মূল : সামি হারমেজ
মাত্র বেরুলাম কারাগার থেকে। কয়েকটা দিন বাজপড়া মানুষের মতো হতভম্ব বসে থাকার অভিজ্ঞতা দিয়েছে সময়টা। দিয়েছে সুযোগ অভিজ্ঞতাটা লিখে ফেলার। কিন্তু, যেহেতু এখনো হতভম্ব আমি, তাই নিজের নিরাপত্তার খাতিরে অ্যারেস্ট হওয়ার গল্পটা পুরোপুরি না বলাই ভালো। তারচেয়ে বরং বিনা বিচারে আটক থাকার ঘটনা একটু বলে ফেলি। আমার আটক হবার ইঙ্গিত হচ্ছেÑ আমি নাকি ‘সন্দেহভাজন ইসরাইলি গুপ্তচর’! আমার অপরাধÑ বিশ্বাসঘাতকতা!
আমি বলতে চাইছি কী করেছিলাম অ্যারেস্ট হওয়ার আগে ও পরে; কিংবা এখন। আমি বলতে চাইছি আমার মতো করে, সচরাচর যেভাবে বলি। কিন্তু যতোবারই লিখতে চেয়েছি, অটোমেটিক লেখার ধরণ হয়ে যাচ্ছে এমনÑ যেন আমি এখনো বন্দি হয়ে দাঁড়িয়ে আছি জেরাকারী জাঁদরেল অফিসারদের সামনে। এই অনুভূতি, এই বাস্তব অনুভূতিটা আমার ভাল্লাগে না; তবু কেন যে ফিরে ফিরে আসে!
তারা আমার নাম জানতে চেয়েছে। নিজের নাম কি কেউ কোনোদিন ভুলে? তবু থতোমতো লেগেছে খুব। জানতে চেয়েছে জন্মস্থান ও জন্ম তারিখ। এমনকি ধর্ম-গোত্রও। আমি বারবার পুনরাবৃত্তি করেছি।
সিরিয়ার চ্যালা! ইলিয়াস কৈরি’র উপন্যাসটা মনে পড়ছে। ‘ইয়ালো’। আমি কি ইয়ালোর মতো নির্যাতনের শিকার হয়েছি? কান্না পাচ্ছে। ‘না। তুমি কেঁদো না। অ্যারেস্ট হওয়ার শুরু থেকেই তোমার আত্মবিশ্বাস আর আশাবাদ একই আছেÑ তুমি কোনো দোষ করোনি। তোমার বিশ্বাস ছিলÑ তারা খুব তাড়াতাড়ি বুঝতে পারবে বিষয়টা। তাই তোমার নিজের মার্যাদা আর অহংকার নিয়ে অপো করা উচিত!’ আমার এলোমেলো চিন্তা-ভাবনা আমাকে তাড়িয়ে নিচ্ছে। অবাক লাগছিল ভাবতে, যদি শত্র“পরে কারাগারে আটক থাকি, তখন কেমন আচরণ করবো আমি। লেবাননিজ হয়ে লেবাননের কারাগারে বন্দি থাকার সময় মনে হয়েছে আমরা সবাই মিলে ভীষণ যুদ্ধের মধ্যে আছি। আমাদের এক থাকা উচিত। একতার ভাবনা আমাকে সাহসী করে তোলে, করে তোলে কষ্টসহিষ্ণু। কিন্তু আমি জানি আমাকে কী ভাবা হচ্ছে। তবু ইচ্ছে করছে তাদের ডেকে বলি, বিনা দোষে এভাবে আটকে রাখার কোনো মানে নেই!
