somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাপ-মেয়ের দ্বৈরথ

০৩ রা মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আমার দাদির ঝগড়াঝাঁটির স্বভাব ছিল কিংবদন্তিতুল্য। মা-চাচিদের কাছ থেকে শোনা কষ্ট করে রান্নাবান্না করলেও তারা নাকি নিজে থেকে কখনও মাছ-মাংস পাতে তুলে খেতে পারতেন না। দাদি বেছে বেছে দিতেন কে কী খাবে।

আমার মা আর এক চাচি দিনের অনেকটা সময় ঢেঁকিতে ধান ভানতেন। সংসারের যত কাজ আছে, সব করতেন। বিনিময়ে জুটত একটু ভাত। খুব কম সময়ই তারা পেট পুরে খেতে পারতেন।

মা যখন নানার বাড়ি যেতেন, গলা দিয়ে নাকি তার ভাত নামত না! গলার নলি ছোটো হয়ে গিয়েছিল। বড়ো মামিরা হা-হুতাশ করতেন আর বলতেন, আর যাওয়ার দরকার নেই। মা অবশ্য দুয়েকদিন থেকে তারপর স্বামীর বাড়ি চলে আসতেন। নানা তাদের এলাকায় আলাদা বাড়ি করে দেওয়ার প্রস্তাব দিলেও মা নাকচ করে দিতেন। বাঙালি নারী বলে কথা। শত কষ্ট হলেও স্বামীর বাড়িকে সবসময় নিজের বাড়ি মনে করেছেন।

দাদির কিছু স্বভাব আমার ছোটো বোনও পেয়েছে। দু’জনই চরম মাত্রার ঝগড়াটে। আমার বাবা তাকে ‘মানির মা’ বলে ডাকেন। এ নামে আমার দাদিও পরিচিত ছিলেন।

ছোটো বোনের সাথে বাবার সম্পর্কটা ঠিক বাপ-মেয়ে না বলে দা-কুমড়োর মতো বলা যায়। ঝগড়াঝাঁটি দু’জনের নিত্যদিনের কাজ-কারবার। বাবার কোনো কাজ তার পছন্দ না, তার কোনো কাজ আবার বাবার পছন্দ না। একজন অপরজনের পেছনে সারাক্ষণই আঠার মতো লেগে থাকে।

একদিন ঘরের পেছনে গিয়ে দেখি আমাদের ছোট্ট বাছুরকে বাবা আদর করছেন। আর হপ্পু হপ্পু করে ডাকছেন। বোনের ডাক নাম হ্যাপি। বাবা হপ্পু নামে ডাকেন। এখন বাবা বাছুরকেও হপ্পু হপ্পু করে ডাকছেন। ছোটো বোন উঠোন থেকে শুনে দৌড়ে গেল সেখানে। আর যায় কোথায়? দু’জনের মধ্যে যুদ্ধ বেঁধে গেল।

বোন যে সবসময় শুধু ঝগড়াঝাঁটি করত, ব্যাপারটা কিন্তু তা না। বাবার নাওয়া-খাওয়া, কাপড়-চোপর ধোয়া, দাড়ি-গোঁফ পরিষ্কার করাসহ সব কাজ সে-ই করত। এতকিছু করার পরও হুটহাট তার সাথে বাবার গ্যাঞ্জাম লাগলে সে মাঝেমধ্যে দুঃখ করে বলত, একটা বেঈমান পালি।

হোঁচট খেয়ে পড়ে গিয়ে দাদির কোমর ভেঙে গেছে। তিনি এখন শয্যাশায়ী। সবাই পর্যায়ক্রমে তার দেখাশোনা করে। আগের মতো গায়ে-কণ্ঠে জোর নেই তার। শুয়ে-বসে দিন কাটে। এদিকে ছোটো বোনের বিয়ে হয়েছে কয়েকবছর হলো। চাকরিও করে সে। অনেক ব্যস্ত। তাও সপ্তাহান্তে আমাদের বাড়িতে আসে। এসে ওর প্রথম কাজ হলো ঘরদোর পরিষ্কার করা। আগেও যেমন করত। অন্য কেউ পরিষ্কার করলেও ওর মনমতো হয় না। ও এসে আর সব বাদ দিয়ে এ কাজেই নেমে পড়ে। ওর খাওয়ারও তাড়া নেই।

বাবা এখন আর আগের মতো কথাবার্তা বলতে পারেন না। এটা-সেটা জিগ্যেস করলে শুধু উত্তর দেন। নিজে থেকে তেমন কিছু বলতে পারেন না। তবে মাঝেমধ্যে একাই কাঁদেন, একাই হেসে ওঠেন।

ছোটো বোন এখনও এসে আগের মতোই বাবার দাড়ি-গোঁফ পরিষ্কার করে দেয়। নাওয়া-খাওয়াসহ সব কাজই করে। শুধু আগের সেই ঝগড়াঝাঁটি আর হয় না। আমি আর মা তাদের দু’জনের আগের কাণ্ডকারখানাগুলো মিস করি।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জুলাই, ২০২৪ রাত ১১:২৩
১৪টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শোকের উচ্চারণ।

লিখেছেন মনিরা সুলতানা, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সকাল ১০:১৬

নিত্যদিনের জেগে উঠা ঢাকা - সমস্তরাত ভারী যানবাহন টানা কিছুটা ক্লান্ত রাজপথ, ফজরের আজান, বসবাস অযোগ্য শহরের তকমা পাওয়া প্রতিদিনের ভোর। এই শ্রাবণেও ময়লা ভেপে উঠা দুর্গন্ধ নিয়ে জেগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যা হচ্ছে বা হলো তা কি উপকারে লাগলো?

লিখেছেন রানার ব্লগ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ দুপুর ১:২৮

৫ হাজার মৃত্যু গুজব ছড়াচ্ছে কারা?

মানুষ মারা গিয়েছে বলা ভুল হবে হত্যা করা হয়েছে। করলো কারা? দেশে এখন দুই পক্ষ! একে অপর কে দোষ দিচ্ছে! কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

আন্দোলনের নামে উগ্রতা কাম্য নয় | সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যবাদকে না বলুন

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



প্রথমেই বলে নেয়া প্রয়োজন "বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার সমস্ত অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে" ধীরে ধীরে দেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসছে। ছাত্রদের কোটা আন্দোলনের উপর ভর করে বা ছাত্রদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোন প্রশ্নের কি উত্তর? আপনাদের মতামত।

লিখেছেন নয়া পাঠক, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৬

এখানে মাত্র ৫টি প্রশ্ন রয়েছে আপনাদের নিকট। আপনারা মানে যত মুক্তিযোদ্ধা বা অতিজ্ঞানী, অতিবুদ্ধিমান ব্লগার রয়েছেন এই ব্লগে প্রশ্নটা তাদের নিকট-ই, যদি তারা এর উত্তর না দিতে পারেন, তবে সাধারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাকুরী সৃষ্টির ব্যাপারে আমাদের সরকার-প্রধানরা শুরু থেকেই অজ্ঞ ছিলেন

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ রাত ৯:০৭



আমার বাবা চাষী ছিলেন; তখন(১৯৫৭-১৯৬৪ সাল ) চাষ করা খুবই কষ্টকর পেশা ছিলো; আমাদের এলাকাটি চট্টগ্রাম অন্চলের মাঝে মোটামুটি একটু নীচু এলাকা, বর্ষায় পানি জমে থাকতো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×