somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আত্মবিশ্বাস বাড়াতে হলে পায়ের তলার মাটি শক্ত থাকতে হয়

১৬ ই অক্টোবর, ২০২৩ বিকাল ৫:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বছর পাঁচেক আগে গাজীপুরের এক গার্মেন্টসে চাকরির পরীক্ষা দিতে গিয়েছিলাম। যেহেতু আমি ব্যবসায় প্রশাসনের ছাত্র (এইচআর), আমাকে এ সংক্রান্ত বেশকিছু প্রশ্ন করা হলো। কিছু উত্তর করতে পারলাম, কিছু পারলাম না। যাহোক, পরীক্ষা শেষে আমাকে জিগ্যেস করা হলো কবে নাগাদ যোগদান করতে পারব?

আমি তখন একটা বেসরকারি স্কুলে পড়াতাম। নানা কারণে পড়ানোর সেই চাকরিটা ছাড়তে চাচ্ছিলাম। সে বিষয় মাথায় রেখেই বললাম, যেকোনো সময়। প্রশ্নকর্তা বললেন, জানাবেন। আর জানাননি।

আমার এক সহকর্মীর সঙ্গে এ নিয়ে কথা হয়েছিল। উনি ব্র্যাকের অধীনস্থ এক স্কুলে পরীক্ষা দিয়েছিলেন। উনাকে ভালো বেতনে নির্বাচিতও করা হয়েছিল। পরে আর ডাকা হয়নি। উনি আমার মতোই বলেছিলেন, যেকোনো সময় যোগদান করতে পারবেন।

বোধকরি কোনো প্রতিষ্ঠান এমন বিপদগ্রস্ত কাউকে চায় না। তারা কর্মরত এবং আত্মবিশ্বাসসম্পন্ন মানুষ চায়। মনে হয়, কাজ না করে বেকার বসে থাকলেও এমন একটা ভাব নিতে হবে, যেন প্রার্থী দয়া করে তাদের প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতে আসছেন।


ঢাকার এক স্কুলে লিখিত পরীক্ষা দিয়েছিলাম। মৌখিক পরীক্ষায় ডাকা হয়েছিল। এরমধ্যে নারায়ণগঞ্জে একটা প্রতিষ্ঠানে চাকরি প্রায় নিশ্চিত। আত্মবিশ্বাসী আমি সেসময় চলমান চাকরিটা ছেড়ে দিলাম।

স্কুল থেকে ডাক আসেনি, নারায়ণগঞ্জের চাকরিটারও আর সুযোগ নেই। মালিকের নিজের লোক নিয়ে নিয়েছে। চাইলে বড়জোর দারোয়ানের চাকরিটা করতে পারি।


দারোয়ানদের তদারকি সংক্রান্ত একটা চাকরির প্রস্তাব এসেছিল। গেলাম সে বিষয়ে কথা বলতে। ততদিনে লোক নেওয়া হয়ে গেছে। একটা ব্যাপার খেয়াল করলাম, যার সঙ্গে দেখা করতে গেলাম, ওনি একসময় বেশ আগ্রহ নিয়ে চাকরির প্রস্তাবটা দিলেও এখন কেন জানি অনাগ্রহ দেখা যাচ্ছে। মনে হয়, সুযোগ থাকলেও চাকরিটা উনি দেবেন না।


একটা প্রতিষ্ঠানে দু’মাস বিনা বেতনে কাজ করেছিলাম। এরপর আরেকটা চাকরির প্রস্তাব এলো। গেলাম মৌখিক পরীক্ষা দিতে। কথাবার্তা হলো। এমন একটা পরিমাণ বেতন নির্ধারণ করল, আমি বুঝতে পারছিলাম না কী করব। এ টাকায় ঢাকা শহরে একাই খেয়েপরে বাঁচা কঠিন। অসুস্থ মা-বাবাকে খরচ পাঠানো তো দূরের কথা।

আবার চাকরিটাও আমার দরকার। এমন গুণসম্পন্নও না যে, অন্য জায়গায় হুটহাট চাকরি পেয়ে যাব। বিনা বেতনে দু’মাস কাজ করার তিক্ত অভিজ্ঞতা জ্বলজ্বল করছিল। দুটো কোচিংয়ে বলতে গেলে পেটেভাতে কাজ করেছি।

