somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ নিঃসঙ্গ ডাহুক

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ বিকাল ৪:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

[ লেখাটা প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ]
*
প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতায় মমি কিভাবে তৈরি হতো জানি না, তবে আমার স্ত্রীর মৃতদেহটাকে ফরমালিনে ভিজিয়ে সংরক্ষণ করছি আজ প্রায় দেড় মাস হলো......

অবশ্য মৃতদেহ সংরক্ষণ করার হয়তো দরকার ছিলো না, কারণ মৃত্যুর দিনই সন্ধ্যায় সে আমার ঘরে এসেছিলো। অথচ তাঁর ডেডবডি তখন মর্গের হিমঘরে। এ যুক্তিতে বলা যায়, ডেডবডি সংরক্ষণের ঝামেলায় না গিয়ে তাঁকে কবর দিয়ে এলেও সে আমার কাছে আসতে পারতো নিশ্চই। তবে আমি কোনো রিস্ক নেই নি। মাটি দেয়ার পর যদি আর আমাকে দেখতে না পায়- এই আশংকায় শবদেহ মর্গ থেকে নিয়ে এসেছিলাম।

আপনারা হয়তো ভাবছেন- আমাদের মধ্যে ভালোবাসা কত্ত গাঢ় ছিলো ! তা না হলে মৃত্যুর পরও স্ত্রীর মরদেহটাকে এভাবে আগলে রাখে কেউ? ফরমালিন ভিজিয়ে, সারাক্ষণ এসি ছেড়ে পাশের রুমটাতে সংরক্ষণ করে? সত্যি বলতে- ব্যাপার আসলে তা নয় ! আমি শুভ্রার মৃতদেহটাকে নিয়ে এসেছি যেনো সে আমার অবাধ যৌনজীবনটাকে দেখতে পায়। ঠিক বিয়ের পর বেঁচে থাকা অবস্থায় যেমন দেখতো !

ওর সাথে আমার প্রেমের সম্পর্ক ছিলো দীর্ঘ পাঁচ বছরের। বিশ্ববিদ্যালয় জীবন পুরোটা আমরা প্রেম করে করেই কাটিয়েছি আসলে। প্রেমের ফাঁকে ফাঁকে পড়ালেখা! অসম্ভব ভালো ছাত্রী ছিলো শুভ্রা, কিন্তু দরিদ্র। বিপরীতক্রমে আমি অত খারাপ ছাত্র না হলেও অত্যন্ত ধনী পরিবারের সন্তান ছিলাম। সাধারণত এসব ক্ষেত্রে মানুষজন মেয়েটার দিকে বাঁকা দৃষ্টিতে তাকায়, ফিসফিস করে মেয়েটাকে বলে "গোল্ড ডিগার"...... অথচ শুভ্রার ব্যাপারে কেউ অমনটা বলে নি কখনো, এতোটাই সৎ, ভালো আর উন্নতচরিত্রের ছিলো সে। আমারো অবশ্য রেপুটেশন খারাপ ছিলো না। পাঁচ বছরের প্রেমে একদিনের জন্যও শারীরিকভাবে ওর সাথে ঘনিষ্ট হওয়াতে তো দূরের কথা, ওর গালে সামান্য চুমুও খেতে চাই নি। অথচ শিশিরভেজা ঘাসের মত ঠোঁট, কবুতর স্তন আর নদীর মত কোমর মিলে শুভ্রা ততদিনে হয়ে উঠেছিলো এক পূর্ণাঙ্গ নারী। শরীরের প্রতিটা বাঁক একদম নিখুঁত ছিলো ওর......

