয়? জীবনের এ সন্ধ্যাবেলায় কেবল মাত্র ক্ষমতা বা পদ পদবীর লোভে স্বীয় আদর্শকে জলাঞ্জলি দিতে যারা মোটেও কুণ্ঠাবোধ করেনা তারা জাতিকে সোনার হরিণ এনে দেবে বলে যতোই চিৎকার করুকনা কেন মানুষ তা একদম বিশ্বাস করেনা। নির্বাচনী পোষ্টারে ধানের শীষের সাথে তাদের ছবি থাকবে এ চিত্রটি কল্পনায় এনে ভাবতেও কি ওদের লজ্জাবোধ হয়না! মানুষ হিসেবে আমার কিন্তু খুব লজ্জা হচ্ছে। কামাল ও কাদের সাহেবকে সবিনয়ে অনুরোধ করবো আয়নার সামনে গিয়ে তারা যেন নিজেদের চেহারাগুলো একবার ভালো করে দেখে নেন।
সুশীল বাবুদের একজনের কথা না বললেই নয়। জাফরুল্লা চৌধুরী। সুশীলের তকমা লাগিয়ে টিভি টকশুতে ক্রমাগত তিনি সরকারকে নসিহত করেই ক্ষান্ত থাকেননি, এবার সুশীলের গণ্ডি পেরিয়ে নিজেকে নেতা হিসেবে আবিষ্কৃত করলেন। জাতীয় ঐক্য ফ্রন্টের নেতা। ভদ্রলোক রসিয়ে রসিয়ে চিবিয়ে চিবিয়ে কথা বলে জনগনের সহানুভূতি ও সস্তা জনপ্রিয়তা পাওয়ার যে ধূর্তামি করেন তা সচেতন জনগনের বুঝতে মোটেও কষ্ট হয়না। যে বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গবন্ধু কন্যা গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র করার জন্য একর একর জমি প্রদান করেছেন তাদের বিরুদ্ধেই তিনি নির্লজ্জের মতো উঠে পড়ে লেগেছেন। কৃতঘ্ন ছাড়া তাঁকে আর কি ভাবা যায়! আমার কাছে মনে হয়, “যেখানে খায় সেখানেই মল ত্যাগ করে” প্রাণীদের মতোই তাঁর চারিত্রিক বৈশিষ্ট। এসব অচ্যুত ও অকৃতজ্ঞ রাজনীতিবিদ বা সুশীল বিএনপি জামাতের ক্রীড়নক হয়ে নাচতে পারলেও জাতির জন্য সুবাতাস বয়ে আনার মতো ন্যুন্যতম যোগ্যতাও রাখেনা। যাদের নিজেদেরই কোন নীতি আদর্শ নেই, নেই কোন কৃতজ্ঞতার বালাই তারা হবে জাতির কাণ্ডারি! এ কথা ভাবতেও কষ্ট হয় আমার।
বরং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছেই এ দেশ, এ জাতি অনেক বেশি নিরাপদ। বিগত শাসনামলে তাঁর সরকারের উন্নয়ন দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিদেশীদের নজর কাড়তেও সক্ষম হয়। কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নারী ও শিশু, নারীর ক্ষমতায়ন, ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠন, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা, প্রবাসী শ্রমিকের উন্নয়ন, বিদ্যুৎ, শিল্প ও বাণিজ্য এবং সামাজিক নিরাপত্তা প্রভৃতি খাতে বর্তমান সরকার যে উন্নয়নের উদাহরণ সৃষ্টি করেছে তা সারা বিশ্বে বিরল। এসব খাতে সরকারের অভূতপূর্ব উন্নয়নের ফলেই বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় উর্তীন্ন হতে পেরেছে। শুধু তাই নয়, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রশ্নে কিংবা দেশ ও জাতির স্বার্থ রক্ষার্থে শেখ হাসিনাই একমাত্র ব্যক্তি যিনি কোন বিদেশি শক্তির রক্তচক্ষুকে কিংবা হুমকি ধামকিকে মোটেও পাত্তা দেননি।
আওয়ামীলীগ যে ধুয়া তুলসী পাতা তা হলফ করে বলা যাবেনা। এ সরকারের এতো উন্নয়নের পাশাপাশি কিছু দুর্নীতিপরায়ণ, লুঠেরা ও ধনিক শ্রেনির যে উদ্ভব ঘটেছে সে কথা অস্বীকার করার কোন জো নেই। তাঁর বিস্তৃতি মফস্বল ও মাঠ পর্যায়েও ছড়িয়ে পড়েছে। এক শ্রেনির টাউট বাটপার সরকার বা আওয়ামীলীগের পোশাক গায়ে লাগিয়ে নিত্য জনগনকে ধোঁকা দিয়ে চলছে। ওদের এসব কুকর্ম সরকারের উন্নয়ন ও ফলপ্রসূতাকে কেবল প্রশ্নবিদ্ধই করেনি, ম্লানও করেছে।
ছোট খাট ভুলত্রুটি, দুর্নীতি বা সীমাবদ্ধতা এ সরকারের রয়েছে বটে, কিন্তু আওয়ামীলীগের চেয়ে অধিকতর গ্রহণযোগ্য দল দেশে আর একটিও নেই। তাই বলবো, দেশকে বাচাতে, সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে, জাতীয় স্বার্থকে বিকিয়ে না দিয়ে সমুন্নত রাখার জন্য শেখ হাসিনার মতো প্রাজ্ঞ, ধীশক্তি সম্পন্ন, সাহসী, দৃঢ় চেতা, দেশ দরদী ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বের অধিকারী নেতার নেতৃত্বে পরিচালিত সরকারের বিকল্প নেই।
লিমরিক, আয়ারল্যান্ড
২৮/১১/২০১৮
[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ৯:৪২