
সকালে ঘুম থেকে উঠে বাবাকে দেখছে না নেহাল! কোথায় গেলেন ওনি? এখন দশটা বাজে। নেহাল বাবার অপেক্ষায় বারান্দায় বসে আছে। তিনটা বিশে সিনেমা শুরু হবে। এখনও বাজার থেকে ব্যাটারি আনা হয়নি। বাবা ছাড়া ব্যাটারি কে আনবে?
মাকে একাধিকবার জিগ্যেস করল বাবার কথা। ওনি সদুত্তর দিতে পারলেন না। বললেন, “হয়তো খেত দেখতে গেছে। চলে আসবে।”
বাবার আসতে যে অনেক দেরি হবে, এটা নেহাল জানে। ওনি কোথাও গেলে আসার খবর থাকে না। কারও সাথে আলাপ জুড়লে ওনার আলাপ শেষ হয় না। কারও বাড়িতে গেলে কয়েক ঘণ্টা কাটিয়ে আসেন। পারলে খাওয়াদাওয়া সেরে আসেন।
কী করা যায় ভাবছে নেহাল। একবার খোঁজ করবে না কি? কিন্তু কোথায় খুঁজবে? গ্রামে তো বাড়ির অভাব নেই। কোন বাড়িতে না কোন বাড়িতে গিয়ে বসে আছেন কে জানে?
সকাল গড়িয়ে দুপুর। তিনটা বাজতে বেশি দেরি নেই। টিভির এন্টেনার দিকে তাকিয়ে আছে নেহাল। মনে মনে ভাবছে, আজ না জানি কার ছবি দিল! সালমান শাহ’র না কি মান্নার? মান্নার ছবি ভালো লাগে। মারপিটে ভরা। মারামারি খুব পছন্দ নেহালের। তবে সালমান শাহকে বেশি ভালো লাগে। তার বেশভূষা, চুলের স্টাইল সবই অনুসরণ করার চেষ্টা করে সে। জসিম, আলমগীর বা ইলিয়াস কাঞ্চন- যার ছবিই দিক না কেন সবার ছবিই গভীর আগ্রহ নিয়ে দেখে সে।
শুধু কী ছবি, বিজ্ঞাপনও মুখস্ত ওর। কোন বিজ্ঞাপনের পর কোন বিজ্ঞাপন আসবে, সবই তার জানা। শুক্রবার এলে সব কর্মসূচি বাদ। একটাই চিন্তা মাথায়, সেটা হলো- সুন্দর মতো ছবি দেখা। এদিন খেলাধুলার চিন্তাও বাদ।
বাবা এলেন না। খুব রাগ হচ্ছে নেহালের। মায়ের কাছ থেকে দশ টাকা পকেটে নিয়ে বেরিয়ে পড়ল। সাইকেলটা সাথে নিল। বাবার অপেক্ষায় বসে থাকলে ছবি দেখা হবে না।
দুই কিলোমিটার দূরে বাজার। বাজারের নাম উথুরা। দোকানদারকে দশ টাকা বিল দিয়ে ব্যাটারিটা সাইকেলের পেছনে বাঁধল নেহাল। তুলতে সমস্যা হচ্ছিল, তাই দোকানদার সহযোগিতা করলেন। সাহস করে সাইকেলে চেপে বসল সে।
এলাকার বাজার, নারাঙ্গী। এখানে এসে একটু সমস্যা হয়ে গেল। ডানদিকে বাড়ির রাস্তায় ঘুরতে যাবে, এমন সময় সাইকেল উলটে গেল। ব্যাটারির এসিড চুয়ে চুয়ে পড়ছে। নেহাল যে সাইকেলটা তুলবে, শক্তিতে কুলোচ্ছে না।
আশপাশে কেউ এসে তুলে দেবে কি না সে আশায় এদিক-ওদিক তাকাল। খেয়াল করল লোকজন হাসছে। এক ভ্যানওয়ালা তো তামাশাও শুরু করল। কথাবার্তা শুনে মনে হলো, এমন মজার কিছু আর নেই। কিছু কিছু মানুষ আসলে অন্যের দুঃখ দেশে দারুণ মজা পায়। অসহায় নেহাল বুঝল, কেউ তাকে সাহায্য করবে না।
অনেক বছর পরের কথা। শহর থেকে বাড়ি যাচ্ছে নেহাল। এখন সে ছোটো নেই। ভার্সিটিতে পড়ে। বাস থেকে নেমে বাড়ির পথে হাঁটা ধরেছে কেবল। মাত্র পাঁচ মিনিটের পথ। কিছুদূর যাওয়ার পর দেখল চালের বস্তা সমেত একটা ভ্যান উল্টে আছে। ভ্যানওয়ালা এদিক-ওদিক কাউকে খোঁজ করছে। মনে হয় সহযোগিতা দরকার। ভ্যানওয়ালাকে পরিচিত লাগছে নেহালের। দশ বছর আগের কথা মনে পড়ে গেল তার।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জুন, ২০২৪ দুপুর ২:০৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




