somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অপরিপূর্ণ (ফাটাফাটি) গল্প ...... (পর্ব - 4)

০৪ ঠা অক্টোবর, ২০০৬ সকাল ১০:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পূর্বে প্রকাশিত অংশ

বাইরের অন্ধকারের সাথে সুর মেলাতেই কিনা প্রবল শব্দে কাছে কোথাও কিছু একটা বিস্ফোরিত হওয়ার সাথে সাথেই ঘরটা অন্ধকারে ডুবে গেলো। লোডশেডিং, অন্যসময় হলে হয়তো শুভ্রা চেঁচিয়ে উঠতো একটা মোমবাতির জন্য- অথচ এখন এই অন্ধকারটাই ভালো লাগছে তার। থেকে থেকে চমকে ওঠা বিদু্যতের ঝলকানী, জানালার গ্রীল ভেদ করে আসা ঠান্ডা, ভেজা বাতাস, আকাশের অঝোর কান্না যেনো এতোক্ষণ এই অন্ধকার টুকুরই প্রতীক্ষায় ছিলো পূর্ণতা পাবার।

সেদিনের সেই দেখা হবার পর তো অনেকগুলো দিন কেটে গেলো শুভ্রা শিপলুর টিকিটিও খুঁজে পেলো না ক্যাম্পাসের নানা জায়গা চষেও। একদিন তো শিপলুর দেয়া নামবারে ডায়ালও করেছিল সে। উফ, কী অস্থিরতাটাই না কাজ করছিল সেসময়।

দুরুদুরু বুকে 987... ... ডায়াল করে শেষ সংখ্যাটা চাপার সাথে সাথেই দুরুদুরুবু শব্দটা ধুপধাপ ছাপিয়ে দামামার আওয়াজ জানান দিচ্ছিলো বুকে। প্রতিটা রিঙের "টু-উ-উ-উ-ট" শব্দ কানে আসার সাথে সাথে শুভ্রার মনে হচ্ছিল এই বুঝি তার হার্ট অ্যাটাক হলো! ওপার থেকে একটা "হ্যালো" শুনেই চকিতে "ঘড়াৎ" করে রেখেদিয়েছিলো ফোনটা।

অবশ্য পরে নিজের বোকামির জন্য নিজেকেই ধিক্কার দিচ্ছিল সে। এমন একটা কাজ কেন করলো সে! সেতো এতোটা আনস্মার্ট না যে কাউকে ফোন করে কথা না বলে রেখে দিবে। কিন্ত সেসময় তার এমন লাগছিলো কেন? নিঃশ্বাস ঘন হয়ে আসছিলো, বুকের ধুরুপ ধারুপ ধব্দটা গলা পর্যন্ত এসে যেন চেপে ধরতে চাইছিলো তার। এ অবস্থায় কী করে সে কথা বলতো, কী করে জিজ্ঞেস করতো "আমি কি শিপলুর সাথে একটু কথা বলতে পারি...?"।

আচ্ছা তখন কথা হলেই বা কী জিজ্ঞেস করতো শুভ্রা, কী হতো তাদের কথোপকথন!
: এই যে কেমন আছেন?
: ঐ যে, ফাটাফাটি! তা আপনি কেমন আছেন?

: ভাআআআলো তো!
: হুমমম, তা গরীবকে কি জন্য ইয়াদ করলেন বলেন দেখি।

: এমনি ফোন করা। হাতে তেমন কোন কাজ নেই, ভাবলাম আপনাকে একটু ডিস্টার্ব করি।
: যার নেই হাতে কজ, বসে বসে খই ভাজ। আপনিও এই কাজটা করতে পারেণ। খই ভাজা প্র্যাকটিস করতে থাকেন। ভবিষ্যতে কাজে দিবে...।

: হাহাহা..., আচ্ছা আপনি থাকেন কোথায়? অমাবস্যায় চাঁদ দেখে বেড়ান নাকি নিজেকে ডুমুরের ফুল হিসেবে ভাবতে ভালো লাগে? নাকি দাম বাড়ান নিজের...!
: হাহাহাহা...

: হাসছেন কেন? যা জানতে চাইছি ঠিক ঠিক উত্তর দিন।
: আরে মুশকিল, আপনি কি আমার বিয়ে করা ঘরের বউ নাকি যে ঠিকঠিক সব উত্তর দিতে হবে নাহলে হরতাল, ধম্মঘট ডেকে দেবেন....!

এতটুকু ভাবতেই শুভ্রার মুখটা লাল হয়ে উঠলো। ঠোঁট বাঁকা হয়ে সেখানে লজ্জার একটা হাসি নিজেই টের পেলো। "বিয়ে করা ঘরের বউ", কথাটা জানি কেমন! কথাটায় খারপ কিছুই নেই, অথচ কেমন লজ্জা লজ্জা কথাটা! এই কথাটা কেনো তার মনে এলো?

