২০১৪, ২০১৮ সালের ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। বিএনপিসহ বেশকিছু রাজনৈতিক দল নির্বাচনে না আসায় অনেকটা ফাঁকা মাঠেই গোল দিতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। যদিও আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগই। ধারণা করা হচ্ছে, স্বতন্ত্র অনেক প্রার্থীই জিততে পারেন (নিক্সন চৌধুরী, ব্যারিস্টার সুমনসহ অনেকে)। কারণ, স্বতন্ত্রদের মধ্যে যোগ্য অনেকেই মাঠে আছেন। তাদের জনপ্রিয়তাও কম না।
নির্বাচন বন্ধ করতে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো বহু চেষ্টা-চরিত্র করেছে, কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়নি। শেখ হাসিনা নিজের সিদ্ধান্তে অনড় ছিলেন। উনি নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীনেই করবেন বলে গো ধরেছিলেন, করছেনও। আমেরিকা শত চেষ্টা করেও আওয়ামী লীগ তথা শেখ হাসিনাকে দমাতে পারেনি। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে ইউক্রেনকে সমর্থন দিয়ে ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি অবস্থা; এর ওপর ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধে ইসরায়েলকে সমর্থন দিয়ে বৈশ্বিক চাপ- এমতাবস্থায় বাংলাদেশের নির্বাচন থামাতে ব্যর্থ হয়ে আমেরিকার এখন মুখ দেখানো কঠিন। আপাতত হৈচৈ বন্ধ রেখে সামনে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে বাংলাদেশকে চাপে রাখবে মনে হচ্ছে। বাংলাদেশ কীভাবে সে পরিস্থিতি মোকাবেলা করে, সেটাই দেখার বিষয়।
ওদিকে আমেরিকার জনপ্রিয় ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল নিবন্ধে লিখেছে, বাংলাদেশে পরাজিত হতে যাচ্ছে বাইডেনের পররাষ্ট্র নীতি। তারা বলছে, অর্থনীতির ওপরে বাইডেনের গণতন্ত্র প্রচারকে স্থান দেওয়ার সময় এখনও আসেনি বলেই বাইডেনের পররাষ্ট্রনীতি বাংলাদেশে ব্যর্থ হয়েছে। শেখ হাসিনার প্রধানমন্ত্রীত্বের প্রশংসা করছে পত্রিকাটি। ধর্মীয় মৌলবাদ দমন, সামরিক শাসনের বিপরীতে জনগণের শাসনের আধিপত্য নিশ্চিত; এছাড়াও চরম দারিদ্র্য থেকে দেশকে মুক্ত করে আনা এবং নাশকারীদের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার কঠোর অবস্থানের কথা নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে।
চিন বাংলাদেশের নির্বাচনকে বলছে মাইলফলক। রাশিয়াও সমর্থন দিচ্ছে। ভারত অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে এড়িয়ে গেলেও তারা প্রকারান্তরে সমর্থন করছে আওয়ামী লীগকেই মনে হয়। কারণ, তারা নিশ্চয়ই এমন কাউকে চাবে না, যারা তাদের দেশের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মদদ দেবে।
নির্বাচনে স্বতন্ত্র অথবা নৌকা প্রার্থী যেই জিতুক, আপাতত দুর্নীতি হ্রাস, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, জননিরাপত্তা দিতে পারলেই সাধারণ মানুষ খুশি। কিন্তু আওয়ামী লীগ কতটুকু সফল হবে; সেটাই এখন বড় প্রশ্ন। যারা নির্বাচন করছেন, দলীয় বেশিরভাগই কোটিপতি বলে জানিয়েছে সুজন (সুশাসনের জন্য নাগরিক)। সাধারণ মানুষের সাথে এদের সংস্রব নেই বললেই চলে। এরা বেশিরভাগই আমলা, প্রকৌশলী, ডাক্তার, ব্যবসায়ী। এরা জনগণের প্রতি কতটুকু দায়বদ্ধ; এটা সকলেই জানে। ব্যবসায়ীরা তো পারলে দেশটাকে পুরো বাণিজ্যকেন্দ্র বানান। আর বিদেশে বাড়ি-গাড়ি করেন।
নির্বাচন ঘিরে আপাতত দু’টি শঙ্কা কাজ করছে। প্রথমত, যে সহিংসতা হচ্ছে এতে সাধারণ মানুষ ভোগান্তিতে পড়বে; এসবের দায় কে নেবে? আর সরকার কি এ সংকট থেকে উত্তরণ ঘটাতে পারবে?
দ্বিতীয়ত, দেশ যে কর্তৃত্ববাদী শাসনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে; এটা থেকে একটা সময় সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক চর্চায় আসা সম্ভব হবে কি না? আওয়ামী লীগ-বিএনপি কি আসলেই গণতন্ত্র চালু রাখতে সক্ষম কি না? আর যদি এটা সম্ভব না হয়, তাহলে দেশে রাজনীতি থাকবে না। মানুষ আর রাষ্ট্রের সম্পর্ক মধ্যযুগের রাজা-প্রজা পর্যায়ে চলে যাবে।
ছবিঃ অন্তর্জাল
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জুন, ২০২৪ সকাল ১০:০১