সমস্যা বাঁধলো বিয়ের পরও আমি যখন শুভ্রার সাথে মিলিত হতে অস্বীকৃতি জানালাম- তখন। শুভ্রা এতো অবাক হয়েছিলো, যে বলার নয় ! পরিস্থিতিটাকে আরো ঘোলাটে করে তুলতে আমি কয়েকদিন পরপরই বেশ্যা ধরে আনতাম বাইরে থেকে। শুভ্রার চোখের সামনেই দরজা বন্ধ করে মিলিত হতাম ওদের সঙ্গে। আমাকে বাঁধা দেয়ারও তেমন কেউ ছিলো না। বাবা-মা দু'জনই ক্যানাডা থাকেন অনেক বছর ধরে। সে-ই আমাদের বিয়ের সময় এসেছিলেন, কয়েকদিন থেকে আবার উড়াল দিলেন। এখানকার প্রাসাদের মত বাড়িটাতে সদস্য বলতে শুধু আমি, শুভ্রা আর আমাদের জনা ছয় অধীনস্থ। আর যাই হোক, বাড়ির মালিকের ওপর কর্মচারীদের কোনো খবরদারী চলে না ! সেই হিসেবে আমি পুরোপুরি স্বাধীন একজন মানুষ ছিলাম বলা চলে। অবশ্য তা না হলে বাড়িতে স্ত্রী থাকা সত্বেও তাঁর চোখের সামনেই পতিতা ধরে আনাটা কখনো সম্ভব হতো না আমার জন্য, বুঝতেই পারছেন !

প্রথম প্রথম আমার শ্বশুর বাড়ির লোকদেরও এসব কথা জানায় নি শুভ্রা। অবশ্য জানাবেই বা কাকে ! শুভ্রার আপন বলতে তেমন কেউ ছিলো না। এতিম মেয়েটা মানুষ হয়েছিলো দূর সম্পর্কের এক খালার বাসায়। তাছাড়া দীর্ঘদিনের পরিচিত প্রেমিক, এখন স্বামী মানুষটি পতিতা নিয়ে আসছে। নিজের শারীরিক চাহিদা মেটাচ্ছে এক বেশ্যার শরীর থেকে- এসব নোংরা ব্যাপারস্যাপার অন্যদের কাছে প্রকাশ করার জন্য যেরকম মানসিক শক্তির দরকার, সেটা সারাজীবন মধ্যবিত্ত সেন্টিমেন্টে বড় হওয়া শুভ্রার মধ্যে ছিলোও না। ও শুধু চোখের জল ফেলতো। কাঁদতে কাঁদতে বলতো- "আমার সমস্যাটা কি আমাকে একটু বলবে, রাতুল?"

"তোমার কোনো সমস্যা নেই শুভ্রা ! আমি শুধু তোমাকে যৌনতাবিহীন এক পরিশুদ্ধ প্রেম দিতে চাচ্ছি !"

"মানে?"- শুভ্রা প্রথম দিন এমন কথা শুনে অবাক হয়েছিলো খুব। এতো অবাক যে কাঁদতে পর্যন্ত ভুলে গেলো।

আমি শান্ত গলায় বললাম- " তোমার সাথে মিলিত হলে আমার মধ্যে একটা অপরাধবোধ কাজ করবে। মনে হবে- এট দ্যি এন্ড অফ দ্য ডে- আমি বুঝি শারীরিক আনন্দের জন্যই তোমাকে ভালোবেসেছি। কিন্তু সত্যটা তো তা নয় ! তোমার প্রতি আমার ভালোবাসায় অন্য আর কিছুর লোভ ছিলো না, বিশ্বাস করো !" আমি গাঢ় গলায় বললাম- "তোমাকে ভালোবাসার পর থেকে আমি তোমাকে বিনিময়বিহীন, এক পরিশুদ্ধ প্রেমই দিতে চেয়েছি শুধু......"