এই হয়েছে একটা সমস্যা তার। নিজের মনেই নিজে একটা কল্পিত চিত্র এঁকে, আবার নিজেই লজ্জায় লাল হয়ে যাওয়া শুভ্রার অবচেতন মনের একটা কাজ। যখন একা থাকে, নিজের অজান্তেই সে অনেক কিছু ভাবে যার অনেক গুলোরই শেষ হয় কান, মুখ লাল হয়ে যাওয়া দিয়ে! যেমনটা হলো এখন। আর ভাবনা গুলোও এমন, যতোই লজ্জা হোক, যতোই কান লাল হোক, ভাবতে ভালোই লাগে, অদ্ভুত শিহরণ লাগে মনে। নিজেকে মনে হয় প্রজাপতির রঙীন ডানায় ভর করে উড়ে চলেছে।

এমনই অসম্ভব ভালো লাগা কিছু কথা ভাবতে ভাবতে বাঙলা একাডেমির সামনের রাস্তাটা ধরে কার্জনের দিকে যাচ্ছিলো শুভ্রা। ওখানে পুরো গ্রুপটার থাকার কথা, সেখান থেকে সবার সাথে নন্দনে যাবার কথা। অনেকদিন আগের প্ল্যান, সবার একত্রে সময় সুযোগের অপেক্ষায় খালি পিছিয়ে যাচ্ছিল তারিখটা। হাঁটতে হাঁটতে বাঙলা একাডেমির টাইলস ফেলা ফুটপাথ থেকে দৃষ্টি সরিয়ে মাথাটা উঁচু করে সামনে তাকাতে নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারলোনা শুভ্রা।

সামনে থেকে একটা রিক্সায় করে এদিকেই আসছে শিপলু। পড়নে গ্যাভার্ডিনের প্যান্ট, পলো টি-শার্ট চোখে কালো রোদচশমা। সাথে একগাদা কাগজের স্তুপ। শুভ্রার কাছে আসতেই রিক্সাটা থেমে গেলো। শুভ্রা যেনো কিছুই দেখতে পায়নি, এমন একটা ভাব করে, একটুও দেরী না করে পাশের চুড়িওয়ালার রেশমী চুড়ির ঝুড়িতে ঝুঁকে পরে চুড়ি দেখতে লাগলো সে... "দেখি তো মামা ঐ নীল রঙের গুলো....."


-:চলছেই তো:-
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই মে, ২০০৭ রাত ১২:১১
১২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এমন রাজনীতি কে কবে দেখেছে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:২০


জেনজিরা আওয়ামী লীগের ১৬ বছরের শাসনামল দেখেছে। মোটামুটি বীতশ্রদ্ধ তারা। হওয়াটাও স্বাভাবিক। এক দল আর কত? টানা ১৬ বছর এক জিনিস দেখতে কার ভালো লাগে? ভালো জিনিসও একসময় বিরক্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযুদ্ধের কবিতাঃ আমি বীরাঙ্গনা বলছি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১৫


এখনো রক্তের দাগ লেগে আছে আমার অত্যাচারিত সারা শরীরে।
এখনো চামড়া পোড়া কটু গন্ধের ক্ষতে মাছিরা বসে মাঝে মাঝে।

এখনো চামড়ার বেল্টের বিভৎস কারুকাজ খচিত দাগ
আমার তীব্র কষ্টের দিনগুলোর কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রবাসীর মৃত্যু ও গ্রাম্য মানুষের বুদ্ধি!

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৩০



একজন গ্রামের মানুষের মাথায় ১০০ জন সায়েন্টিস্ট, ৫০ জন ফিলোসফার, ১০ জন রাজনীতিবিদ এবং ৫ জন ব্লগারের সমপরিমাণ জ্ঞানবুদ্ধি থাকে, তীক্ষ্ণ বুদ্ধিসম্পন্ন এসব লোকজন বাংলাদেশের এক একটি সম্পদ।

বিস্তারিত:... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন নারী শিক্ষিকা কীভাবে কন্যা শিশুর সবচেয়ে অসহায় মুহূর্তের ভিডিও ধারণ করতে পারেন?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:২৩


বাংলাদেশে মাঝে মাঝে এমন সব মানুষ রূপী শয়তানের সন্ধান মেলে যাদের দেখে আসল শয়তানেরও নিজের উপর হতাশ হওয়ার কথা। এমন সব প্রজাতির মানুষ বাংলাদেশে বসবাস করেন যাদের মস্তিষ্ক খুলে দেখার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=মানুষ মানুষকে কীভাবে এত অপদস্ত করে এই ব্লগে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৪

আমি তো কারও সাতেও নাই পাঁচেও নাই। এত সময়ও নাই মানুষকে ঘাঁটার। ব্লগের ব্লগারদের সম্পর্কেও তেমন কিছু জানি না। তবে পোস্ট পড়ে কিছুটা আন্দাজ করা যায় -কে কী রকম। আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×