প্রথমে ইস্টিশন ব্লগের পোষ্ট ""ব্লগার নামধারী একজন বিকৃতমনস্ক ধান্দাবাজ প্রসঙ্গে" শিরোনামে পোষ্টটি সম্পুর্ন অংশটুকু কপি পেষ্ট করে দিলাম।
সাংবাদিক রীতা নাহারের একটি সিরিজ রিপোর্ট বৈশাখী টিভিতে প্রচারিত হয়েছে গেল সপ্তাহে। রিপোর্টের বিষয়বস্তু ছিল দত্তক আইন না থাকা এবং সরকারি প্রতিষ্ঠান 'ছোটমনি নিবাস' থেকে দত্তকের নামে শিশু কেনা-বেচা। রিপোর্টে দেখা গেছে সমাজকল্যাণ মন্ত্রী, আইনমন্ত্রী, শিশু অধিকার বিশেষজ্ঞ, আইনজীবী, শিশু দত্তক নেওয়া পরিবার এবং দত্তকের নামে যারা বিদেশে শিশু বিক্রি করছেন তাদের সবার বক্তব্য আছে। অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় শর্তগুলোর সবকিছুই রিপোর্টে পূরণ করা হয়েছে। রিপোর্টটির মূল সুর ছিল,দত্তক আইন করা হলে অনেক নি:সন্তান দম্পতি অভিভাবকবিহীন এসব শিশুদের আইনগতভাবে দত্তক নিয়ে তাদের সুন্দরভাবে বড় করতে পারতেন,এই শিশুরাও নিরাপদে বেড়ে ওঠার সুযোগ পেত। একই সঙ্গে আইন না থাকায় সরকারি ছোটমনি নিবাস' থেকে কিভাবে শিশু কেনা-বেচা চলছে তারও চিত্র তুলে ধরা হয়।
এর আগেও রীতা নাহার বাল্য বিয়ে পরিস্থিতি নিয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে সিরিজ রিপোর্ট করে পুরস্কৃত হয়েছেন, বাংলাদেশ বিমানের আভ্যন্তরীণ সংকট ও অনিয়ম এবং সোনা চোরাচালন সিন্ডিকেট নিয়ে পৃথক দু’টি ভিন্নধর্মী ধারাবাহিক প্রতিবেদন তৈরি করেও প্রশংসিত হয়েছেন। যুদ্ধ শিশু নিয়ে ব্যতিক্রমী রিপোর্ট করে প্রশংসা পেয়েছেন। এবারের সিরিজ রিপোর্টটিও ছিল তার আর একটি ব্যতিক্রমী অনুসন্ধান। ইউটিউবে গিয়ে প্রতিবেদন তিনটি দেখলে সবার কাছে বিষয়টি পরিস্কার হবে। লিংক তিনটি দিয়ে দিলাম:
প্রথম পর্ব
দ্বিতীয় পর্ব
তৃতীয় পর্ব
এই প্রতিবেদন তৈরি করতে গিয়ে শামারুখ ইলোরা নামে একজনের সন্ধান পাওয়া যায়, যিনি রীতিমত ফেসবুকে সরকারি ছোটমনি নিবাসের শিশুদের ছবি দিয়ে তাদের বিদেশে দত্তক দেওয়ার বিষয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন, যা বেআইনী বলে আইনজীবীরা তো বটেই আইনমন্ত্রী এবং সমাজকল্যাণমন্ত্রীও জানিয়েছেন, যেটা প্রতিবেদনেও আছে। প্রতিবেদনে দেখা যায়, আরও দু’টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে শামারুখ ইলোরার যোগাযোগ আছে যারা অর্থের বিনিয়ে দত্তকের নামে বিদেশে শিশু পাঠাচ্ছেন যেটা অবৈধ শিশু পাচার বানিজ্য ছাড়া আর কিছুই নয়।কারন ওই সব শিশুরা কার কাছে যাচ্ছে, বাংলাদেশ থেকে কারা পাঠাচ্ছে, তার কোন রেকর্ড রাখা হচ্ছে না।
