''We are the same as plants, as trees, as other people, as the rain that falls. We consist of that which is around us, we are the same as everything.'' - Gautam Buddha
গৌতম বুদ্ধের এই উক্তিটি আসলেই মাথা চুলকানোর মত কথা। প্রকৃতির কাছে ফ্লোরা, ফনা আর ইনার্ট বস্তুকে সমান বলার মানে কি? মানুষ কেন গাছের সমান হতে যাবে? ইকোসিস্টেমেও তো সবার গুরুত্ব এক না। উক্তিতে কি তিনি আধ্যাত্মিক দৃষ্টিকোণ থেকে কিছু বলতে চাইছেন? বেশ অদ্ভুত, তাই না?
কালো যাদুকর উপন্যাসে হুমায়ূন আহমেদ এর কিছু অদ্ভুত - কিন্তু - অসাধারণ বিশ্বাস নিয়ে গল্প লেখা হয়েছে। না ধর্মীয় বিশ্বাসের কথা বলছি না। বরং অতিপ্রাকৃত জগতের বিশ্বাস। আমরা অনেকেই অতিপ্রাকৃত বিষয়বস্তু নিয়ে বেশ আলাদা আলাদা বিশ্বাস পোষণ করি। এলিয়েন আছে কি নেই, ভূত কি মানুষের আত্মা নাকি সম্পূর্ণ অন্য কোনো স্বত্বা, ইত্যাদির বিশ্লেষণ আমরা করি ভিন্ন ভিন্ন চিন্তাধারার মাধ্যমে। আবার অনেকে অতিপ্রাকৃত কোনো কিছুকেই অবাস্তব, কল্পনা বলে উড়িয়ে দেই। কিন্তু, আমাদের সবারই মনে হয় আমাদের ধারণাটাই ঠিক।
উপরের গৌতম বুদ্ধের উক্তির কথাটা ঠিক না। ওটা ফেইক। বুদ্ধ কখনো সে কথা বলেনি। কিন্তু সেই লাইনের পিছে তাঁর নাম বসিয়ে দিয়েছি বলেই কিন্তু কিছুটা হলেও আপনার মনে হয়েছে কথাটার কোনো গভীর অর্থ আছে হয়তো। মানুষের বিশ্বাসকে এরকম বিভিন্ন উপায়ে প্রভাবিত করা যায়। কালো যাদুকর গল্পে সেইভাবে হুমায়ূন আহমেদ সম্পূর্ণ উদ্ভট একটা কন্সেপ্টের দ্বারা পাঠকের সাথে খেলা খেলেছেন। খুব সুন্দর ভাবেই।
কালো যাদুকরের সাথে একদিন মবিন উদ্দিনের পথে দেখা হয়। তারপর মবিন উদ্দিন যাদুকরের দ্বারা নিজের অজান্তেই প্রভাবিত হতে থাকেন। বাসায় নিয়ে আসেন। তাঁর পরিবারের সাথে মিশে যায় যাদুকর। সবাই মনে করে সে তাদের পরিবারের হারিয়ে যাওয়া এক সদস্য।
তবে যাদুকরের কিছু কিছু "জাদুর" প্রতি যখন প্রশ্ন করা হয়, তখন খানিকের জন্য চরিত্রগুলির উপর তার প্রভাব কেটে যায়।
শেষে যাদুকর একদিন চলে যায়। চলে যাবার আগে লিখে রেখে যায় তার অতিপ্রাকৃত ক্ষমতা লাভের গল্প। তার অতীতের গল্প। আর বলে যায় যে গল্পটার বাস্তবতা নির্ভর করবে পাঠকের বিশ্বাসের উপর। বুঝতেই পারছেন, এক গল্পের ভেতর আরেক গল্প। বিশ্বাসের তক্তায় ডাবল পেরেক।
বিশ্বাস আর তার প্রভাবের এই খেলাটা অনেকটা অব্যবস্থিতচিত্তে খেলেছেন হুমায়ূন আহমেদ কালো যাদুকর চরিত্রটার মাধ্যমে। উপন্যাসটা দুইবার না পড়লে সেটা অনেকের মাথার উপর দিয়ে যাবে। গল্পের শেষে আশাহতও হবেন অনেক পাঠক। আমি উপন্যাসটাকে অবশ্যই পড়তে বলবো। একবার নিজে, আরেকবার কাউকে শুনিয়ে শুনিয়ে। ভালো লাগবে, বিশ্বাস করুন।
বইটাতেই লেখা আছে "ডুবন্ত মানুষ খরকুটা পেলেও আঁকড়ে ধরে", আর বিশ্বাস তো একখান বিশাল তরী। তারপরেও অনেকে ডুবতে চায়। কেন?
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই অক্টোবর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৫৭