somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অরিত্রীর পরাজয় ও একটি ভঙ্গুর শিক্ষাব্যবস্থার

০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বাংলার নবজাগরণের ইতিহাস খুব পুরনো নয়। এইতো মাত্র আঠারো শতাব্দীতে আমরা সবেমাত্র শিক্ষাক্ষেত্রে বিপ্লব দেখেছি। ইংরেজ থেকে পাকিস্তান শাসন তারপর স্বাধীন বাংলা। এতো বছরেও কি আমরা পরিপূর্ণ একটা শিক্ষাব্যবস্থা দাড় করাতে পেরেছি? এতোবছরেও কি শিক্ষার মাধ্যমে সংস্কৃতিমণা, ব্যক্তিত্বপূর্ন, মননশীল জাতি হিসেবে নিজেদের প্রকাশ করতে পারি? উত্তর টা না। আমরা পারি নি।

আমরা পেরেছি শিক্ষাকে বানিজ্য করতে, শিক্ষাকে রাজনীতির হাতিয়ার বানাতে, দশ বছরের বাচ্চার মাথায় প্রতিযোগীতার ঘুনপোকা ঢুকাতে, বইয়ের স্তুপ বানাতে, সৃজনশীলতা নষ্ট করতে। আমরা বরং এসব খুব ভালো করেই পেরেছি ।

আমাদের আছে সিস্টেমের ভূত। এখন কি সময় নয় আরেকবার নিজেদের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা করার? সিস্টেমের ভূত তাড়াতে এখনিই কি কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন নয়? জাতি হিসেবে আমাদের ভবিষ্যৎ কি? আমরা নিজেদের কোথায় দেখতে চাই?

জাতি হিসেবে আমাদের অন্তিম মুহূর্তের দাড় প্রান্তে আছি। হয় আমরা এই "ক্রান্চ" টাইমে ভাঙ্গবো, নাহয় পরবর্তী ধাপে এগিয়ে যাবো। বৈপ্লবীক পরিবর্তন প্রয়োজন। সমাজ, রাজনীতি, ধর্ম। সবচে বড় পরিবর্তন দরকার আমাদের মানসিকতায় ।

বাংলাদেশে আত্মহত্যার রেট কত? বোর্ড পরীক্ষার ফলাফলের পর আত্মহত্যার নিউজ প্রায়ই মিডিয়াতে আসে। এইটা কি আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার পরাজয় নয়? একজন ছাত্র যখন তার নিজের জীবনের থেকে সার্টিফিকেটের মূল্য বেশি দেয় তখন এটাকে পড়াশোনা না বলে অন্য কিছু বলা উচিত। আমাদের সমাজের একটি অলিখিত নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে, ভালো স্কুলে পড়তে হবে, GPA 5 পেতে হবে, নামকরা কলেজে পড়তে হবে, পাবলিক ভার্সিটিতে পড়তে হবে, ডাক্তার-ইন্জিনিয়ার হতে হবে, পড়াশোনা শেষ করে BCS দিতে হবে। সবকিছু কেমন যেনো একটি নির্দিষ্ট নিয়মে আটকে আছে। এর বাইরে কিছু করা যাবে না। করা গেলেও বাবা-মা পরিপূর্ণ সন্তুষ্টি পান না। অভিভাবকেরা নিজেদের অপূর্ন ইচ্ছাগুলো সন্তানের উপর চাপিয়ে পূরন করার চেষ্টা করেন। কিন্তু যে ছেলেটার বা মেয়েটার ইচ্ছেটা কেউ জানার চেষ্টা করে না।

স্কুল কলেজে যেখানে শিশু তার নৈতিকতা, মানবিকতা শিখবে। সেখানে আমরা শেখাই প্রতিযোগিতা। দশ বারো বছরের বাচ্চাদের মাথায় প্রতিযোগীতার ঘুনপোকা ঢুকিয়ে দেয়া হয়। চারা গাছ যত্নে লালন করতে হয়, তাহলেই শিকড় মজবুত হয়। সৃজনশীলতার বীজকে অঙ্কুরে নষ্ট করে, ভালো ফলাফল আশা করা অনুচিত। এর জন্য টিনএজ বয়সে ডিপ্রেশনের হার বাড়ছে। কারন পড়াশোনার চাপ ছাড়া এদের কাছে কিছুই নেই। নাহ খেলাধুলো করে, নাহ এরা বই পড়ে(সংখ্যায় কম), এদের হাতে থেকে মোবাইল, ফেসবুক, পিসি। ক্লাস,কোচিং,প্রাইভেটের বাইরে আর কোন জীবন নেই। ঠিক এসময় ওদের কাছে আশীর্বাদ সুরূপ আসে ড্রাগস। খুব সহজেই আশক্ত হয়ে পড়ে নিষিদ্ধ জিনিসে। "চেইন রিকশনের" মতো একেকটা সমস্যার সাথে আরেকটা সমস্যার যুক্ত।


আমাদের কোন স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে কাউন্সিলিং এর ব্যবস্থা নেই। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মনরোগ বিশেষজ্ঞ থাকা আবশ্যক। ছাত্র-শিক্ষক সবারই মানসিকভাবে সুস্থ থাকা প্রয়োজন। শিক্ষাক্ষেত্রে অবহেলা করতে করতে আজ আমরা শেষ পর্যায়ে। এখন শেষ সুযোগ বদলানোর।

তা নাহলে "সিস্টেমের ভূত" ঘাড়ে চেপে বসলে, হাজারো ওঝা ডেকে ঝাড়ুর বাড়ি মারলেও এই ভূত তখন আর নামানো সম্ভব হবে না।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:৩৮
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×