অ্যারেস্টের কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ‘গুপ্তচর’। আমি দাঁড়িয়ে ছিলাম জেরাকারীদের সামনে। সিক্রেট সার্ভিস ‘মুখাবরত’-এর সামনে। অন্য সৈন্যদের সামনে। আমি কেবল ভাবতে পারছি, কী বোকা টাইপের লোক ছিলাম আমি যে, এতো জড়োসড়ো হয়ে থাকতে হলো। নিজ দেশে ফেরত আসার পর ‘মাউন্ট লেবানন’ আমাকে যুদ্ধরত দণিাঞ্চল থেকে নিরাপদ দূরত্বে রেখেছে। প্রলয়কারী ধ্বংসযজ্ঞের পর আমিও একদিন গিয়েছিলাম বিধ্বস্ত বৈরুতে। আমি ঠিক বুঝতে পারি না আমরা যখন বিপদগ্রস্ত দেশে বাস করছি তখন আমার নিজের কি দরকার নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করা। এ আমার দেশ। আমি জানি আমি কে। জানি, প্রিয় দেশের বিরুদ্ধে কিছুই করিনি আমি। আরো জানি সবলোক এ কথা এমনি এমনি বিশ্বাস করবে না। নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ার আগ পর্যন্ত তাদের অনুধাবণ করার সময় দিতে হবে। ওহ্, দোষ না করে ‘নির্দোষ’ প্রমাণিত হওয়ার প্রচেষ্টা যে কী যন্ত্রণার! তো, আমি যেহেতু সন্দেহভাজন হিসেবে বন্দি, আমাকে তার দায়ভার নিয়ে বন্দিই থাকতে হবে।
অ্যারেস্টের পর দুইদিন এমনিতেই গেছে। ভাবি, কী অবিশ্বাস্য সেসব অভিজ্ঞতা! খুলে বলার মতো, তুলে ধরার মতো তেমন কিছুই নেই। লেবানন সরকার বা সেনাবাহিনীকে দুর্বল হিসেবে প্রমাণ করার কোনো ইচ্ছে আমার নেই। কেননা, যুদ্ধ চলছে। এ মুহূর্তে তাদের সন্দেহ যে ভুল, তা প্রমাণ করে তাদের আত্মবিশ্বাসকে নাড়িয়ে দিতে চাই না আমি! তার উপর, তারা তো তাদের কাজটাই করছে। নিজের মাথার ভেতরে আমি বারবার এই চিন্তাটাকেই বাজিয়ে নিতে চাইছি, ‘আমি দোষী বলেই আমাকে অ্যারেস্ট করা হয়েছে, আমার রাষ্ট্র কোনো ভুল করেনি।’ স্বদেশের এই বিপদগ্রস্থ সময়ে নিজেকে মনে মনে দোষী হিসেবে মেনে নিতে উন্মাদের মতো টেবিলের চারপাশে ঘুরেছি অগুণতিবার। তবু কিছু একটাতে যেন ঠিক তাল পাচ্ছিলাম না। আমরা কি আমাদের সমাজের কল্যাণে স্বাধীনতাটাকে বিসর্জন দিতে পারবো? কারাগারে আমার রাত্রিযাপন আর যাবতীয় অভিজ্ঞতা কি সেনাবাহিনীর মনের অবিশ্বাসকে দূরে ঠেলতে পারবে? আমার যোগাযোগে যদি না হয় এমন, আমি আরো একরাত কিংবা কয়েক সপ্তাহ কারাগারে কাটিয়ে দিতে রাজি আছি। আমি কাজে আসছি না; কেবল চিন্তা করতে পারছি। আমার মতো আরো যারা ‘রাষ্ট্রদোহী কাজে শত্র“পরে সহযোগী’ হিসেবে অ্যারেস্ট হয়েছে, জানি তাদের মধ্যেও আমার মতো কেউ কেউ নির্দোষ হয়েও কলঙ্কের কালিমায় কিম্ভুতকিমাকার হয়ে উঠছে মনে মনে। এ পরিকল্পনা হয়তো সরকারকে কোনো শক্তি যোগাবে, আত্মবিশ্বাস যোগাবে ইসরাইলের সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধ করার মতা না দেখালেও সারাদেশের মানুষকে একত্র করার বীরত্বে। এই যুদ্ধের সময়ে যদি আমরা সঠিক রাষ্ট্রদ্রোহী আর গুপ্তচরদের সনাক্ত করতে না পারিÑ কিভাবে স্বাধীনতা আর নিরাপত্তার সমন্বয় ঘটবে? এই প্রশ্নের তাড়না আমার বিবেককে ভারি করে তুলছে।