শামারুখ ইলোরা তার পেজে রাফাত নূর নামে একজনের ফেসবুক পোস্ট শেয়ার করেন এবং রাফাতকে তার কার্যক্রমের একজন অংশীদার হিসেবেও উল্লেখ করেন। রাফাত নূর সংরক্ষিত ছোট মনি নিবাসে কর্তৃপক্ষের বৈধ অনুমতি ছাড়াই নিয়মিত যান বলেও সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়। রীতা নাহারের প্রতিবেদন শামারুখ ইলোরার ফেসবুক পেজের স্ক্রীণ শট দেখানো হয়, যেখানে রাফাত নূরের ছবিও ছিল। রীতা নাহারের সঙ্গে আলাপে এটাও জানতে পারি এ পর্যায়ে অনুসন্ধানের এক পর্যায়ে সমাজকল্যাণমন্ত্রীর বক্তব্য নেওয়ার পর সমাজকল্যাণমন্ত্রী আকস্মিকভাবে ছোটমনি নিবাস পরিদর্শন করেন। এরপরই শামারুখ ইলোরা তার ফেসবুক পেজ থেকে ছোটমনি নিবাসের শিশুদের সব ছবি মুছে ফেলেন। রাফাত নূরও ছোট মনি নিবাসে যাওয়া বন্ধ করে দেন।
রীতা নাহারের প্রতিবেদন প্রচার হওয়ার পর থেকই রাফাত নূর তার ফেসবুক টাইমলাইন, আমরা ব্লগার নামে একটি পেজ এবং সামহোয়্যার ইন ব্লগে রীতা নাহারের নামে কটুক্তি এবং অশোভন ভাষা ব্যবহার অপপ্রচার চালাচ্ছে। রাফাত নূরের চরম অসসতার পরিচয় পাওয়া যায় শামারুখ ইলোরার সঙ্গে তার যোগাযোগের বিষটি অস্বীকার করা থেকে। সে তার ফেসবুক নোটে লিখেছে, সে নাকি শামারুখ ইলোরাকে চিনতই না। অথচ, তার সঙ্গে শামারুখ ইলোরার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের বিষয়টি ইলোরার ফেসবুক টাইম লাইনের পোস্ট থেকে একেবারেই স্পষ্ট। রীতার প্রতিবেদনে শামারুখ ইলোরার বক্তব্য যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করা হয়েছে। যে কোন প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে যেমন প্রতিষ্ঠান প্রধানের বক্তব্য যায়, তেমনি একটা গ্রুপের ক্ষেত্রে লিডারের বক্তব্যই যথেষ্ট, একই অভিযোগের ব্যাপারে বক্তব্যের জন্য ধরে ধরে গ্রুপের সবার বক্তব্য নেওয়ার যুক্তি নেই।
রাফাত নূর তার ফেসবুক পোস্টে বৈশাখী টিভি’র এই রিপোর্টকে ব্লগারদের উপর হামলা হিসেবে উল্লেখ করার মত হাস্যকর মন্তব্যও করেছেন। অথচ তার এবং তার অনুসারীদের মন্তব্য পড়লে তাদের বক্তব্য বরং ব্লগারদের প্রতি বিষোদগার করা, হত্যায় উস্কানি দেওয়া সেই জামায়াত-হেফাজতের শ্লোগানের সঙ্গেই মিলে যেতে দেখি। একের পর এক নৃশংস ব্লগার হত্যাকান্ডের বিরুদ্ধে কোন পোষ্টই রাফাত নূরের ফেসবুক টাইমলাইনে অনেক খুঁজে একটাও দেখলাম না। কোন ব্লগেও দেখলাম না।
প্রগতিশীল ব্লগার হত্যাকান্ডের বিরুদ্ধে আমরা বার বার সোচ্চার হয়েছি, ঝুঁকি নিয়ে লিখেছি, রিপোর্ট করেছি। অথচ ব্লগার হত্যাকান্ডের বিরেুদ্ধে একেবারেইু নিশ্চুপ থাকা ধুরন্ধর রাফাত এখন নিজের অসৎ কর্মকান্ড ঢাকার জন্য অবৈধভাবে শিশু কেনা-বেচার একটা অনুসন্ধানী রিপোর্টকে ব্লগারদের বিরুদ্ধে চালিয়ে দিচ্ছে! রিপোর্টে কোথাও ফেসবুক পেজ ‘আমরা ব্লগার’ সম্পর্কেও কিছু বলা হয়নি। শামারুখ ইলোরার ফেসবুক টাইমলাইন দেখাতে গিয়ে থেকেই সেখান থেকে রাফাত নূরের ছবিও