আজ একটা খুন করব।
ডিসিশনটা যে খুব চিন্তা ভাবনা করে নেয়া তা'নয়, এক রকম ঝোকের বশেই নেয়া বলা যায়। তবে আমার লাইফের বড় বড় সকল সিদ্ধান্তই এইরকম হুট হাট করে নেয়া। লাবনিকে যেদিন "আই লাভ ইউ" বললাম সেদিনও খুব বেশী চিন্তা ভাবনা করিনি, বছর দুএক আগে একবার বাসা থেকে পালালাম, সেটাও চিন্তা ভাবনা ছারাই। বলা যেতে পারে আমি একটা অস্থির মতি ছেলে যখন যা মাথায় চাপে করে ফেলি।
যাকে খুন করা হবে তার নাম সাদিক। বেশ শান্ত সুবধ ছেলে, আগামি বছর ফিজিক্সে অনার্স কমপ্লিট করবে। পড়াশুনায় মোটামুটি, হাল্কা কবিতা লেখার অভ্যাস আছে। আমার সবচে কাছের বন্ধু সেই ক্লাস এইট থেকে।
ওকে খুন করাটা জরুরী হয়ে পরেছে। কিভাবে কাজটা করব তাও মুটামুটি ঠিক করে ফেলেছি। বুদ্ধিটা গত কালই মাথায় এসেছে। আমি আর সাদিক দাড়িয়ে ছিলাম রামপুরা ডি আই টি রোডের ধারে, রাস্তা পার হব। হুসহাস করে গাড়ি ছুটে যাচ্ছে, আমরা কিছুতেই পার হতে পারছি না। বুদ্ধিটা তখনই মাথায় এল। খুব বেশি কিছু করতে হবে না, সুযোগ বুঝে সাদিককে ঠেলে দিতে হবে একটা চলন্ত বাসের সামনে। জাস্ট সময় মত পিঠে একটা মাপা হাতের ধাক্কা, ব্যাস, সব ফিনিস। টাইমিঙটা ইম্পরট্যান্ট, সময়ের আগেই ধাক্কা দিয়ে ফেললে বাসের ড্রাইভার ব্রেক কসে ফেলতে পারে, আবার সময় মত ধাক্কা না দিতে পারলে হয়ত ওকে বাসের সামনে ফেলাই যাবেনা। অতএব, সময়ের এক চুল এদিক ওদিক হয়া চলবে না। ডি আই টি রোড আমরা রোজ দিনে দুইবার পার হই, অতএব ভিকটিমকে খুনের স্পটে নেয়া কঠিন হবে না। যেকোনো প্লানকে তখনই ভাল বলা যায় যখন প্ল্যানটা সিম্পল হয়, আমার প্ল্যানটা সিম্পল।
আমার সমস্যা হল আমি মানুষটা চুপচাপ স্বভাবের, চুপচাপ এবং জেদি। আমি একা একা থাকতে ভালবাসি। আসলে কথাটা সত্যি নয়, আমি একা একা থাকতে চাইনা। কিন্তু একা না থেকে আমার কোন উপায় নেই। আমি ভাল গল্প বলতে পারি না, নতুন কারুর সাথে সহজে মিশতে পারি না, মনের কথা গুছিয়ে বলতে পারি না। আমার মত মানুসের খুব বেশি বন্ধু থাকার কথা নয়। সত্যি বলতে কি সাদিক ছাড়া আমার আর তেমন কোন বন্ধু নেই।
সাদিকও অনেকটাই আমার মত। মুখচোরা টাইপ ছেলে। আমাদের চিন্তা ভাবনা পছন্দ-অপছন্দও অনেকটা এক রকম। স্কুলে থাকতে অনেকেই আমাদের বলত মানিকজোড়। এই মিল থাকাটই কাল হল। লাবনিকে যখন প্রেম নিবেদন করলাম সে মাটির দিকে তাকিয়ে ছিল। কোন জবাব দেয়নি। কেন জবাব দেয়নি আমি জানি। এর কারন লজ্জা বা আর কিছু নয়। কারন দ্বিধা। আমি যেমন লাবনিকে ভালবাসি, সাদিকও তেমনি বাসে। আমরা দুজন একসাথেই ওর প্রেমে পরেছিলাম। এইটা আমি অনেক দিন আগে থেকেই জানতাম, যেটা জানতাম না তা হল লাবনিও আমাদের দুজনকেই ভালবাসে। আর কেন বাসবেনা? আমি আর সাদিক একে অপরের প্রতিচ্ছবি, আমাকে যে ভালবাসবে সঙ্গত কারনেই সাদিকের প্রতিও তার আগ্রহ থাকবে। সভাবে চরিত্রে আমরা জমজ ভাইএর মত।
******
রামপুরা ডি আই টি রোডের ধারে আমরা দুজন দাড়িয়ে আছি। আমার পাশে দাড়িয়ে সাদিক উসখুস করছে। ও কখনই রাস্তা পার হবার সময় ধৈর্য ধরতে পারে না। হুস হাস করে আমাদের সামনে দিয়ে গাড়ি চলে যাচ্ছে। সূর্য ডুবে গেছে একটু আগে, ল্যাম্পপোস্ট গুলো জলে উঠেছে। হেডলাইট জালানো বড় বড় বাস গুলোকে দেখতে সাক্ষাৎ দানবের মত লাগছে।
আমি লম্বা দম নিলাম, বড় একটা বাস ছুটে আসছে। এখনই সময়। আমার একটা হাত সাদিকের পিঠে রাখাই আছে। জাস্ট মাপা হাতের একটু ধাক্কা, ব্যাস। মেরে ফেলার আগে আমি কি সাদিককে কিছু বলব? হাজার হলেও ছেলে বেলার বন্ধু, তার উদ্দেশে কোন বিদায় বানী থাকবে না? থাক, দরকার নেই, যত তাড়াতাড়ি কাজ সারা যায় ততই ভাল।
বাস আগিয়ে আসছে বুলেটের গতিতে। আমার রক্ত চলাচলের গতি বেরে যাচ্ছে, হাতের পেশীগুলো শক্ত হয়ে আসছে, স্নায়ু টানটান হয়ে উঠেছে।
এখনই সময়!!!
আমি কিছু বুঝার আগেই পিঠে প্রচনড ধাক্কায় আমি রাস্তার ওপর ছিটকে পরলাম। পিচ ঢালা রাস্তায় মাথা ঠুকে গিয়ে সারা শরীর অবস হয়ে গেল। যমদূতের মত বাসটা ছুটে আসছে আমার দিকে, আর এক মুহূর্ত পরেই আমাকে পিশে ফেলবে।
আমি অবাক হয়ে তাকাই সাদিকের দিকে, সেও বিষণ্ণ চখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। গাড়ির তিব্র হর্ন শোনা যাচ্ছে। সেটা ছাপিয়ে আমার মনে হল সাদিক বলল "স্যরি দোস্ত, কিন্তু লাবনিকে যে আমিও বড় বেশি ভালবাসি।"

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



