সামু ব্লগের অন্যতম নীরব পাঠক আমি। প্রতিদিনই আসি আর গত দশকের মতো আজো মুগ্ধতা নিয়ে ফিরে যাই। লগইন করা হয়ে ওঠেনা। লগইন যে করিনা বা করতে চাইনা তা নয়, আসলে সামু লগইন করার জন্য ভালো কোন ব্যবস্থাই রাখেনি। 2006 এ সম্ভবত সামুর সাথে আমার প্রথম পরিচয়। তখন একজন একনিষ্ঠ পাঠক মাত্র। রেজিষ্ট্রেশন করার তাগিদ কখনো বোধ করিনি। অনেক পরে যখন রেজিষ্ট্রেশন করলাম তার তিন বছর পর জেনারেল করা হলো। সে আরেক কাহিনী! সেদিকে না গিয়ে মুল ঘটনায় আসি। একজন প্রখ্যাত ব্লগার রাজীব নুরের একটি লেখা চোখে পড়লো যার সারমর্ম হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর ইফতার পার্টিতে ব্লগাররা উপেক্ষিত কেনো। হ্যাঁ তাইতো, ফেসবুকে সব তথ্যে ভেজাল। নিখাদ তথ্য পাওয়া যায় একমাত্র ব্লগে। কিন্তু তাও উপেক্ষিত কেনো।
কারণ হিসেবে আমার কেন যেনো মনে হয় ব্লগগুলোর টেকনিক্যাল ফিচারগুলোই সবচেয়ে বেশী দায়ী। ব্লগ বড় বেশী সেকেলে। সেকারণেই ব্লগার বা ব্লগগুলো খুব বেশী গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারেনি। বর্তমান সময়ে সবার হাতে হাতে স্মার্ট ফোন, কিন্তু এই ফোনগুলো থেকে সামুকে উপভোগ করা প্রায় দুষ্কর। কোন প্লাটফরমের এপস না থাকার কারণে সাধারণ ব্রাউজার দিয়ে মোবাইল থেকে সামু খুবই বাজে লাগে। ছবিগুলো ঠিকমতো দেখা যায়না। লগইন করতে অসুবিধা হয়। আর পোষ্ট দেয়াতো আরো কঠিন লাগে আমার কাছে। যদিও ফেসবুক বা অন্যান্য মিডিয়ার চাইতে ব্লগে লেখনীর পরিচ্ছন্নতা অনেক বেশী তবুও মানুষের কাছে পৌছানোর জন্য যে বিষয়গুলো ব্লগে থাকা প্রয়োজন তা থাকেনি। মানুষের কাছে পৌছানোর জন্য কিছু কিছু ক্ষেত্রে টেকনোলজির সহায়তা নিয়ে জোর খাটাতে হয়, তা হচ্ছে নোটিফিকেশন। আর নোটিফিকেশনের সবচে ভালো উপায় হচ্ছে এপস। 2018তে এসে একটি সামু এপসের চরম অভাববোধ করছি। অন্যদিকে ফেসবুক গ্রুপ বা ইউটিউবারদের জন্য প্লাটফরমগুলো টেকনিক্যালি উন্নত হওয়ায় এদের সম্পর্কে মানুষ জানে বেশী। বর্তমান প্রজন্ম অর্থাৎ যারা ফেসবুক ইউটিউবের প্রসারের সময়ে এসে টেকনোলজির ছোঁয়া পাচ্ছে তারা কয়জন সামু ব্লগ সম্পর্কে জানে তা আমার সন্দেহ আছে। কারণ একটাই, সেই ‘নোটিফিকেশন’। এছাড়া ব্যবহারের স্বাচ্ছন্দ্যের কথা বাদই দিলাম। আমার মতে সামু ব্লগটিকে আরো বেশী ইন্টারএকটিভ এবং ইউজার ফ্রেন্ডলি করা উচিত। আমি অনেকদিন লিখিনা তাই বিশেষ কোন উন্নতি হয়েছে কিনা জানিনা, কিন্তু সাত আট বছর আগে একটা ইমেজ সেট করতে গেলেই অনেক যন্ত্রণা পোহাতে হতো। এছাড়া ইমোজিগুলোও আপডেট হয়নি। এসব অনেক কারণে এমন একটা সমৃদ্ধ প্লাটফরম ছেড়ে অনেকে ফেসবুকের রঙ্গীন দুনিয়ায় চলে যাচ্ছে। আর যাই হোকনা কেনো যুগের সাথে তাল মেলাতে হলে সামুর আধুনিকায়ন খুব বেশী জরুরী। পুরো ডিজাইন, প্যাটার্ন, সিস্টেম কোনটাই এখনকার সময়ের সাথে সামঞ্জ্যস্য পূর্ণ নয়। মানুষের তথ্য পাওয়ার মাধ্যমে বেড়ে গেছে কিন্তু পুরো দিনটি 24 ঘন্টাতেই রয়ে গেছে। তাই এই 24 ঘন্টার মধ্যেই ফেসবুক, টুইটার আর ইউটিউবের সাথে গা ঘেঁষাঘেষি করে মানুষের হাতের ডিভাইসে ঢুকে পড়তে হবে। সেটি না পারলে আস্তে আস্তে সামু বিলীন হয়ে যাওয়াও কিন্তু অস্বাভাবিক কিছু নয়। যদি সামু কর্তৃপক্ষ মনে করে যে সামুর উন্নয়ন প্রয়োজন তাহলে প্রথমে কি কি ফিচার আনা যায় তার জন্য একটি পোষ্ট দিয়ে আইডিয়া আহবান করা যেতে পারে। পরবর্তীতে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে একটি টিম গঠন করে গিটহাবের মাধ্যমে টিম প্রজেক্ট শুরু করতে পারে। সামু যদি গণমানুষের মাধ্যম হয়ে ওঠে তবে প্রধানমন্ত্রী উপক্ষো তো করবেই না বরং দেশের ভালো মন্দের ফ্যাক্টরের জন্য একটি অংশ হিসেবে দাড়িয়ে যাবে প্রিয় সামু।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মে, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:২৭