প্রদর্শিত হয়েছে, নাম এসেছে, এর বেশী কিছু নয়। এরপরও তো প্রশ্ন ওঠে সংরক্ষিত সরকারি প্রতিষ্ঠান ছোটমনি নিবাসে রাফাত কার অনুমতি নিয়ে এত দিন অবাধে গেছেন? ছোটমনি নিবাস নিয়ে শামারুখ ইলোরর কর্মকান্ড বন্ধ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেখানে রাফাতের অবৈধ অবাধ যাতায়াতও বন্ধ হল কেন? ব্যক্তি রাফাত নূর এখন হীন স্বার্থে ‘আমরা ব্লগার’ নামে একটি ফেসবুক পেজ ব্যবহার করছেন যেখানে অনেকে যুক্ত আছেন, যাদের রাফাত নূরের ব্যক্তিগত অপকর্মের সঙ্গে কোন সম্পর্ক নেই। কিন্তু সুচতুর রাফাত নূর অনেকের সরল আবেগ নিজের অপকর্মের দায় এড়াতে ব্যবহার করছেন।
ব্যক্তি রাফাত নূর নিজের অপকর্মের দায় এড়াতে ‘ব্লগার’ হওয়ার দাবিটিকে ব্যবহার করে এটাকে ব্লগারদের উপর আঘাত বলে চালানোর অপকৌশল নিয়েছেন। রাফাত নূরের ব্যাপারে আরও তদন্ত হওয়া উচিত। কারন সে ‘আমরা ব্লগার’ ব্যবহার করে অনেক ভাল মনের অনেক ব্লগারের আবেগ পুঁজি করে আরও বড় কোন অপকর্ম কিংবা ধান্দা করছে কি’না তা পরিস্কার হওয়া দরকার।
আমি রাফাত নূর সম্পর্কে গণজাগরণমঞ্চের মুখপাত্র ডা.ইমরান এইচ সরকারের কাছে জানতে চেয়েছিলাম। তিনি জানালেন, রাফাত নূর কে তিনি চেনেন না। আমার এক সহকর্মী শামীমা মিতুও ব্লগিং এর ক্ষেত্রে খুব পরিচিত, তার কাছেও জানতে চাইলাম, সেও জানাল, এই নামে কাউকে চেনে না। তবে আমি নিজে অনলাইনে ঘুরে রাফাত নূর সম্পর্কে জানার চেষ্টা করছি। তার এবং তার অনুসারীদের যে কয়েকটি পোস্ট কিংবা মন্তব্য বিভিন্ন জায়গায় দেখেছি তার বেশীর ভাগই অশ্লীল এবং নিম্নরুচির, একই সঙ্গে কোথাও কোথাও উগ্র সাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মীয় উন্মাদনার বিষয়টিও স্পষ্ট।এমন ব্যক্তি কে ভদ্র, রুচিশীল কারও না চেনারই কথা।
রাফাত নূরের রুচিবোধের পরিচয় পাওয়া যায় তার ফেসবুক টাইমলাইনের পোস্ট থেকেই। রাফাত নূরের পোস্টে যারা মন্তব্য করেছেন,তাদের কারও কারও জঘন্য মানসিকতার পরিচয়ও নিজেদের ফেসবুক টাইমলাইনেই দিয়েছেন। রাফাত নূরের ফেসবুক বন্ধু আশিক আহমাদের ফেসবুক টাইম লাইনে নারীদের সম্পর্কে জঘন্য, নোংরা ভাষার ব্যবহার করে পোস্ট দিয়েছে। খাঁটি জামায়াত-শিবির কিংবা সে ধরনের বিষাক্ত মানসিকতার না হলে ফেসবুক টাইমলাইনে নারীদের নিয়ে এত জঘন্য মন্তব্য করা সম্ভব নয়। আমি এ লেখার আগে আগে ফেসবুকে একটা পোস্ট দিয়েছি।সেখানে রাফাত নূরের কার্টুন এবং তার বন্ধু আশিক আহমাদের একটা পোস্টের স্ক্রিণ শটও জুড়ে দিয়েছি। লিংক দু’টো এখানে দিলাম শুধুমাত্র রাফাত নূর চক্র কতটা অসভ্য, নোংরা মানসিকতার সেটা বোঝানোর জন্য..... Click This Link
https://www.facebook.com/photo.php?fbid=10153385407649197&set=pcb.101533...