আমি বিশ্বাস করি, বন্দিদের সঙ্গে সঠিক ও মানবিক ব্যবহার করা হোকÑ যেমনটা করা হয়েছিল আমার সঙ্গে। আটকাবস্থায় আমাকে পাঠানো হলো একটি সামরিক কারাগারে। চারপাশে যুদ্ধের গর্জন। যুদ্ধের সময়টায় জীবন অপোর এক খেলায় পরিণত হয়। এ অপো পরবর্তী শান্তির খবরের। অপো পরবর্তী বোমা বিস্ফোরণের। অপো যুদ্ধশেষের। বন্দিত্বে কাটতে না চাওয়া সময়ে সুযোগ পেয়েই হতাশা আমায় ছেয়ে ফেলে। মনে পড়ে, সবটাতেই আমি সব সময় এগিয়ে ছিলাম। নিজের ভুড়ি নিয়েও! তার তুলনায় কী বাতিল মাল হয়ে পড়ে আছি। যে কারণে লেবাননে ফিরে আসাÑ যুদ্ধ বিধ্বস্ত মানুষের কোনো কাজেই আসতে পারছি না। অনবরত বোমা বর্র্ষণ চলছে তো চলছেই। যুদ্ধের শব্দ আমার কাছে বিপজ্জনকভাবে স্পষ্ট ও পড়শি হয়ে পড়েছে। কোথায় আছি আমি, আছিই বা কেমন, বেঁচে না মরেÑ ওহ্, আমার ফ্যামিলির কেউ তার কিছুই জানে না।
কা-রা-গা-র। কারাগারে একরাত। খাদ্যহীন। সন্দিগ্ধ আমার সামনে কেবল একটু পানি। হ্যান্ডক্যাফে আটকে থাকা টানা ছয়-সাত ঘন্টা। চোখবাঁধা চার ঘন্টা। একজন বন্দির কী করার আছে এমন মুহূর্তে? তোমার জন্য কিছু একটা করবো আমি :
তুমি তাড়াতে থাকোÑ
সূর্য
মুক্ত বাতাস
যতোটা মরুভূমি আপন করে নেয়া যায়
দিন এবং রাত্রি
কোন এক বন্দির সময়জ্ঞান
সবকিছু তাড়াতে পারো তুমি
হাত ও বাহুর নড়াচড়া
চার দেয়ালে চলাচল মতা
এসব করা যেতে পারে
নির্দেশের ঢঙ
মাথানত-করুণা প্রার্থনার ঢঙ
মানবতার প্রতি স্রষ্টার দোহাই!
সব করা যাবে
মানুষ হিসেবে, মানবিকভাবে, তুচ্ছাকারে নয়, তোমার চোখে-মুখে মানবতার অবাক হাসি খেলা করুক। এমনকি কর্কশ যেকোন কিছু প্রাপ্য হিসেবে গ্রহণ করো তুমি!
মুক্তির আগ পর্যন্ত যা কিছু ঘটেছে, ইউএস-জর্ডান আর লেবানিজ সরকারের বন্দি হয়ে ইমেইল সহ অনেক কিছুই উল্টে-পাল্টে দেখার দৃশ্য বারবার মনের ভেতর প্রদর্র্শিত হচ্ছিল সিনেমার মতো। যদি জেনে যাও নজরবন্দি তুমি, কিভাবে থাকবে জ্ঞান ও দুঃখ নিয়ে? শেষ কটা দিন নিজের পৃথিবীকে আমার মনে হয়েছে কেবল চার দেয়ালের একটা ঘর। আমি কখনো ভেঙ্গে পড়বো না কিংবা হার মানবো নাÑ আমার প্রতি অন্যদের এমন বিশ্বাসকে সঙ্গী করে নিস্তব্দতার হিম-শীতলতা কাটাতে লিখে চলেছি আমি। ভুল কিছুই করিনি আমি। আবার আমি কাটাতেও চাই না এমন সময়, যেমনটা কেটেছে গত কয়েক দিন :
