নীরার সাথে আমার বিয়ে হয়েছে প্রায় দুই মাসের মত।এরেঞ্জ ম্যারেজ তাই এখনো বুঝে উঠতে পারিনি ওকে। তবে আমি খুব সহজেই যেকোন মেয়েকে বুঝে যাই , কিম্বা অন্তত পড়ে ফেলতে পারি।কিন্তু নীরার ব্যাপারে তা ঘটছে না। আমি কোনভাবেই নীরাকে বুঝতে পারছিনা। নীরাকে যতই বুঝে উঠবার চেষ্টা করি ততই সে আরো দূর্বোদ্ধ হয়ে ওঠে আমার কাছে। সহজ সরল একটা সাদামাটা ভাব একটা অন্য রকম সরলতা আছে নীরার মাঝে। এই সরলতাটাই আরো বেশী ওর মনের ভেতরের জগৎটাকে একটা পর্দার মত করে ঢেকে রেখেছে।ওর সাথে যত সহজ হতে চাই ততই কেন যেন কি এক জটিলতা ঘিরে ধরে।এতদিন হয়ে গেলো এখনো সে আমাকে আপনি বলে। অবশ্য এখনো আমাদের মাঝে তুমিতে আসবার মত বোঝা পোড়া তৈরি হয়নি।কারণ বিয়ে তিন মাস হলেও আমাদের সংসারের গোড়া পত্তন হলো মাত্র সপ্তাহ খানেক হলো।দুজনের দূরত্বটা তাই এখনো অনেকটাই রয়ে গিয়েছে।
অফিস থেকে ফিরেই নিরার মুচকি হাসি আর আর উচ্ছল চাহুনিতে মনের ক্লান্তি দূর হয় নিমিশেই।কিন্তু প্রায়ই কেন যেন বিষন্ন ও লাগে।কারণ নিরার হাসির মধ্যে নিরুর ছায়া চলে আসে।সেই ভবঘুরে জীবন , নিরুর সাথে শত স্মৃতি যেন কয়েক মূহুর্তের জন্য মনে ভেসে উঠে। আনমনা হয়ে যাই। হঠাৎ নিরুর কথা মনে পড়ে যাওয়ায় কফি খেতে ইচ্ছে হলো।আমাকে অবাক করে দিয়ে নিরা দুকাপ কফি নিয়ে হাজির!বললো তাড়াতড়ি ফ্রেশ হয়ে আসেন এক সাথে কফি খাবো। আপনাকে খুব ক্লান্ত দেখাচ্ছে।নিরুর সাথে শেষ কবে কোল্ড কফি খেয়েছিলাম মনে নেই।ফ্রেশ হয়ে এসে নিরার হাতের কোল্ড কফি আর ঝাল-পিঠা খেতে খেতে নিরার দিকে অপলক তাকিয়ে আছি।নিরা চমকে উঠে লজ্জায় লাল হয়ে চলে গেলো।
গভীর রাত।পূর্ণিমা।হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে গেলো।জানালা দিয়ে চাঁদের আলো এসে নীরার মুখে পড়েছে।অপূর্ব লাগছে শ্যামবরণ মুখখানি।চুল দিয়ে মুখের কিছু অংশ ঢেকে আছে।সরিয়ে দিতেই নিরা চোখ মেললো।
কখন উঠেছেন?
এইতো খানিক আগেই।
কোন স্বপ্ন টপ্ন দেখনি তো?
নাহ এমনিতেই ঘুম ভেঙ্গে গেলো।
ওহ আচ্ছা।
নীরা!
জ্বী বলেন।
তুমি আমাকে আপনি করে আর বলবে না।
ঠিক আছে।চেষ্টা করবো।
ছাদে যাবে? জ্যোৎস্না দেখবো।আজ শেষ তিথিতে লাল চাঁদ দেখা যাবে।
চলেন যাই।
আবারো?একবার বলোনা , “চলো যাই”।
কিছু না বলেই নীরা চলে গেলো।রান্না ঘর থেকে এক কাপ গরম কফি বানিয়ে ঢেকে নিয়ে এলো ।
আমরা দুজনে ছাদে।পাশাপাশি দাঁড়িয়ে দুজনে এক কাপে কফি পান করছি,এক জায়গাতেই ঠোট লাগিয়ে।আর জ্যোৎস্না , মুক্ত আকাশে মেঘেদের উড়ে চলা , ঠান্ডা বাতাস উপভোগ করছি।নীরা পরম নির্ভরতায় আমার বুকে পিঠ ঠেকিয়ে কাছে চলে এলো।এতটা কাছে এর চেয়ে কাছে হয়তো আর আসা যায় না।আমিও ওকে জড়িয়ে ধরে জ্যোৎস্নায় ডুবে গেলাম।ওর চুল থেকে বেলী ফুলের গন্ধ আসছে।একটা আলাদা প্রশান্তি বুকের ভেতরে অনুভব করছি।আমি নীরা নামের মেয়েটাকে ভালোবাসতে শুরু করেছি।ঠিক যে ভাবে নিরুকে মনে ঠাই দিয়ে রেখেছি সেভাবেই হয়তো।নীরা আমার থেকে দিন দিন ভালোবাসা আদায় করে নিচ্ছে।গভীর থেকে গভীরে গেথে যাচ্ছে সেই ভালোবাসা।অথচ নীরাকে আমি বুঝতে পারছিনা। নীরা থেকে যাচ্ছে এত কাছে থেকেও অন্য এক আড়ালে।ভালোবাসা হয়তো এভাবেই পরিপুর্ণতা পায়। তাই নীরাকে বোঝার চেষ্টা বাদ দিয়েছি।শুধু ওকে খেয়াল করছি হয়তো এভাবেই একদিন নীরা কেউ পড়ে ফেলবো। আর ও আমার মনের ভেতরের খুব চেনা মানুষ হয়ে উঠবে......
১৫-০৮-২০২১ রাতঃ ৩.৩৫ মিনিট।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই আগস্ট, ২০২১ রাত ৩:৪৩