রামপুরায় একটা বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের (প্রাণ-আরএফএল) ‘ফুড আউটলেট’ এ কিছুদিন কাজ করতে হয়েছিল। জুতো সেলাই সেই থেকে চণ্ডীপাঠ, মানে ঝাড়পোঁছ থেকে শুরু করে পণ্য বিক্রি সব কাজই করতে হতো। যেহেতু অন্য কোনো কর্মসংস্থান ছিল না, আর আমাকে ঢাকায় টিকে থাকতে হবে; সে কারণে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি কাজটা ভালোভাবে করতে।
যাহোক, ওখানে থেকে একটা বিষয় লক্ষ্য করলাম। প্রতিদিন গাড়িতে করে নতুন নতুন খাবার আসে। আর বাসি খাবার গাড়িতে তুলে দেওয়া হয়। তারপর সেগুলো ফেলে দেওয়া হয়।
আমার খুব অস্বস্তি লাগত এটা ভেবে যখন জানলাম এত দামি দামি খাবার ফেলে দেওয়া হয়। পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যাওয়ার আগে এগুলো চাইলে টোকাইদের বা ফুটপাতে যারা রাত্রিযাপন করে, তাদের দিয়ে দেওয়া যায়। আমার মধ্যে প্রশ্ন জাগত, কেন এসব ওদের দিয়ে দেওয়া হয় না? কোনো এক গবেষণায় পড়েছিলাম পৃথিবীর প্রায় ৮০ কোটি মানুষ না খেয়ে রাতে ঘুমোতে যায়। মাঝেমধ্যে গাড়িতেও এমন লেখা থাকে অথবা অনেক দিনপঞ্জিকায়ও লেখা থাকে।
আমি আউটলেট ম্যানেজারকে বলেছিলাম, এ খাবারগুলো কিন্তু অনাহারীদের দিয়ে দেওয়া যায়। উনি হেসে উড়িয়ে দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, এমন নিয়ম নেই।
মালিবাগে যখন কাজ করতাম, আমাদের অফিসের পাশে ফুডপান্ডার অফিস ছিল। অনেক সময় অর্ডার ক্যানসেল হলে খাবার দিয়ে যেত। মাঝেমধ্যে অনেক খাবার আসত। আমি আর কেয়ারটেকার কিছু খেতাম আর বাকি খাবার ছিন্নমূলদের মাঝে বিতরণ করতাম। এত ভালো ভালো খাবার পেয়ে ওরা আনন্দে আত্মহারা হয়ে যেত।
২
গ্রামে-গঞ্জে ভিলেজ পলিটিক্স বলে একটা ব্যাপার আছে। কে কীভাবে অন্যের পেছনে লাগতে পারে, তার ভালো ভালো নজির আছে। তবে সবচেয়ে ভয়াবহ ব্যাপার হলো, জমি নিয়ে দ্বন্দ্বে খুনোখুনি। অনেক সময় জেদের বশবর্তী হয়ে বিষ ছিটিয়ে এ ওর পুকুরের মাছ নিধন করে, রাতের আঁধারে কলাগাছ, পেয়ারা গাছসহ অনেক গাছ কেটে রেখে যায় যেগুলো হয়তো ধার-দেনা করে লাগানো হয়েছিল দুটো পয়সা উপার্জনের আশায়।
এই যে ক্ষয়ক্ষতি করা হয়, যারা এগুলো করে এতে তাদের লাভ হয় না কিছুই। অনেক সময় ধরা পড়লে শাস্তি হয়। তাও কেন এসব করে কে জানে।
রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে অনেকসময় অন্যের ব্যাপক ক্ষতি করা হয়। তাতে নিজেদের লাভ তো হয়ই না, উল্টে আরও ক্ষতি হয়। প্রতিপক্ষ শক্তিশালী হয়েছে চরম প্রতিশোধ নেয়।
৩
কেউ মারা গেলে অথবা ক্ষতিগ্রস্ত হলে অনেকে খুব খুশি হয়। এবং নগ্নভাবে সেটা উপস্থাপনও করে। এরা ভাবে না এরা নিজেরা যখন মরবে অথবা ক্ষতিগ্রস্ত হবে, অন্যরাও তো খুশি হবে। যদিও এ শ্রেণিই পরে জ্ঞান দান করবে, অন্যের দুঃখে হাসতে হয় না। এটা-সেটা যুক্তি হাজির করবে। অথচ ওরা নিজেই যদি অন্যের দুঃখে বাহাস না করত, তাহলে হয়তো প্রতিপক্ষও এমন বাহাস করত না।
নিজে ক্ষতিগ্রস্ত হলে পরীক্ষা আর অন্যে ক্ষতিগ্রস্ত হলে গজব; এই তত্ত্বে বিশ্বাসীদের অবশ্য কিছু বোঝানো সম্ভব হয় না। এরা নিজেদের যুক্তিতে সবসময় অটল থাকে। যদিও একসময় ভুল ভাঙে, তবে ততদিনে যা ক্ষতি হওয়ার হয়েই যায়।
ছবিঃ অন্তর্জাল