খুব বিভ্রান্ত হয়ে গেছিলো ও। "রাতুল কি পাগল? নাকি দুশ্চরিত্র? কিন্তু পাগলামির কোনো লক্ষণ তো ছেলেটার মাঝে নেই! তাছাড়া রাতুলকে যে বিন্দুমাত্র চেনে, সে-ও ওকে দুশ্চরিত্র বলবে না ! ইন ফ্যাক্ট, ওর বাসার কাজের লোকেরাও বলেছে- বিয়ের আগে ছোটসাহেবের এসব খারাপ মেয়ে ধরে আনার অভ্যাস ছিলো না। এতো বড়লোকের ছেলে হয়েও রাতুল স্যার সামান্য একটা সিগারেট পর্যন্ত খান না......"- এসব পরস্পর সাংঘর্ষিক চিন্তার টানাপোড়েনে শুভ্রা ভেতর ভেতর ঝাঁঝরা হয়ে যাচ্ছিলো। একদিন ভাঙ্গা ভাঙ্গা গলায় আমাকে বললো- "তুমি আমাকে পরিশুদ্ধ প্রেম দিতে চাও খুব ভালো কথা। আমি কখনো তোমার সাথে মিলিত হতে চাইবো না। কিন্তু এট লিস্ট বেশ্যামেয়েদের সাথে এগুলো করা বন্ধ করো প্লিজ......"

"কোনগুলো করা বন্ধ করবো? ওদের সাথে সেক্স নাকি ওদেরকে মেরে ফেলার ব্যাপারটা?"

শুভ্রা বিস্ফোরিত চোখে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো। ও এতো অবাক হচ্ছিলো কেন- ঠিক বুঝলাম না। আমি জীবনে শুভ্রার কাছ থেকে কোনো কিছু লুকাই নি। এ জন্যই খুনের ব্যাপারটা ওকে জানিয়ে দিলাম। এটা তো অবাক হওয়ার মত কোনো বিষয় নয় ! আসলে বিয়ের পর থেকে গত এক বছরে আমি তিনটা খুন করেছি। তিনজন বেশ্যাকে। আমাদের বাসার পেছনে সাড়ে ছয় কাঠা জায়গা নিয়ে একটা পুকুর আছে। ওখানে আমি পাঙ্গাস, বড় গোল্ডফিশ, তেলাপিয়াসহ কিছু রাক্ষুসে মাছের চাষ করতাম। মেয়েগুলিকে মেরে ওদের ডেডবডির টুকরোগুলো ওখানেই ফেলে দিয়েছিলাম। শুভ্রা আমার এই কথা শুনে বাথরুমে ছুটে গেলো......

তবে এটা ঠিক- আমি যে এতো সহজে ওর আবদারটুকু মেনে নেবো, সেটা সে ঘুণাক্ষরেও কল্পনা করে নি হয়তো। শত হলেও ছেলেমানুষ হিসেবে আমার একটা শারীরিক চাহিদা ছিলো...... কিন্তু আমি মেনে নিলাম। প্রস্টিটিউটদের সাথে উঠবস বন্ধ করলাম পুরোপুরি। বলতে দ্বিধা নেই, খুন খারাবির ব্যাপারটাতে একদমই অভ্যস্ত হতে পারি নি আমি। প্রতিবারই কেমন গা গুলাতো। শুভ্রার অনুরোধ আমাকে এই কুৎসিত অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে বারবার যাওয়া থেকে মুক্তি দিলো।

সেই শুভ্রাও কি না নিজে একদিন মুক্তি নিয়ে নিয়েছিলো আত্মহত্যা করে। আমি অফিসে ছিলাম তখন, খবর পেয়ে ছুটে এলাম। ওর লাবণ্যময় নিখুঁত শরীর সে সময় সিলিং থেকে ঝুলছে। হাসপাতালে নেয়ার পর ডাক্তার মৃত ঘোষণা করলো ওকে।

