কয়দিন আগেই এস.এস.সি রেজাল্ট বের হলো । প্রতিবারের মতো পাসের হার ও জিপিএ-৫ এর বাম্পার ফলন হয়েছে । এই নিয়ে আমার আর অভিযোগ নেই । এই বাম্পার ফলনের ঝাঁঝ চোঁখে সয়ে গেছে । পত্রিকার প্রথম পাতায় হাস্যোজ্জ্বল ছাত্রছাত্রীদের বিজয়ী মুখ, একটি পরীক্ষা যেনো একটি যুদ্ধ । যুদ্ধ জয়ী হয়ে বাধভাঙ্গা আনন্দ উল্লাস । পুরো পত্রিকা জুড়ে সফলতার বিশাল গপ্পো, পাসের হার বিশ্লেষণ, স্কুলগুলোর মধ্যে র্যাংক করে, ছাত্রদের মধ্যে র্যাংক করে । এক অদ্ভুত প্রতিযোগীতা, এক অদৃশ্য রেস, ছাত্ররা সে রেসের বাজির ঘোড়া আর দর্শক হিসেবে স্ট্যান্ডে অভিভাবক, শিক্ষক, স্কুল, বোর্ড ও একটি রাষ্ট্র । যখন একটি পরীক্ষার ফলাফলে একজন ছাত্রের জীবনের গতিপথ নির্ভর করে, মেধা-মননের হিসাব কষে সফলতা-ব্যর্থতা বিচারে মাপকাঠি গড়ে, একটি পরীক্ষার এতো গুরুত্ব আমাকে চিন্তিত করে তোলে । পাবলিক পরীক্ষা নামক এই গেয়ো ভুত মাথা হইতে কবে সরানো হইবে?
P.S.C - J.S.C পরীক্ষার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে খোদ শিক্ষা মন্ত্রনালয় প্রশ্ন তোলে । পঞ্চম শ্রেনীর একটা শিশুর জন্য জিপিএ-৫ প্রয়োজনীয়তা কতটুকু ? এই অবুঝ শিশু যেখানে বইয়ের ভারে হাফ ছেড়ে বাঁচতে পারে না, যখন ওদের নির্মল আনন্দে বেড়ে ওঠার কথা সেখানে বিকেলগুলি কেড়ে নিচ্ছে প্রাইভেট টিউটর আর কোচিং সেন্টার । তবু কি মূল্যায়ন করতে এই দুইটি পরীক্ষা এখনো টিকে আছে বোধগম্য হয় না । একটি শিশুর শৈশব-কৈশোর এভাবে কেড়ে নেয়ার অধিকার কি আমাদের আছে ? গ্রাম ও মফস্বলে তাও স্বাধীনতা আছে । মেট্রোপলিটনে শৈশব দূরে থাক একটি মুক্ত আকাশে স্বাধীন নিঃশ্বাস নেবারই তো ফুরসত নেই । সেখানে শিশুরা যান্ত্রিকের মতো কম্পিটার আর মোবাইলে ডুবে থাকবে না তো কে থাকবে?
এই প্রতিযোগীতার রেসে শিশু-কিশোরের মানসিক বিকাশের দায় কে নেবে ? কোন বিষয়ে দায় না নেয়ার সহজাত প্রবৃদ্ধি থেকে বের হওয়া কি আদৌ সম্ভব ? শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলো ব্যস্ত ব্যবসা করতে, পরিবার ব্যস্ত প্রত্যাশার পাহাড় চাপিয়ে দিতে, সমাজ ও রাষ্ট্র চিরায়িত নিজেদের চোখ কান বন্ধ করে দায়মুক্তির চেষ্টা । প্রতিবছর আশানরূপ ফলাফল না করতে পেরে শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার দায়সারা সংবাদ ছাপে পত্রিকাগুলো । ওই অবুঝ শিশুগুলোর দায় তারা নিতে চায় না, সমাজ নিতে চায় না । কারো উপর দোষ দেয়ার জন্য আমি বলছি না, আমার শুধু প্রশ্ন একটি ফলাফলের জন্য মৃত্যুর মতো তো কঠোর সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, তখনও কি ভাবনার বোধদয় হয় না, তখনও কি মূল্যায়নের নামে এই ভূত তাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা বোধ হয় না ?
লেখাপড়া হোক আনন্দমোয়-সৃজনশীল । শিশু-কিশোরদের মানসিক বিকাশের দিকে লক্ষ্য দেয়া প্রয়োজন । বাজির ঘোড়া বানিয়ে রেসে ঢেলে দিয়ে দর্শক হয়ে হাততালি দেয়া বন্ধ হোক । শিশু-কিশোরদের চিন্তায় জবরদস্তি বন্ধ হোক, সবকিছু চাপিয়ে দেয়া বন্ধ হোক । আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য নতুনত্বে ভরা মুক্ত, স্বাধীন, উন্মুক্ত চিন্তাচেতনায় গড়ে উঠুক সামনের দিনের শিক্ষাব্যবস্থা ।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জুন, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:২৮