
দেশে চুরি-ডাকাতি-ছিনতাই বেড়ে গিয়েছে। এটা পুরানো খবর। দিনে-দুপুরে রাস্তায় ছিনতাই, চাপাতি নিয়ে সুপার-শপে ডাকাতি করেছে গত শুক্রবার। এটা মোহাম্মদপুরের ঘটনা। অতিষ্ঠ এলাকাবাসী থানার সামনে এই অবস্থা নিরসনে বিক্ষোভ জানাচ্ছে।
এই চাপাতি-ম্যানদের বিরুদ্ধে পুলিশ তড়িৎ এ্যাকশন নেবে সেই আশা সকলের। এই অবস্থা শুধু মোহাম্মদপুর বা রাজধানীতে নয়—গ্রামের রাস্তাগুলোতে সন্ধ্যার পর চলাচল দিন দিন ভীতিকর হয়ে উঠেছে। আগে পুলিশের গাড়ি টহল দিতে দেখা যেত—চৌরাস্তায় বাঁশ ফেলে পুলিশ গোরু চোর ধরার চেষ্টা করত। অভিযোগ আছে গোরু চোর পার হয়ে গেলে না কি পুলিশ বাঁশ টানাটানি করে বাঁশি ফুঁকত!
সে যাই হোক রাস্তায় পুলিশ থাকত। এখন সব হাওয়া! থানা থেকে শুরু করে সকল স্থানে পুলিশি তৎপরতা একেবারেই নেই। এভাবে কত দিন চলতে পারে!
সরকার থেকে হুমকি-ধমকি দেয়ে হয়েছে পুলিশদের এ্যকটিভ হতে—এদিকে তাদের কচ্ছপ গতি।
১ অক্টোবর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আইনশৃঙ্খলা উপদেষ্টা কমিটির দ্বিতীয় সভায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, 'পুলিশের যেসব সদস্য এখনও কাজে যোগদান করেননি, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। এছাড়া এখনও কাজে যোগদান না করা পুলিশ সদস্যদের আমরা পুলিশ বলব না। তাদের অপরাধী (ক্রিমিনাল) বলব।'
ভাল, খুব ভাল। কিন্তু কেন তারা কাজে যোগ দেয়নি, তারা কোথায় রয়েছে— ছোট্ট এই দেশে ফেসবুকের এই যুগে এটা বের করা কি খুব কঠিন? তারা সত্যি পলাতক নাকি পৃথিবীতেই নেই সেই তথ্যটি আমাদের জানার অধিকার কি নেই?
সমাজ কল্যাণ, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ সম্প্রতি রাজধানীতে একটি অনুষ্ঠানে বলেছেন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অসহযোগিতার কারণে দ্রুত গতিতে কাজ এগোচ্ছে না। অতিদরিদ্র সোয়া কোটি ভাতাভোগীর অক্টোবরের ভাতা এখনও ছাড় করতে পারেনি মন্ত্রণালয়।
কেউ যদি চাকরি হারানো ভয়ে থাকে সে তার দায়িত্ব ঠিক মতো পালন করতে পারবে না এটাই স্বাভাবিক। বিগত দিনে যারা অতি উৎসাহী হয়ে অপকর্ম করেছে তারা শাস্তি পাবে কিন্তু অন্যরা নিরাপদ এই ধারনা বর্তমান সরকার তৈরি করতে পারেনি। ফলাফল হল প্রশাসনে স্থবিরতা নেমে আসা।
পুলিশের কাছে আমরা সেবা আশা করব কিন্তু তাদের নিজের নিরাপত্তার বিষয়টি যদি ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দেয়া হয় তাইলে সেটা কীভাবে সম্ভব!
জুলাই-অগাস্টে অভ্যুত্থানে আহত-নিহত সবার বিচার হবে শুধু পুলিশ বাদে। তারা যেন মানুষ নয়! আট অগাস্ট পর্যন্ত ইনডেমনিটি দেয়া হয়েছে। পাঁচ তারিখে পরে দেশে খুন-খারাবি-লুট-অগ্নি সংযোগ হয়েছে এগুলা কি বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের অংশ? থানার অস্ত্র কেন লুট হল? থানায় ঢুকে কেন পুলিশ হত্যা করা হয়েছে? সিভিল পোশাকে বাজার করতে গিয়ে পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে!
পুলিশ হত্যার বিচার যদি না হয় থানা হত থানা লুণ্ঠন অগ্নি সংযোগ পুলিশের অস্ত্র লুটপাট এর ঘটনার যদি কোন মামলা না চলে তাহলে এই অস্ত্রগুলো উদ্ধার হবে না ।যারা এই ঘটনাগুলি ঘটিয়েছে এগুলি কখনোই বের করা সম্ভব হবে না।
একজন পুলিশ যদি দেখে তার ভাই, সহকর্মীর হত্যার কোন বিচার হচ্ছে না তখন সেই পুলিশের মনোবল ভেঙ্গে পড়বে। কিভাবে আশা করব দেশের আইনশৃঙ্খলা আবার স্বাভাবিক হয়ে আসবে! পুলিশরা যেকোনো কাজে মনোবল হারিয়ে ফেলবে।
পুলিশ যদি নিজেই নিরাপদ বোধ না করে তারা হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকবে। তাদের নিরাপত্তা বা তাদের হত্যা নির্যাতনের যদি বিচার না হয় তাহলে অফিসারদের নির্দেশ তারা কখনোই পালন করবে না। বাহিনীতে চেইন অব কমান্ড ভেঙ্গে পড়তে বাধ্য।
আমরা জানি না বর্তমান সরকার পুলিশ বাহিনীদের ভেতরে এরকম একটি অবস্থা তৈরি করে দেশের আইন-শৃঙ্খলা কীভাবে ফিরিয়ে আনতে পারবে
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে অক্টোবর, ২০২৪ রাত ১০:৪৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




