আমার বড়ো বইন কমার্সের ছাত্রী আছিল। আমি যেহেতু মাঝারি মানের ছাত্র আছিলাম, আমি যহন কেলাস নাইনে উঠলাম, বড়ো বইন কইল, কমার্স নে। হের কতা মতন কমার্স নিলাম। গেরাম অঞ্চলে আর্টসরে ছোড চক্ষে দেহা অয়। বলা অয়, দুর্বল ছাত্ররাই আর্টস নেয়। আর সাইন্স পড়ার মতন সদিচ্ছা আমার আছিল না। প্রাণিবিদ্যা না জীববিজ্ঞান বইয়ে ব্যাঙের ফডো দেইখা আমার সাইন্স পড়ার খায়েশ চিরতরে মিইট্যা যায়।
মাধ্যমিক পাশ করি কমার্স থাইকা। হেরপর ভর্তি অই স্থানীয় এক কলেজে। আগে যেহেতু কমার্সের ইস্টুডেন্ট আছিলাম, এইহানেও কমার্স নিলাম। উচ্চ মাধ্যমিকের কমার্স অবশ্য অনেক কঠিন। হাড়ে হাড়ে সব টের পাইলাম। কিচ্ছু করার নাই। ইংলিশে মোটামুটি ভালা আছিলাম বইলা আর কোনো পেরাইভেট পড়তে অয় নাই। পেরাইভেট না পইড়াও পুরো কলেজে দ্বিতীয় অইতাম। প্রথম যে অইত, হে আমার চাইতে দুয়েক নাম্বার বেশি পাইত। যদিও ঘনিষ্ঠজনরা বলত, স্বজনপ্রীতি হইত। পেরাইভেট না পড়ার কারণে ইংরেজি শিক্ষক আমারে দুই চক্ষে দেখতে পারতেন না। যাহোক, টেস্টে সে পাঁচ নাম্বার বেশি পায়। ফাইনালে দুই জনে আবার সমানে সমান। মানে সমান নাম্বার পাই।
ইংলিশে পেরাইভেট না পড়লেও হিসাববিজ্ঞানে ঠিকই পড়তে অইত। ফার্সট ইয়ারে তুলনামূলকভাবে সহজ আছিল, মাগার সেকেন্ট ইয়ারে কিছুই বুঝি নাই। পেরাইভেট না পড়ার কারণে মাস্টার সাব ফার্সট ইয়ারে একবার ফেইল করাইয়া দেন। উপায়ন্তর না পাইয়া পেরাইভেট পড়া শুরু করেছিলাম।
উচ্চ মাধ্যমিক পাশ কইরা ভর্তি অইলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। কলাতে পরীক্ষা দিছিলাম, ব্যবসা প্রশাসনেও দিছিলাম। চান্স দুইডাতেই অয়। গুরুজনেরা কইল, বিবিএতেই ভর্তি অও। হে গো কতা মতন বিবিএতেই ভর্তি অইলাম। পড়ালেহা শুরু অইল।
পড়ালেখায় আমার কোনো মনোযোগ নাই। আমার পছন্দের বিষয় আছিল ইতিহাস, সাহিত্য, দর্শন, রাজনীতি। মাধ্যমিকে ও উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ালেখার ফাঁকে ফাঁকে এইগুলা নিয়া পড়তাম। তখন তো পড়ালেহা অল্প আছিল, এইগুলা পড়তে কোনো সমস্যা অয় নাই। এখন তো অকূল পাথারে পড়লাম! আমি এইডা কী করলাম? বিবিএতে কেন ভর্তি অইলাম? কার লগে প্রেম করলাম আর কারে বিয়া করলাম?
পড়ালেখা আমার চাঙ্গে উঠল। আমি বুঝলাম, এই পড়ালেহা আমার লাইগা না! ভুল কইরা ফালাইছি, মস্ত বড়ো ভুল। হেই ভুলের খেসারত অবশ্য দিতেই অইল। অনেক কষ্টেসৃষ্টে বিবিএটা শেষ করলাম বটে, পড়ালেখা কইরা শান্তি পাইলাম না।
ছবি: বিবিসি
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জুন, ২০২৪ সকাল ১১:৫৩