আবেগহীন উচ্চহাসি। প্রিয় একজন মানুষের কেমন যে কাটে হ্যান্ডকাফ আর চোখবাঁধা সময়। হতবুদ্ধিতা। নিরপেতা। অসম্মান আর রহস্যময় শূন্যতা। একটি সেলে একা একা। করুণ বেদনা ও বেদনাহত পরাজয়ে! আর সবই ঘটেছে আমারও, কেবল হার মানিনি। বাচ্চাদের মতো ভেবেছি ৩০ বছরও কাটিয়ে দেওয়া যায় কারাগারে। সৌল অ্যালেনস্কি লিখেছেনÑ ‘জেলই জন্ম দেয় বিপ্লবের।’ কে মানে এটা? আমার ধারণা জীবনই জন্ম দেয় এসব; কেবল একরাত জেল-বন্দি থাকার বোকা মার্কা কোনো ভুল নয়।
জেলে আমার সঙ্গে সম্পূর্ণ মানবিক আচরণ করা হয়েছেÑ এমনটা বলতে পারি না আমি। তবে ইসরাইলের হয়ে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধে সন্দেহ করা আমাকে খুব একটা দুর্ব্যবহারের শিকার হতে হয়নি। তারা গায়ে হাত তুলেনি। আমি ধন্যবাদ দিতে চাই এবং আমার জেল-সময়টা উৎসর্গ করতে চাই মিলিটারি পুলিশ প্রিজনের সেই গার্ডকে যিনি আমাকে প্রথমে তার একটি বিশেষ স্যান্ডউইচ ও পরে সামুদ্রিক টুনা মাছের লোভনীয় আরেকটি স্যান্ডউইচের অফার করেছিলেন। এই মানুষটির নাম জানা হয়নি আমার। ভীষণ করুণাময়। তরুণ। যুদ্ধকে ঘৃণা করেন ভীষণ। জীবনে যতো সৈন্যের সঙ্গে মিশেছি, অনেকেই তার মতো যুদ্ধবিরোধী। ফলে এই প্রথম শুনছি না কোনো প্রিজনার পারস্পরিক সম্পকোন্নয়ণের কথা বলছে। আমার তদন্তকর্মকর্তাও অবশ্য যথেষ্ট ভালো ব্যবহার করেছেন।
অনেক সময় কেটে গেছে, যখন নিজেকে দ্বিধামুক্ত মনে হলো। তুমি তাড়াতাড়ি শিখে নিতে পারো, কিভাবে নিজেকে নির্দোষ হিসেবে উপস্থাপন করবে আর তোমার গল্প ও জীবন বিভাবে বিভক্ত হয়ে যাবে অন্যদের কাছ থেকে।
সন্দেহ। যখন তোমাকে কেউ সন্দেহ করে, তার পরিণতি ভয়ানক। হুট করেই মনে হবেÑ পৃথিবীর সব দরজা দ্রুত বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ‘কোস্টাবৌবিয়া’Ñ আটকে থাকার ফলে আতঙ্কজনিত এই ভুতুড়ে রোগটি তোমাকে পেয়ে বসবে। নিজেকে মনে হবে অসহায়। কী বলবে তখন, যদি কেউ জানতে চায়Ñ ‘তুমি কার হয়ে কাজ করেছো?’ তুমি যদি বলো ‘কারো না’; তাহলে যদি সে হুঙ্কার করে বলেÑ ‘মিথ্যুক!’
Ñকী করো তুমি?
Ñপড়াশোনা।
Ñমিথ্যুক!
যা-ই বলো তুমি, তারা সন্দেহ করবে; বিশ্বাস করবে না। ‘মিথ্যুক! মিথ্যুক!! মিথ্যুক!!!’ তুমি যা-ই বলো, তা-ই নাকি মিথ্যে। আমি ডকুমেন্ট দেখিয়ে প্রমাণ করতে পারি, আমি কারো হয়ে কাজ করি; কিন্তু তুমি কিভাবে প্রমাণ করবে যে, তুমি আসলে কারো হয়েই কাজ করো না? আমার বেলায়ই একই কথা বলেছে মিলিটারি পুলিশ ইনভেস্টিগেশন ইউনিট। আমি মিলিটারি পুলিশ প্রিজনে একরাত কাটিয়েছি। পরদিন নিয়ে গেছে ‘মুখাবরত’-এ। তারপরই চারঘন্টা চোখ বেঁধে রাখেÑ যেন না দেখি আলো, না দেখি জিজ্ঞাসাবাদকারীর মুখ। সেই গহীন অন্ধকার ভেতরে ভেতরে আমাকে ভেঙে গুড়িয়ে দিয়েছে। কথা বলছিলাম, কণ্ঠটা ঠিক আমার নয়! কিন্তু আমি ছাড়া আর কে-ই বা হবে সেই করুণ কণ্ঠের মানুষ? আমি থেমে যাচ্ছিলাম। আমার অবাক বিমূঢ়তা যেন অচেনা কোন চরিত্রকে নিজের ভেতর দিয়ে সমাহিত করা। আমি হতবুদ্ধি। হয়তো ঠিকঠাকই ছিলাম। কিন্তু কিভাবে কাটাচ্ছিলাম মুহূর্তগুলোÑ আমার বোধমতা তাকে ছুঁতে পারেনি। জীবনের সবকিছু ভুলে গিয়ে ফের মনে করার জন্য অনবরত স্নায়বিক যুদ্ধ করে গেছি আমি।