আমি এবং রীতা নাহার প্রায় পনর বছরের বেশী সময় ধরে নিয়মিত সাংবাদিকতায় আছি। এ সময়ে আমাদের অনেক ধরনের মানুষের সঙ্গে মিশতে হয়েছে, অনেকের সঙ্গে কথা বলতে হয়েছে, ভাল-মন্দ অনেক অভিজ্ঞতা হয়েছে, অনেক ঘাত-প্রতিঘাতের মোকাবেলাও করতে হয়েছে। সাংবাদিক কমিউনিটিতে রীতা-রাশেদ দম্পতিকে কম-বেশী সবাই চেনেন, জানেন। গণজাগরণ মঞ্চের সেই স্মরণীয় উত্তাল দিনগুলোতে আমাদের দু’জনকে সবাই মাঠে দেখেছেন সার্বক্ষণিকভাবেই। পেশাগত দায়িত্বের বাইরেও তাই এই মঞ্চের উদ্যেক্তাদের অনেকের সঙ্গে সুসম্পর্ক হয়েছে। সেই সময়ে আমার ইস্টিশন ব্লগে যোগ দেওয়া। অনেক ব্লগারেরর সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্কও হয়। আমাদের পথ চলা খোলা বই এর মত। বিশ্বববিদ্যালয় জীবন থেকে এখন পর্যন্ত যারা পরিচিত সবাই জানেন, আমা কি ভাবে চলি, কোন আদর্শ, কোন দায়বদ্ধতা নিয়ে এত বছর ধরে সাংবাদিকতায় আছি। যে কারনে মাথা উঁচু করেই চলি। সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকেই সমাজের, রাষ্ট্রের অনেক অসঙ্গতির বিরুদ্ধে জীবনের ঝুঁকি নিয়েও সব সময়ই সোচ্চার থেকেছি, থাকব।
রীতা নাহার তার অনুসন্ধানী রিপোর্টে নিষ্ঠার সঙ্গে অপ্রকাশিত সত্য তুলে ধরে রাফাত নূরের মত অসভ্য, অসৎ, অশুভ মাফিয়া চক্রের দালালের হাতে নোংরা আক্রমনের শিকার হচ্ছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। আশাকরি সাংবাদিক সমাজ এবং সমাজের সচেতন মহল বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখবেন। রাফাত নূরের মত মুখোশ পড়া উগ্র ধর্মান্ধ বিষাক্ত মানসিকতার এই মানুষগুলো সত্যানুসন্ধানের প্রতিবন্ধক এবং সচেতন বিবেকের বিরুদ্ধে বড় হুমকি। আগের দিনে স্বীকৃত গুন্ডা, বদমাসরা হুমকি দিত, ঝুঁকিটাও পরিস্কার থাকত । কারন তাদের আক্রমণ পেছন থেকে হত না। কিন্তু এ সময়ের রাফাত নূরের মত মিথ্যাচারে ওস্তাদ ধান্দাবাজ, বিকৃতমনস্ক ছদ্মবেশীরা আঘাত করে পেছন থেকে কাপুরুষের মত। যে কারনে একের পর এক মুক্তচিন্তার লেখক, ব্লগার খুন হয়, খুনীদের খুঁজে পাওয়া যায় না। প্রিয় সহকর্মী সাগর-রুনি সাংবাদিক দম্পতির নৃশংস হত্যাকান্ডের পর বছরের পর বছর পার হয়, খুনীরা ধরা পড়ে না।
রাশেদ মেহেদী
ঢাকা
২৪জুন, ২০১৫
ইস্টিশন ব্লগের লিংকঃ ব্লগার নামধারী একজন বিকৃতমনস্ক ধান্দাবাজ প্রসঙ্গে
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জুন, ২০১৫ দুপুর ১২:৩৩