ছোটবেলার কথা, ১৯৭৭/৭৮ সালের দিকে, আমার বয়স ৪/৫ বছর তখন। আমার মায়ের ছিল সিনেমা দেখার শখ যেটা পারিবারিক ভাবেই এসেছে মায়ের মধ্যে। মামারা সবাই সিনেমা, গান এইসব নিয়ে মেতে থাকতেন। সব মামার ভাল গানের গলা ছিল। আমার ৬ মামার একমাত্র ছোট বোন ছিল আমার মা। ছোট বেলা থেকে আমার রবিন্দ্রসংগীতের প্রতি একটা বিরক্তিবোধ ছিল (যেটা এখন আর নেই) একঘেয়ে সুরের কারনেই হোক আর ছোটবেলা থেকে শুনার কারনেই হোক, টেপ রেকর্ডারে আমার মা অবিরাম রবিন্দ্রসংগীত শুনতেঁন আর গুনগুন করে গাইতেন, বলা বাহুল্য মায়ের গানের গলাও খুব ভাল
ছিল। নানার বাড়িতে রাশি রাশি উল্টোরথ (তখনকার দিনের ইন্ডিয়ান সিনেম্যাগ) আরও নানা ভারতীয় সিনেমা মাগাজিন সবই , দেখতাম স্তুপ হয়ে রয়েছে একটা পুরো রুম জুড়ে, কিছু উইপোকা খাওয়া কিছু ভাল, পড়ার উপযোগী খুজে খুজে নিয়ে আসতাম নানির কাছ থেকে লুকিয়ে, এটা অবশ্য আরও অনেক পরে যখন ক্লাস ৩/৪ এ পড়ার সময়। বড় মামা আর মেজ মামার ছিল বইএর বিশাল ভান্ডার, মুলত আমার বই এর পোকা হয়ে উঠা এখান থেকে। আর একটা কথা না বলে পারছিনা এই দুই মামাই মুক্তিযুদ্ধের কমান্ডার ছিলেন আর বড় মামা শেখ সাহেবের আমলের বড় নেতা। ধান ভানতে শিবের গীত গাইলাম অনেক, এখন পোষ্টের আসল বিষয় কাল পর্দা আর লাল এক্সিট এ আসা যাক, ৭৭/৭৮ দিকেই হবে সময়টা, বয়সটা আগেই বলেছি, আমার মা তার প্রতিবেশি আরও কয়েকজন মহিলাকে নিয়ে দলবেধে রিক্সায় করে যেতেন কক্সবাজার শহরেরে সেই সময়ের একমাত্র সিনেমাহ্ল লালদীঘির পাড়ের, নামটা খুব সম্ভবত 'টকি হাউসে'। সাথে আমিও যেতাম। সিনেমা হলে ঢুকার পর থেকে শুরু হত অশান্তির, চারিদিক থেকে বাচ্ছাদের ট্যা ফ্যা বিচিত্র আওয়াজ, মহিলাদের সিটগুলি চারিদিকে কাল পর্দা দিয়ে ঘেরা থাকত, আমি মায়ের কোলে বসে বসে কাল পর্দা দেখতাম, আরও ছিল লাল EXIT যেটা দরজার উপর থাকে। আমার দৄষ্টিগোচরে এইসব ছাড়া বিশেষ কিছু আসতনা, সামনের সিটের দর্শকদের জন্য সিনেমার স্ক্রিন তেমন
নজরে আসতনা। আমিও হয়ত ট্যা ফ্যা করতে করতে ঘুমিয়ে পড়তাম, তখনকার দিনের মায়েরা এইসব কেয়ার করতেননা বা তাদের সিনেমা দেখায় ব্যাঘাত ঘটাতনা। এরপরে আরও বড় হওয়ার পরে কোথাও EXIT দেখলে চমকে উঠতাম। সেই থেকে সিনামা হলের প্রতি আমার চরম বিত্রিষ্ণা। ক্লাস নাইনে বন্ধু সুমনের (গিট্টু) পিড়াপিড়িতে স্কুল পালিয়ে গিয়েছিলাম গ্যারিসনে জেমসবন্ডের মুভি দেখতে, সেবার নাউয়িদ কাদির সহ আরও বেশ কয়েকজন বন্ধুবান্ধব ছিল। আমরা আদমজি ক্যান্ট এর স্টুডেন্ট আর স্কুল থেকে হাটা দুরত্বে গ্যারিসন হল। অথচ থাকতাম গ্যারিসনের রাস্তার উল্টো দিকে ক্যান্টবাজার ৭ নং রোডে (ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট), সিনেমা দেখা দুরে থাক চোখ তুলে তাকাতেও ইচ্ছা হয়নি ওদিকে। পরে অবশ্য সবই আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হয়েছে।