আমার আব্বা-আম্মা দু'জনই শুভ্রাকে খুব পছন্দ করতো। ওনারা ইমার্জেন্সি টিকিট কেটে দেশে আসার চেষ্টা করতে লাগলেন। আম্মা কাঁদতে কাঁদতে বললেন- তিনি তাঁর বৌমার মুখটা শেষবারের মত দেখতে চান। এসব মিলেই শুভ্রার মরদেহ হিমাগারে রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছিলো। আমি অবশ্য ক্লান্ত অবসন্নের মত সেদিন সারা দুপুর রাস্তায় রাস্তায় ঘুরলাম। বিকেলে গাড়ি নিয়ে ছুটে গেছিলাম পূর্বাচলের দিকে। ওখানে একটা জায়গায় বারোমাসি দীঘির মত আছে। সারা বছরই পানি থাকে। এই দীঘিটা শুভ্রার খুব প্রিয় জায়গা ছিলো। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় আমরা প্রায়ই ঘুরতে আসতাম এখানে। কত বিকেল এই একটা জায়গাতে শুভ্রার মুখের ওপর সূর্যের রঙ পাল্টাতে দেখেছি আমি ! ওর মৃত্যুর পর আমি একা একাই সেখানে গিয়ে বসে ছিলাম অনেকটা সময়। সন্ধ্যা মেলবার পর বাসার দিকে রওনা হলাম।

সেদিনই ঘরে ফিরে শুভ্রার সাথে দেখা হয় আমার। ও বাথরুমের দরজা ভেজিয়ে শাওয়ার নিচ্ছিলো। ওখান থেকেই বললো- "রাতুল, তুমি যে একজন নপুংসক এ কথাটা আমাকে আগে জানাও নি কেন?"

সত্য বলতে এরপরই আমি সিদ্ধান্ত নিলাম- যে কোন মূল্যে হোক, শুভ্রার এ কথাকে ভুল প্রমাণ করতে হবে। প্রয়োজনে শুভ্রার ডেডবডিকে সামনে রেখে কোনো এক প্রস্টিটিউটের সাথে মিলিত হবো আমি। এ জন্যই তড়িঘড়ি করে ফরমালিনের ব্যবস্থা করেছিলাম। এ দেশে টাকাপয়সাওয়ালাদের জন্য কোনো কিছুই কোনো সমস্যা না। তবে আব্বা-আম্মাকে ম্যানেজ করতে একটু কষ্ট হলো- এটা ঠিক। শেষমেষ বললাম- ভাদ্রের গরমে মৃতদেহ থেকে গন্ধ ছুটে গেছিলো। ফ্রিজারে রেখেও কাজ হয় নি। এ জন্য তাড়াহুড়ো করে কবর দিয়ে দেয়া হয়েছে। তোমাদের আর আসার দরকার নেই আপাতত ইত্যাদি......

সেই থেকে শুভ্রা আমার সঙ্গেই আছে। সবসময় থাকে না ও, মাঝে মাঝে তাঁকে আবছা দেখি ঘুরঘুর করছে বাসায়। কখনো রান্নাঘর, কখনো ওয়াশরুম, কখনো আবার ড্রয়িংরুমে টিভি ছেড়ে...... মাঝে মাঝেই ও কথা বলে আমার সঙ্গে। সেদিনই যেমন বললো- "তুমি তো মেয়েগুলোকে নিয়ে শুধু শুধুই দরজা বন্ধ করে বসে রইতে, না? বড়জোড় ওদের বুক টিপে দিতে.... এর বেশি কিছু করার ক্ষমতা তোমার ছিলো না হি হি হি......"

আমি দাঁত কিড়মিড় করতে করতে বললাম- "মিথ্যে কথা !"

"উঁহু। মেয়েগুলোও বুঝে গেছিলো তুমি যে একটা আস্তা নপুংসক। পাছে ওরা তোমার এই দুর্বলতার কথা ফাঁস করে দেয়, এ জন্যই মেরে ফেলেছিলে ওদের। ঠিক না?!"