অবশ্য এমনটা দীর্ঘণ হয়নি। অচিন এক দুঃখবোধ হচ্ছিল। ভেবে এখনো ভেবে পাই না আমার নিরাপদে ফিরে আসা কি চার্চ, মন্ত্রীমহোদয়গণ আর উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তাদের প্রতি আমার ফ্যামিলির প্রার্থনার ফল; নাকি আমেরিকান সিটিজেন বলে রেহাই পেয়েছিলাম! হয়তো আসল কারণটা কখনো জানা হবে না। যদিও কেউ রাজকীয়ভাবের বিরোধীতা করে তবে বামপন্থি কার্যকলাপ ভেবে তাদের প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানে মার্কিন সরকারের অসম্মতি জানানোর গল্প আমাকে অবাক করেছে। এখন আমার নিজেকে ভাবনার জগত থেকে সরিয়ে নেওয়া উচিত!
আমি এ লেখা লিখছি মুক্তি পাওয়ার পর। আমি অবাক হবো যদি তারা অনুধাবন করে :
কী তোমাকে আশাবাদী করে তুলবে আর দুঃখময় সময় থেকে কী তোমাকে দেবে নিজেকে ফিরে পাবার জ্ঞান?
তারা হয়তো তোমাকে আঘাত করবে
এবং তারপর...
তোমার উপর নির্যাতন চালাবে
তারপর...
তোমাকে ঢুকিয়ে দেওয়া হবে বন্দি-জীবনে (অবশ্য বন্দিত্বের ঘটনাটা নির্যাতনের আগেও ঘটতে পারে।)
তারপর...
তারা বারবার বারবার এমনটাই করতে থাকবে।
একসময় তোমার আশাবাদ মরে যাবে। তুমি বিশ্বাস করতে শুরু করবেÑ এ অবস্থায় দুঃখ পাবার কিছু নেই, কিছু নেই হারানোর। তোমার জীবন শেষ হয়ে আসার আগ পর্যন্ত, মানসিক সুস্থতা স্বাভাবিক পর্যায়ে প্রত্যাবর্তনের আশা যখন মরে যাবেÑ তখনো চলবে এমন।
হয়তো তুমি একদিনের জন্যও বন্দি ছিলে না। এমন বর্বোরোচিত পথে হয়তো কখনো তুমি শিখোনি স্বাধীনতার গুরুত্ব, তাতে কিছুই আসে না যদি তুমি ভাবতে পারোÑ যুদ্ধ কতো কুৎসিত আর নোংরা ব্যাপার। যুদ্ধটা থেমে যাওয়ার পর জানি লেবাননের সব মানুষ যুদ্ধ ঘিরে নিজের গল্প বলবে। ভালো হয়, যদি সবার গল্পে থাকে আমার মতো মুক্তি পাবার স্বাদ। সর্বশেষে আমি চাই আমাদের যুদ্ধের গল্পটা আমরা যেন অম্লান হাসিতে শেষ করতে পারি।
[সামি হারমেজ একজন লেবানিজ-আমেরিকান নাগরিক। তিনি প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃতত্ত্বের ডক্টরিয়াল পরীার্থী। সামি মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাতের উপর কাজ করছেন। ইসরাইলের আগাসনে ত-বিত লেবাননে তার পরিবার ও স্বদেশের মানুষের প্রতি সংহতি জানাতে তিনি লেবাননে ফিরে আসেন। এই লেখাটি ৩ আগস্ট ২০০৬-এ লেখা। তখন লেবাননে ইসরাইলের হামলা চলছে। তখনই বাংলা করেছিলাম। লেবাননের জন্য শো্কগাঁথা' নামের একটা বইয়ে ছাপা হয়েছে]
[অনুবাদ : রুদ্র আরিফ]