যাহোক, ফোন এলো কয়েকদিন পর। বলা হলো, নিয়োগপত্র নিয়ে যেতে। গিয়ে নিয়ে এলাম। কিছুদিন পর চাকরিতে যোগদানও করলাম। মনে মনে ভাবছিলাম, মৌখিক পরীক্ষায় যদি বলতাম অত না হলে করব না, তাহলে কি কাঙ্ক্ষিত পরিমাণটা দিত? পরক্ষণে মনে হলো, ওদের এত ঠেকা পড়েনি। লোকের তো অভাব নেই।


আমার এক সহকর্মী চাকরির পরীক্ষা দিয়ে গিয়েছিলেন। আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলেছিলেন, অত টাকা না হলে চাকরি করবেন না। দুঃখজনক ব্যাপার হলো, অন্য কোথাও চাকরি না পেয়ে প্রস্তাবিত বেতনের চেয়ে কম বেতনে ওই প্রতিষ্ঠানেই চাকরি করতে এসেছিলেন।

পরিশিষ্ট: যোগ্যতা-দক্ষতা থাকলে চাকরির অভাব নেই; এটা অতি সত্যি কথা। আবার এটাও সত্যি কথা, অনেকের এত যোগ্যতা-দক্ষতা-অভিজ্ঞতা থাকে না। তাদের চাকরির প্রস্তাবও কম আসে। একটা-দুটো এলে বেতন-ভাতাদি নিয়ে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে দরকষাকষি করতে পারে না। কারণটা অতি সাধারণ। আত্মবিশ্বাস বাড়াতে হলে পায়ের তলার মাটি শক্ত থাকতে হয়।

ছবি: ফেসবুক
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জুন, ২০২৪ বিকাল ৪:১২
১৫টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শোকের উচ্চারণ।

লিখেছেন মনিরা সুলতানা, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সকাল ১০:১৬

নিত্যদিনের জেগে উঠা ঢাকা - সমস্তরাত ভারী যানবাহন টানা কিছুটা ক্লান্ত রাজপথ, ফজরের আজান, বসবাস অযোগ্য শহরের তকমা পাওয়া প্রতিদিনের ভোর। এই শ্রাবণেও ময়লা ভেপে উঠা দুর্গন্ধ নিয়ে জেগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যা হচ্ছে বা হলো তা কি উপকারে লাগলো?

লিখেছেন রানার ব্লগ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ দুপুর ১:২৮

৫ হাজার মৃত্যু গুজব ছড়াচ্ছে কারা?

মানুষ মারা গিয়েছে বলা ভুল হবে হত্যা করা হয়েছে। করলো কারা? দেশে এখন দুই পক্ষ! একে অপর কে দোষ দিচ্ছে! কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

আন্দোলনের নামে উগ্রতা কাম্য নয় | সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যবাদকে না বলুন

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



প্রথমেই বলে নেয়া প্রয়োজন "বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার সমস্ত অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে" ধীরে ধীরে দেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসছে। ছাত্রদের কোটা আন্দোলনের উপর ভর করে বা ছাত্রদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোন প্রশ্নের কি উত্তর? আপনাদের মতামত।

লিখেছেন নয়া পাঠক, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৬

এখানে মাত্র ৫টি প্রশ্ন রয়েছে আপনাদের নিকট। আপনারা মানে যত মুক্তিযোদ্ধা বা অতিজ্ঞানী, অতিবুদ্ধিমান ব্লগার রয়েছেন এই ব্লগে প্রশ্নটা তাদের নিকট-ই, যদি তারা এর উত্তর না দিতে পারেন, তবে সাধারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাকুরী সৃষ্টির ব্যাপারে আমাদের সরকার-প্রধানরা শুরু থেকেই অজ্ঞ ছিলেন

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ রাত ৯:০৭



আমার বাবা চাষী ছিলেন; তখন(১৯৫৭-১৯৬৪ সাল ) চাষ করা খুবই কষ্টকর পেশা ছিলো; আমাদের এলাকাটি চট্টগ্রাম অন্চলের মাঝে মোটামুটি একটু নীচু এলাকা, বর্ষায় পানি জমে থাকতো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×