বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠান সেসনা বাংলাদেশে হেলিকপ্টার বিক্রির পাশাপাশি নিজেরা সরাসরি ভাড়ার ব্যবসা করতে চায় বলে খবর রয়েছে । টাটা, হোন্ডা,জেনারেল ইলেকট্রিকের পর সেসনার মতো প্রতিষ্ঠানের আগ্রহ প্রকাশের ঘটনা প্রমাণ করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ ক্রমে পরিণত হচ্ছে আকর্ষণীয় বিনিয়োগ ক্ষেত্রে।
এমন সুযোগ কাজে লাগানো চাই। সেসনা এয়ারক্রাফট কোম্পানির মূল প্রতিষ্ঠান টেক্সট্রনের আরেকটি উইং হলো বেল হেলিকপ্টার। এ থেকে সহজে অনুমেয়, সেসনা এখানে প্রত্যক্ষভাবে ব্যবসা শুরু করলে সামরিক-বেসামরিক বিভিন্ন উড়োযান রক্ষণাবেক্ষণে বাড়তি সুবিধা পাব আমরা। সেক্ষেত্রে কমতে পারে যানগুলোর দামও। হেলিকপ্টার ভাড়ার ব্যবসায় যুক্ত হলে বাজার নিয়ন্ত্রণও সহজ হবে বলে জানানো হয়েছে কোম্পানিটির পক্ষ থেকে। ইদানীং বিয়ের অনুষ্ঠানেও হেলিকপ্টারের ব্যবহার বাড়ছে বলে প্রতীয়মান।
এক্ষেত্রে বাজার সম্প্রসারণে বাধা হিসেবে দেখা দিয়েছে হেলিকপ্টারের অস্বাভাবিক ভাড়া। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে সেসনার আগমন ‘বিগ পুশ’ দিতে পারে বাজারটিকে।
ভারতীয় বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান সাহারা বাংলাদেশে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশের সময় স্থানীয় অনেক ব্যবসায়ীর বিরোধিতা দেখা গেছে। এটি আবার পরিলক্ষিত হলো সেসনার বেলায়। অথচ এ ধরনের ইস্যুকে সার্বিকভাবে ও দূরদর্শিতার সঙ্গে পর্যালোচনা করা দরকার। স্থানীয় বেসামরিক বিমান ব্যবসাসংশ্লিষ্ট কেউ কেউ বলেছেন, বাংলাদেশে সেসনা কার্যক্রম পরিচালনা শুরু করলে ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি হবে বাজারে।
এমন যুক্তি কতটা সঙ্গত, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে অনেকের। সেসনা বিশ্বমানের প্রতিষ্ঠান। ব্র্যান্ড ইমেজের স্বার্থেই তারা মান নামাতে পারবে না বাংলাদেশেও। এতে স্বাভাবিক বাজারের চেয়ে বেশিই রাখতে হবে হেলিকপ্টার ভাড়া।
তা সত্ত্বেও একশ্রেণী ব্যক্তির বিরোধিতা দেখে মনে হতে পারে, স্থানীয় এ বাজারে অস্বাভাবিক মুনাফার সুযোগ রয়েছে বলেই ওমন প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন তারা। বিষয়টি খতিয়ে দেখা চাই। সেসনার মতো প্রতিষ্ঠান কিন্তু আমাদের বেসামরিক বিমান সংস্থাগুলোর মানোন্নয়নে জোগাতে পারে ব্যাপক সহায়তা। আরেকটি যুক্তি হলো, আমাদের হেলিকপ্টার বাজার প্রাথমিক পর্যায়েই রয়েছে এখনো।
এ নিয়ে সন্দেহের অবকাশ কমই। তার পরও বলা যায়, এক্ষেত্রে পর্যটনসহ অন্যান্য সুযোগ কাজে লাগানো যাচ্ছে না হেলিকপ্টারের চড়া ভাড়ার সুযোগে। এ বাজারের ওপর নির্ভরশীল দক্ষ জনশক্তিও আশানুরূপভাবে গড়ে উঠছে না তাই। এ অবস্থায় কট্টর সংরক্ষণবাদী মনোভাব না দেখিয়ে আপন স্বার্থেই বাজারটি সহনীয়ভাবে খুলে দেয়া যায় কিনা, তা দেখা প্রয়োজন।
অন্যান্য দেশের অভিজ্ঞতা বলে, দীর্ঘ সময় এর উল্টোটি বজয় থাকলে সেবার মান নেমে যেতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে সম্ভাব্য বিষয়গুলো বিবেচনায় এনে তবেই সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত। জুতসই মনে হলে, সীমিত পরিসরে— যেমন হেলিকপ্টার অ্যাম্বুলেন্স সেবা প্রদানের সুযোগ দিয়েও এ দেশে সেসনার মতো প্রতিষ্ঠানকে ব্যবসার সুযোগ করে দেয়া যায়।