আমি দু'হাত দিয়ে মাথা চেপে বসে রইলাম। শুভ্রার কথা শুনে মাথা দপদপ করতো আমার।

"শুধু শুধু আমার ডেডবডিটা এখানে রেখে দিয়েছ, রাতুল ! যে জন্য রেখেছ,তোমার সে উদ্দেশ্যটা তো সফল হলো না !"

এ কথা অবশ্য ঠিক। আমি শুভ্রার মৃতদেহ সামনে রেখে সেক্স করবো ভেবেছিলাম। ও নিজ চোখে দেখুক- আমি যে একজন সামর্থ্যবান, শক্ত পুরুষ। কিন্তু কোনো বেশ্যাই আমার এ প্রস্তাবে রাজি হলো না। টাকা দিয়ে অনেক কিছু পাওয়া গেলো সব পাওয়া যায় না আসলে !

আমি বিড়বিড় করে বললাম- "হ্যাঁ, মৃতদেহ সামনে রেখে কোনো প্রস্টিটিউট সেক্স করতে রাজি হয় না।"

"ভুল বললে রাতুল ! আসল সত্যটা হলো- কোনো মেয়ে রাজি হলেও তুমি কিছু করতে পারতে না আসলে ! তোমার সে ক্ষমতাই নেই।"- শুভ্রার গলার স্বর ফ্যাসফ্যাসে, কিন্তু শান্ত। মনে হচ্ছে যেনো- ফাঁসের দড়ি এখনো ওর গলার ওপর চেপে আছে।

"স্টপ। প্লিজ স্টপ ইট !"- আমি কাতর গলায় মিনতি করতাম শুভ্রার প্রতি।

সে কিছু সময়ের জন্য চুপ করে যেতো ঠিকই। তারপর আবার কোনো এক সন্ধ্যায়, অথবা বৃষ্টিবিষণ্ণ রাতে উদয় হতো টিভি পর্দায় ঝিরিঝিরি ভাসতে থাকা ছবির মতন। এ ঘর ও ঘর করতো। মাঝে মাঝে বসে থাকতো টিভি ছেড়ে। বুঝতে পেরেছিলাম, জীবিত শুভ্রা আমাকে মুক্তি দিয়ে গেলেও, মৃত শুভ্রার হাত থেকে আমার নিস্তার নেই।

"আচ্ছা রাতুল, নপুংসক ছেলেরা তো মাস্টারবেটও করতে পারে না, তাই না ! ইশ, বেচারা !"

"তুমি তাহলে এখন আমাকে কি করতে বলো?"- আমি প্রসঙ্গ ঘোরানোর জন্য বলতাম।

শুভ্রা এ কথার কোনো জবাব দিলো না, তবে কথোপকথনের এ পর্যায়ে আমি তাঁকে স্পষ্ট দেখেছিলাম সামনে। দেখি- মেয়েটা তাঁর ডাগর ডাগর চোখ দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে। দু'চোখে তাঁর গভীর বিষাদ।

কিন্তু এটা ঠিক- এতো কিছুর পরও শুভ্রাকে ঘৃণা করতে পারি না আমি। খুব চেষ্টা করেছিলাম ওর প্রতি ঘৃণাভাব জাগিয়ে তুলতে। যে মানুষ আমাকে নপুংসক বলতে পারে, আমাকে অক্ষম বলে অপমান করে, সে আমার ভালোবাসা পাবার উপযুক্ত নয়। কিন্তু চেষ্টা সফল হলো না আমার, বরং ওর প্রতি ভালোবাসা কেবল বাড়ছিলোই। প্রিয় মানুষেরা তাঁদের মৃত্যুর পর প্রিয়তম হয়ে ওঠে, শুভ্রা তো বেঁচে থাকতেই আমার প্রিয়তম ছিলো। তাই ওর সব গালমন্দ, সব তীর্যক প্রশ্নের অপরাধ ক্ষমা করতে বাধ্য হয়েছিলাম আমি। দেখলাম- ভালোবাসার কাছে আমার ইগো কেমন পরাজিত হয়ে পড়ছে শোচনীয়ভাবে।

