বছর পাঁচেক আগে গাজীপুরের এক গার্মেন্টসে চাকরির পরীক্ষা দিতে গিয়েছিলাম। যেহেতু আমি ব্যবসায় প্রশাসনের ছাত্র (এইচআর), আমাকে এ সংক্রান্ত বেশকিছু প্রশ্ন করা হলো। কিছু উত্তর করতে পারলাম, কিছু পারলাম না। যাহোক, পরীক্ষা শেষে আমাকে জিগ্যেস করা হলো কবে নাগাদ যোগদান করতে পারব?
আমি তখন একটা বেসরকারি স্কুলে পড়াতাম। নানা কারণে পড়ানোর সেই চাকরিটা ছাড়তে চাচ্ছিলাম। সে বিষয় মাথায় রেখেই বললাম, যেকোনো সময়। প্রশ্নকর্তা বললেন, জানাবেন। আর জানাননি।
আমার এক সহকর্মীর সঙ্গে এ নিয়ে কথা হয়েছিল। উনি ব্র্যাকের অধীনস্থ এক স্কুলে পরীক্ষা দিয়েছিলেন। উনাকে ভালো বেতনে নির্বাচিতও করা হয়েছিল। পরে আর ডাকা হয়নি। উনি আমার মতোই বলেছিলেন, যেকোনো সময় যোগদান করতে পারবেন।
বোধকরি কোনো প্রতিষ্ঠান এমন বিপদগ্রস্ত কাউকে চায় না। তারা কর্মরত এবং আত্মবিশ্বাসসম্পন্ন মানুষ চায়। মনে হয়, কাজ না করে বেকার বসে থাকলেও এমন একটা ভাব নিতে হবে, যেন প্রার্থী দয়া করে তাদের প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতে আসছেন।
২
ঢাকার এক স্কুলে লিখিত পরীক্ষা দিয়েছিলাম। মৌখিক পরীক্ষায় ডাকা হয়েছিল। এরমধ্যে নারায়ণগঞ্জে একটা প্রতিষ্ঠানে চাকরি প্রায় নিশ্চিত। আত্মবিশ্বাসী আমি সেসময় চলমান চাকরিটা ছেড়ে দিলাম।
স্কুল থেকে ডাক আসেনি, নারায়ণগঞ্জের চাকরিটারও আর সুযোগ নেই। মালিকের নিজের লোক নিয়ে নিয়েছে। চাইলে বড়জোর দারোয়ানের চাকরিটা করতে পারি।
৩
দারোয়ানদের তদারকি সংক্রান্ত একটা চাকরির প্রস্তাব এসেছিল। গেলাম সে বিষয়ে কথা বলতে। ততদিনে লোক নেওয়া হয়ে গেছে। একটা ব্যাপার খেয়াল করলাম, যার সঙ্গে দেখা করতে গেলাম, ওনি একসময় বেশ আগ্রহ নিয়ে চাকরির প্রস্তাবটা দিলেও এখন কেন জানি অনাগ্রহ দেখা যাচ্ছে। মনে হয়, সুযোগ থাকলেও চাকরিটা উনি দেবেন না।
৪
একটা প্রতিষ্ঠানে দু’মাস বিনা বেতনে কাজ করেছিলাম। এরপর আরেকটা চাকরির প্রস্তাব এলো। গেলাম মৌখিক পরীক্ষা দিতে। কথাবার্তা হলো। এমন একটা পরিমাণ বেতন নির্ধারণ করল, আমি বুঝতে পারছিলাম না কী করব। এ টাকায় ঢাকা শহরে একাই খেয়েপরে বাঁচা কঠিন। অসুস্থ মা-বাবাকে খরচ পাঠানো তো দূরের কথা।
আবার চাকরিটাও আমার দরকার। এমন গুণসম্পন্নও না যে, অন্য জায়গায় হুটহাট চাকরি পেয়ে যাব। বিনা বেতনে দু’মাস কাজ করার তিক্ত অভিজ্ঞতা জ্বলজ্বল করছিল। দুটো কোচিংয়ে বলতে গেলে পেটেভাতে কাজ করেছি।
যাহোক, ফোন এলো কয়েকদিন পর। বলা হলো, নিয়োগপত্র নিয়ে যেতে। গিয়ে নিয়ে এলাম। কিছুদিন পর চাকরিতে যোগদানও করলাম। মনে মনে ভাবছিলাম, মৌখিক পরীক্ষায় যদি বলতাম অত না হলে করব না, তাহলে কি কাঙ্ক্ষিত পরিমাণটা দিত? পরক্ষণে মনে হলো, ওদের এত ঠেকা পড়েনি। লোকের তো অভাব নেই।
৫
আমার এক সহকর্মী চাকরির পরীক্ষা দিয়ে গিয়েছিলেন। আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলেছিলেন, অত টাকা না হলে চাকরি করবেন না। দুঃখজনক ব্যাপার হলো, অন্য কোথাও চাকরি না পেয়ে প্রস্তাবিত বেতনের চেয়ে কম বেতনে ওই প্রতিষ্ঠানেই চাকরি করতে এসেছিলেন।
পরিশিষ্ট: যোগ্যতা-দক্ষতা থাকলে চাকরির অভাব নেই; এটা অতি সত্যি কথা। আবার এটাও সত্যি কথা, অনেকের এত যোগ্যতা-দক্ষতা-অভিজ্ঞতা থাকে না। তাদের চাকরির প্রস্তাবও কম আসে। একটা-দুটো এলে বেতন-ভাতাদি নিয়ে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে দরকষাকষি করতে পারে না। কারণটা অতি সাধারণ। আত্মবিশ্বাস বাড়াতে হলে পায়ের তলার মাটি শক্ত থাকতে হয়।
ছবি: ফেসবুক
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জুন, ২০২৪ বিকাল ৪:১২