একসময় ও হঠাৎ হঠাৎ উদয় হওয়াও কমিয়ে দিলো। কিছু জিজ্ঞেস করলে বলতো- ব্যস্ত থাকে, তাই আর আগের মত আসতে পারে না নাকি ! ততদিনে অবশ্য ওর মৃতদেহটাও কবর দিয়ে ফেলেছি। যে উদ্দেশ্যে ওটাকে রেখেছিলাম, সেটা তো আর কার্যকর করতে পারলাম না। তাই ভেবেছিলাম শুধু শুধু আর ওটাকে রেখে লাভ নেই কোনো। তবে আমার একটা আশংকা ছিলো, মৃতদেহ কাছছাড়া করে ফেললে শুভ্রা হয়তো একেবারেই আসা বন্ধ করে দেবে, এবং সত্যি সত্যি হলোও তাই ! যদিও সেটাকে একরকমের মুক্তি বলা যেতে পারে, তবে তেমন স্বাধীনতা আমি চাই নি আসলে। শুভ্রাকে ছাড়া জীবন অসহনীয় ঠেকবে আমার কাছে- এ আমি জানতাম। কেননা ওকে আমি ভালোবেসেছিলাম হৃদয়ের সত্য থেকে।

তাই আসলেই শুভ্রা যখন পুরোপুরি আমার কাছে আসা বন্ধ করে দিলো, তখন আমি চূড়ান্ত মুক্তি, চূড়ান্ত স্বাধীনতার একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছিলাম একদিন। ঠিক করলাম- কোনো এক বিষণ্ণ বিকেলে আমি পূর্বাচলের ঐ দীঘিটাতে আত্মাহুতি দেবো। চলে যাবো শুভ্রার কাছে। এ ছাড়া আমার সামনে আর দ্বিতীয় কোনো পথ খোলা ছিলো না। তাই সুযোগ পেলেই দীঘির পাড়ে গিয়ে বসে থাকতাম তখন। একটা, শুধুমাত্র একটা মন-খারাপ-করা বিকেলের অপেক্ষা করতাম।

কেন জানি আমার প্রতীক্ষা ফুরতো না আর। প্রতিদিনই এক একটা অপূর্ব বিকেল নামতো দীঘির নীলাভ নীলাভ জলে। আমি মুগ্ধ হয়ে দেখতাম রোদের রঙ নরম হলুদ থেকে মরিচগুড়োর মত লালে পালটে যাচ্ছে হরিণের ছন্দময় গতির মত। হঠাৎ শুভ্রার মুখটা কখনো কখনো মনে পড়ে যেতো আমার। আফসোস হতো, ইশ ! এ আলোটুকু যদি পালটে যেতে দেখতাম শুভ্রার নোনতা ত্বকের মায়ায়। কিংবা ওর চোখের পাতার নরমে !

কে যেনো আমার মাথার ভেতর আবৃত্তি করে উঠতো গাঢ় স্বরে। আমি চোখের পানি মুছে, নিঃসঙ্গ ডাহুকের মত কবিতা শুনতাম সে রহস্যময় কন্ঠের -

"কড়ির মতন শাদা মুখ তার,
দুইখানা হাত তার হিম ;
চোখে তার হিজল কাঠের রক্তিম
চিতা জ্বলে : দখিন শিয়রে মাথা শঙ্খমালা যেন পুড়ে যায়
সে-আগুনে হায়।

চোখে তার
যেন শত শতাব্দীর নীল অন্ধকার;
স্তন তার
করুণ শঙ্খের মতো— দুধে আৰ্দ্র— কবেকার শঙ্খিনীমালার;

এ-পৃথিবী একবার পায় তারে, পায়নাকো আর। "

***

(সমাপ্ত)
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ বিকাল ৪:২৯
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×